মুরগি পালন পদ্ধতি | ইউনিট – ৯ , পাঠ – ৯.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

মুরগি পালন পদ্ধতি , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ৯ , পাঠ – ৯.১ , প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যে পদ্ধতিতেই ডিম ফোটানো হোক না কেন মুরগি থেকে সঠিক উৎপাদন পেতে হলে এদেরকে সঠিকভাবে লালন—পালন করতে হবে। খামারে একদিন বয়সের বাচ্চা তোলার পর থেকে উৎপাদন শেষে বাতিল করা পর্যন্ত এদের পুরো লালন—পালনকালকে দুটো প্রধান পর্বে ভাগ করা যায়।

মুরগি পালন পদ্ধতি , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ৯ , পাঠ – ৯.১

যেমন

১। বাচ্চা পালন পর্ব ও

২। বয়ষ্ক পোল্টি্র পালন পর্ব

১। বাচ্চা পালন পর্ব: এ পর্বটিকে দুটো উপপর্বে ভাগ করা যায়। যেমন

ক. ব্রুডিং পর্ব: এ পর্বটি মুরগির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ের সঠিক যত্নের ওপরই এদের ভবিষ্যত জীবনের উৎপাদন নির্ভর করে। এ পর্বটির স্থিতিকাল ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির যথাক্রমে ০—৪ ও ০—৫/৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত।

খ. গ্রোয়িং বা বৃদ্ধি পর্ব: যেহেতু এটি বৃদ্ধি পর্ব তাই এ পর্বের সঠিক যত্নের ওপর এদের বৃদ্ধি ও ভবিষ্যত উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভর করে। ব্রয়লার ও ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে এর স্থিতিকাল যথাক্রমে ৫—৬/৮ ও ৪/৫১৮/২০ সপ্তাহ পর্যন্ত।

মুরগি পালন পদ্ধতি , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ৯ , পাঠ – ৯.১

২। বয়ষ্ক পোল্টি্র পালন পর্ব: এ পর্বটি ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে ১৮/২০—৭২ সপ্তাহ পর্যন্ত।

লেয়ার বা ডিমপাড়া মুরগির জীবনে সবগুলো পর্ব আসলেও ব্রয়লার মুরগির পালন শুধু ব্রুডিং ও গ্রোয়িং পর্বেই সীমাবদ্ধ।

মুরগি পালন পদ্ধতি আমাদের দেশে সাধারণত তিনভাবে মুরগি পালন করা হয়।

১। মুক্ত পদ্ধতি/ছেড়ে পালন।

২। আধাছাড়া বা অর্ধ—আবদ্ধ অবস্থায় পালন।

৩। আবদ্ধ অবস্থায় পালন।

মুক্ত/ ছেড়ে পালন পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে সাধারণত গ্রামীণ পরিবেশে মুরগি পালন করতে দেখা যায়। এ পদ্ধিতে মুরগি দিনের বেলায় বাড়ির আঙ্গিনায় চারিদিক থেকে খাবার খুঁজে খায় এবং রাতের বেলায় ঘরে ফেরে। এই পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের উপযোগী নয় । এই পদ্ধতির সুবিধা হলো ফেলে দেওয়া এঁটো ভাত, চালের খুদ, পোকামাকড়, কচি ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি খায় ফলে খরচ নেই বললেই চলে।

অর্ধমুক্ত/ অর্ধছাড়া পদ্ধতি: একটি নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে মুরগির চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত থাকে এই পদ্ধতিতে। মুরগি ঘরের সামনে ১.৫—২.০ ফুট উঁচু বাঁশ অথবা তারের জালি দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। এই ঘেরা জায়গার মধ্যে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হয়। মুক্ত পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।

আবদ্ধভাবে পালন পদ্ধতি : এক্ষেত্রে মুরগি সম্পূর্নভাবে ঘরে রেখে পালন করা হয়। এই পদ্ধতিতে জায়গা কম লাগে, খাদ্য খরচ বেশি হলেও লাভজনক। খামারিরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে লাভবান হতে পারেন ।

আবদ্ধভাবে পালনের আবার তিনটি পদ্ধতি রয়েছ। যথা—

১। লিটার পদ্ধতি ২। মাচা পদ্ধতি ৩। খাঁচা/ ব্যাটারি পদ্ধতি

পোল্টি্র খামার 1 মুরগি পালন পদ্ধতি | ইউনিট – ৯ , পাঠ – ৯.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

লিটার পদ্ধাতি: এ পদ্ধতিতে মুরগির পালনকালের প্রতিটি পর্বই ডিপ লিটারের উপর অতিবাহিত হয়। লিটার হলো ঘরের মেঝের উপর কাঠের ছিলকা, করাতের গুড়া, তুষ, বালি, ছাই ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা বিছানা। লিটার মলমূত্র শোষণ করে এবং মুরগির জন্য আরামদায়ক হয়। এই পদ্ধতিতে ৫.০ সেমি পুরু করে বিছানা তৈরি করতে হয়।

বিছানা বেশি নোংরা বা সঁ্যাতসেঁতে হলে তা সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিবর্তন করে দিতে হয়। ২—৩ মাস পরপর মুরগির ঘরের লিটার পরিবর্তন করতে হয়। এ পদ্ধতিতে জায়গা বেশি লাগে। ব্রয়লার পালনের জন্য এটি ভালো পদ্ধতি। তবে, লেয়ার পালনের জন্যও এটি বহুল প্রচলিত। প্রতিটি পূর্ণবয়ষ্ক মুরগির জন্য ১.২—১.৫ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। লিটারের উপর খাবার ও পানির পাত্রে খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে মুরগির ঘরে আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছণীয়।

মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন: এই পদ্ধতিতে ঘরের মধ্যে মেঝে থেকে ১.০—১.৫ ফুট উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। মাচার দুটি বাঁশ বা কাঠের প্লেটের মধ্যে ০.৫—১.০ ইঞ্চির বেশি ফাঁক হলে মুরগির পা ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাচা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে শুধু মুরগির মল নিচে পড়তে পারে। খাবার ও পানির পাত্র মাচার উপরে দিতে হবে। ডিম পাড়ার বাসা মাচার একপাশে নিরিবিলি স্থানে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে ঘর পরিষ্কার থাকে এবং মুরগির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে পানির উপর এভাবে ঘর তৈরি করে মুরগি পালন করা যায়। চিত্র ৯.১.১ : মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন

Capture 161 মুরগি পালন পদ্ধতি | ইউনিট – ৯ , পাঠ – ৯.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

খাঁচায় পালন: এই পদ্ধতিতে এদের ব্রুডিং, গ্রোয়িং ও ডিমপাড়া প্রতিটি পর্বই বিশেষভাবে তৈরি খাঁচার ভিতর সম্পন্ন করা হয়। এ খাঁচাটি মুরগিা সংখ্যা ওপর নির্ভর করে ছোট বা বড় এবং একতলা বা বহুতলাবিশিষ্ট হতে পারে। খাঁচা পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে জায়গা বেশকম লাগে। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে রোগজীবাণুর আক্রমণ কম হয়। ডিমপাড়া মুরগি পালনের জন্য এটি আদর্শ পদ্ধতি। নিচে খাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

Capture 162 মুরগি পালন পদ্ধতি | ইউনিট – ৯ , পাঠ – ৯.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

খাঁচার ধরন

১। এক তলাবিশিষ্ট খাঁচা: যেসব জায়গায় গরম বেশি সেখানে একতলাবিশিষ্ট খাঁচা তৈরি করা ভালো। মুরগির সংখ্যা বেশি হলে এ ধরনের খাঁচা ব্যবহারে জায়গা বেশি লাগে। একটি টিন/ খড়ের চালার নিচে এই খাঁচা স্থাপন করতে হয়। এতে খাদ্য ও পানি প্রদান, ডিম সংগ্রহ এবং ময়লা পরিষ্কার তুলনামূলক সহজ।

পোল্টি্র খামার 2 মুরগি পালন পদ্ধতি | ইউনিট – ৯ , পাঠ – ৯.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

২। দুই তলাবিশিষ্ট খাঁচা: এক্ষেত্রে একটি খাঁচার উপর অন্য একটি খাঁচা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে ময়লা সরাসরি নিচের তলার মেঝেতে পড়ে। উভয় তলার মধ্যবর্তী স্থানে টিনের বা প্লাস্টিকের ট্রে দেয়া হয়। ময়লা ট্রের উপর জমা হয়। সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিন ট্রে পরিষ্কার করতে হয়। এক তলাবিশিষ্ট খাঁচার তুলনায় দুই তল বিশিষ্ট খাঁচায় মুরগি পালনে জায়গা কম লাগে।

৩। তিল তলাবিশিষ্ট খাঁচা: এক্ষেত্রে একটি খাঁচার উপর অন্য একটি খাঁচা এমনভাবে বসাতে হবে যেমনটি সিঁড়ির ক্ষেত্রে দেখা যায়। এতে প্রতি তলার মুরগির মলমূত্র সরাসরি মেঝেতে পড়বে। বানিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে
এই খাঁচা অত্যন্ত জনপ্রিয়। যাদের জায়গার অভাব কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন করতে চান তারা এই পদ্ধতিতে মুরগি পালন করতে পারেন।

আরও দেখুন :

Leave a Comment