কৃষি জলবায়ুর ও জলবায়ুর উপাদান , কৃষি জলবায়ু , ইউনিট – ৬ ,পাঠ-৬.১ , আবহাওয়া সম্পর্কে প্রথমে জানা দরকার। আবহাওয়া বলতে কোন স্থানের দৈনন্দিন বায়ুমন্ডলের অবস্থা অর্থাৎ কোন স্থানের দৈনিক বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুর গতি ও চাপ, সূর্যালোক প্রভৃতির সামগ্রিক অবস্থাকে বোঝায়। আবার জলবায়ু বলতে কোন স্থানের ২৫—৩০ বছরের আবহাওয়ার গড়কে বোঝায়। বাংলাদেশের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন। কারণ সারা বছরের জলবায়ুর তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনা। কোন অঞ্চলের কৃষি জলবায়ু সেই অঞ্চলের ফসল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
কৃষি জলবায়ুর ও জলবায়ুর উপাদান , কৃষি জলবায়ু , ইউনিট – ৬ ,পাঠ-৬.১
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের কৃষি উৎপাদন প্রায় সম্পূর্নভাবে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রাপ্ত বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে। চাষাবাদের জন্য সময়মত পানির প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের সমগ্রদেশে এখনও পানি সেচের তেমন সু—ব্যবস্থা নেই। ফলে চাষাবাদের জন্য আমাদের মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয় তার উপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের দেশে দুই ধরণের মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। একটি দক্ষিন পশ্চিম মৌসুমী জলবায়ু যা গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মকালে দক্ষিন পশ্চিম দিক হতে আর্দ্র—মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচু্র বৃষ্টিপাত হয়। এ বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের প্রধান ফসল ধান, পাট, আখ, চা প্রভৃতি প্রচুর পরিমানে উৎপন্ন হয়। আবার শীতকালে উত্তর—পূর্ব দিক হতে আগত শুষ্ক মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।
এসময় তাপমাত্রা কম থাকে। শীতকালে শীতকালীন ফসল যেমন—ডাল, তৈলবীজ, আলু, পেঁয়াজ, শীতকালীন শাক—সবজি ইত্যাদি প্রচুর পরিমানে উৎপন্ন হয়। এদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশী হয় বলে সেখানে চা, রাবার, ইত্যাদির চাষাবাদ হয়। মৌসুমি জলবায়ুর দ্বারা এদেশের বনজ সম্পদও প্রভাবিত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদির মধ্যে যথেষ্ঠ পার্থক্য রয়েছে এসব কারণে বিশেষ কোন অঞ্চলে নির্দিষ্ট কিছু ফসল ভাল জন্মে। কোন অঞ্চলে উদ্ভিদ ও কৃষি উৎপাদন দেখে সে স্থানে কৃষি জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা করা যায়। শীতকালের বার্ষিক গড় উষ্ণতা সর্বোচ্চ প্রায় ২৯ সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১
সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে গড় উষ্ণতা সর্বোচ্চ প্রায় ৩৫ সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২১ সেলসিয়াস হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমান ১২০—৩৪৫ সে:মি: এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৩৫—৯৯% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
১. ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বায়ুর গতির পরিবর্তন হয়। ফলে জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটে।
২. এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক ও নাতিশীতোষ্ণ শীতকাল।
৩. মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে কাল বৈশাখীসহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত এবং বষার্কালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম।
