মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.১ , যে সকল দ্রব্য গ্রহণের ফলে মাছের দেহের বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়পূরণ, তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয় এবং বংশ বৃদ্ধি ঘটে সেগুলোকে মাছের খাদ্য বলে। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্যে খাদ্য একটি অপরিহার্য উপাদান। পরিমিত পরিমাণে খাদ্যের যোগান দিয়ে মাছের কাক্সিক্ষত উৎপাদন করা যায়। মাছের বংশ বৃদ্ধিতে খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুষম খাদ্য গ্রহণে মাছে বৃদ্ধি ত্বরাণি¦ত হয় এবং মাছ যথাসময়ে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে।

মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.১

এতে মাছের জননগ্রন্থি (gonad) পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং ডিম্বাণু ও শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায়। মাছে জীবনযাত্রার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যথা : রক্ত সংবহন, শ্বাসকার্য পরিচালনা, অভি¯্রবণীয় চাপ নিয়ন্ত্রণ, প্রলম্বন (Suspension) ও পানির ভিতরে স্থিতিবস্থায় অবস্থানের জন্যে প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়। মাছ গৃহীত খাদ্য থেকেও শক্তি পেয়ে থাকে। শৈশবস্থা থেকেই মাছকে নিয়মিত ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করা উচিত।

মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.১

খামারে মাছের ক্ষেত্রে সরবরাহ হঠাৎ ব্যহত হলে এবং দীর্ঘসময় খাদ্য প্রদান বন্ধ থাকলে বন্ধ্যাত্বের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুস্থ—সবল পোনা উৎপাদনের জন্যে পরিপক্ব মাছকে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করা উচিত। মাছ চাষের জন্য জলাশয়ে প্রাকৃতিক’ খাদ্যের যোগান দান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের খাদ্যচক্রকে সচল রাখে। এতে করে জলাশয়ে মাছের বিভিন্ন প্রকার খাদ্য উপাদান চক্রাকারে ও অবিরত ভাবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। ফলে মাছের দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি সাধন ও বৃদ্ধি ঘটে থাকে। প্রাকৃতিক’ খাদ্য মাছের স্বাভাবিক খাদ্য হওয়ায় মাছ সহজেই তা গ্রহণ করে থাকে।

প্রাকৃতিক খাদ্যের পুষ্টিমান বেশি এবং সহজেই হজম হয়। ফলে প্রাকৃতিক’ খাদ্যের পরিবর্তন হার সূচক সংখ্যামান কম, যা অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করে। গোবর, হাঁস—মুরগির বিষ্ঠা, ইত্যাদি জৈব সার সহজলভ্য ও দামে সস্তা। এসব জৈব সার ব্যবহারে পানিতে প্রচুর পরিমানে প্লাঙ্কটন উৎপাদিত হয় যা জলাশয়ের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুকুরে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্য কার্প জাতীয় মাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক। পুকুরে প্রয়োগকৃত সম্পূরক’ খাদ্য অনেক সময় সুষম হয় না তাই মাছ চাষে প্রাকৃতিক’ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

মাছ ও চিংড়ির খাদ্য 1 মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

খাদ্যের প্রকারভেদ প্রকৃতিতে মাছের বহু ধরনের খাদ্য বিরাজমান। এর মধ্যে যেমন রয়েছে জলজ ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণি তেমনি রয়েছে দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদানসহ অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণিজ পোষক। স্থলভাগেও অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণিজ দ্রব্য রয়েছে। মাছের খাদ্যকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : (১) প্রাকৃতিক খাদ্য, (২) সম্পূরক ‘খাদ্য।

(১) প্রাকৃতিক’ খাদ্য : পুকুরের নিজস্ব এবং সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফাইট্রোপ্লাঙ্কটন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপদান সরবরাহের ফলে জলাশয়ে যে খাদ্য উৎপাদন হয় তাকে প্রাকৃতিক খাদ্য বলে।

Capture 131 মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

(২) সম্পূরক খাদ্য : অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক’ খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খাদ্য দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যকে সম্পূরক’ খাদ্য বলা হয়। চালের কঁুড়া, গমের ভুষি, সরিষার খৈল ইত্যাদি সম্পূরক’ খাদ্য।

খাদ্যের পুষ্টি উপাদান : জীবের পুষ্টির সবগুলো উপাদানের সংমিশ্রণে প্রয়োজনীয় আনুপাতিক হারে যে খাদ্য তৈরি করা হয় তাকে সুষম খাদ্য বলে। আমাদের দেশে সম্পূরক ‘খাদ্যের উপাদানের জন্য যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সরিষার খৈল, চালের কঁুড়া, গমের ভুষি, চিটাগুড় ইত্যাদি প্রধান। গবেষণার মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ এবং অঁাতুর পুকুরে পোনা মাছ চাছের জন্য স্বল্পমূল্যের উন্নতমানের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।

উপকারী উদ্ভিদ ও প্রাণি পানিতে যেসব অতিক্ষুদ্র অণুবীক্ষণিক জীবকণা ভাসমান অবস্থায় থাকে তাদেরকে প্ল্যাঙ্কটন বলে। প্লাঙ্কটন দুই ধরনের। যেমন :

১. উদ্ভিদ কণা বা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন (Phytoplankton)

২. প্রাণী কণা বা জুওপ্ল্যাঙ্কটন (Zooplakton)

১. উদ্ভিদ কণা : পানিতে যেসব অতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ কণা ভাসমান অবস্থায় থাকে তাদেরকে উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন বলে। এগুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না বিধায় আণুবীক্ষণিক যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে হয়। উদ্ভিদ কণা সূর্যালোকের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজেরা তৈরি করে। এ সময় এরা কার্বন ডাই—অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। ফলে পুকুরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। এছাড়া এসব উদ্ভিদ কণা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদ কণাসমূহ প্রত্যক্ষভাবে নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে বিধায় এদেরকে প্রাথমিক উৎপাদক বলা হয়। মাছের জন্যে উপকারী উদ্ভিদ কণা বা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনগুলো হলো নাভিকুলা, পোডিয়েস্ট্রাম, স্পাইরোগাইরা, ও ইউগ্লিনা, ফেকাস, এনাবিনা ইত্যাদি।

মাছ ও চিংড়ির খাদ্য 2 মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

২. প্রাণিকণা : যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণি ভাসমান থাকে তাদেরকে প্রাণিকণা বা জুপ্লাংটন বলে। এসব প্রাণিকণা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের মধ্যে শুধুমাত্র প্রাণিকণা হতে মাছ প্রায় শতকরা ৪০—৭০ ভাগ প্রাণিজ আমিষ পেয়ে থাকে। মাছের জন্যে উপকারী প্রাণিকণা বা জু্প্লাঙ্কটন হলো ডেফনিয়া, বসনিয়া ফিলিনিয়া, ডায়াপটোমাস সাইক্লপস ইত্যাদি।

Capture 132 মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

আরও দেখুন :

Leave a Comment