শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়। আজকে আমরা শিলাক্ষয় কী, কেন, কিভাবে হয়, বা এর কারণে কি হয়, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচানা করবো।

শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

Table of Contents

শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

শিলাক্ষয় কী (What is weathering):

পূর্বের পাঠে শিলা ও খনিজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। শিলা ও খনিজ বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যেমন : সূর্যতাপ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বায়ুমন্ডলীয় চাপ ও অন্যান্য রাসায়নিক শক্তির প্রভাবে ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়। সুতরাং প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে শিলার চূর্ণ হওয়াকে শিলাক্ষয় বলে।

এসব চূর্ণ বিচূর্ণ অংশের সাথে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ মিলে কালক্রমে মৃত্তিকা তৈরি হয়। সুতরাং যে ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শিলা ও খনিজ পদার্থ মাটি সৃষ্টির জন্য আলগা বা অজমাটবদ্ধ পদার্থে পরিণত হয় তাকে শিলাক্ষয় (Weathering) বলে। বিভিন্ন বিজ্ঞানী শিলাক্ষয়কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। বিজ্ঞানী N. C. Brady’র মতেও প্রাকৃতিক উপায়ে বায়ুমন্ডলীয় শক্তির প্রভাবে ভূ-ত্বকের উপরে শিলার ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনকে শিলাক্ষয় বলে৷ অন্যদিকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানী এম. এম. রাই এর মতে, শিলাক্ষয় এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভূ-ত্বকের কঠিন শিলা ভেঙ্গে মৃত্তিকার উৎস বস্তুতে পরিণত হয়।

Capture 1 শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

শিলাক্ষয়ের গুরুত্ব:

কঠিন শিলাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে মৃত্তিকার উৎস বস্তুতে (Soil Parent material) উন্নীত করা এবং সর্বোপরি মৃত্তিকায় রূপান্তরিত করার সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া সাধনে শিলক্ষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং শিলাক্ষয় ব্যতিরেকে মাটি সৃষ্টির কথা কল্পনা করা যায় না।

শিলাক্ষয় , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ১ , পাঠ ১.৪

শিলাক্ষয়ের প্রকারভেদ (Types of weathering):

শিলাক্ষয় প্রধানত দুই প্রকার যথা :
১। ভৌত শিলাক্ষয় (Physical Mechanical weathering)
২। রাসায়নিক শিলাক্ষয় (Chemical weathering)

ভৌত শিলাক্ষয় (Physical Mechanical Weathering):

প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ যেমনঃ তাপমাত্রা, বায়ু প্রবাহ, হিমবাহ, নদী প্রবাহ ইত্যাদির প্রভাবে বড় বড় শিলা ও খনিজ পদার্থ ভেঙ্গে ছোট আকারে পরিণত হওয়াকে ভৌত শিলাক্ষয় বলে। এ প্রক্রিয়ায় শুধু শিলা বা খনিজের ভৌত পরিবর্তন হয়। রাসায়নিক উপাদানের কোন পরিবর্তন হয় না বলে রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যেরও কোন পরিবর্তন হয় না। যেমন : গ্র্যানাইট শিলা ভেঙ্গে গ্র্যানাইট শিলার কয়েকটি টুকরো হতে পারে কিন্তু গ্র্যানাইটের বৈশিষ্ট্যের কোন পরিবর্তন হয় না।

রাসায়নিক শিলাক্ষয় (Chemical Weathering) শিলা ও খনিজ পদার্থসমূহ ভৌতভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়ার পর পরই শুরু হয় রাসায়নিক বিযোজন। এটি বিশেষত উষ্ণ ও আর্দ্র এলাকায় উল্লেখযোগ্য হারে ঘটে যেখানে ভৌত ও রাসায়নিক শিলাক্ষয় নিবিড়ভাবে সংঘটিত হয় এবং একে অপরকে ত্বরান্বিত করে।