কৃষি জলবায়ুর উপাদান সম্পর্কে আলোচনা ফসল উৎপাদনের উপর জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের একক ও সমন্বিত প্রভাব রয়েছে। জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন। এখানে সারা বছরই সমপরিমাণ উত্তাপ বিদ্যমান। দেশটি মৌসুমি অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। প্রাকৃতিক অনেক কারণ ফসল উৎপাদনের অনুকূল হলেও অনুন্নত ও মান্ধাতা আমলের কৃষি ব্যবস্থার দরুন এ দেশের কৃষি এখনো প্রায় সম্পূর্নভাবে প্রকৃতির খামখেয়ালীর উপর নির্ভরশীল। জমি চাষ থেকে শুরু করে শস্যবীজ গুদামজাতকরণ পর্যন্ত প্রায় সব কাজই এখানে জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
নিম্নে বাংলদেশের জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানগুলো আলোচনা করা হলো:
দিবাদৈর্ঘ্য : অনেকগুলো পারিপার্শ্বিক কারণ দ্বারা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রভাবিত হয়। এই কারণ সমূহের কয়েকটি নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষ দ্বারা। সর্বশেষ আবিষ্কৃত বাহ্যিক প্রভাবক সমূহের একটি হচ্ছে দিনের দৈর্ঘ্য প্রযুক্তিগতভাবে ইহা পরিচিত ফটোপিরিয়ড নামে। আলোককাল বা ফটোপিরিয়ডের প্রতি উদ্ভিদের সাড়া প্রদানকে বলে ফটোপিরিয়ডিজম। দিনের দৈর্ঘ্য যদিও একটি উদ্ভিদের কোন একটি বা সমস্ত অঙ্গকে রূপান্তরিত করতে পারে। তবুও এই পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর হতে আজ পর্যন্ত প্রথমিক ভাবে ধারনা করা হয় এর দ্বারা উদ্ভিদের পুষ্পপ্রদান এবং ফলের উন্নয়ন প্রভাবিত হয়।
দিনের দৈর্ঘ্য কম বেশী হওয়ার কারণে সালোকসংশ্লেষনের জন্য প্রাপ্ত মোট সময়ের ভিন্নতা ঘটে। ফলে সালোকসংশ্লেষন কম বেশি হয়। দিনের দৈর্ঘ্য বা আলোর হ্রাস বৃদ্ধির উপর অনেক উদ্ভিদের পুষ্পায়ন সস্পূনরূপে নির্ভর করে। এসকল উদ্ভিদ ক্রান্তীয় দিবা দৈর্ঘ্যর নিচে বা উপরে ফুল ধারন করে। আলো ও তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে দিনের দৈর্ঘ্য। দিনের দৈর্ঘে্যর উপর নির্ভর করে উদ্ভিদকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:—
১. স্বল্প দিবালোক প্রাপÍ উদ্ভিদ : যে সকল উদ্ভিদ ক্রান্তীয় দিবা দৈর্ঘ্যর নিচে ফুল দেয় তাদেরকে স্বল্প দিবালোক প্রাপ্ত উদ্ভিদ বলে। যেমন: সয়াবিন, ফুলকপি, চন্দ্রমল্লিকা।
২. দীর্ঘ দিবালোক প্রাপ্ত উদ্ভিদ : যে সকল উদ্ভিদ ক্রান্তীয় দিবা দৈর্ঘ্যর উপর ফুল দেয় তাদেরকে দীর্ঘ দিবা দৈর্ঘ্যের উদ্ভিদ বলে। যেমন:— চিনাবাদাম, লেটুস, গাজর ইত্যাদি।
৩. দিবালোক নিরপেক্ষ উদ্ভিদ : যে কোন দৈর্ঘ্যের দিনে এসব ফসলের ফুৃল—ফল উৎপাদিত হয়ে থাকে, যেমন: টমেটো, তুলা, সূর্যমুখী ইত্যাদি।
তাপমাত্রা : জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সম্ভবত: তাপমাত্রা শস্যের সার্বিক বৃদ্ধি সাধনে অধিকতর প্রভাব বিস্তার করে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা মোটামুটি উষ্ণ। দক্ষিণে সমুদ্র, উত্তরে হিমালয় পর্বত এবং বিশাল সমভূমির জন্য বাংলাদেশে শীত ও গ্রীষ্মের আধিক্য অনুভূত হয়না। গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা শীতকালের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশী। তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন শস্যকে গ্রীষ্মকালীন বা খরিপ শস্য এবং শীতকালীন বা রবিশস্য এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। আউশ ধান, পাট, সয়াবিন, প্রভৃতি গ্রীষ্মকালীন শস্য। এসব শস্যের অধিক তাপমাত্রার প্রয়োজন। আমনধান, বোরোধান, গম, যব, সরিষা, তিল, মটর, মসুর তামাক প্রভৃতি শীতকালীন ফসল। তিল, তুলা, ভূট্টা প্রভৃতি উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়। তবে আখ রবি ও খরিপ দুই মৌসুমেরই অন্তগর্ত।
আর্দ্রতা : বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে আর্দ্রতা বলে। কোন স্থানের আর্দ্রতা সেই স্থানের বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। যে বায়ুতে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি, সে বায়ু জলবায়ুকে অধিক প্রভাবিত করে। ফলে সেই এলাকায় দিনে খুবই গরম পড়ে এবং রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে। বায়ুর আর্দ্রতা সূর্যকিরণকে ভূপৃষ্ঠে আসতে অধিক বাঁধা সৃষ্টি করে বলে এ অবস্থা হয়। বর্ষাকালে অধিক আর্দ্রতার কারণে রোগবালাই এবং পোকামাকড় দ্বারা ফসল সহজেই আক্রান্ত হয়। শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকে অর্থাৎ বাতাসে আর্দ্রতা অনেক কম থাকে। শীতকালে বাতাসের গড় আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৭২% থেকে ৮৫% হয় থাকে।
অপরদিকে গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে এই আর্দ্রতা হয় ৮৩% থেকে ৯০% পর্যন্ত। বৃষ্টিপাত : বৃষ্টিপাতের উপরও আবহাওয়া ও জলবায়ু নির্ভর করে। কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশী হলে সে অঞ্চলের তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং বৃষ্টিপাত কম হলে সে অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে দক্ষিন—পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অপরপক্ষে শীতকালে উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। উদ্ভিদের জন্য পানির প্রয়োজন। উদ্ভিদ এই পানি মাটি থেকে গ্রহণ করে।
মাটিতে পানির প্রধান উৎস বৃষ্টিপাত। ফসল উৎপাদনের জন্য বৃষ্টিপাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ফসল জন্মে। বাংলাদেশের মোট বৃষ্টিপাতের ৮০% বৃষ্টিপাত হয় বর্ষাকালে। এই বৃষ্টিপাতের পরিমান পূর্বদিক হতে পশ্চিমদিকে ক্রমশ্যই কমতে থাকে। সিলেটের লালাখালে সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত (৬৪৯.৬ সে.মি.) হয় এবং রাজশাহী জেলার লালপুরে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত (১১৯.৮ সে.মি) হয়। দেশের বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের গড় ২৩০ সে:মি:।
গাছের সাবলীল বৃদ্ধি ও অধিক ফলন সঠিক মাত্রার পানি সরবাহের ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। এই পরিমিত পানির প্রাপ্যতা বিভিন্ন এলাকায় এবং বিভিন্ন ঋতুতে শস্য বন্টনে তাপমাত্রার মত প্রভাব বিস্তার করে। কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে যে বৃষ্টিপাত হয় তা ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় জমি চাষ এবং খরিফ শস্য বোনা শুরু হয়। বৃষ্টিপাত প্রয়োজনের বেশী হওয়া সত্ত্বেও সময়মত এবং পরিমাণমত না হওয়ার কারণে প্রতি বছরই মাটিতে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে শস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
জলপাত : জলীয়বাষ্প শীতল বায়ুর সংষ্পর্শে এসে শিশিরাংকে পৌছালে বায়ুমন্ডলের ধূলিকনাকে আশ্রয় করে তা সহজেই ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকনায় পরিণত হয়। অত:পর সেই ক্ষুদ্র বরফ কনাগুলো বা জলকনাগুলো মাধ্যাকর্ষন শক্তির প্রভাবে ভূ—পৃষ্টে পতিত হয় তখন তাকে জলপাত বলে। কোন কারণে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ১০ সেলাসিয়াস এর নীচে নেমে গেলেই অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় ভূ—পৃষ্ঠে নেমে আসে যা জলাপাত নামে পরিচিত।
জলাপাত সাধারনত দুই আকারের হয়ে থাকে— তরল আকার : হিমাংক শিশিরাংকের উর্ধ্বে থাকলে ঘনীভবনের ফলে যে জলপাত বা বারিপাত হয়, তা তরলাকার, কুয়াশা, শিশির ও বৃষ্টিরূপে পতিত হয়। কঠিন আকার : শিশিরাংক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা হিমাংকের নীচে থাকলে ঘনীভূত জলীয়বাষ্প হয় কঠিন আকার। যেমন: তুষার ও বরফরূপে ভূ—পৃষ্ঠে নেমে আসে। শিশির : রাত্রিতে তাপ বিকিরণ করে ভূ—পৃষ্ঠ শীতল হলে ভূ—পৃষ্টের সংস্পর্শে উপরের বায়ু শীতল হয়। এর ফলে শীতল বায়ু বেশী জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে পারে না বলে অতিরিক্ত বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ঘাস, গাছের পাতার উপর শিশিররূপে জমা হয়।
-শীতকালে ভূ—পৃষ্ঠ অধিকতর ঠাণ্ডা হয় বলে ঐ সময় শিশির বেশী পরিমাণে দেখা যায়। শীতকালে যখন মাটিতে প্রয়োজনীয় রসের অভাব থাকে সে সময় এই শিশিরপাত মাটিতে কিছু পরিমাণ রস সরবারহ করে। এছাড়া যে সমস্ত ফসলের জন্য অধিক ঠাণ্ডার প্রয়োজন যেমন— ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, আলু ইত্যাদির জন্য শিশিরপাত খুবই প্রয়োজন।
আমন ধানের ক্ষেত্রে থোড় থেকে ছড়া বের হওয়ার কাজে এবং পরাগায়নে শিশিরপাত সাহায্য করে থাকে। অপরদিকে শিশির রোগ বালাই এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। গোল আলুর পাতা শিশির দ্বারা সিক্ত হলে নাবী ধ্বসা বা আলুর মড়ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশির ফসলের রোগবালাই সৃষ্টির প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। স্বল্প মেয়াদী সেচবিহীন যেসব ফসল চাষ করা হয় তাদের জন্য শিশির উপকারি। শিশির পরিমাপ করার জন্য ড্রোজোমিটার নামক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
তুষারপাত : ভূ—পৃষ্ঠ এবং তার নিকটস্থ বস্তুর তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে ভূ—পৃষ্ঠের উপরিভাগের ভাসমান জলীয় বাষ্প সরাসরি বরফকনায় পরিণত হয়ে ভূ—পৃষ্ঠে পতিত হয় যা তুষারপাত নামে পরিচিত। বাংলাদেশে কোথাও তুষারপাত হয় না। এটি শস্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এদেশের কোন শস্যই তুষারপাত সহ্য করতে পারে না এমনকি খুব ঠাণ্ডা আবহাওয়া কোন কোন সময় আখ ও ধানের চারার বৃদ্ধি ভীষণভাবে ব্যাহত করে। শীতপ্রধান দেশে তুষারপাত সহ্য করতে পারে এমন সব শস্যের জাত প্রজনন দ্বারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব শস্যের মধ্যে গম, যব, আলফালফা প্রভৃতি শস্যের বিভিন্ন জাত প্রধান।
কুয়াশা : কখনও কখনও জলীয়বাষ্প ঠাণ্ডায় ঘনীভূত হয়ে ভূ—পৃষ্ঠের নিকটবতীর্ বায়ুস্তরে ভাসমান ধুলিকণাকে আশ্রয় করে এবং ঘনীভূত হয়ে ধোয়ার আকারে ভাসতে থাকে তখন তাকে কুয়াশা বলে। সাধারণত জলীয়বাষ্প পূর্ণ বায়ু কোন শীতল বস্তুর সংস্পর্শে আসলেই কুয়াশার সৃষ্টি হয়। এ দেশে আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত কুয়াশা দেখা যায়। কুয়াশার কারণে তেল ও ডাল জাতীয় ফসলের উপকার হয়। আবার অতিরিক্ত কুয়াশার কারনে আমের মুকুল নষ্ট হয়, রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচল সমস্যা হয়। নৌপথে ফেরী চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি হয়। শীতকালে সমুদ্রের বায়ু জীলয়বাষ্প পূর্ণ হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে। এ কুয়াশা পর্বত অপেক্ষা উপত্যকায় বেশি সৃষ্টি হয়। কারণ, বেলা বাড়লে সূর্যের উত্তাপে পানিকণাগুলো আবার জলীয় বাষ্পরূপে বায়ুতে মিশে যায়।
আরও দেখুন :
- ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৮
- গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৭
- মৗমাছি পালন ও মধু উৎপাদন , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৬
- মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৫
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা