অশ্রু ও ক্ষার ,মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ৩ , পাঠ ৩.২ মৃত্তিকার স্নত্ব ও ক্ষারকত্ব বলতে কী বুঝায়মৃত্তিকার অত্ব বা ক্ষারকত্ব মৃত্তিকা দ্রবণের পিএইচ (pH) দ্বারা নির্দেশ করা হয়। মৃত্তিকা পিএইচ ৭ এর কম হলে সেই মৃত্তিকাকে নীয় মৃত্তিকা বলে। অপর পক্ষে, মৃত্তিকা pH ৭ এর বেশি হলে তাকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা বলে। পিএইচ হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব বা গাঢ়তাকে নির্দেশ করে।
অশ্রু ও ক্ষার ,মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ৩ , পাঠ ৩.২
সুতরাং মাটির পিএইচ হলো মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের (H’ ) ঘনত্বের ঋক লগারিদম। অন্য কথায় কোন্ মৃত্তিকা দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্বের বিপরীত রাশির লগারিদমকে মৃত্তিকার পিএইচ (pH) বলে । ঢ়ঐ এর কোন একক নেই। তবে হাইড্রোজেন আয়নকে (H’) গ্রাম/লিটারে প্রকাশ করা হয়। pH = -log[H”] ev pH : =log[H]
মৃত্তিকা পিএইচ বলতে এর অত্ব বা ক্ষার ধর্মকে বুঝায়। কোন দ্রবণের অম্লতার জন্য হাইড্রোজেন আয়নের H’ সক্রিয়তাই দায়ী এবং ঋনাত্বক হাইড্রোক্সিল আয়নের সক্রিয়তার ফলে ক্ষার ধর্ম সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। হাইড্রোজেন আয়নকে H এবং হাইড্রোক্সিল আয়নকে OH দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এক লিটার পানিতে যত গ্রাম হাইড্রোজেন ও হাইড্রোক্সিল আয়ন থাকে, এ দুয়ের গুণফল একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সব সময় একটা নিয়ত রাশি (constant) হতে দেখা যায়। ২১° সে তাপে নিয়ত রাশিটি (H) x (OH) = 10-14 হয়ে থাকে। পানিতে দ্রবীভূত বা বিচ্ছুরিত লবণ, এসিড বা ক্ষারকের ধর্মের প্রভাবে এ নিয়ত রাশির মোটেই হেরফের হয় না।
সুতরাং এসিডের সংস্পর্শে এসে হাইড্রোজেন আয়নের (H’) পরিমাণ বাড়লে এবং হাইড্রক্সিল আয়নের (OH) পরিমাণ কমলে অথবা কোন লবণের সংস্পর্শে এসে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হলেও এ নিয়ত রাশি একই থেকে যায়। প্রশমিত দ্রবণ ও বিশুদ্ধ পানিতে সাধারণতঃ ১০ গ্রাম হাইড্রোক্সিল আয়ন ও ১০ গ্রাম হাইড্রোজেন আয়ন থাকে।
কোন দ্রবণ এসিড বা অম্ল ধর্মী হলে হাইড্রোক্সিল আয়ন ১০ গ্রামের চেয়ে বেশি থাকে এবং কোন দ্রবণ ক্ষারধর্মী হলে হাইড্রোক্সিল আয়ন ১০ গ্রামের চেয়ে কম থাকে। কোন দ্রবণের অম্লমান ৭ এর কম -9 হলে অম্লীয় এবং ৭ এর বেশি হলে ক্ষারীয় বলা হয়।
মাটির অম্লত্ত্বের প্রকারভেদ
মাটির মতা দুপ্রকার যথা ঃ
১। সক্রিয় অম্লত্ব ঃ মাটির দ্রবণে যে পরিমাণ H’ আয়ন মুক্ত অবস্থায় থাকে তাকে সক্রিয় স্নত্ব বলে। পিএইচ দিয়ে সক্রিয় অত্নত্বের পরিমাণ জানা যায়।
২। প্রচ্ছন্ন বা পটেনসিয়াল অম্লত্ব ঃ কদম কণা বা কোলয়েড যে পরিমাণ হাইড্রোজেন আয়ন শোষিত বা আবদ্ধ অবস্থায় (adsorbed) রাখে তাকে প্রচ্ছন্ন বা পটেনসিয়াল অত্নত্ব বলে। মাটিতে প্রচ্ছন্ন অম্লত্ব সক্রিয় অম্লত্বের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি এবং এঁটেল মাটিতে এর পরিমাণ আরও অধিক। পিএইচ নির্ণয় সমীকরণ
বিজ্ঞানী সোয়েনসেন পিএইচ এর পরিমাপ ঠিক করার জন্য একটি একক স্থির করছেন যা কৃষি ক্ষেত্রে, রাসায়নিক ও চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। এ এককে কোন এক লিটার দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ ১০ গ্রাম হলে এ দ্রবণটির পিএইচ ৬ বলে ধরা হয়, অর্থাৎ পিএইচ এককে একে বলা হয় পিএইচ ৬। সমীকরণ অনুযায়ী দেখা যাবে – –
পিএইচ মান ও হাইড্রোজেন আয়ন
১। কোন দ্রবণের পিএইচ মান যত কম হবে তার সক্রিয় হাইড্রোজেনের পরিমাণ তত বাড়বে। অর্থাৎ দ্রবণের সক্রিয় হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব ১০, ১০, ১০ হলে ইহার পিএইচ মান যথাক্রমে ১,২,৩……………… ১৪ হবে।
২। প্রত্যেক ছোট এককের পিএইচ ইহার পরবর্তী বড় এককের চেয়ে দশ গুণ বেশি অর্থাৎ দশ গুণ অত্ব বেড়ে যায়। যেমন পিএইচ ৬ এর হাইড্রোজেন আয়ন ও অত্ব পিএইচ ৭ এর চেয়ে দশ গুণ বেশি ।
৩। মৃত্তিকায় হাইড্ৰেজেন আয়ন বাড়লে স্নত্ব বৃদ্ধি পায়।
8। অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব নির্দেশক স্কেলের সাহায্যে পিএইচ নির্ণয় করা যায়।
৫ ৷ অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব স্কেল ১ থেকে ১৪ পর্যন্ত একক নির্দিষ্ট থাকে।
৬। মৃত্তিকার হাইড্রোজেন আয়ন ও পিএইচ মান বাড়ানো বা কমানো সম্ভব।
মৃত্তিকায় অম্লতার কারণ
১। বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড প্রভৃতি যৌগ থাকে যেগুলো বৃষ্টির পানিতে দ্রবীভূত হয়ে মাটিতে নেমে আসে এবং এসিড উৎপত্তির উৎস হিসাবে কাজ করে ।
২। মাটিতে নাইট্রিক, সালফিউরিক, ফসফরিক প্রভৃতি এসিড অল্প বিস্তর থাকে বলে জুতা বাড়ে।
৩। এমোনিয়ামঘটিত সার যথা : এমোনিয়াম নাইট্রেট, এমোনিয়াম সালফেট, ইউরিয়া প্রভৃতি মাটিতে জুতা যোগ করে।
8। জুতা তৈরির অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মত ক্ষারক লবণ ক্ষয় হওয়া এবং আর্দ্র এলাকায় তা বৃদ্ধি পায়। কার্বন ডাই অক্সাইড পানির সাথে মিশে কার্বনিক এসিড তৈরি করে যা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম লবণের ক্ষয় ঘটায়।
৫। কোন কোন া শিলা যথা : গ্রানাইট ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন মাটিতে আপনা থেকেই ক্ষারকের পরিমাণ কম থাকে ফলে তা বাড়ে। কতকগুলো খনিজ ত্ন শিলা থেকে উৎপন্ন হয়েও অধর্মী মাটি তৈরি করে।
৬। মাটিতে ফসল থাকলে ক্ষারের পরিমাণ কমে, পতিত জমিতে বাড়ে। আবার ঋতু ভেদেও তা সামান্য পরিমাণে বাড়ে কমে।
৭। দুটি যোগায়ন হাইড্রোজেন ও এলুমিনিয়াম উপাদান বিক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির দ্রবণের সংস্পর্শে এসে অত্ব সৃষ্টি করে।
৮।জৈব পদার্থের বিয়োজনের ফলে মাটিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসও প্রচুর উৎপন্ন হয় ফলে অম্লত্ব বাড়ে। CO2+ H2O HCO3, H2CO3 H + HCOTT
৯। এসিটিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, অক্জালিক এসিড প্রভৃতি জৈব এসিডও মাটির তা বাড়ায়।
১০। এদেশের অনেক উচ্চ ও মাঝারী পাললিক ভূমি নীয় প্রকৃতির, কারণ অধিক বৃষ্টিপাতে চুয়ানী বেড়ে যায়। আবার মরুভূমি, জলাভূমি, পাহাড়ী অঞ্চলের মাটিও অধিক চূয়ানীর ফলে নীয় প্রকৃতির হয়ে যায়।
১১। উদ্ভিদের মূলের শ্বসন এবং মাটিস্থ অণুজীবসম হের শ্বসনের ফলে CO2 উৎপন্ন হয়। এ CO2 পানির সাথে বিক্রিয়া করে H’ আয়ন উৎপন্ন করে : CO2 + H20 = H + HCO3 মৃত্তিকাস্থিত বায়ুর CO2 কম বাফার সম্পন্ন মাটির পিএইচ উপরোক্ত বিক্রিয়ার মাধ্যমে কমিয়ে দেয়।
১২। মাটির সিলিকেট কোলয়েড লেগে থাকা (adsorbed) হাইড্রোজেন, এলুমিনিয়াম, লৌহ প্রভৃতি মাটিতে হাইড্রোজেন উৎপন্নের মাধ্যমে অম্লত্ব সৃষ্টি করে : Fe + H20 = Fe (OH)3 + H’,
Fe (OH)3 + H20 = Fe (OH)2 + H অনুরূপ ভাবে এলুমিনিয়াম ও হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে।
মাটিতে অম্লতার গুরুত্ব বা প্রভাব
১। মাটির অম্লত্বের মান ৪ এর কম থাকলে অধিকাংশ গাছপালা কিংবা ফসলাদী জন্মায় না অথবা দুর্বল গাছপালা জন্মায় যেখানে ফলনের হার নিম্নমানের।
২। অম্লত্বের ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের অপচয় কম হয়। তা ছাড়া ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের প্রাপ্যতাও সমভাবে কমতে থাকে।
৩। অত্ব বাড়ার সাথে সাথে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও সালফার এর দ্রবণীয়তা কমতে থাকে বিশেষ করে তীব্র অযুক্ত মাটিতে ফসফরাসের দ্রবণীয়তা ব্যাপক হ্রাস পায়।
8। অম্ল মাটিতে মলিবডেনাম, ম্যাঙ্গানিজ ও বোরন এর প্রাপ্যতা বাড়তে থাকে তবে তীব্র অম্লতা কমে যায় ।
৫ । অম্ল মাটিতে লৌহ, কপার ও দস্তার প্রাপ্যতা বেড়ে যায়। তা ছাড়া মাটিতে এলুমিনিয়ামের বিষাক্ততা ঘটায়।
৬। মৃত্তিকা স্নাতা অণুজৈবিক কার্যাবলী, জৈব পদার্থ বিয়োজন ও রাসায়নিক সারের রূপান্তর কমায়।
৭। অম্ল মাটিতে বীজের অংকুরোদগম ভাল হয় না এবং ফসলের গুণাগুণের ওপর প্রভাব ফেলে।
৮।অম্ল ধর্মী মৃত্তিকায় অণুজীবের কার্যাবলীতে প্রভাব ফেলে যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও শস্য উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৯। কী সার কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে মৃত্তিকা পিএইচ তা বলে দেয় এবং কী পরিমাণ চুন প্রয়োগ করতে হবে তা নিশ্চিত করতে পারে।
১০। কোন্ মাটিতে কোন্ ফসল জন্মাতে হবে তা মৃত্তিকা পিএইচ দ্বারা নির্ণীত হয়। যেমন পাহাড়িয়া অম্ল মাটিতে চা ভাল জন্মে।
১১। ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতার ওপর মৃত্তিকা অম্লতা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে ।
পিএইচ মান ভিত্তিক মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ
পিএইচ মান ভিত্তিক মৃত্তিকা তিন প্রকার যথা ঃ
১। অত্ন বা অত্নীয় মৃত্তিকা – পিএইচ মান ৭ এর কম।
২। নিরপেক্ষ বা প্রশম মৃত্তিকা – পিএইচ মান ৭।
৩। ক্ষার বা ক্ষারীয় মৃত্তিকা – পিএইচ মান ৭ এর উপরে ।
মৃত্তিকা হাইড্রোজেন ও হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণের ভিত্তিতে মাটির অম্লতা ৪ ভাগে এবং ক্ষারকত্বকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায় (টেবিল-১)। টেবিল-১। পিএইচ মান ভিত্তিক মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারকত্বের শ্রেণীবিভাগ ঃ
মৃত্তিকার অত্নত্ব ও শস্য উৎপাদন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অধিকাংশ ফসলাদী ৫.০-৭.৫ পিএইচ মানের মধ্যে ভাল জন্মে। এখানে এদেশে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফসলের পাশাপাশি উত্তম পিএইচ মান দেখানো হলো ঃ ধান (৫.০-৬.৬), গম, তামাক ও মিষ্টি আলু (৫.৫-৭.৫), আখ, তুলা, তরমুজ, টমেটো ও ডাল জাতীয় শস্য (৬.০-৭.৫), বাদাম ( ৫.৩-৬.৬), গোল আলু ( ৫.৫-৭.০) এবং চা (৫.২-৫.৮)।
মৃত্তিকার বাফার ক্ষমতা
কোন দ্রবণে সামান্য এসিড বা ক্ষার যোগ করলে যদি দ্রবণের পিএইচ মানের পরিবর্তন না হয় বা অতি সামান্য পরিবর্তিত হয় তবে ঐ দ্রবণকে বাফার দ্রবণ বলা হয়। মাটিতে অবস্থিত কার্বনেট, বাইকার্বনেট ও জৈবযৌগ বাফারিং দ্রব্য হিসাবে কাজ করে। মাটিতে অণুজীবের ক্রিয়ার ফলে অনবরত জৈব এসিড উৎপন্ন হয় যা উৎকৃষ্ট বাফার দ্রব্য হিসাবে কাজ করে। অত্নমান স্থায়ীত্বের জন্য মৃত্তিকায় অধিক বাফার ক্ষমতা থাকা দরকার । বাফার ক্ষমতাসম্পন্ন মাটিতে উদ্ভিদ পরিপুষ্টি নিশ্চয়তা অধিক। মাটির বুনট, সংযুক্তির প্রকার এবং জৈব পদার্থের প্রকার ও পরিমাণের ওপর বাফার ক্ষমতা নির্ভর করে ।
ক্ষার মাটির বৈশিষ্ট্য
কোন মাটিতে যখন ক্ষার জাতীয় লবণ বিশেষতঃ সোডিয়াম কার্বনেটের আধিক্য ঘটার ফলে কোলয়েড মাইসেলিতে এ জাতীয় আয়ন সংখ্যায় বেশি হয়ে পড়ে তখন একে ক্ষার মাটি বলা হয়।
ক্ষার মাটির বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ
পিএইচ মান ৭ এর উপর থাকে। বিনিময়যোগ্য সোডিয়াম শতকরা ১৫ শতাংশের বেশি থাকে। ক্ষারীয় বিক্রিয়ার জন্য বেশ কিছু জৈব পদার্থ জলীয় দ্রবণে চলে আসে এবং পানি আস্তরন সৃষ্টি করে। শুকিয়ে গেলেনিচের স্তরে প্রচুর কাদা কণা জমে প্রিজম আকৃতির ও স্তম্ভাকৃতির সৃষ্টি করে। ভূ-ত্বকের কোন কোন স্থানে সাদা সাদা চাপবাধা কিংবা কালো রঙের চকচকে মাটির স্তর দেখা যায়। ভূ-ত্বকের মাটি শক্ত হয়ে পড়ে, ফলে চাষ দেয়া কষ্টকর।
বাবলা, খেজুর বিশেষ করে যে সকল গাছপালা লবণ সহ্য করতে পারে ঐ সকল ভাল জন্মে। তবে ধান চাষও সম্ভব।
ক্ষার মাটি ও গাছপালা
মাটির ক্ষার ধর্ম গাছপালার পক্ষে মোটেই অনুকূল নয়। পাঁচটি উপায়ে ইহা প্রতিকূল বিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যথা ঃ
(১) অত্যন্ত তীব্র ক্ষারের ক্ষতিকর প্রভাব।
(২) কার্বনেট আয়নের বিষক্রিয়া।
(৩) বিনিময়যোগ্য সোডিয়াম আয়নের ক্ষতিকর প্রভাব।
(৪) ফসফেট আয়নকে গাছপালার গ্রহণের অযোগ্য করে দেয়।
(৫) গাছপালার নাইট্রেট গ্রহণে ক্ষতিকর প্রভাব।
ক্ষার মাটি গাছপালার যে সকল ক্ষতি সাধন করে এগুলো হচ্ছে :
১। গাছপালার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
২। লবণের গাঢ়তা বা ক্ষারের তীব্রতা বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, কখনও দেরীতে হয় আবার কখনও একেবারেই হয় না।
৩। মাটির লবণের গাঢ়তা বা ক্ষারের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে চারা গাছ মরে যায়।
8।ক্ষারের তীব্রতায় গাছের পাতা পুড়ে যেতে পারে।
৫ ৷ মাটির ক্ষারের সংস্পর্শে গাছপালার শিকড়ের অংশ বিশেষ নষ্ট হয়ে যায়।
ক্ষার মাটিকে চাষাবাদের উপযোগী করা
মৃত্তিকা ক্ষার দ র করার সাথে দুটি শর্ত জড়িত –
(ক) মাটির কোলয়েড ও দ্রবণ থেকে অতিরিক্ত লবণ বিদ রিত করতে হবে।
(খ) মাটির কোলয়েড থেকে সোডিয়াম দূর করে দিয়ে তার পরিবর্তে ক্যালসিয়াম আয়নের স্থান করে দিতে হবে।
এ দুটি শর্ত পূরণের লক্ষে নিবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে : –
১। জমির জরীপ করতে হবে।
২। জমি কীভাবে ক্ষারধর্মী হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য নিতে হবে এবং সুষ্ঠু পুনরুদ্ধার পদ্ধতির মাধ্যমে মাটিকে দ্রুত চাষাবাদ উপযোগী করে তোলা সম্ভব।
৩। জমির ঢাল ও স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরি করা।
8। পানি সেচ সীমিত করতে হবে। তাছাড়া পানির লবণাক্ততা পরীক্ষা ছাড়া চাষাবাদের ব্যবহার ঠিক নয়।
৫ । ক্ষার সহ্য করতে পারে এমন ফসল নির্বাচন করতে হবে।
৬। মাটির ক্ষার বা লবণাক্ততা দুর করার পাশাপাশি উর্বরতার কথাও ভাবতে হবে।
৭। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করেও ক্ষার কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে কালো ক্ষার মাটিতে সালফার, হাইড্রোজেন আয়ন দুর করতে চুনা পাথর ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮।কখন কীভাবে কত পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে তাও সময়মত ঠিক করতে হবে।
ক্ষার মাটি পুনরুদ্ধার পদ্ধতি
ক্ষার মাটিকে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার সম্ভব যথা ঃ
(১) জল নিষ্কাশন
(2) সেচ দিয়ে পাবিত করা
(৩) চাচিয়া পরিস্কার করা
(৪) বাস্থবায়ন কমাবার ব্যবস্থা করা, যেমন : মালচিং প্রয়োগ করা।
(৫) সেচ খাল ও নালা পাকা করা
(৬) পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব ও সবুজ সার প্রয়োগ
(৭) অন্য স্থান থেকে উর্বর মাটি আনয়ন করে তা ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
আরও দেখুন:
- মৃত্তিকা দ্রবণ , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ৩ , পাঠ ৩.২
- মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ৩ , পাঠ ৩.১
- মৃত্তিকা বুনট পরীক্ষা , ব্যবহারিক , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ২ , পাঠ ২.৮
- মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি , ব্যবহারিক , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ২ , পাঠ ২.৭
- বাংলাদেশে কৃষি – উইকিপিডিয়া