মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৫

মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৫ , মাশরুম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। এর ওষুধি বা ভেষজ গুণ রয়েছে। ছত্রাকবিদরা বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা—নিরীক্ষার মাধ্যমে এ পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় দুই লক্ষেরও বেশি প্রজাতির ছত্রাক আবিষ্কার করেছেন। এই বিপুল সংখ্যক ছত্রাকের মধ্য থেকে অনেক যাচাই—বাছাই করে খাওয়ার উপযোগী প্রায় দুই হাজার ছত্রাক চিহ্নিত করেছেন যেগুলো মাশরুম হিসেবে গণ্য। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ প্রজাতির ছত্রাক মাশরুম হিসেবে উৎপাদন করা যায়। মূলতঃ মাশরুম হলো ভক্ষণযোগ্য মৃতজীবী ছত্রাকের প্রজনন অঙ্গ।

মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৫

সুগন্ধ, রুচিসম্মত ও ভালো স্বাদের জন্য মাশরুম সকল মানুষের নিকট প্রিয় সবজি হিসেবে পরিচিত। পুষ্টিগুণ বিচারেও মাশরুম সেরা সবজির মধ্যে একটি। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন, যেমন—আমিষ , খাদ্য প্রাণ ও খনিজ পদার্থ সেগুলো মাশরুমে উচ্চ মাত্রায় রয়েছে। মাশরুম চাষ করার জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। এটি ঘরেই চাষ করা সম্ভব। এটি চাষ করার জন্য দরকারি কাঁচামাল সস্তায় ও সহজে পাওয়া যায়। বর্তমান বিশ্বে মাশরুম চাষে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে।

মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৫

চাষযোগ্য মাশরুম আমাদের দেশে বর্তমানে যে সমস্ত মাশরুম চাষ হচ্ছে তার একটি তালিকা নিচে দেয়া হলো :

১। স্ট্র মাশরুম

২। ওয়েস্টার মাশরুম

৩। মিল্কী মাশরুম

৪। ঋষি মাশরুম

৫। শিতাকে মাশরুম

৬। বাটন মাশরুম

৭। পপলার মাশরুম ইত্যাদি।

মৌসুমের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে তিন শ্রেণির মাশরুম উৎপাদিত হয়। যথা :

১। গ্রীষ্মকালীন মাশরুম : এ ধরনের মাশরুম শুধু গ্রীষ্মকালে চাষ করা যায়। যেমন— স্ট্র, মিল্কী ও ঋষি মাশরুম।

২। শীতকালীন মাশরুম : এ ধরনের মাশরুম শুধু শীতকালে চাষ করা যায়। যেমন— বাটন, শিতাকে ও শিমাজী মাশরুম।

৩। উভয় মৌসুমী বা বছরব্যাপী মাশরুম : এ ধরনের মাশরুম সারা বছর ধরে চাষ করা যায়। যেমন— ওয়েস্টার, পপলার, ঝিনুক ও কান মাশরুম। মাশরুমের পুষ্টিগুণ পুষ্টিগুণ বিচারে মাশরুম নিঃসন্দেহে একটি সেরা সবজি। খাদ্য জগতে মাশরুমকে সবজি শ্রেণিতে ফেলা হয়, কিন্তু প্রায়োগিকভাবে এরা উদ্ভিদ নয়। এরা ছত্রাক জাতের অন্তভুর্ক্ত। সুস্বাদু খাবার হিসেবে এরা বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। এরা হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়া মাশরুমে মৌলিক পুষ্টি উপাদান, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কাইটিন ও বিটা—গ্লুকান জাতীয় উপকারী অঁাশ থাকায় দীর্ঘকালস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। মাশরুমে প্রোটিন, অঁাশ, নিয়াসিন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি, ভিটামিন ডি, কপার, সেলেনিয়াম, পটাসিয়াম, অন্যান্য খনিজ যেমন— ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগেনেসিয়াম, কম পরিমাণ ফ্যাট, ক্যালরী ও সোডিয়াম বিদ্যমান থাকে।

এতে কোনো কোলস্টেরল নেই। পাতলা করে কাটা এক কাপ কাঁচা সাদা মাশরুমে ১৫ ক্যালরি, ০ গ্রাম ফ্যাট, ২.২ গ্রাম প্রোটিন, ২.৩ গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ০.৭ গ্রাম অঁাশ ও ১.৪ গ্রাম সুগার থাকে। মাশরুমে কোন কোলস্টেরল থাকে না এবং প্রাকৃতিকভাবেই সোডিয়াম ও ফ্যাট কম থাকে বিধায় এটাকে কার্যকরী খাবার বলা হয়।

মাশরুম চাষের ধাপসমূহ :

মাশরুম চাষে সাধারণত: যে সমস্ত পন্থা অবলম্বন করতে হয় তা ধারবাহিকভাবে নিচে আলোচনা করা হলো :

১। চাষঘর তৈরি : পরিস্কার—পরিচ্ছন্ন এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে এমন ঘরে মাশরুম চাষ করতে হয়। মাশরুম চাষের পরিবেশ খুবই স্পর্শকাতর। কারণ কাঙ্খিত পরিবেশ তৈরি না হলে মাশরুম উৎপাদন হয় না। এর চাষে পাঁচটি পরিবেশ বা মূলনীতি মেনে চলতে হয় যেমন 

(ক) অক্সিজেন : মাশরুম প্রধানত কাঠের গুড়া থেকে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। এই কাঠের গুড়া অক্সিজেনের উপিস্থিতিতে জারণ—বিজারণ প্রক্রিয়ায় মাশরুমের খাবার সহজলভ্য করে দেয়। ফলে মাশরুমের ঘরে অক্সিজেনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা জরুরী।

(খ) আলো : মাশরুম ঘরটি হালকা বা আবছা অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে হবে। কারণ এই ধরনের আলো মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী।

(গ) তাপমাত্রা : মাশরুম ২০—৩০০ সে. তাপমাত্রায় ভালো জন্মায়। এজন্য মাশরুম ঘরের তাপমাত্রা ২০—৩০০ সে. এর মধ্যে রাখতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে মাশরুম উৎপাদন ব্যাহত হবে। এক্ষেত্রে তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য ঘরে সিলিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

(ঘ) আর্দ্রতা : মাশরুম আর্দ্র অবস্থা পছন্দ করে বিধায় ঘরে ৭০—৮০% আর্দ্রতা বজায় রাখা উচিত। এর চাষঘরে মাশরুম প্যাকেটের চারিদিকে উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতা বজায় রাখার ব্যবস্থা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মাশরুম বীজকে স্পন বলা হয়।

(ঙ) বায়ুপ্রবাহ : চাষ ঘরে অক্সিজেন দ্বারা কাঠের গুড়া জারিত হওয়ার ফলে প্রচুর ঈঙ২ তৈরি হয় যা প্রজনন অঙ্গ বা ফুল তৈরিতে বাঁধা দান করে। এজন্য ঈঙ২ কে বের করে দেয়ার জন্য ঘরের নিচের অংশে বায়ুপ্রবাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

২। প্যাকেট বা স্পন সংগ্রহ : যাচাই—বাছাই করে ভালো মানসম্পন্ন মাশরুম স্পন যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করতে হবে। যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যাবলী থাকলে মাশরুম স্পনকে ভালো স্পন বলা যায় তা নিম্নরূপ 

ক) প্রতিটি প্যাকেট সুষমভাবে মাইসেলিয়াম দ্বারা পূর্ণ ও সাদা হবে।

খ) মাইসেলিয়ামের রঙ হলুদ, লাল বা কালো হওয়া চলবে না।

গ) প্রতিটি প্যাকেটের গঠন টাইট বা শক্ত হবে।

ঘ) প্যাকেটের গায়ে জাতের নাম ও ইনোকুলেশনের তারিখ লেখা থাকবে।

 

মাশরুম চাষ ১ মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৫

 

৩। প্যাকেট বা স্পন পরিবহন : সাধারণত: ঠান্ডা পরিবেশে প্যাকেট পরিবহন করতে হয়। দূরবর্তী কোনো স্থানে নেয়ার ক্ষেত্রে ট্রেন বা বাসের ছাদের ওপর রোদে বা ইঞ্জিনের ওপর গরম স্থানে রেখে বা বৃষ্টিতে ভিজিয়ে পরিবহন করা যাবে না। বাতাস চলাচল করতে পারে এমন কাটুর্ন বা বস্তায় ভরে প্যাকেট পরিবহন করতে হয়। কোনো কারণে যদি কয়েকদিন রেখে প্যাকেট কাটতে হয় সেক্ষেত্রে ২৫০ সে. তাপমাত্রায় অর্থাৎ ঠান্ডা ঘরে আলাদা আলাদাভাবে ১৫—২০ দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। তবে প্যাকেট সংগ্রহের পরপরই যত দ্রুত সম্ভব ঠান্ডা সময়ে প্যাকেট কেটে চাষ ঘরে বসানো উচিত।

৪। প্যাকেট বা স্পন কর্তন : প্রতিটি প্যাকেট চাষ ঘরে স্থাপন করার আগে সঠিক পদ্ধতিতে কাটতে হবে। প্রত্যেক প্যাকেটে কোনাযুক্ত দুইটি কাঁধ থাকে। প্রতি কাঁধ বরাবর ২ ইঞ্চি লম্বা এবং ১ ইঞ্চি ব্যাস করে উল্টো ডি আকারে কাটতে হবে। প্রত্যেক প্যাকেটের দুই কাঁধে দুইটি উল্টো ডি আকারে কাটা থাকবে। প্রতি প্যাকেটের উভয় পার্শ্বের এ কাটা জায়গার সাদা অংশ ব্লেড দিয়ে চেছে ফেলতে হবে। এই কাটা ও চাছা প্যাকেট উপুড় করে ৫—১৫ মিনিট পানিতে চুবিয়ে নেয়ার পর ভালোভাবে পানি ঝরিয়ে চাষ ঘরের মেঝে অথবা তাকে সারি করে স্থাপন করতে হবে।

৫। প্যাকেট বা স্পন তাকে স্থাপন : চাষ ঘরের মেঝে বা তাকের ওপর প্যাকেট থেকে প্যাকেটের দূরত্ব ২ ইঞ্চি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ ইঞ্চি বজায় রাখলে ভালো ফলন হয়। প্যাকেটের চারিদিকে ৭০—৮০% আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য গরমের সময় দিনে ৪/৫ বার, শীতে ও বর্ষায় দিনে ২/৩ বার পানি ে¯প্র করা যেতে পারে যাতে প্যাকেট ও এর চারপাশে আর্দ্র অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন প্যাকেটের কাটা জায়গার মাশরুম অঙ্কুরের ওপর ফেঁাটার আঘাতে অঙ্কুর ভেঙ্গে না যায় এবং পানি জমে না থাকে। পানি ে¯প্র করার সংখ্যা বা মাত্রা প্রয়োজনে কম বা বেশি হতে পারে। তবে সূর্য ওঠার আগে এবং সূর্য ডোবার পর পানি ে¯প্র করলে মাশরুমের ফলন বেড়ে যায়।

৬। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ : সুতি কাপড় বা খবরের কাগজ ভিজিয়ে প্যাকেটের ওপরে একটু উঁচু করে রেখে চাষ
ঘরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। প্রয়োজনে ে¯প্র মেশিন দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি ে¯প্র করে চাষ ঘরের দেয়াল ও মেঝে কয়েকবার ভিজিয়ে দিয়ে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কাঙ্খিত মাত্রায় বজায় রাখা যায়।

৭। অন্যান্য পরিচর্যা : মাশরুম একটি স্পর্শকাতর সবজি হওয়ায় চাষ ঘরের ভিতর ও বাহিরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্যাকেটে একসাথে অনেকগুলো অঙ্কুর দেখা গেলে সমআকারের স্বাস্থ্যবান মাশরুম পাওয়ার জন্য ছোট অঙ্কুরগুলো ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলতে হবে এবং প্রতি কাঁধ বা পাশের থোকায় ৮ থেকে ১২টি ফ্রুটিং বডি রাখতে হবে।

৮। মাশরুম সংগ্রহ : প্রথমবার মাশরুম তোলার পর পাকেটকে ১ দিন বিশ্রাম অবস্থায় রাখতে হয়। পরের দিন পূর্বের কাটা অংশ পুনরায় চেছে ফেলে আগের মতো পানি ে¯প্র করতে হয়। একটি প্যাকেট থেকে ৫/৬ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায়, তবে বাণিজ্যিকভাবে ২/৩ বারের বেশি সংগ্রহ করা উচিত নয়।

৯। মাশরুম সংরক্ষণ : কাঁচা মাশরুমে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় সংরক্ষণকাল খুবই কম হয়। মাশরুম সংগ্রহ করার পরপরই এর রং এবং গঠনের দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। এজন্য সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে রং ও গঠন ঠিক রেখে বেশি দিন ব্যবহার করা সম্ভব হয়। কিছু নিয়ম মেনে চললে মাশরুম ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়। যেমন— পরিপক্ক অবস্থা বা সঠিক সময়ে মাশরুম সংগ্রহ করা, পরিস্কার—পরিচ্ছন্ন রাখা, ঠান্ডা ও বায়ুরোধী অবস্থায় সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। মাশরুমকে তাজা ও শুকনো উভয় অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়। এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো 

(ক) তাজা মাশরুম সংরক্ষণ : মাশরুম তোলার ১২ ঘন্টা আগ পর্যন্ত পানি ে¯প্র না করে তুললে তা ব্যাগে সিলিং করে ঘরের ঠান্ডা জায়গায় রেখে ২—৩ দিন পর্যন্ত খাওয়া যায়। এছাড়াও রেফ্রিজারেটরে ১০০ সে. তাপমাত্রায় নরমাল চেম্বারে সিলিং অবস্থায় ৭—৮ দিন রেখে খাওয়া যায়। তাছাড়া ব্লানচিং করে লবণ দ্রবণে ৫—৬ মাস রেখে মাশরুম খাওয়া যায়। ব্লানচিং করার নিয়ম হলো— শতকরা ২ ভাগ লবণযুক্ত ফুটন্ত পানিতে ২—৫ মিনিট মাশরুম সিদ্ধ করে পরিস্কার ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিয়ে তা ২% লবণ ও ১% সাইট্রিক এসিড মিশ্রিত দ্রবণে বায়ুরোধী করে সংরক্ষণ করা।

(খ) শুকনো মাশরুম সংরক্ষণ : মাশরুম শুকানোর পর তা বায়ুরোধী প্যাকেটে ৫—৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়াও শুকানো মাশরুম ব্লেন্ডার মেশিন দিয়ে গুড়ো বা পাউডার করে বায়ুরোধী প্যাকেটে ৫—৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। ভক্ষণযোগ্য মাশরুম বিভিন্ন পদ্ধতিতে আবাদ বা চাষ করা যায়। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে খড়দিয়ে এবং শীতকালে কম্পোস্ট দিয়ে যথাক্রম স্ট্র মাশরুম ও ওয়েস্টার মাশরুম চাষ করা হয়। নিচে স্ট্র মাশরুম ও ওয়েস্টার মাশরুম এর চাষ পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

স্ট্র মাশরুম চাষ পদ্ধতি প্রয়োজনীয় উপকরণ : মাশরুম বীজ বা স্পন ধানের খড় ৬০ সে.মি.  ৪০ সে.মি. সাইেজের পাতলা পলিথিন ব্যাগথার্মোমিটার হাইগ্রোমিটার হ্যান্ড ে¯প্রয়ার ব্লেড বা চাকু জীবাণুনাশক বালতি কড়াই ছিদ্রমুক্ত কালো পলিথিন শীট ছিকা চাষ প্রক্রিয়া : এক কেজি ধানের খড় ২—৩ ইঞ্চি আকারে কেটে নিয়ে একটি বেড প্রস্তুত করা যায়। কাটা খড় বালতিতে পরিস্কার পানি নিয়ে তাতে ১২ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হয়। এরপর একটি বড় কড়াইয়ে প্রায় ৮৫০ সে. তাপমাত্রার গরম পানিতে বালতির খড়গুলো ৩০ মিনিট ধরে সিদ্ধ করতে হয়।

 

মাশরুম চাষ ৩ মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৫

 

এতে খড়ের মধ্যে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। সিদ্ধ করা খড় কড়াই থেকে তুলে চাটাই বা পাকা মেঝের ওপর রেখে ঠান্ডা করতে হবে ও পানি ঝড়াতে হবে, কিন্তু শুকানো যাবে না। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো মানের মাশরুম বীজ সংগ্রহ করে প্যাকেট থেকে বীজ বা স্পন বের করে এমনভাবে ছোট ছোট টুকরোয় ভাঙ্গতে হবে যাতে বীজযুক্ত প্রতিটি দানা পৃথক হয়ে যায়। প্রতি বেডের জন্য ১০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। এখন ৪০—৫০ টি ছিদ্রযুক্ত একটি পলিথিন ব্যাগে পানি ঝড়ানো সিদ্ধ করা খড় ঢুকাতে হবে।

বায়ু চলাচলের সুবিধার্থে পলিথিন ব্যাগে ছিদ্র করা হয়। প্রথমে পলিথিন ব্যাগের ভিতর ৪—৫ ইঞ্চি উঁচু করে খড়ের স্তর দিয়ে তার ওপর ২৫ গ্রাম মাশরুম বীজ সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর এই ছড়ানো মাশরুম বীজের ওপর আবার ৪—৫ ইঞ্চি উঁচু করে খড়ের ¯র বিছিÍ য়ে পুনরায় ২৫ গ্রাম মাশরুম বীজ সমভাবে ছড়াতে হবে। এভাবে খড়ের ৪টি স্তরের ওপর ৪ বার মাশরুম বীজ ছড়ানোর পর পঞ্চমবার একইভাবে খড় বিছিয়ে পলিথিন ব্যাগের মুখ বেঁধে দিলেই একটি উপযুক্ত বেড প্রস্তুত হয়ে যাবে।

চাষঘরের তাপমাত্রা ২৫—৩০০ সে. এবং আর্দ্রতা ৮০—৯০% রাখা উচিত। পলিথিন শীট দিয়ে ঢেকে তাপ বাড়ানো যায়, আবার খুলে দিয়ে তাপ কমানো যায়। প্রস্তুতকৃত বেড চাষঘরের মাচার ওপর ১৪ দিন অন্ধকারে রেখে দিলে বীজ গজাবে এবং খড়ের চারিদিকে মাইসেলিয়াম দেখা যাবে। এ অবস্থাকে বীজ রানিং বলা হয়। এরপর অন্ধকার থেকে সরিয়ে নিয়ে পলিথিন ব্যাগ থেকে খড়ের বেড বের করে চাষ ঘরে মাচায় বা ছিকায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। সাবধানে বেড বের করলে ঐ পলিথিন পুনরায় ব্যবহার করা যায়। পলিথিন বেড থেকে বেড বের করার ৭—১০ দিন পরই মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। এরকম বেড থেকে মোট ৩ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। এ ধরনের বেডে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে হ্যান্ড ে¯প্রয়ার দিয়ে পানি ে¯প্র করতে হয়।

বেডকে পোকামাকড় ও অন্যান্য আপদের হাত থেকে রক্ষা করতে হয়। উল্লেখ্য ১ কেজি ওজনের শুকনো খড়ের বেড থেকে ৬০০—৮০০ গ্রাম মাশরুম উৎপাদন সম্ভব।
ওয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি প্রয়োজনীয় উপকরণ : মাশরুম বীজ বা স্পন (রর) কম্পোস্ট তৈরির জন্য কাঠের গুঁড়া ও ধানের কুড়া প্লাষ্টিক গামলা অটোক্লেভ মোম লাগানো কাগজ ও তুলা চোষ কাগজ/চট তাক একটি সরু কাঠি পলিথিন ব্যাগ হ্যান্ড ে¯প্রয়ার।

চাষ প্রক্রিয়া : একটি বড় প্লাস্টিকের গামলায় ৩/৪ ভাগ শুকনো কাঠের গুঁড়া, ১/৪ ভাগ ধানের কুড়া ও পরিষ্কার পানি নিয়ে এমনভাবে মিশাতে হবে যেন মিশ্রণে চাপ দিলে ২/১ ফোটা পানি ঝরে। পরিস্কার পলিথিন ব্যাগে এই ভিজানো গুড়ার ৫০০ গ্রাম ভরতে হবে। একটি সরু কাঠি দিয়ে পলিথিন ব্যাগের ভিতর মাঝখান থেকে তলার দিকে চাপ দিয়ে একটি গর্ত করতে হবে। ব্যাগের মুখ মোমযুক্ত কাগজ ও তুলা দিয়ে বন্ধ করতে হবে। এরপর অটোক্লেভ দ্বারা ১০০০ সে. তাপে ৩০—৪০ মিনিট ব্যাগগুলো শোধন করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

অটোক্লেভ থেকে ব্যাগ সরিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করার জন্য ২৪ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর ব্যাগের ভিতর মাঝখানের ছিদ্র দিয়ে মাশরুম বীজ ঢুকিয়ে ব্যাগগুলো সঁ্যাতসঁ্যাতে ও অন্ধকার ঘরে ২০—২৫০ সে. তাপমাত্রায় তাকের ওপর ২০ দিন রাখতে হয়। এতে সাদা মাইসেলিয়াম দিয়ে ব্যাগ ভরে যাবে। এই অবস্থায় ব্যাগগুলোর কাঁধ বরাবর উল্টো উ আকৃতিতে কেটে নিতে হবে এবং প্রতিদিন ৪—৫ বার করে পানি ে¯প্র করতে হবে। এ সময় ঘরে আলো বাতাস থাকা জরুরী। এমতাবস্থায় ১০—১৫ দিনের মধ্যেই মাশরুম গজাবে। উপরের অংশ ছাই রঙের হলে মাশরুম সংগ্রহ করতে হয়। একটি ব্যাগ থেকে ৬—৭ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায়।

Capture 59 মাশরুম চাষ , বিশেষ উৎপাদন সম্পৃক্ত কৃষি প্রযুক্তি , ইউনিট-৫ , পাঠ-৫.৫

মাশরুমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব :

১। মাশরুম সুস্বাদু ও পুষ্টিকার সবজি বিধায় নিয়মিত খেয়ে পুষ্টিহীনতা দূর করা যায়।

২। বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা সম্ভব।

৩। মাশরুমে ভেষজ গুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।

৪। আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। ফলে ভূমিহীন কৃষক তাকে তাকে সাজিয়ে একটি ঘরকে কয়েকটি ঘরের সমান ব্যবহার করতে পারে। অর্থাৎ মাশরুম চাষ স¤প্রসারণের মাধ্যমে এক একর জমির উৎপাদনকে বাড়িয়ে প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি করতে পারে।

৫। বাড়তি আয়ের উৎস। অন্য যে কোনো পেশার পাশাপাশি এটা চাষ করে একদিকে যেমন পরিবারের চাহিদা মেটানো যায়, অন্যদিকে বাড়তি আয়ও করা সম্ভব হয়।

৬। অল্প পুঁজি ও শ্রমের মাধ্যমে এটা চাষ করা যায়।

৭। মাশরুম চাষে বিনিয়োগকৃত অর্থ অতি দ্রুত তুলে আনা সম্ভব।

৮। চাষে সার ও বালাইনাশক ব্যবহৃত হয় না বলে মাশরুম স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ বান্ধব হয়।

৯। মাশরুম চাষে ব্যবহৃত প্যাকেট সর্বশেষে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

১০। এক কেজি মাশরুম উৎপাদন করতে ৪০ টাকা খরচ হয় অথচ ২০০ টাকা বিক্রি করা যায়। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ১৬০ টাকা লাভ হয়।

১১। এক হিসেবে দেখা গেছে যে, প্রতি হেক্টরে গরুর মাংস ও মাছ উৎপাদিত হয় যথাক্রমে ৭৮ কেজি ও ৬৭৫ কেজি। অথচ মাশরুম উৎপাদিত হয় ৬৫০০০ কেজি।

১২। চাষ শুরুর অল্প দিনের মধ্যে মাশরুম সংগ্রহ করা যায়, অথচ অন্য কোন ফসলে তা সম্ভব নয়।

১৩। মাশরুম চাষের মাধ্যমে দুঃস্থ মহিলা ও বেকার লোকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। ফলে সমাজ থেকে দারিদ্র্যতা দূর হবে।

১৪। সারা বছর মাশরুম চাষ করা যায়।

আরও দেখুন :

Leave a Comment