বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষার ব্যবহারিক নিয়ে আজকের আলোচনা। পাঠটি বীজ ও বীজ প্রযুক্তি পাঠির অংশ। এখানে ধাপে ধাপে বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করার ব্যবহারিক বর্ণনা করা হয়েছে।
Table of Contents
বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা
কোন বীজ নমূনায় ওজন ভিত্তিতে শতকরা কত অংশ মূল শস্য বীজ আছে তা নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা বলে।
একটি বীজের নমূনার মধ্যে প্রধানত ৪টি অংশ থাকে যথাঃ
(১) বিশুদ্ধ বীজ
(২) অন্য ফসলের বীজ
(৩) আগাছা বীজ
(৪) জড় পদার্থ
বীজের এই ৪টি ভাগের মধ্যে বিশুদ্ধ বীজের অর্থাৎ মূল শস্য বীজের শতকরা হার কত রয়েছে তা বের করাই হলো বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষণ।
পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি :
(ক) পিউরিটি বোর্ড বা বীজ বোর্ড
(খ) মাপক নিক্তি (+0.0০১ গ্রাম)
(গ) ওয়েল পেপার
(ঘ) পেট্রিডিস- মধ্যম ও বড় আকার
(ঙ) চিমটা (Forcep
(চ) স্ট্যান্ডযুক্ত ম্যাগনেফাইং গ্লাস
বীজের পরীক্ষা পদ্ধতি:
সর্বপ্রথম মাপক নিক্তি দ্বারা কার্য সম্পাদন নমূনার সঠিক ওজন নিন। ওজন নেওয়ার পর সমস্ত বীজ পিউরিটি বোর্ডে ছড়িয়ে দিন। এবারে নমুনাকে নিম্নোক্ত ৪টি অংশে বিভক্ত করতে হবে। বিভক্ত করার জন্য চিমটা ব্যবহার করতে হবে।
(ক) বিশুদ্ধ বীজ
(খ) অন্য ফসলের বীজ
(গ) আগাছা বীজ
(ঘ) জড় পদার্থ।
এসব উপাদান যথাযথভাবে পৃথক করার জন্য এদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য এ পাঠের শেষ দিকের আলোচনা মনোযোগসহকারে পড়ুন। বাছাই করা প্রতিটি অংশ পৃথক পৃথক পেট্রিডিসে রাখুন। পৃথক করার সময় বীজ শনাক্তকরণের যে কোন সন্দেহের ক্ষেত্রে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করুন। তারপর প্রতিটি অংশের সঠিকভাবে (প্রয়োজনীয় সংখ্যক দশটি ঘর পর্যন্ত) পৃথক ওজন নিয়ে নিম্ন তালিকানুসারে হিসেব নির্ণয় করুন।
মনে করি সম্পাদনের নমূনার ওজন G গ্রাম। তখন অন্যান্য ওজন ও বীজের বিশুদ্ধতার সূত্র নিম্নরূপ হবে :
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে হিসেব শেষ করার পর যদি কার্য সম্পাদন নমুনা G ও W এর মধ্যে ১% এর বেশি পার্থক্য থাকে তাহলে পুনরায় পরীক্ষা করুন। এখন আমরা বিশুদ্ধ বীজ, অন্য ফসলের বীজ, আগাছ বীজ ও জড় পদার্থ সম্পর্কে আলোচনা করব।
বিশুদ্ধ বীজ অংশ :
বিভিন্ন প্রজাতিভেদে বিশুদ্ধ বীজের সংজ্ঞা ভিন্নতর। সাধারণভাবে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিশুদ্ধ বীজ অংশ শনাক্ত করা যাবে।
(১) সম্পূর্ণ অক্ষত ও সুস্হ বীজ।
(২) ভাংগা বীজের যে অংশে ভ্রূণসহ বা বাতীত ৫০% এর বেশি অবশিষ্ট আছে।
(৩) আংশিকভাবে অপূর্ণ বীজ ও সম্পূর্ণ চিটা বীজ বিশুদ্ধ বীজের অর্ন্তভূক্ত হবে না। এ পরীক্ষার জন্য ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
অন্য ফসলের বীজ অংশ :
বিবেচ্য ফসলের নির্ধারিত জাত ছাড়া বিবেচ্য ফসলের অনা প্রজাতির/অন্যান্য সকল জাতের পুষ্ট, আংশিক পুষ্ট ও অর্ধেকের বেশি অংশ সমৃদ্ধ ভাঙ্গণ বীজ।
আগাছা বীজ:
পূর্ণ, অপূর্ণ, ফাটল ধরা বা ভাংগা সকল শনাক্তকৃত আগাছা বীজ এ অংশে অন্তর্ভূক্ত হবে।
জড় পদার্থ :
উপরোল্লিখিত নিয়মে শনাক্তকৃত বিশুদ্ধ বীজ ও অন্য ফসলের বীজ, আগাছা বীজ ব্যতীত অবশিষ্ট অংশটুকু জড় পদার্থ বলে গণ্য হবে। জড় পদার্থ নিম্নরূপ হবেঃ
(১) মূল শস্য বা অন্য শস্য বীজে ৫০% এর কম অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। (২) মূল শস্য বীজের বা অন্য শস্য বীজের বাইরে বা অভ্যন্তরে ছাতাগুটি বা কৃমির গুল উৎপন্ন রয়েছে।
(৩) মূল্য শস্যের বা অন্যান্য শস্যের চিটা অংশ।
(৪) খড়কুটা, পাতা, কান্ড ইত্যাদি।
(৫) মাটি কণা, নুড়ি, ইটের টুকরা, ধুলাবালি, মৃত ও জীবিত কীটপতংগ ইত্যাদি।
নিজহাতে যে কোন বীজের বিশুদ্ধতা নির্ণয় করার পর তা আপনার নোট বুকে লিপিবদ্ধ করুন।
সূত্র:
- বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৭
আরও দেখুন:
- বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৭
- বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৬
- বীজের সুপ্ততা ভাঙ্গার উপায় , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৫
- বীজের সুপ্ততা এবং সুপ্ততার কারণসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৪
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা