বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র , কৃষি মূলত, কষি বলতে ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে জমির চাষাবাদকে বুঝায়। থাকতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন, প্রতিরক্ষা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ এবং ফসলের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য জ্ঞানের ব্যবহারকে কৃষি বলে। কৃষির প্রধান উপাদান হল মাটি। অর্থাৎ মাটিকে ব্যবহার করে যে কোন উৎপাদনকে কৃষি বলে অবহিত করা যায়। যেমন:- মাছ চাষ। মাছ চাষের জন্য পুকুরের প্রয়োজন, আর পুকুরের গুণগত মান মাটির গুণগত মানের উপর নির্ভর করে। অতএব, মাছ চাষকেও কৃষি বলা যাবে।
বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র, পাঠ—১.১
বিজ্ঞানের যে শাখায় কৃষির উৎপাদন প্রযুক্তি ও কৃষি বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়াদি জানা যায় তাকে কৃষি শিক্ষা বলে ।
কৃষি বিপ্লবের বিভিন্ন ধাপ
আজকে কৃষি যে অবস্থায় আছে তা একসময় এমন ছিল না। কৃষি কয়েকটা ধাপ অতিক্রম করে আজকের অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।
যেমন:
১। আদি ধাপ।
২। পশু শিকার ধাপ ।
৩। আগুন ও লোহার হাতিয়ারের ব্যবহার ধাপ।
৪। পশুপালন ধাপ।
৫। ফসল উৎপাদন ধাপ
৬। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি।
কৃষির উপাদান :
কৃষির প্রধান উপাদান হল মাটি। তাছাড়া আরোও অনেক উপাদান যা কৃষির উৎপাদনের সাথে জড়িত যেমন: পানি, তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ইত্যাদি কৃষি উপাদানের অন্তর্ভুক্ত। অতএব বিজ্ঞানের যে শাখায় কৃষির উৎপাদন প্রযুক্তি ও কৃষি বিষয় সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়াদি জানা যায় তাকে কৃষি শিক্ষা বলে।
কৃষির গুরুত্ব :
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে দেশজ অর্থনীতি। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মুল উপাদান হল কৃষি। দেশের প্রায় শতকরা ৭০—৮০ ভাগ লোক গ্রামে বাস করে এবং তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে যুক্ত। ২০১৫—২০১৬ অর্থ বছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল শতকরা ১৫.৩৩ ভাগ (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৬)। দেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা প্রায় ৪৭ ভাগ সরাসরি এবং ৮০ ভাগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি খাতে নিয়োজিত। দেশের মোট রপ্তানিতে কৃষি জাত পণ্য যেমন— কাঁচাপাট, পাটজাত দ্রব্য, চিংড়ি চামড়া ও চা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নিচে বাংলাদেশের কৃষির গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
মৌলিক চাহিদা পূরণ মানুষের মৌলিক চাহিদা বলতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, ও শিক্ষাকে বুঝায়। এছাড়াও অন্যান্য চাহিদার মধ্যে রয়েছে আসবাবপত্র, জ্বালানি, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি। এসব চাহিদা পূরণে কৃষি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে মৌলিক চাহিদা পূরণে কৃষির ভূমিকা আলোচনা করা হল।
১. খাদ্য: মানুষের প্রথম মৌলিক চাহিদা হল খাদ্য। আর খাদ্যের জন্য আমরা সম্পূর্ণরূপে কৃষির উপর নির্ভরশীল। খাদ্যের বেশিরভাগ আসে কৃষি হতে। যেমন চাল, ডাল, গম, ভুট্টা, মাছ, শাকসবজি, মাংস ইত্যাদি। সুতরাং আমরা বেঁচে থাকার জন্য সম্পূর্ণরূপে কৃষির উপর নির্ভরশীল।
২. বস্ত্র: বস্ত্র মানুষের দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা। লজ্জা ও শীত নিবারণের জন্য মানুষ বস্ত্র পরিধান করে। বস্ত্র তৈরি মুল উপাদান বা কাঁচামাল সুতা আসে কৃষি হতে। যেমন, পাট, তুলা, রেশম ইত্যাদি।
৩. বাসস্থান: মানুষের তৃতীয় মৌলিক চাহিদা হল বাসস্থান। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে হলে সর্ব প্রথম তার একটা স্থায়ী বাসস্থান দরকার। আর বাসস্থান তৈরির প্রধান উপকরণ যেমন বাঁশ, কাঠ, ছন, খড় ইত্যাদি আসে কৃষি খাত হতে।
৪. ঔষধ: আদিকাল হতেই বিভিন্ন উদ্ভিদ বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরির বেশিরভাগ কাঁচামাল হচ্ছে কৃষিজাত পণ্য। যেমন: পেনিসিলিন নামক জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পেনিসিলিয়াম নামক ছত্রাক হতে তৈরি হয়।
৫. জ্বালানি: গ্রামে অধিকাংশ মানুষ জ্বালানি হিসাবে লাকড়ি, লতাপাতা, বাঁশ ইত্যাদি ব্যবহার করে। এছাড়া গোবর, খড়, পাটকাঠি গ্রামাঞ্চলের জ্বালানির একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র শিল্পে জ্বালানি হিসাবে কাঠের লাকড়ি ব্যবহার করা হয়। যেমন বেকারী শিল্প।
৬. আসবাবপত্র: আমাদের বাসস্থানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র প্রয়োজন হয়। যেমন—খাট, আলনা, চেয়ার, টেবিল, আলমারি, দরজা, জানালা ইত্যাদি। এগুলো বেশিরভাগই তৈরি হয় কাঠ ও বাঁশ দিয়ে।
