সাইলেজ তৈরি (Silage) , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১২ , পাঠ – ১২.৩ , লি (Silage) বায়ুনিরোধক স্থানে সংরক্ষিত সবুজ ঘাস কে সাইলেজ বলে। অর্থাৎ খাদ্যমানের কোনো পরিবর্তন না করে সবুজ ঘাস বা গাছকে ভবিষ্যতে গবাদি প্রাণির রসালো খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা। সাইলে তৈরির প্রক্রিয়াকে এনসাইলেঞ্জিং বলে। সাধারণত তাজা ও সবুজ নন-লিগ্যুমজাতীয় ঘাস সংরক্ষণের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহা করা হয়। যে ঘাসে দ্রবণীয় শ্বেতসার বেশি থাকে তা সাইলেজ প্রস্তুত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ভূট্টা, জোয়ার, গিনি, নেপিয়া ইত্যাদি ঘাস সাইলেজ প্রস্তুত করার জন্য উত্তম।
সাইলেজ তৈরি (Silage) , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১২ , পাঠ – ১২.৩
শুঁটিজাতীয় ঘাসের সাইলেজ করতে হলে এর সঙ্গে অশুঁটি ঘাস মেশাতে হবে। যেমন- কাউপি, ভুট্টা মিশ্রিত করে সাইলেজ প্রস্তুত করা যায়। সাইলেজ তৈরির জন্য বায়ুনিরোধক কনটেইনার ধারককে সাইলেজ বলে। অর্থাৎ যে স্থানে গর্ত করে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয় তাকে সাইলো বলে। ভুট্টা সাইলেজ তৈরির জন সর্বোৎকৃষ্ট ঘাস। যেসব ঘাসে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো সাইলেজের জন্য ভাল। কারণ শর্করা সহজেই গাজন হ । সাইলেজে ঝোলাগুড় যোগ করে শর্করার পরিমাণ বাড়ানো যায়। কাঁচা ধানের খড় ও ঘাস একত্রে ৫-১ অনুপাতে মিলিয়ে সাইলেজ তৈরি করা যায়।
সাইলেজ তৈরির নিয়ম
সাইলেজ তৈরি করতে নিম্নলিখিত ধাপসমূহ অনুসরণ করতে হবে।
১. ফডারের ফুল আসার পূর্বে কান্ড যখন খুব নরম ও রসালো থাকে ঠিক তখন সাইলেজ তৈরির জন্য কাটতে হবে।
২. ঘাসগুলো ১৫-২০ সেমি. পরিমাণ করে কেটে নিতে হবে।
৩. সবুজ ঘাস কাটার পর সাইলোপিটে বায়ুরোধক অবস্থায় স্তরে স্তরে সাজানো হবে।
৪. ঘাসে দ্রবনীয় কার্বহাইড্রেটের পরিমাণ কম মনে হলে অথবা অশুটি ঘাসের সাথে শুঁটিজাতীয় ঘাস মিশ্রিত কে সাইলেজ প্রস্তুত করার সময় ঝোলাগুড় বা চিটাগুড় স্তরে স্তরে মিশ্রিত করতে হবে।
৫. প্রতি স্তরে সাজানোর সময় সাইলোর ভেতরে নেমে পা দিয়ে ভালোভাবে প্যাকিং করতে হবে যেন ভিতরে ফাঁকা ন থাকে ।
৬. চেপে চেপে বসানো ঘাসের ওপর একস্তর খড় বা নিম্নমানের ঘাস দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৭. তারপর শক্ত পলিথিন দিয়ে ঢেকে এমনভাবে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে ভেতরে পানি ঢুকতে না পারে। সম্ভব হে সাইলোর উপরে চালের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে বৃষ্টির পানিতে সাইলোজ ভিজে না যায়।
৮. সাইলেজ তৈরি হলে তা সবুজ রংয়ের হবে এবং পচা ঘাসের মত দেখাবে।
৯. সাইলেজ কাঁচা ঘাস বা শুকনা খড়ের সাথে মিলিয়ে খাওয়ানো যায়।
বি. দ্র. ৩/৪ সপ্তাহ পর থেকেই গবাদি প্রাণিকে সাইলেজ খাওয়ানো যেতে পারে।
সাইলেজ তৈরির সাবধানতা
১. ফডারের জাত নির্বাচন: অশুঁটি জাতীয় ফডার দিয়ে সাইলেজ করা ভালো। শুঁটি ও অশুঁটি ফডার মিশ্রিত করলে চিটাগুড় মিশিয়ে দিতে হবে।
২. ফসল সংগ্রহের সময়: সাইলেজ প্রস্তুতির জন্য সবুজ ঘাসের কান্ড নরম ও রসালো অবস্থায় ফুল ্আসার পূর্বে কাটতে হবে। শুকনো দ্রব্য ৩০—৩৫% থাকতে হবে।
৩. সঠিকভাবে সাইলো প্রস্তুতকরণ: সাইলো পিট নির্মাণ কাঠামো সঠিক হতে হবে। সাইলো পিটে বায়ূরোধক অবস্থা বজায় রাখতে হবে। এয়ার পকেট যেন তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও দেখুন :
- গবাদিপ্রাণির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১২ , পাঠ – ১২.২
- গরু, মহিষ ও ছাগলের বাসস্থান , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১২ , পাঠ – ১২.১
- ছাগলের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১১ , পাঠ – ১১.৫
- মহিষের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১১ , পাঠ – ১১.৪
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা