নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে আলাপ করবো আজ। বেগুন একটি সর্বাধিক জনপ্রিয় সবজি। বছরজুড়েই এটি চাষ করা যায়। নিরাপদ বেগুন চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে। এসব হলো- জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য, বালাই দমন ও সার প্রয়োগ।

দেশে প্রায় শতাধিক জাতের বেগুন পাওয়া যায়। যেমন- পটলা, ঝুপি, তারাপুরী, কাজলা, ইসলামপুরী  নয়নতারা, খটখটিয়া, শিংনাথ। এসব স্থানীয়, স্থানীয় উন্নত, বারি ও হাইব্রিড জাত সারা দেশে বছরজুড়ে চাষ হয়।

বেগুন চাষ ৪ নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

 নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

 

চারা উৎপাদন ও সার প্রয়োগ

বেগুনের জমি তৈরি:

আগাছা বেছে মাটি তৈরি করতে হয়। শীতকালীন বেগুন আগস্ট-অক্টোবর ও বর্ষাকালীন জানুয়ারি-এপ্রিলে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। ২৫ গ্রাম বীজ ৩ বর্গ মিটার বীজতলায় বুনতে হয়। বীজতলায় ৫০ মেস নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায় ভাইরাস রোধ করা সম্ভব। গজানোর ১০-১২ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায় লাগাতে হয়। চারার বয়স ৩০-৪০ দিন অথবা ৪-৬টি পাতা হলে রোপণ করতে হবে।

বেগুনের সার:

জাতের ফলন ক্ষমতা ও অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার দিতে হবে। গাছে অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার ও চুন প্রয়োগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

 নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

 

বেগুনের রোগ দমন ব্যবস্থাপনা:

বেগুনের গোড়া পচা, ঢলেপড়া ও ক্ষুদে পাতা রোগ:

গোড়া পচা দমনের জন্য অটোস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঢলেপড়া রোগ ও খাটো আকৃতির পাতা রোগ দমনে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক এবং ভাইরাস বাহক সাদা মাছি (ইমিটাফ/নাইট্রো প্রয়োগ) দমন করতে হবে।

বেগুনের ফমপসিস রোগ (Phomopsis) :

ফমপসিস রোগ দমনে বীজ শোধন করার জন্য গরম পানিতে (৫১ ডি. সে.) ১৫ মিনিট রাখা, অটোস্টিন ০.১ গ্রাম/৫০ গ্রাম বীজ, মূল জমিতে অটোস্টিন ১০ গ্রাম/৫লিটার পানি স্প্রে করতে হবে।

বেগুনের ডেম্পিং অফ বা চারা ধসা/ঢলে পড়া রোগ:

বীজতলায় ‘ডেম্পিং অফ’ ছত্রাক রোগের আক্রমণ হয়। চারার কাণ্ড ও শিকড়ে রোগ ছড়িয়ে পড়লে চারা মারা যায়। রোভরাল (২ গ্রাম/লি) বা কম্প্যানিয়ন (২ গ্রাম/লি) ৮ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। অটোস্টিন দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

বেগুন চাষ ৪ নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

বেগুনের পোকা:

ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, মেলিবাগ, বিটল, সাদা মাছি ও জেসিড। এসব পোকা দেখা গেলে যথানিয়মে ট্রেসার ২টি স্প্রে তারপর মারশাল এই চক্র অনুসরণ করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা:

এই পোকার আক্রমণ অধিক হলে সর্বাধিক ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত ফলন ক্ষতি হতে দেখা গেছে। বেগুন ছাড়াও এ পোকা টমেটো, আলু, মটরশুঁটি ইত্যাদি সবজিকেও আক্রমণ করতে পারে। ফল বিস্বাদ, খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায়। পোকা দমন করতে ১-২টি ফসল মৌসুমে গড় দৈনিক হিসাবে শতাধিক বার অতি বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করার উদাহরণ রয়েছে।

 

বেগুন চাষ ১ নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

 

বেগুন ট্রেসার মার্শাল প্রয়োগ:

চারা রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমিতে মথ দেখার সাথে সাথে ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ৪ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। জমিতে লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ডগা অপসারণ করে একই হারে পুনরায় ট্রেসার প্রয়োগ করতে হবে। এর ৭-১০ দিন পর মার্শাল ২০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৩০ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোপণের কয়েক দিন পর থেকেই এ পোকার আক্রমণ হয় এবং শেষ ফলটি সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত এর আক্রমণ চলতে থাকে। গ্রীষ্মকালে জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ২০-৩০ দিন এবং শীতকালে ৩৪-৪৫ দিন লাগে।

বছরে এরা ৫ বা বেশি বংশবিস্তার করতে পারে। মে-অক্টোবর ৩টি বংশ এবং নভেম্বর-এপ্রিল মাসের মধ্যে ২টি বংশবিস্তার হয়। স্ত্রী মথ পাতার উল্টো দিকে, কুঁড়িতে, বোঁটায় ও ডগায় ডিম পাড়ে। গ্রীষ্মকালে ৩-৫ দিন এবং শীতকালে ৭-৮ দিনে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়।

বেগুন ক্ষেতে সমন্বিত বালাই দমন :

বেগুন ক্ষেতে প্রতি সপ্তাহে পোকার উপস্থিতি যাচাই করতে হবে। আক্রান্ত ডগা ও  ফল কীড়াসহ ছিঁড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। নিরাপদ বেগুন উৎপাদনে ব্যাগিং ও অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বেগুনের জমি গভীরভাবে চাষ-মই দিয়ে সমান করে আগাছামুক্ত করতে হবে। জমি স্বল্প ব্যয়ে আগাছামুক্ত রাখতে চাইলে চারা রোপণের ২-৩ দিনের মধ্যে মাটিতে পানিডা ৩৩ ইসি বিঘাতে ৩০০ মিলি প্রয়োগ করতে হবে।

জমি তৈরির শেষ চাষে কার্বোটাফ ৫জি ১.৫ কেজি/বিঘা দিতে হবে। সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া অতিরিক্ত দেওয়া যাবে না। রোপণের ১৫ দিন থেকে সপ্তাহে একদিন ক্ষেতে জরিপ করতে হবে। ক্ষেত আগাছানাশক (পানিডা) দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুল আসার আগে ডগা বা পাতায় পোকা দেখলে পোকা ধ্বংস করাসহ বালাইনাশক দিতে হবে।

বেগুন চাষ ২ নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

বেগুন বীজ উৎপাদনে করণীয়:

পরিপক্ব ফল হলদে হলে সংগ্রহ করা। সপ্তাহপর ফলের চামড়া ছিলে বীজসহ মাংসল অংশ কেটে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৮ শতাংশ হবে।

বিটি বেগুন ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ যা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে। বিটি (ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস) ব্যাকটেরিয়া থেকে জিনকে পৃথক করে বেগুনে স্থানান্তর করা হয়। এই জিন বেগুনে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকাকে বাধা দেয়।

আরও পড়ুন :

Leave a Comment