কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.১

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.১ , কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব কৃষি একটি বিজ্ঞান। কৃষিকে ইংরেজীতে “Agriculture” এবং ল্যাটিনে “Agricultura” বলে।
দু’টি ল্যাটিন শব্দ ‘Ager’ এবং cultura’ এর সমন্বয়ে “Agriculture” বা কৃষি গঠিত। ‘Ager’ অর্থ জমি এবং ‘cultura’ অর্থ চাষ করা। তাই শাব্দিক অর্থে কৃষি হলো জমি চাষ করে ফসল দু’টি ল্যাটিন শব্দ ‘Ager’ এবং cultura’ এর সমন্বয়ে “Agriculture” বা কৃষি গঠিত । ‘Ager’ অর্থ জমি এবং ‘Cultura’ অর্থ চাষ করা। তাই শাব্দিক অর্থে কৃষি হ’লো জমি চাষ করে ফসল উৎপাদন।

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

উৎপাদন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কৃষি সম্বন্ধে মানুষের সীমিত ধারণারও বিস্তৃতি ঘটেছে। বর্তমানে কৃষি বলতে ভূমি কর্ষণ তথা জমি প্রস্তুতকরণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার শস্য, ফল—মূল, গাছ—পালা, শাক—সব্জি ও ফুল, পশু ও পশুজাত দ্রব্য এবং মৎস্য উৎপাদনকে বুঝানো হয়। শুধু কৃষিতত্বই (Agronomy) কৃষি বিজ্ঞান নয়। যে সকল বিদ্যার ব্যবহার দ্বারা উৎপাদন কায্যর্ সম্পন্ন হয়ে থাকে সে সবগুলোই কৃষি বিজ্ঞানের অন্তভূর্ক্ত। আর সেগুলো হচ্ছে শস্য উৎপাদন (Crop production), পশুপালন (Animal Husbandry), পশু চিকিৎসা (Veterinary science), কৃষি প্রকৌশল (Agricultural engineering), কৃষি অর্থনীতি (Agricultural economics) এবং তৎসংশি­ষ্ট বিষয়াদি। এক কথায় মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ঔষধ এবং সার্বিক মঙ্গলার্থে প্রয়োজনীয় মৌলিক উপাদান গুলো উৎপাদনে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক জ্ঞানই কৃষি বিজ্ঞান।

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

কৃষি মানুষের মৌলিক চাহিদাবলী যথা খাদ্য, বস্ত্র , আশ্রয়ের মৌলিক উপাদান গুলোর যোগান দেয়। কৃষি মানুষের মৌলিক চাহিদাবলী যথা খাদ্য, বস্ত্র , আশ্রয়ের মৌলিক উপাদানগুলোর যোগান দেয়। কৃষির উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। কৃষি বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির মেরুদন্ড। “জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি হলো গাছের ন্যায়। কৃষি হলো তার মূল, শিল্প তার শাখা এবং বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ক্ষত দেখা দিলে তা সমস্ত গাছটিকে ধ্বংস করে দেয়”Ñ চীনা এ প্রবাদটি কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রযোজ্য । বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি সুষ্ঠু কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। মানুষের অস্তিত্বের সাথে জড়িত

কৃষির গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

* মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান উপকরণ হলো খাদ্যÑ যা কৃষি থেকে আসে।

* কৃষি শিল্পের কাঁচামালের প্রধান উৎস ।

* কৃষি দেশের রাজস্বের প্রধান উৎস।

* কৃষি মানুষের জীবিকার উৎস ।

* কৃষি পণ্য আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে ।

* কৃষি জ্বালানির উৎস।

* বাসস্থান ও আসবাবপত্র তৈরিতে কৃষির অবদান অনস্বীকার্য।

জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কৃষির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মানুষকে বেেঁচ থাকার জন্য কৃষি পণ্যের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল হ’তে হয়। অতএব কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি

সাধারণভাবে বাংলাদেশের প্রায় ৮৭ ভাগ সমতলভূমি তবে ভূতলের সমতা একইরূপ নয়। ভূতলের সমতার ভিত্তিতে সমগ্র বাংলাদেশকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো ঃ

