আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি – পাঠটি বাউবির “বীজ ও বীজ প্রযুক্তি” বিষয়র “বীজ উৎপাদন” অধ্যয়ের এর ইউনিট-৩, পাঠ-৪.১। বাংলাদেশে গমের পরই আলুর স্থান। ১৯৬০ সাল থেকে বিদেশের বহু আলুর জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। পৃথিবীর ৪০ টির ও বেশি দেশে আলু প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

 

উন্নত মানের আলু বীজ উৎপাদন :

১। জমি নির্বাচন ও তৈরি:

বীজ আলু চাষের জন্য বেলে দেঁাআশ মাটি উত্তম। জমিতে একই গোত্রভুক্ত (সোলানেসী) ফসল যেমন—আলু, টমেটো, মরিচ, তামাক ইত্যাদি ক্ষেত থেকে অন্তত ৩০ মিটার দূরে রাখতে হবে। মাটি ৫—৬ টি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত করতে হবে। মাটি বেশি শুকনো হলে সেচ দিয়ে মাটিতে “জো” আসার পর আলু লাগাতে হবে।

আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি , বীজ উৎপাদন , ইউনিট-৩, পাঠ-৪.১

২। বীজ শোধন:

আলু হিমাগারে রাখার আগে শোধন করা হয়ে না থাকলে অঙ্কুর গজানোর পূর্বে বীজ আলু বরিক এসিড দ্রবণে (২০ গ্রাম/লিটার) ১৫—২০ মিনিট চুবিয়ে ছায়ায় শুকাতে হবে।

 

৩। বীজ প্রস্তুতি:

বীজ আলু ্উৎপাদনের জন্য আস্ত আলু ব্যবহার করা ভাল, এতে বপনের পর রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আলু কেটে লাগালে প্রতি কাটা অংশে কমপক্ষে ২টি চোখ থাকতে হবে। আলু কাটার সময় সাবান পানি দ্বারা বারবার ছুরি বা বটি পরিষ্কার করা উচিত যাতে রোগজীবাণু এক বীজ হতে অন্য বীজে ছড়াতে না পারে। বীজ আলু না কেটে লম্বালম্বিভাবে কাটতে হয়। টিস্যু কালচার পদ্ধতি এবং প্রকৃত বীজের মাধ্যমেও আলুর চারা উৎপাদন করা হয়।

Capture 46 আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

 

৪। মাটি শোধন:

ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধের জন্য শেষ চাষের পূর্বে প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে মাটি শোধন করা উচিত। এতে মাটিতে বসবাসকারী জীবাণু মারা যাবে।

 

৫। সুষম সার প্রয়োগ:

আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত বীজ আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ার জন্য সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট সার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া বীজ বপনের ৩০—৩৫ দিন পর গাছের গোড়ায় মাটি তুলে প্রয়োগ করতে হবে এবং সেচ দিতে হবে।

Capture 47 আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

 

৮। সেচ ব্যবস্থাপনা:

মাটির আর্দ্রতার উপর ভিত্তি করে ২—৪ টি সেচ প্রদান করা উচিত। জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে বীজ আলুর অঙ্কুরোদগমের জন্য হালকা সেচ দেয়া যেতে পারে। তবে সেচ বেশি হলে বীজ পচে যাবে। বপনের ৩০৩৫ দিন পর ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে।

 

৯। আগাছা দমন:

বীজ বপনের পর থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত মাঠে আগাছা পরিস্কার রাখতে হবে। গাছ ছোট অবস্থায় থাকাকালীন আগাছা যথাসম্ভব দমন করে রাখতে হবে।

 

কচু চাষ পদ্ধতি

 

১০। রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন:

আলুর রোগ ও পোকা মাকড় সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো—

(ক) আলুর রোগ:

আলুর রোগসমূহের মধ্যে মড়ক রোগ, ঢলে পড়া রোগ, দাদ রোগ, কান্ড পচা রোগ ও ভাইরাসজনিত রোগ অন্যতম। নিম্নতাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও মেঘলা আকাশ আলুর চাষের জন্য ক্ষতিকর। এতে আলুর মড়ক রোগের (লেট ব্লাইট) আক্রমণ বেশি দেখা যায়। এ অবস্থা থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হবে।

(খ) আলুর পোকা:

আলুতে আক্রমণকারী পোকার মধ্যে কাটুই পোকা, আলু গাছ কেটে দেয় এবং আলু আক্রমণ করে। কাটুই পোকার উপদ্রব বেশি না হলে গাছের আশে পাশের মাটি খঁুড়ে কীড়া খঁুজে মেরে ফেলতে হবে। জাব পোকা আলু গাছের রস খায় এবং ভাইরাস রোগ ছড়ায়। গাছের পাতা গজানোর ৭—১০ দিন পর কীটনাশক প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়। সুতলী পোকা আলুর মধ্যে সুড়ঙ্গ তৈরি করে আলুর ক্ষতি সাধন করে। এজন্য বীজ আলুতে সুতলী পোকা আক্রাš Í আলু বেছে আলু বপন করতে হবে।

 

১১। ফসল সংগ্রহ এবং পরিচর্যা:

আলুর পরিপক্কতা আসতে ৮৫—৯০ দিন সময় লাগে। বীজ আলু সংগ্রহের অন্তত ১০ দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হবে।

 

১২। হামপুলিং:

মাটির উপরের আলু গাছের সম্পূর্ণ অংশকে উপড়ে ফেলাকে হামপুলিং বলে। আলু সংগ্রহের ৭—১০ দিন পূর্বে হাম পুলিং করতে হবে। এতে সম্পূর্ণ শিকড়সহ গাছ উপড়ে আসবে কিন্তু আলু মাটির নিচে থেকে যাবে।

 

১৩। আলু সংগ্রহে ও সংরক্ষণ:

আলু তোলার পর কোনো অবস্থাতেই ক্ষেতে স্তুপাকারে রাখা যাবে না কারণ বিভিন্ন প্রকার রোগ ও পোকা দ্বারা আলু আক্রান্ত হতে পারে। আলু উত্তোলনের পর সাথে সাথে কাটা, দাগি ও পচা আলু আলাদা করে বেছে ফেলতে হবে। তারপর ৭—১০ দিন ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রাখতে হবে। অত:পর আবারও দাগি ও পচা আলু বেছে বাদ দিতে হবে, পরে আলু ব¯ায় ভÍ রে হিমাগারে রাখতে হবে।

 

আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি 2 আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

 

সারাংশ :

বাংলাদেশে গমের পরেই আলুর স্থান। বীজ আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পরিমিত ও সময়মতো সার প্রয়োগ, আন্তঃপরিচর্যা রোগ বালাই দমন ইত্যাদি সঠিকভাবে করলে ভাল আলু বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

 

Leave a Comment