পানির উপস্থিতিতে রাসায়নিক শিলাক্ষয় অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়। উদ্ভিজ্জ অবশিষ্টংাশের জীবাণুঘটিত ভাঙ্গনের (Breakdown) ফলে O2 এবং জৈব ও অজৈব এসিড সৃষ্টি হয়। এদের যুগপৎ ক্রিয়ায় রাসায়নিক শিলাক্ষয় ত্বরান্বিত হয়। এ সমস্ত এজেন্ট যৌথভাবে প্রাথমিক খনিজের উপর ক্রিয়া করে এদেরকে সেকেণ্ডারী খনিজে রূপান্তরিত করে এবং পরিশেষে উদ্ভিদের অপরিহার্য খাদ্য উপাদানে পরিণত হয়। রাসায়নিক শিলাক্ষয়ের ফলে শিলা ও খনিজের স্থায়ী রাসায়নিক পরিবর্তন সাধিত হয়।

 

ভৌত শিলা ক্ষয়ের উপাদানসমূহ:

(ক) তাপমাত্রা

(খ) বায়ু প্রবাহ

(গ) হিমবাহ

(ঘ) নদী প্রবাহ

(ঙ) উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রভাব

(চ) বরফ জমা ও গলা

(ছ) পানি

(জ) মাধ্যাকর্ষণজনিত শক্তি

ক) তাপমাত্রা জনিত শিলা ক্ষয়:

শিলা তাপ কুপরিবাহী। কাজেই শিলা পৃষ্ঠের উচ্চতাপ কেবল সামান্য অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। উত্তাপের ফলে শিলাপৃষ্ঠ আয়তনে অধিক সম্প্রসারিত হয় বলে তা অবশিষ্টাংশ থেকে আলাদা হয়ে যায়। বড় আকারের শিলার চেয়ে মিহি আকারের শিলায় এবং উঁচু স্থানে যেখানে অল্প সময়ের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেশি পরিবর্তিত হয় সেক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া সহজেই চোখে পড়ে। বিজ্ঞানী Bartlett (১৮৩২) দেখিয়েছেন যে, প্রতি ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রতিফুটে গ্রানাইট ০.০০০০০২৬৮ ইঞ্চি সম্প্রসারিত হয়।

দিন ও রাতের তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে পাশাপাশি সংলগ্ন ভিন্ন ভিন্ন খনিজে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সংকোচন ও প্রসারণ ঘটে। ফলে শিলাস্থ স্ফটিকগুলো আলগা হয়। যাতে শিলাগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়া শিলার সূক্ষ্ণ দশা অপেক্ষা স্থূল দশায় বেশি কার্যকরী। এভাবে শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত অন্যান্য শক্তির ক্রিয়ার ফলে মৃত্তিকা পদার্থে পরিণত হয়।

(খ) বায়ুপ্রবাহ জনিত শিলা ক্ষয় :

বায়ুপ্রবাহ যখন ধূলিকণায় পূর্ণ থাকে তখন তা শিলা ও শিলাস্থ খনিজগুলোতে এক ঘর্ষণের সৃষ্টি করে। বায়ু সমুদ্রের ঢেউয়ের ক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করে এবং উপকূল অঞ্চলে শিলাক্ষয় ঘটায়। ধূলি-ঝড় বিপুল ওজনের পদার্থ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বয়ে নিয়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ের মৃত্তিকা ও মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা এ ধরণের ভৌত শিলাক্ষয় দ্বারা গঠিত। এদের মধ্যে মোটা পদার্থ বেশি অনুপাতে থাকে। এদের ভৌত মিশ্রণ দেখিয়ে রেখা আকলে তার উচ্চতর অংশ প্রায় সরল রেখার মত হয়।

(গ) হিমবাহ জনিত শিলা ক্ষয় :

যে অঞ্চলে সারা বছর বরফজমে, হিমবাহ দ্বারা সে অঞ্চলে পানি নিষ্কাশিত হয়। পার্বত্য অঞ্চলে প্রবাহমান হিমবাহের চলার পথে শিলাসমূহ ধাক্কা ও ঘর্ষণের ফলে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। হিমবাহ বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে চলে বলে এর ক্ষয়সাধনের সামর্থ্য অনেক বেশি। হিমবাহ প্রবল চাপের সহিত পাহাড় পর্বত ও নদীর উপর দিয়ে চলতে থাকে। ফলে এর সাথে ঘর্ষণের ফলে যে কোন বস্তু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

(ঘ) নদী প্রবাহ জনিত শিলা ক্ষয়:

নদী প্রবাহের সাথে যে প্রচুর কর্দম, পলি, নুড়িপাথর এমনকি স্থানচ্যুত বড় শিলা থাকে, তাতে শুধু যে উপত্যকা গভীর ও বিস্তৃত হতে থাকে তাই নয়, এগুলো বিভিন্ন পদার্থকে ভেঙ্গে মৃত্তিকা গঠন করার মত অবস্থায় নিয়ে যায়। প্রবাহমান পানির ক্ষমতা এর বেগের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। বিজ্ঞানী Dulton হিসেব করেছেন, কলরাডো নদী ১৪,000 বর্গমাইল আয়তনের স্থান থেকে ১০,০০০ ফুট শিলা স্তর স্থানচ্যূত করেছে।

(ঙ) উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রভাব জনিত শিলা ক্ষয়:

Joffe বলেন, সত্যিকার অর্থে জৈবিক শিলাক্ষয় বলতে কিছু নেই। প্রকৃতপক্ষে এটি উদ্ভিদ ও প্রাণী দ্বারা সংগঠিত ভৌত ও রাসায়নিক শিলাক্ষয়। এটি তিনভাগে বিভক্ত :

(১) ক্ষুদ্র জীবাণুর কার্য জনিত শিলা ক্ষয়:

মাটিস্থ ব্যাকটেরিয়া মাটি হতে নানা প্রকার মৌলিক পদার্থ গ্রহণ করে, আবার মারা গেলে এদের দেহ বিয়োজিত হয়। ব্যাকটেরিয়া জৈবপদার্থকে বিয়োজিত করে মাটির সাথে মিশ্রিত করে। এভাবে ক্ষুদ্র জীবাণুর তৎপরতার দ্বারা নানা প্রকার জৈব ও রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে ফলে শিলা ও খনিজ পদার্থের বিগলন হয়।

শিলাক্ষয় , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ১ , পাঠ ১.৪

(২) উদ্ভিদের কার্য জনিত শিলা ক্ষয়:

শিলার গায়ে জন্মানো নিম্নস্তরের উদ্ভিদ সরে যাওয়ার পরে পচে নানা প্রকার এসিড উৎপাদন করে শিলায় স্থানীয়ভাবে ক্ষয় ঘটায়। অন্যদিকে শিলার ফাটলে বৃহদাকার উদ্ভিদ জন্মালে এদের শিকড় চারপাশে প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এবং শিলার ভাঙ্গন ঘটায়।
গাছপালা শ্বাসক্রিয়ায় CO2 ত্যাগ করে। এটি পানির সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনিক এসিড উৎপাদন করে যা শিলাক্ষয় ঘটায়। লাইকেন নামক উদ্ভিদ শুষ্ক পাথর হতে খাবার শুষে নেয়। এতে শিলাক্ষয় হয়।

(৩)  প্রাণীর কার্যাবলী জনিত শিলা ক্ষয়:

কেঁচো, সজারু, ইঁদুর, উইপোকা, পিঁপড়া, উড়চোঙ্গা ইত্যাদি মাটিতে ৫ ফুট গভীর পর্যন্ত গর্ত করতে পারে। এতে পানি ও বায়ু মৃত্তিকার নিচের স্তরে প্রবেশ করে এবং অন্তভূমি এভাবে প্রাণীর দ্বারা শিলাক্ষয় এর জন্য উন্মুক্ত হয়। কেঁচো যখন মাটি তোলে তা কেঁচোর পাকস্থলীর ভেতর দিয়ে বের হবার সময় পাথর জাতীয় বস্তুগুলো আকারে ছোট হয়ে যায় এবং মাটির উপরিস্তরে উদ্ভিজ্জ সমৃদ্ধ একটি মিহি স্তর সৃষ্টি হয়। মানুষ তার স্বীয় প্রয়োজনে শিলাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে মাটি খুড়ে, পুকুর খনন করে, রাস্তা তৈরি করে। এ সমস্ত কার্য সম্পাদনের সময় শিলা বা খনিজগুলো ভেঙ্গে যায়। কর্ষণের সময় মাটি আলোড়িত হয় বলে শিলা বা খনিজ কণায় ভাঙ্গা-গড়া চলতে থাকে। এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রাণী বা মানুষের প্রভাবে শিলা বা খনিজের অবক্ষয় চলছে।

(চ) পানির মাধ্যমে শিলা ক্ষয়:

বৃষ্টিপাত, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত, সেচের পানি, পানিস্রোত, গড়ানী পানি ইত্যাদি শিলা ও খনিজ পদার্থের উপর চাপ/বল প্রয়োগ ভৌত শিলাক্ষয় ত্বরান্বিত করে। পাহাড় থেকে ঝরনা বা প্রস্রবণের পানি অনবরত পড়তে থাকলে শিলা ভেঙ্গে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এককে পরিণত হয়।

(ছ) বরফ জমা ও গলার মাধ্যমে শিলা ক্ষয়:

ঠান্ডা পানি যখন বরফে পরিণত হয় তখন এর আয়তন ৯% বৃদ্ধি পায়। এর আয়তন বৃদ্ধির সময় প্রতি বর্গ ফুটে ১৫০ টন অর্থাৎ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১ টনেরও বেশি চাপের সৃষ্টি হয়। এ চাপের প্রভাবে শিলাস্থ ফাটলগুলো প্রসারিত হয় যার ফলে শিলা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।য টুকরোগুলো এত ছোট হয় যে, এরপর যখন বরফ গলে তখন এগুলো বরফ গলা পানির সঙ্গে গড়িয়ে চলে যায়। অতি সচ্ছিদ্র শিলা বিশেষত যখন সংপৃক্তির কাছাকাছি অবস্থায় থাকে, বরফ জমার সময় খুব সহজে গুড়া হয়ে যায়। ঠান্ডা ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে বরফ জমা এবং গলা শিলার ভৌতক্ষয় এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(জ) মাধ্যাকর্ষণজনিত শক্তি জনিত শিলা ক্ষয় :

পর্বতের উপরের ভঙ্গুর বা অদৃঢ় শিলা খন্ড মাধ্যাকর্ষণজনিত শক্তির প্রভাবে নিচে পতিত হওয়ার সময় পাথরের গায়ে ধাক্কা লাগে। তখন তা আবারও ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে পরিণত হয়।

শিলাক্ষয় , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , ইউনিট ১ , পাঠ ১.৪

রাসায়নিক শিলাক্ষয়ের উপাদানসমূহ:

(ক) দ্রবণ (Solution)
(খ) আর্দ্র বিশ্লেষণ (Hydrolysis)
(গ) পানি সংযোজন (Hydration)
(ঘ) কার্বোনেশন (Carbonation)
(ঙ)জারণ (Oxidation)
(চ) বিজারণ (Reduction)

দ্রবণ :

শিলা যে সকল উপাদানে গঠিত তার প্রায় সবগুলোই বিশুদ্ধ পানিতে গলে না। আবার কিছু কিছু খনিজ যেমনঃ কোয়ার্টজ CO2 যুক্ত পানিতে গলে না। বৃষ্টির পানিতে সামান্য পরিমাণ CO, দ্রবীভূত থাকে। গাছের শিকড়ের শ্বাসকার্যের ফলে ও জৈব পদার্থের পচনের ফলে মৃত্তিকার বায়ুতে যথেষ্ট পরিমাণ CO, থাকে যা পানিতে দ্রবীভূত হয়।

বিজ্ঞানী Wollny দেখছেন যে, ১.৫ মি. গভীরে বছরের বিভিন্ন সময়ে CO2 এর পরিমাণ শতকরা ৩.৮৪-৪.০৬ ভাগ থাকে। ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি CO2 পরিমাণ কম (০.৩-১০ ভাগ) থাকে। তবু ইহা বায়ুমন্ডলের তুলনায় অনেক বেশি। গাছপালা পচনের ফলে আরও জৈব অম্লের সৃষ্টি হয় যা মৃত্তিকাস্থ পানির দ্রবণীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অন্যান্য খনিজের তুলনায় CaCO3 এর দ্রবণীয় শক্তি অনেক বেশি। সেজন্য CaCO3 বহণকারী শিলা অগ্নীয় জলে খুব সহজে খন্ড খন্ড হয়ে যায় আর অকার্বনেট পদার্থ অবশিষ্টাংশ হিসেবে পড়ে থাকে।

Capture 2 শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

মৃত্তিকা দ্রবণে খনিজ পদার্থ ও জৈব এসিডের উপস্থিতির ফলে এর H এর পরিমাণ এবং দ্রবণে পানির বিয়োজন বৃদ্ধি পায়। কাজেই ক্ষয় হওয়ার মত সিলিকেট খনিজের উপর পানির প্রভাব মূলত H”-এর ক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে ।
Ca, Mg, Na, Al ও Fe এর জটিল সিলিকেট আর্দ্র বিশ্লেষণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। HD ক্ষার ও ক্ষারীয় মাটির আয়নকে খনিজ পদার্থের স্ফটিক স্তর (Lattice) থেকে অপসারিত করে।

ফলে অ্যালুমিনোসিলিসিক ও ফেরোসিলিসিক এসিড উৎপন্ন হয় এবং ক্ষার বা ক্ষারীয় হাইড্রোক্সাইড মুক্ত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সিলিসিক এসিড পৃথক হয়ে যায় এবং প্রথম অবস্থায় স্ফটিক স্তর (Lattice) পরিবর্তিত রূপ নেয়। পটাশ ফেল্ডস্পার থেকে কেওলিনাইট গঠন এ পরিবর্তনের একটি উদাহরণ।

Capture 3 শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

বিমুক্ত ক্ষারীয় এবং মৃত্তিকার ক্ষারীয় হাইড্রোক্সাইড সালফেট বা বাইকার্বোনেট হিসাবে নিষ্কাশিত হয়। অ্যালুমিনা ও ফেরিক হাইড্রোক্সাইডগুলো পুণরায় বিমুক্ত সিলিসিক এসিড বা তার অংশের সাথে মিলে দ্বিতীয় পর্যায়ের যৌগ উৎপন্ন করে যেগুলো বিশেষত্বের দিক দিয়ে কর্দম খনিজের কাছাকাছি। কোন কোন খনিজ দ্রব্য আয়নিত পানির সংস্পর্শে আসলে এর H খনিজ থেকে ক্ষারক প্রতিস্থাপিত হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন করে। এ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত রাসায়নিক যৌগ মাটি থেকে চুইয়ে ( Leaching) নিচে চলে যেতে পারে বা অন্যভাবে অপসারিত হতে পারে।

Capture 4 শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞানপানি সংযোজন (Hydration) :

ইহা হলো একটি বিশেষ খনিজের সাথে পানির রাসায়নিক সংযোজন। শিলাগুলো ভৌত প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে খনিজে বিভক্ত হয়ে পড়লে তা পানির সংস্পর্শে এসে পানি শোষণ করে নেয় তখন এ পানি খনিজ অণুগুলোর রাসায়নিক উপাদানে পরিণত হয়। ফেল্ডস্পার, এম্পিবুল, পাইরক্সিন জাতীয় খনিজগুলো পানির সংস্পর্শে আসলে পানি এই খনিজ অণুগুলোর ভেতর স্থান করে নেয়।

অণুগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম অনেকটা পরিবর্তিত হয়। তখন কোন কোন খনিজের বর্ণ পরিবর্তিত হয়, আবার কোন কোনটির বন্ধন শিথিল হয়ে যায় এবং অনেকগুলোর আয়তন বেড়ে যায়। যে সব খনিজ থেকে কর্দম কণিকার উপাদান গঠিত হয় সেগুলো প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে নেয়। এভাবে পানি শোষণের ফলে অনেক খনিজের বিয়োজন হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় সংগঠিত রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ নিম্নরূপ :

Capture 5 শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

 

কার্বোনেশন (Carbonation) :

জৈব পদার্থের বিয়োজনে কিংবা উদ্ভিদ শিকড়ের শ্বসন প্রক্রিয়ার ফলে CO2 উৎপন্ন হয়। এ CO2 পানির সঙ্গে মিশে H2CO3 উৎপন্ন করে। ক্ষারীয় উপাদান সমৃদ্ধ খনিজের সঙ্গে এই এসিডের বিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট খনিজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যে সকল শিলা গলে যায় এদের মধ্যে Ca Mg, K, Na, Fe বিদ্যমান থাকে। এ উপাদানগুলো এসিডের সংস্পর্শে এসে গলে যেতে শুরু করে।

হাইড্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় যে সব হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয় সেগুলো এসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়। এ দু’প্রকার বিক্রিয়ায় বিভিন্ন রকম কার্বোনেট ও বাইকার্বোনেট উৎপন্ন হয়। যে সব এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় সেখানে Carbonation এর মাধ্যমে খনিজের ওয়েদারিং বেশি হতে দেখা যায়। এ প্রক্রিয়া যুগপৎ কাজ করে।

Capture 6 শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

মৃত্তিকা দ্রবণে যত বেশি HD থাকবে শিলা বা খনিজের ওয়েদারিং তত বৃদ্ধি পাবে। এ H যদি কোন এসিড থেকে আসে তাহলে বিয়োজনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।

জারণ (Oxidation) :

স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেনের সংযোজনকে জারণ বলে। কিন্তু রসায়নবিদদের মতে, জারণ হলো কোন পরমাণু, আয়ন ও মূলক থেকে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন হওয়া বা অপসারিত হওয়া। পানি সংযোজন ও জারণ পাশাপাশি সংগঠিত হয়। সচরাচর আয়রন বহণকারী খনিজে ইহা সংগঠিত হয়ে থাকে। কিছু কিছু খনিজে আয়রন বিজারিত ফেরাস (Fet”) আয়ন হিসেবে ++ থাকে।

যদি এ ফেরাস Fe আয়ন জারিত হয়ে ফেরিক আয়নে (Fe) পরিণত হয় তবে খনিজে আয়নিক সমন্বয় সাধিত হয়। ফলে কম স্থায়ী খনিজ উৎপন্ন হয়, যা পরবর্তীতে বিচূর্ণীভবন এবং রাসায়নিক ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় বিযোজিত হয়। অলিভাইন- এ পানি সংযোজনের ফলে FeO বিমুক্ত হয়, যা দ্রুত জারিত হয়ে জিওথাইট (Geothite) এ পরিণত হয়।

Capture 7 শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

যখন কোন আয়ন যেমন : Fe খনিজ থেকে বিমুক্ত হয় কিংবা জারিত (Oxidized) হয় তখন খনিজের গাঠনিক দৃঢ়তা হ্রাস পায়। ফলে খনিজের যান্ত্রিক ভাঙ্গন সহজতর হয় যা পরবর্তী রাসায়নিক বিক্রিয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

বিজারণ :

ইহা জারণের বিপরীত প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কোন পরমাণু বা অণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে। পাথর চূর্ণ, কাঁকড় বা নবীন মাটি ইত্যাদিতে ছোট বড় অনেক রন্ধ্র থাকে। কখনও কখনও রন্ধ্রগুলো পানি দ্বারা পূর্ণ থাকে। আবার কখনও কখনও জৈব পদার্থের বিয়োজনে CO2 উৎপন্ন হয়, যারা O কে অপসারিত করে। এ অবস্থায় O2 এর অনুপস্থিতিতে শিলা বা খনিজের বিজারণ প্রক্রিয়া হয়ে থাকে। এতে শিলার স্বাভাবিক কঠিনতা লোপ পায়। ফলে শিলা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। Fe 20, H₂ FeO+ H₂0 + ভৌত ও রাসায়নিক শিলাক্ষয়ের পার্থক্য :

Capture 8 শিলাক্ষয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান

 

সোর্স:

  • শিলাক্ষয় , পাঠ ১.৪, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

আরও দেখুন:

Leave a Comment