বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা: তাত্ত্বিকভাবে বীজের আর্দ্রতা বলতে বীজের মধ্যে যে মুক্ত পানি আছে তাকেই বুঝায় যা সমস্ত বীজের ওজনের শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।ফসল উৎপাদনে বীজ একটি মৌলিক উপকরণ। কারণ বীজ কেবল ফলন বৃদ্ধিই নয় ফসলের মান উন্নয়ন, কীট-পতঙ্গ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নির্দিষ্ট ভূ-প্রাকৃতিক অবস্হায় জন্মানোর উপযোগীতা নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ফসল উৎপাদনের অনুকূল হওয়া সত্ত্বেও এখানে প্রধান খাদ্যশস্য যেমন : ধান, গম, গোল আলু, মিষ্টি আলু, তৈল ও ডাল বীজের হেক্টর প্রতি ফলন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।
বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি
এর অন্যতম কারণ হলো ভালো বীজের অপ্রতুলতা এবং কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব। হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি এবং চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভালো বীজ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। আর ভালো বীজ ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই উন্নত বীজ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে কমবেশি ৭০টি ফসলের চাষ হচ্ছে এবং এসব ফসল চাষ করার জন্য বছরে প্রায় ৭ লক্ষ টন বীজের প্রয়োজন হয় যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ৭০টি ফসলের মধ্যে কেবল ধান, গম, পাট, আলু, কিছু সবজি, ডাল ও তৈলবীজ সরকারী ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। দেশের বর্তমান চাহিদার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ বীজের চাহিদা কৃষক নিজেই পূরণ করে থাকে। যার অধিকাংশ নির্ধারিত মানসম্পন্ন নয় কিন্তু উন্নত দেশে শতকরা ১০০ ভাগ ভালো বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে সরকারী পর্যায়ে বীজ উৎপাদন ও বিপণনের যে অবকাঠামো বিদ্যমান তা দিয়ে এর বেশি চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাছাড়া সরকারীভাবে বীজ উৎপাদনেও খরচ বেশি হয়। অনেক কৃষক বেশি মূল্যে ভালো বীজ ক্রয় করতে চায় না। তারা নিজেদের ফসলের একাংশ বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব বীজ নিম্নমানের এবং কম উৎপাদনশীল হয়ে থাকে। বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কেও বাংলাদেশের কৃষক খুব একটা অবহিত নন। তাই উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশের গড় ফলন অনেক কম।
উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার করে চীন ও জাপানে যেখানে ধানের ফলন হেক্টরপ্রতি ৫-৬ টন সেখানে আমাদের দেশে মাত্র ২ টন। সার, পানি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। একমাত্র বীজ প্রযুক্তি ছাড়া এটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না।
তাই ভালো বীজ এবং বীজ প্রযুক্তি অর্থাৎ ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য, বীজ ফসল উৎপাদনের কলাকৌশল, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে, তবে নিম্নলিখিত দু’টি পদ্ধতিই প্রধানত অনুসরণ করা হয়।
- ওভেন ড্রাই পদ্ধতি।
- ময়েশ্চার মিটার পদ্ধতি।
ওভেন ড্রাই পদ্ধতি : আন্তর্জাতিক বীজ পরীক্ষণ সংস্হায় (ISTA) নিয়মানুযায়ী নিম্নলিখিত দু’টি ওভেন ড্রাই পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজের আর্দ্রতা নির্ণয় করা যেতে পারে
(ক) অপরিবর্তনীয় নিম্নতাপে (১০৩° সেঃ এ ১৭ ঘন্টা) তৈলসমৃদ্ধ বীজকে শুকানো।
(খ) অপরিবর্তনীয় উচ্চ তাপে (১৩০° সেঃ) ভূট্টা বীজ ৪ ঘন্টা, দানাশস্য বীজ ২ ঘন্টা এবং অন্যান্য বীজ ১ ঘন্টা শুকানো।
পরীক্ষার পদ্ধতি ঃ এই পদ্ধতিতে বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত বীজ এর কার্য সম্পাদন নমুনা থেকে ৪-৫ গ্রাম ওজনকৃত বীজ নিয়ে (চূর্ন কিংবা অচূর্ন) ওভেনে নির্ধারিত তাপমাত্রায় শুকানো হয়। তার পর ওভেন থেকে বের করে নিয়ে ঠান্ডা করার পর পুনরায় ওজন করা হয়। শুকানোর পূর্বের এবং পরের ওজনের পার্থক্যকে শতকরা হারে প্রকাশ করলেই বীজের আর্দ্রতার পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। বীজের আর্দ্রতা নিম্নের সূত্রের সাহায্যে বের করা হয়
ময়েশ্চার মিটার পদ্ধতি ঃ ময়েশ্চার মিটারের সাহায্যে খুব সহজেই এবং অল্প সময়েই বীজের আর্দ্রতা মাপা যায়। ওসাও ইউনিভার্সেল ময়েশ্চার মিটার (OSAW Universal Moisture Meter) দ্বারা বর্তমানে বাংলাদেশের বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে বীজের আর্দ্রতা মাপা হচ্ছে। এ যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য নিম্নলিখিত পরিসংখ্যান ব্যবহৃত হয়ঃ
- কার্যকরী নমূনা থেকে বিভিন্ন বীজের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ বীজ নিন। যেমনঃ ধানের ক্ষেত্রে ৫০ গ্রাম বীজ।
- ওসাও মেশিনের মাইক্রোমিটার স্কেল এবং ভার্টিকেল স্কেল উভয়টি ০ (শুনাতে) মিলিয়ে (Adjustment) রাখুন।
- উক্ত পরিমাণ বীজ ওসাও মেশিনের টেষ্ট কাপে ভর্তি করে যথাস্থানে রাখুন।
- তারপর চার্ট অনুযায়ী নির্ধারিত ফসলের বীজের জন্য নির্দিষ্ট পূরুত্বে চাপ প্রয়োগ করুন। যেমনঃ ধান বীজের ক্ষেত্রে ০.৫৫ ইঞ্চি।
- চাপ প্রয়োগের পর মেশিনের সুইচ ও ডায়াল সুইচ চালু করুন।
- এখন ক্যালিব্রেশান (Calibration) কাটার রিডিং এবং মেশিনের সেন্টিগ্রেড থার্মোমিটারের রিডিং যে অংকে মিলিত (Coincide) হবে, সে স্হানে ডায়ালকে ঘুরিয়ে আনার ফলে তীর চিহ্নিত স্হানে যে রিডিং পাওয়া যাবে, সেই রিডিংই ঐ বীজের আর্দ্রতার পরিমাণ হিসেবে গণ্য করুন।
এটা খুব সহজ এবং দ্রুত পদ্ধতি। এ মেশিন একবার বাস্তবে ব্যবহার করলে পরীক্ষাটি সহজেই করতে পারবেন। পরীক্ষাশেষে যাবতীয় বিবরণ আপনার নোটবুকে লিপিবদ্ধ করুন।
আরও দেখুন: