মৃত্তিকায় যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ বিদ্যমান থাকে তাদেরকে মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান বলা হয় । বিভিন্ন মৃত্তিকায় রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির পরিমাণ বিভিন্ন । সিলিকন ও এলুমিনিয়াম অক্সাইড মাটির শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ এবং জৈব পদার্থ ও অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলো মিলে মৃত্তিকার শতকরা ৯৮ ভাগ দখল করে রাখছে। মৃত্তিকায় যে খনিজ ও জৈব উপাদানগুলো পাওয়া যায়, এখানে তার একটি সাধারণ তালিকা দেয়া হলো :
মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ৩ , পাঠ ৩.১
শুষ্ক এলাকার মৃত্তিকায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকে। মূলতঃ এলুমিনিয়াম, লৌহা, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম প্রভৃতি মৌলিক পদার্থ বিভিন্ন মৃত্তিকায় বিভিন্ন পরিমাণ বিদ্যমান। তাছাড়া টাইটানিয়াম অক্সাইডও অনেক মৃত্তিকায় প্রচুর রয়েছে। আবার ভ্যানাডিয়াম, সেলোনিয়াম, আয়োডিন ও ফ্লোরিনও কম বেশি কোন কোন মৃত্তিকায় পাওয়া যায়।

সিলিকা (SiO2) বেলে মাটিতে বেশি (৮৪-৯২%) এবং এঁটেল মাটিতে কম (৬৪-৬৫%) থাকে। এলুমিনা (AL03) এঁটেল মাটিতে বেশি (৯-১৪%) এবং বেলে ও দোআঁশ মাটিতে কম (৩-৪%) থাকে। আয়রন অক্সাইড এঁটেল মাটিতে বেশি (৯%) এবং বেলে মাটিতে কম (২%) থাকে। এঁটেল মাটিতে ক্যালসিয়াম (১-২%) ও ম্যাগনেসিয়াম (১-৩%) বেশি থাকে কিন্তু বেলে ও বেলে দোআঁশ মাটিতে মাত্র ০.০৬-০.৪% ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও ০.২৯-০.৫২% ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড বিদ্যমান। বিভিন্ন মাটিতে পটাসিয়াম অক্সাইডের পরিমাণে তারতম্য তেমন লক্ষণীয় নয় ( ০.১৪-০.৭%) ।

এঁটেল, দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে সোডিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ আদৌ লক্ষ্যণীয় নয় (০.০১ ০.০৮%)। তবে দোআঁশ মাটিতে প্রায় ১% থাকতে পারে। ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড সকল প্রকার মাটিতেই সীমিত পরিমাণ বিদ্যমান (০.০১-০.৩%) (মজুমদার, ১৯৮৫)।

অধিকাংশ কৃষি জমিতে জৈব পদার্থ শতকরা ২ ভাগের কম থাকে। আবার বনভূমি, আবর্জনা পচানো জায়গা এবং বিশেষ মৃত্তিকায় (পিট মাটি) জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। মৃত্তিকা উপাদানের
যৌগসম হ তিনটি অবস্থায় থাকে :
(১) গাছপালার গ্রহণ অনুপযোগী। যথা ঃ প্রোটিন।
(২) কোলয়েডের উপর লেগে থাকা বা বিনিময়যোগ্য যথা : ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম প্রভৃতি।
(৩) মৃত্তিকা দ্রবণে উদ্ভিদের গ্রহণোপযোগী আয়ন হিসেবে।
মৃত্তিকায় ভারী খনিজ উপাদান
মৃত্তিকায় খনিজ ও জৈব ছাড়াও আরও কতগুলো উপাদান অল্প পরিমাণে রয়েছে। এগুলোকে ভারী উপাদান বা হেভী মেটাল বলা হয়। এ ভারী উপাদান বা হেভী মেটাল মৃত্তিকা পরিবেশ দূষণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। এছাড়া এসব ভারী খনিজ পদার্থের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি হলে ফসলের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন মারাত্বকভাবে বিঘ্নিত হয়। মৃত্তিকা ভারী খনিজ পদার্থ ভূ-গর্ভস্থ পানির রাসায়নিক ধর্মে প্রভাব বিস্তার করে। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে এসব ভারী খনিজের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ গুলো হচ্ছেঃ
আরও দেখুন:
- মৃত্তিকা বুনট পরীক্ষা , ব্যবহারিক , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ২ , পাঠ ২.৮
- মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি , ব্যবহারিক , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ২ , পাঠ ২.৭
- শিলা ও খনিজ পরিচিতি , ব্যবহারিক , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ২ , পাঠ ২.৬
- মৃত্তিকার বর্ণ ও তাপমাত্রা , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ২ , পাঠ ২.৫
- বাংলাদেশে কৃষি – উইকিপিডিয়া