৭. শিক্ষা: শিক্ষার প্রধান উপকরণ হল কাগজ। আর এই কাগজ তৈরি হয় বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য থেকে। যেমন—বাঁশ, আখের ছোবড়া ইত্যাদি। এছাড়া শিক্ষার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পেন্সিল। পেন্সিল তৈরিতে কাঠ ব্যবহৃত হয়। অতএব শিক্ষাও কৃষির উপর নির্ভরশীল।
৮. চিত্তবিনোদন: একজন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চিত্তবিনোদনের প্রয়োজন আছে। বন ও শিশু পার্কে লাগানো বিভিন্ন ধরনের ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছগাছালি চিত্তবিনোদনের জন্য একটা ভাল মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। এই কারণে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ও সুন্দরবন দেখতে যায়।
![বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র [ পাঠ - ১.১ ] বাংলাদেশের কৃষি [ ইউনিট ১ ] কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র | উচ্চ মাধ্যমিক 3 মাছ ধরা বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র [ পাঠ - ১.১ ] বাংলাদেশের কৃষি [ ইউনিট ১ ] কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র | উচ্চ মাধ্যমিক](https://agrogoln.com/wp-content/uploads/2022/08/মাছ-ধরা-300x166.jpg)
কর্মসংস্থান :
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। নিচে কর্মসং¯া’ নের ক্ষেত্রে কৃষির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।
১. বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস কৃষিকাজ।
২. দেশের প্রায় ৪৭% শ্রমিক কৃষিকাজে নিয়োজিত (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৬)।
৩. দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০—৮০% লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কষির উপর নির্ভরশীল।ৃ
৪. কৃষিপণ্য নির্ভর বিভিন্ন শিল্প কারখানায় অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে।
৫. আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। আর এক্ষেত্রে কৃষির বিভিন্ন শাখা যেমন গবাদি পশু পালন, ফুল ফল চাষ, মুরগি পালন, মাছ চাষ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা পালন কূ রে। অর্থাৎ আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কৃষির ভূমিকা অনস্বিকার্য।
৬. দক্ষ ও অদক্ষ উভয় প্রকার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের উৎস হল কৃষি।
শিল্প ও বাণিজ্য শিল্পক্ষেত্রে কৃষির বহুমুখী ব্যবহার আছে। নিচে তা আলোচনা করা হল।
১. বাংলাদেশের অনেক শিল্পের কাঁচামাল আসে কৃষিজাত পণ্য হতে। যেমন পাট, চা, বস্ত্র, কাগজ, চিনি, চামড়া, খাদ্য ইত্যাদি।
২. শিল্পজাত কৃষি পণ্য বেশি উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্প কারখানার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। ফলে শিল্পের তথা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ফলশ্রম্নতিতে বেকার সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে।
৩. কৃষিপণ্যের উপর নির্ভরশীল শিল্প কারখানার পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
অন্যান্য গুরুত্ব মানব জীবনে কৃষির বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। নিচে সেগুলো বর্ণনা করা হল।
১. কৃষি পণ্যের উৎপাদনের সাথে কোন এলাকার যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
২. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কৃষির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৩. কৃষিজাতপণ্য রপ্তানি করার মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সাথে একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় যা একটা দেশের উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা হতে সহজেই বুঝা যায় যে, মানব জীবনে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।
কৃষির ক্ষেত্রসমূহ (Sectors of Agriculture ) ফসল, পশু পাখি, বন ও মাছ প্রভৃতি কৃষির প্রধান ক্ষেত্র। এসব বিষয়সমূহ একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এসব বিষয় একত্রে কোন এলাকার সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলে। অর্থাৎ কৃষি শিক্ষার জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ফসল, পশুপাখি, বন, মাছ প্রভৃতি চাষাবাদে আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে জানা যাবে।
নিম্নে বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রসমূহের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হল।
সারাংশ :
কৃষি বলতে ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে অর্থসামাজিক উন্নয়নের মুল উপাদান হল কৃষি। ফসল, পশু পাখি, বন ও মাছ প্রভৃতি কৃষি শিক্ষার প্রধান পাঠ্য বিষয়।
আরও দেখুনঃ