পাঙ্গাশ মাছ চাষের পদ্ধতি , পাঙাশ মাছ অল্প নোনা জলে ও মিষ্টি জলে হয়। অন্যান্য মাছের তুলনায় এই মাছের চাহিদা কম। কারণ এই মাছে একটা গন্ধ আছে যা সবাই সহ্য করতে পারে না। অনেক চাষিদের এই মাছের চাষ সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নেই। কিন্তু আস্তে আস্তে বাজারে এই মাছের চাহিদা বাড়ছে। এই মাছে কাঁটা অনেক কম। এই মাছের ফলন রুই বা কাতলা মাছের থেকে চার পাঁচ গুণ বেশি।
Table of Contents
পাঙ্গাশ মাছ চাষের পদ্ধতি
পাঙ্গাশ মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন:
যেকোনো জলাশয় বা পুকুর যেখানে সূর্যালোক ও বাতাস চলাচল করে সেখানে পাঙাশ মাছ পালন করা যেতে পারে। পুকুরকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে। পুকুরের জলের গভীরতা ২-২.৫ মিটার হতে হবে। বিঘা প্রতি ৩০ কেজি চুন জলে মিশিয়ে পুকুরে দিয়ে দিতে হবে। চুন দেওয়ার ৭/১০ দিন পরে জলের গভীরতা অনুযায়ী হেক্টর প্রতি ১৫০০-২১০০ কেজি মহুয়ার খোল দিতে হবে। এরপরে ১০-১২ দিন পরে হেক্টর প্রতি ৪২০০-৫৫০০ কেজি গোবর মেশাতে হবে। এর ১০-১২ দিন পরে পুকুর বা জলাশয় মাছের চারা ছাড়ার উপযুক্ত হয়।
পাঙ্গাশ মাছের চারা প্রয়োগের নিয়ম:
বর্ষার শেষে এই মাছের পোনা চাষ করা যেতে পারে। বিঘাপ্রতি ১০-১৫ গ্রাম ওজনের ৫০ হাজার বা হেক্টরপ্রতি ৩ লাখ ৫০ হাজার চারাপোনা ছাড়তে হবে। মৃত চারা থাকলে সেগুলোকে তুলে নিতে হবে এবং কিছু চারা পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ৩ শতাংশ সাধারণ লবণ পানিতে বা ফরমালিন দ্রবণে ২-৩ মিনিট রাখতে হবে। রোদ ওঠার আগে বা দিনের শেষে চারাগুলোকে পানিতে ছাড়তে হবে।
পাঙ্গাশ মাছের চারা পালন:
মাছের চারা ছাড়ার পরে রাসায়নিক সার দেওয়ার দরকার হয় না। প্রতি মাসে বিঘাপ্রতি ৪০-৫০ কেজি চুন পানিতে মিশিয়ে পুকুরে দিয়ে দিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে দু’একবার পানি পাল্টানো যেতে পারে। এই সময় ২০-৩০ শতাংশ পানি বের করে নতুন পানি দেওয়া যায়। শীতকালে পানি পরিবর্তন করা দরকার। এই মাছ ঠাণ্ডা পছন্দ করে না। তাই ঠাণ্ডার সময় পানি ফেলা উচিত নয়। এরফলে এদের শরীরে ক্ষত হতে পারে যা এদের পক্ষে ভালো নয়। এই সময় এদের খাওয়া-দাওয়া কমে যায় তাই এই সময় এদের দিকে ভালো করে নজর রাখতে হবে।
পাঙ্গাশ মাছের খাবার:
পুকুরে বা জলাশয়ে মাছ ছাড়ার দু’একদিন পর থেকে এদের পরিপূরক খাবার সকাল ৬-৮টার মধ্যে ওজনের ৩% হারে সাত থেকে দশদিন ধরে দিতে হবে। সারা দিনে একবারই খাবার দিতে হবে। এরপরে ওজনের ৫-৮% হারে খাবার দিতে হবে। খাবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। যদি মাছ ঠিকমত খাবার না খায় তাহলে খাবার বন্ধ রাখতে হবে এবং নজর রাখতে হবে যে মাছ কোনোপ্রকার অস্বাভাবিক আচরণ করছে কিনা। মাছের ওজন ৪০০-৫০০ গ্রাম হলে সকালের খাবারে মটর সেদ্ধ (৬০%) ও বিকেলের খাবারে বাদামের খোল (৪০%) মেশানো যেতে পারে।
পাঙ্গাশ মাছ ধরার কৌশল:
বছরে সাধারণত ৩ বার এই মাছ ধরা হয়। বাজারে সাধারণত ৪০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের মাছের চাহিদা বেশি। গরমকালে এই মাছ বেশি বাড়ে, ছাড়ার প্রথম ৩-৪ মাস এই মাছের সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পায় তাই এই সময় এদের বাড়তে দেওয়া উচিত। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে এদের ওজন ৭০০ গ্রামের ওপরে হয় এই সময় সব মাছ তুলে বিক্রি করে দিয়ে নতুন করে চারা ছাড়লে শ্রাবণ মাসে আবার ৭০০ গ্রাম ওজনের মাছ হয়ে যাবে যা বাজারে বিক্রি করা যাবে। এরপর আবার নতুন করে চারা ছাড়া যেতে পারে।
এরপর আশ্বিন মাসের শেষে এদের ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম হলে ৫০-৬০% মাছ বাজারে নিয়ে যেতে হবে, ওই জায়গায় ২৫-৩০% পাঙাশের চারার সাথে বিঘা প্রতি ৬০০-৭০০টি রুই ও কাতলা মাছ ছাড়া যেতে পারে। ফাল্গুন মাসে এদের ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম হলে বাজারে বিক্রি করতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা পড়ে যাবে ফলে এদের বৃদ্ধি ভালো হবে না। ঠিকমত খাবার ও পরিচর্যা করলে ৩ মাসেই এই মাছের ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম হয়ে যাবে।
পাঙ্গাশ মাছের রোগ বালাই:
এই মাছে রোগ খুব বেশি দেখা যায় না। তিন মাস পর পর মাছ তুলে নেওয়া হয়, তাই এদের মধ্যে খুব একটা রোগ দেখা যায় না। সঠিক পরিচর্যা, চুন প্রয়োগ করা ও পুকুর বা জলাশয়ের পানি পরিষ্কার রাখলে এদের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব কম হবে।
আরও দেখুন :
- বীজের শ্রেণীবিভাগ ও বীজের অপরিহার্য অঙ্গসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-১ , পাঠ-১.২
- বীজের সংজ্ঞা, প্রকৃত ও কৃষি বীজের মধ্যে পার্থক্য এবং বীজের গুরুত , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-১ , পাঠ-১.১
- বীজ ও বীজ প্রযুক্তি | সূচিপত্র | কোড – ১১০২
- মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা