বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.৩ নং পাঠ।

 

বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থাবাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

 

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি উন্নয়নে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, জমির খহুবিখন্ডতা, প্রশস্ত রাস্তা ঘাটের অভাব এবং কৃষকের সকল ধরনের উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির ক্রয় ক্ষমতা না থাকায় এদেশে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব নাও হতে পারে। যে সকল কৃষি যন্ত্রপাতি আমাদের আবহাওয়ায় মানানসই এবং ফসল উৎপাদনে একান্তই প্রয়োজন সেগুলো দিয়ে বর্তমানে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। সেই সাথে হাঁস—মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারে তাদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও ব্যবহার হচ্ছে।

বাংলাদেশে খরিপ মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। ফলে এসময় বন্যায় অনেক ক্ষয়—ক্ষতি হয়। শীতকালে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানির অভাবে রবি ফসলের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। বন্যা নিয়ন্ত্রন ও সেচ প্রদানের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প রয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্ণ নয়। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ যা উৎপন্ন হয় তা নিজেদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। বিভিন্ন খাদ্যশস্য, দুধ ইত্যাদি আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ কম তাই অধিকাংশ পণ্যই আংশিক আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান পেশা হলো কৃষি যেখানে মোট শ্রমশক্তির ৬৮.৫% নিয়োজিত।

বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় ৩৫% আসে কৃষজাত দ্রব্য থেকে। এদেশের জমি উর্বর হলেও কৃষক দরিদ্র। নতুন নতুন প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ও কৃষি উপকরণ ব্যবহারে পশ্চাদপদ থাকায় প্রতি একক জমিতে উৎপাদন সন্তুোষজনক নয়। ধান, গম, পাট, আখ, তামাক, চা, তৈলবীজ, ডাল, শস্য এবং আলু এদেশের প্রধান ফসল। বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি এবং মশলা জাতীয় ফসলের চাষও এদেশে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে কী পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপন্ন হয় তা নিম্নে (ছক — ১) দেয়া হলো:

Capture 225 বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা

উপরোক্ত ছক হতে দেখা যায় যে ধান, গম, ডাল ফসল, মশলা জাতীয় শস্য, গোল আলু এবং শাকসব্জির ফলন ১৯৯১—৯২ সনের তুলনায় ১৯৯৩—৯৪ সনে বেড়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। নিকট অতীতেও এখানকার অভ্যন্তরীণ জলাশয় মাছে ভরপুর ছিল। দেশের মৎসজীবি সম্প্রাদায় অভ্যন্তরীণ প্লাবন ভূমিতে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ ও সেখানে উৎপাদিত মৎস্য সম্পদ গত তিন দশকে মারাত্বক হ্রাস পেযেছে।

বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ এবং বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি চাষ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন হ্রাস পেলেও সামুদ্রিক মৎস্য ও উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন জলজ সম্পদ হতে প্রাপ্ত মৎস্য সম্পদের উৎপাদন ধরা হয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ মেট্রিক টন যা নিম্নের ছকে (ছক — ২) দেখানো হলো:

Capture 226 বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থাCapture 227 বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থাCapture 228 বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা

মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন দেশে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে (ছক — ৩ দ্রষ্টব্য)। ১৯৯১—৯২ সনে যেখানে মাংস ও দুধের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ৩৭,৬,০০০ ও ৯,৫৪,০০০ মেট্রিক টন, ১৯৯৪—৯৫ সনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫,০৪,৭০২ ও ১৪,১১,৯৫৯ মেট্রিক টনে। ডিমের উৎপাদনও এসময়ে ১,৫৭৭ মিলিয়ন হতে বেড়ে ২,৫৩০ মিলিয়ন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টা ও সরকারী পৃষ্টপোষকতায় গবাদিপশু ও হাঁস—মুরগির খামার প্রতিষ্ঠাই সম্ভবত এই উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ।

বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment