মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩ , সম্পূরক খাদ্য : অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খাদ্য দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যকে সম্পূরক খাদ্য বলা হয়। চালের কঁুড়া, গমের ভুষি সরিষার খৈল ইত্যাদি সম্পূরক খাদ্য।

মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩

খাদ্যের পুষ্টি উপাদান : জীবের পুষ্টির সবগুলো উপাদানের সংমিশ্রণে প্রয়োজনীয় আনুপাতিক হারে যে খাদ্য তৈরি করা হয় তাকে সুষম খাদ্য বলে। আমাদের দেশে সম্পূরক খাদ্যের উপাদানের জন্য যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সরিষার খৈল, চালের কঁুড়া, গমের ভুষি, চিটাগুড় ইত্যাদি প্রধান। গবেষণার মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ এবং অঁাতুর পুকুরে পোনা মাছ চাছের জন্য স্বল্পমূল্যের উন্নতমানের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। রুই জাতীয় মাছের সম্পূরক খাবার উৎপাদনের কৌশল নিম্নে উল্লেখ করা হলো : পদ্ধতি : ১। রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সম্পূরক খাদ্য তৈরি পদ্ধতি নিম্নরূপ :

Capture 135 মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র Capture 1 21 মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র Capture 2 3 মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুত খাদ্য প্রস্তুত : প্রথমে পরিমাণ মত খৈল একটি পাত্রে কমপক্ষে ১০—১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। অতঃপর ভিজা খৈলের সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চালের কুঁড়া বা চিটাগুড়া মিশিয়ে ছোট ছোট গোলাকার বল তৈরি করতে হবে। তৈরিকৃত বলগুলোকে একটি পাত্রে রেখে বলসহ পাত্রটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে পুকুরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ৩০—৪৫ সে.মি. গভীরতায় ডুবিয়ে রাখতে হবে।

মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩

মাছের খাদ্য গ্রহণের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে সকাল এবং বিকাল বেলা মাছের খাদ্য সরবরাহ করার উত্তম সময়। কারণ এ সময়ই মাছ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার সরবরাহ করলে খাবার কম পরিমাণে অপচয় হয় এবং তাছাড়া মাছ কী পরিমাণ খাবার গ্রহণ করছে তার পরিমাণ নির্ধারণ করে সঠিক মাত্রার খাবার সরবরাহ করা যায়।

মাছের দৈহিক ওজন অনুযায়ী পুকুরে প্রতিদিন খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। সাধারণভাবে রুই জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে মজুতকৃত মাছের মোট ওজনের ৩—৫% হারে প্রতিদিন দুবার সকাল—বিকাল সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণত প্রতি মাসে কমপক্ষে এক বার জাল টেনে কিছু সংখ্যক মাছের ওজন নিয়ে গড় ওজন বের করতে হয়। এরপর মজুদকৃত মাছের সংখ্যাকে প্রাপ্ত গড় ওজন দ্বারা গুণ করে পুকুরের মাছের মোট ওজন নির্ণয় করতে হয়।

পুকুরে মাছের মোট ওজন হিসাব করে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ বের করতে হয়। পুকুরে গ্রাস কার্প, থাই সরপঁুটি ও বিভিন্ন ধরনের ঘাস কেটে ছোট ছোট করে মাছকে খাবার হিসেবে পুকুরে সরবরাহ করতে হয়। এ ধরনের খাবার পুকুরের মাঝখানে অথবা এক পাশে বাঁশের সাহায্যে ভাসিয়ে রাখা হয়।

চিংড়ি 2 মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

সম্পূরক খাবার তৈরির পদ্ধতি : চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির বিভিন্ন উপাদানগুলো পাউডার আকারে সঠিক মাত্রায় একত্রে মিশাতে হয়। অতঃপর কোনো আঠালো খাদ্য উপাদান যেমন আঠা বা ঐ জাতীয় কৃত্রিম আঠালো পদার্থ যা চিংড়ির দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন উপাদান পরিমাণ মত পানির সাথে মিশিয়ে পাত্রে গরম করতে হয়।

নাড়তে নাড়তে যখন মণ্ডে পরিণত হবে তখন পাত্রটি অঁাচ থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হওয়ার পর কাঠের ছাঁকনি বা মেশিনের সাহায্যে ছোট ছোট পিলেট তৈরি করা হয়। খাবারের উপাদানগুলো ভালভাবে গুঁড়ো করা হয়েছে কিনা তা ভালভাবে লক্ষ রাখতে হবে। যদি ভালভাবে গুঁড়া না হয় তাহলে প্রতিটি খাদ্য উপাদানকে আলাদাভাবে ছাকতে হবে।

সম্পূরক খাদ্য তৈরি চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, ফিসমিল, সরিষার খৈল, শামুক—ঝিনুকের মাংশল অংশ ইত্যাদি দিয়ে খুব সহজেই চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা যায়। নীচে চিংড়ির কয়েকটি সম্পূরক খাদ্য তৈরির নমুনা দেয়া হলো—

Capture 136 মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

খাদ্য প্রস্তুত নিয়মাবলী :
খাদ্য প্রস্তুতের পূর্বে যেসব বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা উচিত সেগুলো হলো : ১। মাছের বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাছের খাদ্য তৈরি করতে হবে ; ২। যে মাছের জন্য খাদ্য তৈরি করা হবে সে মাছের খাদ্যাভাস, পরিপাকতন্ত্রের গঠনও বিবেচনায় আনতে হবে এবং ৩। মাছের পুষ্টি চাহিদাকে বিবেচনায় এনে সঠিক পদ্ধতিতে খাবার তৈরি করতে হবে।

চিংড়ি 4 মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ | ইউনিট-৩ , পাঠ -৩.৩ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

খাদ্য উপকরণ নির্বাচন মাছের খাদ্য তৈরির উপকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে।

১। খাদ্য উপকরণের সহজলভ্যতা

২। খাদ্য উপকরণের বাজার মূল্য

৩। খাদ্য উপকরণের পুষ্টিগুণ

৪। খাদ্য উপকরণে পুষ্টিবিরোধী উপাদানের উপস্থিতি

খাদ্য প্রস্তুত :
নির্বাচিত খাদ্য উপকরণ ভালোভাবে গুঁড়া করে চালুনি দ্বারা চেলে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে মেপে নিতে হবে। একটি পাত্রে সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে সঠিক মাত্রায় পানি ব্যবহার করে নরম করতে হবে। যে মাছের জন্য খাবার তৈরি করা হবে সে মাছের আকার বা মুখের আকারের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট যন্ত্রের সাহায্যে পিলেট বা দানাদার খাবার তৈরি করতে হবে।

আরও দেখুন :

Leave a Comment