১। উঁচু ভূমি

উঁচু ভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রাচীন পলল দ্বারা গঠিত হওয়ায় একে “প্রাচীন পলল ভূমি” নামেও অভিহিত করা হয়। এখানকার মাটি লাল বর্ণের ও কঙ্কর যুক্ত। এরূপ জমিতে বর্ষার পানি জমে না। আইল দিয়ে পানি আটকিয়ে ফসল উৎপন্ন করা হয়। মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় অঞ্চল, রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুরের অন্তর্গত বরেন্দ্র অঞ্চল, কুমিল্লার লালমাই অঞ্চল এবং সিলেটের টিলা অঞ্চল নিয়ে উঁচু ভূমি গঠিত। এ অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রাচীন পলল দ্বারা গঠিত হওয়ায় একে “প্রাচীন পলল ভূমি” নামেও অভিহিত করা হয়। এখানকার মাটি লাল বর্ণের ও কঙ্কর যুক্ত। এখানে সাধারনত গজারি, শাল, চা, নানা রকম ফল, রোপা আমন ধান, বিভিন্ন শাক—সব্জি ভাল জন্মে। উঁচু ভূমির মোট আয়তন ২৩,৩০০ বর্গ কিলোমিটার।

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

২। মধ্যম ভূমি

এই অঞ্চলে জমির পানি আইল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহের কিছু অংশ, ঢাকার উত্তরাংশ, বরিশাল, ও সিলেটের কিছু অংশ, কুমিল­া, নোয়াখালি ও চট্টগ্রামের পূবার্ঞ্চল নিয়ে মধ্যম ভুমি গঠিত। আউশ ধান, আমন ধান ও পাট এ অঞ্চলের প্রধান ফসল। এর মোট আয়তন ৬২,১৩৩ বর্গ কিলোমিটার।

৩। নিচু ভূমি

এ অঞ্চলে বর্ষাকালে সাধারণতঃ ৩—৪ ফুট পানি হয় এবং কোন কোন সময় পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১০১২ ফুট। পাবনা ও ফরিদপুর জেলার অধিকাংশ অঞ্চল, ঢাকা জেলার দক্ষিনাংশ, কুমিল্লা ও নোয়াখালি জেলাদ্বয়ের পশ্চিমাংশ, বগুড়া, খুলনা ও সিলেটের কিছু অংশ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। ছিটিয়ে বোনা আমন, আউশ, পাট ও রবিশস্য এ অঞ্চলের প্রধান ফসল। এর মোট আয়তন ৩৪,৯৫০ বর্গ কিলোমিটার।

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

৪। অত্যন্ত নিচু জমি

দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বিল, হাওর ও নদী নালার তীরবর্তী এলাকাসমূহ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। বর্ষাকলে এ অঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং বিরাট হ্রদের মত দেখায়। বর্ষাকালে এসমস্ত এলাকায় পানির গভীরতা ৩০ ফুট পর্যন্ত হ’তে পারে কিন্তু শীতকালে মধ্যস্থান ব্যাতিত অন্যস্থান শুকিয়ে যায়। রবি মৌসুমে সেচের সাহায্যে এখানে বোরো ধান করা যায়। এ অঞ্চলের আয়তন ৪,১৪২ বর্গ কিলোমিটার।

৫। পাহাড়ি অঞ্চল

পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম জেলার কিয়দংশ, কুমিল্লা জেলার লালমাই অঞ্চল, সিলেট জেলার দক্ষিণপূর্বাংশ, নোয়াখালি জেলার উত্তর পূবার্ংশ এবং ময়মনসিংহ জেলার উত্তর—পূর্বাংশ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। অনেকগুলো ছোট বড় পাহাড়, টিলা এবং এদের পাদভূমি নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগামের পাহাড়িয়া অঞ্চলই বাংলাদেশের একমাত্র বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকা। এখানকার পাহাড়ের সর্বোচ্চ চুড়া কিয়োক্রাডাং এর উচ্চতা ১,২৩২ মিটার। প্রায় সমস্ত অঞ্চলই বন জঙ্গলে আবৃত। এখানে আনারস, কাঁঠাল ভাল হয়। আয়তন ১৮,১২২ বর্গ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment