ডিম অনুর্বর হওয়ার কারণ, ডিমের যত্ন ও সংরক্ষণ , ইউনিট – ৮ , পাঠ – ৮.১ , অনুর্বর ডিম মোরগ মুরগির মিলন ব্যতীত উৎপাদিত ডিমকে অনুর্বর ডিম বা অনিষিক্ত ডিম বলে। ডিম ফোটানোর হার ডিমের উর্বরতার সাথে সম্পর্কিত। অনুর্বর ডিম থেকে কখনও বাচ্চা ফোটে না। এ জন্য ডিম অনুর্বর হওয়ার কারণ জানা প্রয়োজন। নিচে ডিম অনুর্বর হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিম অনুর্বর হওয়ার কারণ, ডিমের যত্ন ও সংরক্ষণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ৮ , পাঠ – ৮.১
১. অপর্যাপ্ত পুষ্টি: মোরগের শুক্রাণু দিয়ে ডিম নিষিক্ত হয়। তাই মোরগের পুষ্টির অভাব হলে বীর্যে মৃত শুক্রাণুর সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে ডিম অনুর্বর হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে।
২. মোরগ ও মুরগির অনুপাত: সাধারণত হালকা জাতের ৮—১০টি মুরগির জন্য একটি মোরগ এবং ভারি জাতের ৫—৬টি মুরগির জন্য কমপক্ষে ১টি মোরগ রাখা অত্যাবশ্যক। মোরগ—মুরগির অনুপাত ঠিক না থাকলে প্রজনন হার কমে যায় এবং ডিম নিষিক্ত না হলে বাচ্চা পাওয়া যায় না। লক্ষ্য রাখতে হবে নির্বাচনকৃত মোরগের স্বাস্থ্য যেন ভালো থাকে।
৩. মুরগির বয়স: ডিম পাড়া শুরুর প্রথম ৬—৮ মাস ডিম ফোটানোর হার সবচেয়ে বেশি থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম ফোটানোর হার কমতে থাকে। তবে মুরগির বয়স এক বছর পর্যন্ত ডিম ফোটানোর হার ভালো থাকে। মোরগের ক্ষেত্রে ১ বছর পর্যন্ত প্রজনন হার ভালো থাকে। বয়স বাড়লে ডিম অনুর্বর হওয়ার সংখ্যা বাড়ে।
৪. আন্তঃপ্রজনন: আন্তঃপ্রজনন বলতে বুঝায় পরিবারের অথার্ৎ খুব কাছের সম্পর্কেও মোরগ—মুরগির মধ্যে প্রজনন। আন্তঃপ্রজননের ফলে অনুর্বতার হার বাড়ে এবং প্রাপ্ত বাচ্চায় বেশির ভাগ থেকে অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়।
৫. রোগ ও শারীরিক অক্ষমতা: মোরগ—মুরগির উভয়ের ক্ষেত্রে রোগ একটি বিশেষ কারন যার ফলে ডিম অনুর্বর হতে পারে। রোগাক্রান্ত মুরগির থেকে প্রাপ্ত ডিম অনুর্বর হওয়ার সম্ভবনা থাকে। মুরগির ওজন অতিরিক্ত হলে প্রজনন অঙ্গের মাধ্যমে শুক্রাণু সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারবে না ফলে ডিম অনুর্বর হয়।
৬. ঋতুর প্রভাব: অতিরিক্ত গরম পড়লে সাময়িকভাবে ডিমের উর্বরতা কমে যায়। শীতকালে পাড়া ডিম গ্রীষ্মকালের ডিমের চেয়ে বেশি উর্বর হয়।
৭. কর্তৃত্ত্ব: ঝাঁকের মধ্যে সাধারনত মোরগ মুরগির উপর কর্তৃত্ব খাটিয়ে থাকে। যদি বিপরীত ঘটনা ঘটে তবে মিলন ঘটে না এতে অনুর্বর ডিম উৎপাদন হয়। অন্যদিকে, মোরগ আক্রমণাত্বক হলে মুরগি ভয় পায় এবং লুকিয়ে থাকে, ফলে ডিম অনুর্বর হয়।
৮. ভিটামিন ও খণিজপদার্থের অভাব: মোরগের উর্বরতা বাড়ানোর জন্য খাদ্যে ভিটামিন ও খণিজপদার্থের অভাব পূরণ করা বাঞ্চনীয়। বিশেষ করে খাদ্যে দীর্ঘদিন হতে ভিটামিন ই এর পযার্প্ততা না থাকলে মোরগ বন্ধা হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। এতে অনুর্বর ডিম উৎপাদিত হয়।
৯. মোরগের বয়স: অপরিপক্ক মোরগকে প্রজনন কাজে ব্যবহার করলে অনুর্বর ডিম পাওয়া যায়।
১০. মুরগির বাসস্থান: প্রজননের জন্য ব্যবহৃত ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পযার্প্ত আলো ও বায়ু চলাচল থাকতে হবে। বাসস্থানের উপর ডিমের উর্বরতা অনেকাংশে নির্ভর করে।
ফোটনোর ডিমের যত্ন ও সংরক্ষণ
ফোটানোর ডিমের সঠিক পরিচর্চা দরকার। ডিম বসানোর পূর্ব পর্যন্ত যত্ন নিলে ডিম ভালো থাকে। ফোটানোর ডিম বেশি দিন সংরক্ষণ করা হলে ডিম ফোটার হার কমে যায়। খোসার আকারভেদে ৮,০০০—১০,০০০ ছিদ্র থাকেব। এসব ছিদ্র দিয়ে সহজেই রোগজীবাণু ডিমের ভিতর প্র বশ করতে পারে এবং ডিম পচে যায়। ডিম সংরক্ষণ করার জন্য একটি পরিষ্কার স্থান নিবার্চন করতে হবে।
ডিম সংরক্ষণের সময় নিম্নোক্ত ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা উচিত—
তাপমাত্রা: ডিম সংরক্ষণ জন্য খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা কোনোটাই ভালো না। বাচ্চা ফোটানোর ডিম ৫০—৫৫ ফারেনহাইট বা ১০—১২ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে। বানিজ্যিকভাবে বড় বড় হ্যাচারিতে (যেখানে ডিম ফোটানো হয়) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ডিম সংরক্ষণ করা হয়।
আর্দ্রতা: বাচ্চা ফোটানোর ডিম সংরক্ষণের জন্য আপেক্ষিক আদ্রতা ৬৫—৭৫%—এ রাখতে হবে। আর্দ্রতা কম হলে ডিম থেকে জলীয় বাষ্পের মাধ্যমে জলীয় অংশের পরিমাণ কমে যায়, ফলে ডিম ফোটার হার কমে যায়। জলীয় অংশের পরিমাণ ১৪%—এর বেশি কমে গেলে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর হার অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। ডিম নাড়াচাড়া করা: ফোটানোর ডিম বেশি দিন সংরক্ষণ করলে তা ঘুরিয়ে দিতে হবে যাতে ডিমের সবদিকে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ঠিক থাকে। সংরক্ষণের সময় ডিমের মোটা অংশ ট্রের উপর দিকে এবং সরু অংশে নিচের দিকে করে রাখতে হবে।
ফোটানোর ডিম সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হবে। অতিরিক্ত ঝাঁকানো হলে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায়। ডিম সংগ্রহ: ফোটানোর ডিম দিনে ৩ বার সংগ্রহ করতে হবে। ডিম দীর্ঘক্ষণ ডিম পাড়ার বাক্সে রাখলে তা অতি দ্রুত জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় মুরগিকে ঠোঁট দিয়ে ডিম ভেঙ্গে ফেলতে দেখা যায়। সে কারণে যত দ্রুত সম্ভব ফোটানোর ডিম ডিম পাড়ার বাক্স থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
আরও দেখুন :
- ব্যবহারিক : পোল্ট্রির খামার সরেজমিনে পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়ন , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৭ , পাঠ – ৭.৪
- ডিম পাড়া মুরগির খামার স্থাপন , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৭ , পাঠ – ৭.৩
- ব্রয়লার মুরগির খামার স্থাপন , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৭ , পাঠ – ৭.২
- পোল্ট্রি খামারের পরিকল্পনা ও আয়-ব্যয়ের হিসাব , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৭ , পাঠ – ৭.১
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা