ব্যাবহারিক : ফরমালিন শনাক্তকারী কীট দ্বারা ফরমালিনযুক্ত মাছ শনাক্তকরণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৫ , পাঠ -৫.৪ , প্রাসঙ্গিক তথ্য: ফরমালডিহাইড বা মিথানল গ্যাসের ৪০% জলীয় দ্রবণকে ফরমালিন বলে। ফরমালিন মূলত: জীবাণুনাশক রাসায়নিক তরল পদার্থ যা ল্যাবরেটরীতে নমুনাসমূহ বিকারের মধ্যে ফরমালিন দ্বারা সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া উদ্ভিদ বা প্রাণীর অংশ বিশেষ সংরক্ষণের জন্য এবং মৃতু প্রানী, মানুষ প্রভৃতি সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা অনেক সময় খাদ্যদ্রব্যে বা মাছে ফরমালিন মিশিয়ে দেয়। সুতরাং মাছে ফরমালিন দেয়া হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার ।
ব্যাবহারিক : ফরমালিন শনাক্তকারী কীট দ্বারা ফরমালিনযুক্ত মাছ শনাক্তকরণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৫ , পাঠ -৫.৪
ভূমিকা বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে অসংখ্য পুকুর ডোবা, খাল বিল, নদ—নদী, হাওর—বাওড় ও বিস্তীর্ণ প্লাবন ভূমি রয়েছে। বাংলাদেশের এ বিশাল জল রাশি অপরিমেয় মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। এদেশের স্বাদু পানিতে রয়েছে ২৭২ প্রজাতির মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং সামুদ্রিক উৎসে রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ ও ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি। মাছ পঁচনশীল দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম হওয়ায় মাছের পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য এবং পঁচন রোধ করার লক্ষ্যে মাছ আহরণের পর থেকেই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন হয়। মাছ ও চিংড়ি পঁচনশীল দ্রব্য তাই এদের আহরণের পর দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য সঠিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রক্রিয়ায় যে কোনো ধরনের ক্রটি বা অবহেলার জন্য একদিকে যেমন মাছ বা চিংড়ির পঁচন ধরে অপরদিকে এদের বাজারজাতকরণও বাধাগ্রস্ত হয়।
এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণের ধারনা ও প্রয়োজনীয়তা, মাছ পঁচনের কারণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি, মাছ পরিবহন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ পদ্ধতি, চিংড়ি পরিবহন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ পদ্ধতি, এবং ফরমালিন শনাক্তকারী কীট দ্বারা ফরমালিনযুক্ত মাছ শনাক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে
নিরাপদ মাছের (ফরমালিনমুক্ত) লক্ষণসমূহ :
* দেহে পিচ্ছিল পদার্থ থাকে।
* মাছ সহজে পঁচে যায়।
* মাছে মাছি পড়ে।
* মাছের স্বাভাবিক গন্ধ থাকে।
* ফুলকা লালচে বর্ণের থাকে।
* দেহ ভেজা থাকে।
* মাংশপেশি এবং অঁাইশ নরম থাকে।
* চক্ষু স্বাভাবিক থাকে।
ফরমালিনযুক্ত মাছের লক্ষণসমূহ :
* মাছের গায়ে মাছি বসে না।
* মাছ সহজে পঁচে না।
* ফরমালিনের হালকা কটু গন্ধ থাকবে।
* মাছ অসার বা শক্ত মনে হবে।
* মাছের শরীর অনেকটা রাবারের মত মনে হবে।
* মাছের দেহের স্বাভাবিক গন্ধ থাকবে না।
* মাছের ফুলকা কালচে এবং আইশ শুষ্ক মনে হবে।
* চক্ষু ফ্যাকাশে ও ভিতরের দিকে থাকে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
ক. ফরমালিন শনাক্তকারী কিট। খ. একটি প্লেট বা ট্রে। গ. ওয়াশ বোতল। ঘ. বিকার। ঙ. পাতিত পানি। চ. মেজারিং সিলিণ্ডার।
পরীক্ষা পদ্ধতি :
১. প্রথমে বাজার থেকে সন্দেহযুক্ত মাছ সংগ্রহণ করে ট্রে—এর উপর রাখতে হবে।
২. এবার ওয়াশ বোতলের পাতিত পানি ব্যবহার করে মাছটি ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩. ধোয়ার পর সেই পানি সংগ্রহ করে ৫ মিলি পানি একটি টেস্ট টিউবে রাখতে হবে।
৪. এবার ফরমালিন কীট থেকে দ্রবণ—১ এর ১৫ ফোটা, মাছ ধোয়া পানির মধ্যে ফেলতে হবে এবং ১৫ সেকেন্ড ঝাঁকাতে হবে।
৫. অতপর ফরমালিন কীটের দ্রবণ—২ একইভাবে ১৫ ফোটা উক্ত টেস্ট টিউবে মাছ ধোয়া পানির মধ্যে আবার ফেলতে হবে এবং ১৫ সেকেন্ড ঝাঁকাতে হবে।
৬. একইভাবে দ্রবণ—৩ উক্ত টেস্ট টিউবে আবার ১৫ ফোটা ফেলে ১৫ সেকেন্ড ঝাঁকাতে হবে এবং রঙ পরিবর্তন লক্ষ করতে হবে।
পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত :
১. যদি মিশ্রিত দ্রবণ সবুজাভ বর্ণ থেকে লালচে রং—এ পরিবর্তন হয় তবে মাছটিতে ফরমালিন ছিল।
২. যদি রং অপরিবর্তিত অথবা রংহীন হয় তাহলে বুঝতে হবে মাছে ফরমালিন ছিল না।
আরও দেখুন :
- চিংড়ি পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৫ , পাঠ -৫.৩
- মাছ পরিবহন ও বাজারজাতকরণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৫ , পাঠ -৫.২
- মাছ পঁচনের কারণ ও সংরক্ষণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৫ , পাঠ -৫,১
- ব্যবহারিক : বাহ্যিক লক্ষণ দেখে সুস্থ রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্তকরুন , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৪ , পাঠ -৪.৪
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা