নাটোরে পদ্মার চরে ঢেমসি চাষের সফল অভিষেক

নাটোর, ১৩ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): নাটোরের কৃষিতে নতুন সংযোজন হিসেবে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে ঢেমসি, যা একটি দানাদার সুপারফুড শস্য। লালপুর উপজেলার পদ্মার চর এলাকায় এই অপ্রচলিত ফসলের চাষ শুরু হয়েছে, যা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।

পদ্মা চরের বিলমাড়িয়া এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমিতে ঢেমসি চাষ করা হয়েছে। সাদা ও লালচে আভার শুভ্র ফুলের সৌন্দর্যে ভরে গেছে মাঠ। ফাল্গুনের বাতাসে ঢেমসি গাছের সবুজ পাতার সাথে সাদা ফুলের মেলবন্ধন বসন্তের অনন্য রূপ তৈরি করেছে।

ঢেমসি চাষের অগ্রদূত কৃষক মুনতাজ আলী

লালপুরের আদর্শ কৃষক মুনতাজ আলী প্রথমবারের মতো ঢেমসি চাষ করেছেন। প্রতিদিন আশপাশের অসংখ্য কৃষক তার জমিতে এসে চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে জানছেন। একই এলাকার কৃষক রবিউল বলেন, “আগামী বছর আমার জমিতেও ঢেমসি চাষ করবো।”

মুনতাজ আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ঢেমসি চাষ করতে তার খরচ হয়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা। সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন নেই, এমনকি সেচও লাগে না। আগাছাও তুলনামূলকভাবে কম হয়। তিনি বলেন, “অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বপন করেছি, আশা করছি তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ফলন পাবো।”

ঢেমসি: পুষ্টিগুণ ও সম্ভাবনা

ঢেমসি, যা বৈজ্ঞানিকভাবে ফ্যাগোপাইরাম এস্কুলেন্টাম নামে পরিচিত, ইংরেজি ভাষায় এটি বাকহুইট নামে পরিচিত। এটি শস্যদানাসদৃশ বীজের জন্য চাষ করা হয় এবং মাটির আচ্ছাদনী শস্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় বলেন, “সুপারফুড হিসেবে পরিচিত ঢেমসি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, মিনারেল, ফাইবার, ভিটামিন বি, জিংক ও সেলেনিয়াম রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ও অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়ক। এটি উচ্চমূল্যের একটি সম্ভাবনাময় ফসল।”

ঢেমসি চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ জানান, এলাকার কৃষকরা ঢেমসি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি বলেন, “আশা করছি আগামী মৌসুমে ঢেমসি চাষের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং এই জমিতে মধু আহরণও সম্ভব হবে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে ঢেমসি চাষ নাটোরের চরে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কৃষকরা এর চাষাবাদে সফল হলে এটি দেশের অন্যান্য চরাঞ্চলেও বিস্তৃত হতে পারে।