খামার ও খামার করণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.২ , খামার হচ্ছে কৃষি উৎপাদনের একটি ইউনিট। খামার বলতে— এমন ভূখন্ড বা জমি যেখানে ব্যক্তি বা যৌথ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। যেমন: ফসল, গবাদি পশু, হাঁস—মুরগী, মাছসহ বিভিন্ন কৃষি উৎপাদন করার স্থান। খামারের জমি হতে পারে নিজস্ব মালিকানাধীন বা বর্গা বা বন্ধকী খামারে ব্যবহৃত শ্রমিক হতে পারে পারিবারিক শ্রমিক বা কেনা শ্রমিক।
খামার ও খামার করণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.২
খামারের অর্থের উৎস হতে পারে — ১। পারিবারিক উৎস, ২। ব্যাংক, ৩। অন্য উৎস।
কৃষি খামার সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থার একটি উপাদান হলো কৃষি খামার। এসব খামার উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন: ফসল উৎপাদন করলে ফসল খামার, হাঁস—মুরগী ও গবাদি পশু উৎপাদন করলে হাঁস—মুরগী ও গবাদিপশু খামার বলে। কৃষি খামার হল কৃষিজ উৎপাদনের একটি
প্রতিষ্ঠান।
একটি আদর্শ কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য
১। আদর্শ খামার এমন হতে হবে যেখানে উৎপাদনের সুষ্ঠ প্রয়োগের ফলে একক আয়তনে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যাবে এবং উৎপাদিত আয় হতে কষক ও তার পরিবার ৃ মোটামুটি সচ্ছল ও সন্তোষজনভাবে জীবিকা নির্বাহ করে। আদর্শ খামারের আয়তন বিভিন্ন হতে পারে। তবে বাংলাদেশের জন্য ৩—৪ একর জমি একটি আদর্শ খামার।
একটি আদর্শ কৃষি খামারে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন—
১। কৃষি খামারের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন থাকতে হবে।

২। কৃষি খামারের পণ্য পরিবহন, উৎপাদনের উপকারণাদি ও বাজারজাতকরণ যাতে সহজে করা যায় সে জন্য বড় রাস্তার পাশে ও লঞ্চ ঘাটের নিকটে হতে হবে।
৩। আদর্শ কৃষি খামারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকবে।
৪। খামার পণ্য পরিবহনের জন্য যানবাহন থাকবে। খামারের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে।
৫। অধিক ও নিরবচ্ছিন্নভাবে মুনাফা অর্জনের জন্য খামারের কার্যক্রম দক্ষভাবে পরিচালিত হবে।
খামারের শ্রেণি বিভাগ
কোন নির্দিষ্ট স্থানে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার আওতায় উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণাদি ব্যবহার করে পণ্য সামগ্রী উৎপাদন খামার বলে। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে খামার শ্রেণি বিভাগ করা হয়েছে।
১। কৃষির বিভিন্ন খাতের উপর ভিত্তি করে—
ক) ফসল খামার : খামারে একক বা মিশ্রভাবে একাধিক মাঠ বা উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল আবাদ করা হয় যা থেকে কাঙ্খিত ফসল বা বীজ পাওয়া যায়।
খ) পোল্টি্র খামার : যখন খামারে কোন পাখি জাতীয় প্রাণি যেমন: হাঁস, মুরগী, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদি মাংস বা ডিমের জন্য পালন করা হয় তখন তাকে পশু—পাখি খামার বলা হয়। চিত্র ১৭.২.৩ : গবাদি পশু খামার
গ) গবাদি পশুর খামার : গৃহপালিত গবাদি পশুর মধ্যে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া অন্যতম।
ঘ) মৎস্য খামার : পরিকল্পিত ভাবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ একক বা মিশ্র ভাবে চাষ করা হয় তাকে মৎস্য খামার করা যায়। খামারে শুধু মাছের পোনা উৎপাদন করা হলে তখন তাকে হ্যাচারী বলে।
ঙ) দুগ্ধ খামার : বসতবাড়ির উঁচু স্থানে পারিবারিক দুগ্ধ খামারের উন্নত জাতের গাভী পালন করা যায়। চ) নার্সারী : বন নার্সারী বিভিন্ন ফুল, ফল ও বনজ গাছের চারা উৎপাদন করা হয়। আকার / আয়তনের দিক থেকে
ক) পারিবারিক খামার এই খামার থেকে উৎপাদিত পণ্য নিজে এবং তার পরিবার মোটামুটি সন্তোষজনকভাবে জীবন নির্বাহ করেত পারে। এতে মূলধন বিনিয়োগ কম হয় এবং ঝুঁকি সম্ভাবনা নেই।
খ) বাণিজ্যিক খামার এই খামারের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। বৃহৎ পরিসরে খামারের যখন নির্দিষ্ট কিছু পণ্য উৎপন্ন করা হয় যা বিক্রি বা রপ্তানী করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।
পণ্যের উৎপাদন অনুসারে
১। মিশ্র খামার (গরীবফ ড়হ উরাবৎংরভরবফ ঋধৎস): একটি খামারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হয়।
২। বিশেষায়িত খামার : একটি মাত্র বা একই ধরনের পণ্য উৎপাদন করে। যেমন: চিংড়ির খামার, চা বাগান ইত্যাদি।
মালিকানা ভিত্তিতে খামার
ক) ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার: একজন মালিকের তত্ত্বভবধানে খামারের ব্যবস্থাপনাসহ যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালিত হয়।
খ) যৌথ খামার: এলাকার কয়েকজন কৃষক একত্রিত হয়ে যৌথভাবে খামার পরিচালিত করে। গ) রাষ্ট্রীয় খামার: এ ধরনের খামার পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত হয়।
খামার করণ
খামারে ফসল, গবাদি পশু, মৎস্য প্রভৃতির যে কোনটি অথবা মিশ্রভাবে একাধিক উৎপাদনের কার্যক্রম পরিচালনাকে খামারকরণ বুঝায়। খামার একজন বা একাধিক কৃষকের সুগঠিত উৎপাদনমুখী। ব্যবস্থাপনা যেখানে প্রতিটি পণ্যের অর্থনৈতিক উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে যা প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই খামারকরণ বা ফার্মিং হল এক ধরনের উৎপাদন মুখী প্রতিষ্ঠান যেখানে ভূমি, কষক, মূলধন, সংগঠন ইত্যাদির উপযুক্ত ব্যবহরের মাধ্যমে খাদ্য ও অন্যান্য আবশ্যকীয় পণ্য দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। খামার করণের মূল উদ্দেশ্য হলÑ
১। পরিকল্পিতভাবে ফসল উৎপাদন।
২। সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
৩। খামারের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি।
৪। মানসম্পন্ন অধিক ফসল উৎপাদন। ৫। অধিক মুনাফা লাভ।
আরও দেখুন :
- কৃষি অর্থনীতি , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.১
- ব্যবহারিক : কৃষি ও বৃক্ষ মেলা পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরী , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৬ , পাঠ – ১৬.৪
- উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৬ , পাঠ – ১৬.৩
- বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৬ , পাঠ – ১৬.২
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা