গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-  গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি। পশু ব্যবস্থাপনা এমন একটি বিষয় যা পশুর খাদ্য, যত্ন ও প্রজননের সমুদয় কর্মকে বোঝায়। ইতোপূর্বে এসব বিষয় সংক্ষেপে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জন্মবৃত্তান্ত, জন্মের পর থেকে বাড়ন্ত পশুর জৈবিক পরিবর্তনের ক্রম, যৌন পরিপক্কতা, শারীরিক উপযুক্ততা অর্জন ও এরপর প্রজনন কাজের মধ্য দিয়ে পশুর জীবনচক্র অতিবাহিত হয়। এজন্য জন্মের পর থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণ পর্যন্ত পশুর জীবনে যে পরিবর্তন ও লক্ষণগুলো দেখা যায় তা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। পশুর শারীরিক ওজন, দাঁত ওঠা, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দাঁতের গঠন বা অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই সাথে বিভিন্ন পশুকে ঘরের ভেতর ধরা বা আটকানোর পদ্ধতিগুলো পশু ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।

এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে পশু ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়, যেমন- গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি, দাঁত দেখে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার বয়স নির্ণয়, গবাদিপশুর শরীরিক ওজন নির্ণয় প্রভৃতি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে ।

 গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • গরুমহিষকে কেন আটকানো হয় তা বলতে পারবেন।
  • গরুমহিষকে আটকানোর আড়পাতা পদ্ধতিটি বর্ণনা করতে পারবেন ।
  • গরুমহিষকে মাটিতে শোয়ানোর পদ্ধতিগুলো লিখতে পারবেন।

গরু ও মহিষ আমাদের দেশে ভারবাহী পশু হিসেবে পরিচিত। প্রাচীনকালে পশুরা বনেজঙ্গলে চরে বেড়াতো। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে আবির্ভাবের পর থেকেই মানুষ নিজের প্রয়োজনে গরুমহিষকে গৃহে লালনপালন করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু তারপরেও পশুদের মধ্যে পুরনো জংলী অভ্যাস ও আচরণগুলো বিদ্যামান। এসব আচরণকে আমরা পশুদের বদঅভ্যাস বা ভাইস (vice) বলে থাকি।

তা সত্ত্বেও গৃহে লালনপালন করার জন্যই পশুকে ধরতে হয়, তার কাছে যেতে হয় এবং চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করতে হয়। মানুষের বিভিন্ন কাজে পশুকে ব্যবহার করা হয়। এসব কারণেই পশুকে নিয়ন্ত্রণ করা বা আটকানোর বিভিন্ন পদ্ধতিগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পশু আটকানোর কতকগুলো পদ্ধতি বা কলাকৌশল এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

 

 গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি

 

আড়পাতা পদ্ধতি (Stanchion / Chute method )

পশুপালনকারী বা চিকিৎসকের জন্য এ পদ্ধতিতে গরুমহিষকে আড়পাতা বা ধরা সম্পূর্ণ নিরাপদ। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের দেশে গরুমহিষের খামারগুলোতে এই পদ্ধতিতে এদেরকে আটকানো হয়। একটি নির্দিষ্ট সুবিধাজনক স্থানে আড়পাতা হয়। এই আড় লোহা, কাঠ বা বাঁশের তৈরি হতে পারে। প্রধানত পায়ুপথ ও যোনিপথ পরীক্ষা করার সুবিধার জন্য শূটের শেষ প্রান্ত বা পেছন দিকে যথেষ্ট জায়গা থাকে ।

 

 গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি

 

পশুকে শোয়ানো

রুগ্ন পশুর পরীক্ষা বা অস্ত্রোপচার সুষ্ঠুভাবে করা এবং জবাইয়ের জন্য পশুকে মাটিতে শুইয়ে নিয়ন্ত্রণ করা উত্তম পদ্ধতি। তবে, গবাদিপশুকে মাটিতে ফেলার পূর্বে অবশ্যই স্থানটি দেখে নিতে হবে যাতে পশু মারাত্বক কোনো আঘাত না পায়। পশুদেহের যে কোনো পার্শ্ব মাটির দিকে ফেলা যায়। তবে, সাধারণত বাম দিকে ফেলা শ্রেয়। সাধারণত দড়ির সাহায্যে গরুমহিষকে বেঁধে মাটিতে শোয়ানো হয় । দড়ির সাহায্যে বেঁধে শোয়ানোর বেশ ক’টি পদ্ধতি রয়েছে।

একটি পদ্ধতিতে একটি শক্ত লম্বা রশির এক প্রান্ত পশুর শিংয়ের গোড়ায় বেঁধে তিনবার গেরো দিয়ে শরীরে বেষ্টনি পড়ানো হয় এবং রশির অপর প্রান্ত পেছন থেকে দৃঢ়ভাবে টেনে ধরলে পশু আপনা আপনি পেছনের দিকে নুয়ে পড়ে। রশির গেরো গরুমহিষকে মেরুদন্ড বরাবর দিতে হয়। এতে পশুর কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণে যত্নসহকারে এটি করতে হয়। অন্য একটি পদ্ধতিতে গরুর পেটের মাঝামাঝি মেরুদন্ড বরাবর একটি শক্ত রশি পরানো হয়। রশির এক প্রান্ত সামনের পায়ের চারদিকে এবং অপর প্রান্ত পেছনের পায়ের চারদিকে ঘিরে ধরতে হয়।

অতঃপর দু’দিক থেকে পিঠ বরাবর রশি টেনে ধরলে পশু হঠাৎ করে একপাশে শুয়ে পড়ে। এতে গরুমহিষের ক্ষতি হতে পারে। অতএব এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও কম ওজনের পশুকে পেছনের দু’পায়ে বেঁধে হ্যাচকা টানে মাটিতে ফেলা যায়। তবে, এক্ষেত্রে যে স্থানে পশুকে ফেলা হবে তা যেন নরম হয়। গাভী অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে প্রথম পদ্ধতিতে শোয়ানো যায়। তবে, এই অবস্থায় গাভীকে সব সময় বাম দিকে শুইয়ে দিতে হয়। গোশালায় সার্বক্ষনিক বেঁধে রেখে গরুমহিষ লালনপালন করার যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাতে এদেরকে উপরোক্ত কোনো পদ্ধতিতেই আটকানো হয় না।

যে জায়গায় গরু বা মহিষটির অবস্থান সেখানেই আড়পাতা পন্থায় তাকে সব সময় থাকতে হয়। অসুস্থ হলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে যে শিকল পশুর গলায় সব সময় লাগানো থাকে তার একাংশ টেনে নিয়ে পশুর নাকে লাগানো আংটার (nose ring) সঙ্গে একটি প্যাচ দিয়ে উপরে টেনে শিংয়ের সঙ্গে আরেকটি প্যাঁচ দিয়ে আটকে দিলেই পশু আর তেমন নড়াচড়া করতে পারে না। এই পদ্ধতি ইউরোপের বড় খামারগুলোতে চালু আছে। এই কৌশল কিছুটা অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও এভাবেই ওসব দেশে পশু আটকানো হয়। চিকিৎসক ও সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি একজন সাহায্যকারীর সাহায্যে একাজ করে থাকেন।

 

Leave a Comment