উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথ ও নির্দেশনা – একক পণ্যমুখী ও বহু পণ্যমুখী খামার

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথ ও নির্দেশনা – একক পণ্যমুখী ও বহু পণ্যমুখী খামার

উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথ ও নির্দেশনা – একক পণ্যমুখী ও বহু পণ্যমুখী খামার

 

উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথ ও নির্দেশনা - একক পণ্যমুখী ও বহু পণ্যমুখী খামার

উদ্যোক্তা উন্নয়নের যৌক্তিকতা (Rationale of entrepreneurship development)

কৃষকগণের মধ্য হতে উদ্যোক্ত উন্নয়নের যৌক্তিকতা মূলত গবেষণা অভিজ্ঞতা প্রসূত। বিগত এক দশক ধরে খামার ব্যবস্থা ও পরিবেশ গবেষণাসহ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কৃষকের অংশীদারিত্বে তাদের পরিবেশে কাজ চলছে। গবেষণালবদ্ধ অভিজ্ঞতা সং েপে নিম্নরূপ-

১। কৃষকের খামারের উৎপাদন ব্যবস্থা বিভিন্ন আন্ত:ক্রিয়ার মাধ্যমে সমন্বিত।

২। সকল কৃষক সকল কৃষি প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারছে না ।

৩। অনেক কৃষকই প্রযুক্তি ব্যবহারে যত্নশীল, দ ও অধিক উৎপাদনে সম। এতে প্রযুক্তির পূর্ণ উৎপাদনশীলতা প্রকাশ পায় ৷

8। অনেক কৃষকেরই উদ্ভাবনী মতা, গবেষণা প্রবণতা এবং স্থানীয় প্রযুক্তি জ্ঞান রয়েছে।

৫। সমন্বিত কৃষি প্রযুক্তি স্থানীয় সম্পদ, জৈব বর্জ্য ও প্রকৃতির দ ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ কমায়, উৎপাদন বাড়ায় । শিতি বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্য হতে উদ্যোক্তা উন্নয়নের যৌক্তিকতা মূলত এদের স্বকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে নিহিত। এ ধরনের আগ্রহী ও দ জনশক্তি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি শিল্প বিকাশ ও আরও অদ শ্রমিক নিয়োগে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।

উদ্যোক্তা উন্নয়নে কৌশলগত পথ (Strategic ways of entrepreneurship development)

উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথ ও কৌশল নির্ভর করে এর উদ্দেশ্য, সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং উদ্যোক্তার সম্পদ ও স্থানীয় পরিবেশের উপর। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই পথ ও কৌশল হতে পারে বিভিন্ন। কিন্তু কৌশলগত নীতিমালার (Strategic policies) ভিত্তিতে কৌশলগত পথ তৈরি হতে পারে। সং েপে এই নীতিগুলো আলোচনা করা হলো।

১। অবিরত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার দেশে সর্বশেষ তথ্যভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি পরিবেশ ও সম্পদ ভিত্তিতে উদ্ভাবন একটি চলমান প্রক্রিয়া হবে। উদ্যোক্তাগণ সেগুলো জেনে ও শিখে ব্যবহার করবেন।

২। অবিরত প্রযুক্তি প্রশি ণ ও দ তা উন্নয়ন সর্বশেষ উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সফল প্রয়োগের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তি এবং খামার ব্যবস্থাপনায় দ তা বৃদ্ধিতে প্রশিণ একটি চলমান প্রক্রিয়া হবে ।

৩। পণ্য বিপণন মনিটরিং দ উদ্যোক্তা উন্নয়নে পণ্যের বাজার মূল্য ও বিপণনে দীর্ঘমেয়াদী তথ্যের প্রয়োজন। রপ্তানিযোগ্য
পণ্যের তথ্যও জানা প্রয়োজন।

৪। পরামর্শ ও পরিদর্শন সার্ভিস উদ্যোগ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এবং পণ্য বিপণনে বিশেষজ্ঞ/বিজ্ঞানীদের পরামর্শ বাধ্যতামূলককরণ। এ েত্রে অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান/এনজিও, সম্প্রসারণবিদ ও বিশেষজ্ঞ/বিজ্ঞানীদের ত্রিমুখী সংযোগ সৃষ্টিকরণ।

৫। দেশজ পণ্য চাহিদার প্রাধান্য প্রদান দেশের কৃষি উপকরণ ও খাদ্য পণ্য উৎপাদন উদ্যোগকে প্রাধান্য প্রদানকরণ। এভাবে কৃষিজাত পণ্য আমদানী হ্রাস পাবে। বিশেষ ত্রে রপ্তানি পণ্য উৎপাদনকরণ।

৬। বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি পরিবেশ অনুসারে বিভিন্ন উৎপাদনের প্রকৃতিগত সুযোগ রয়েছে। এসব এলাকার সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো ও পরিবেশ সংরণ প্রয়োজন।

উদ্যোক্তা উন্নয়নের নির্দেশনা ( Guidelines of entrepreneurship development)

উদ্যোক্তা উন্নয়নের প্রথম কাজ হচ্ছে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন আগ্রহী ব্যক্তি নির্বাচিত করা। এভাবে নির্বাচিত উদ্যোক্তা নিম্নলিখিত পদপে গ্রহণ করবেন।

১। প্রকল্পের আওতাভুক্ত প্রযুক্তি (সমূহ)-র উপর প্রশিণ গ্রহণ। প্রযুক্তির ঝুঁকি থাকলে তা জেনে নেয়া।

২। প্রকল্প স্থানের পরিবেশগত ও কারিগরি উপযুক্ততা বিবেচনা করা। পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা কমানো।

৩। উদ্যোক্তার নিজস্ব সম্পদ (উৎপাদনে ব্যবহারযোগ্য)-এর তালিকাকরণ। ৪। প্রযুক্তি অনুসারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, উপকরণ, পরিচালনা ও অন্যান্য ব্যয়ের প্রাথমিক প্রাক্কলন তৈরি (আইটেম ও খাত ভিত্তিক)।

৫ । ও অদ শ্রম ব্যবহারের প্রাক্কলনকরণ। এরূপ শ্রম প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ।

৬। উপকরণ, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি প্রাপ্তির নির্দিষ্ট স্থান ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ।

৭। প্রকল্প বাবায়নে সকল কাজ সম্পাদনের সময় ও দায়িত্ব অনুসারে ছক তৈরিকরণ ।

৮। সকল উৎপাদনের (পণ্য, দ্রব্য, উপজাত, বর্জ্য) প্রাক্কলন তৈরী।

৯। উপরের কাজসমূহ (১ হতে ৮ নং) সম্পাদনে বিশেষজ্ঞ/বিজ্ঞানীর সহযোগিতা গ্রহণ।

১০। ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনে অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানে (ব্যাংক/এনজিও) যোগাযোগ স্থাপন ।

১১। দৈনন্দিন সকল খরচ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের রেকর্ড সংর ণ। বিপণন সৃষ্টিকরণ।

১২। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অসুবিধাগুলো লিপিবদ্ধকরণ ও প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ/বিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহণ।

নির্দেশনা : একক পণ্যমুখী খামার

একক পণ্যমুখী খামারে উপরে বর্ণিত নির্দেশনার পরেও নিলিখিত পদ েপগুলো নিতে হবে।

১। পণ্য বিপণনের সময় ও স্থান নির্ধারণে সতর্কতা অবলম্বন ।

২। উৎপাদিত উপজাত বিক্রি না হলে সেগুলোর ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।

৩। উৎপাদিত বর্জ্য যাতে খামার ও স্থানীয় পরিবেশ দূষণ বা তিগ্রস্ত করতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ।

নির্দেশনা : বহু পণ্যমুখী খামার

বহু পণ্যমুখী খামারে উপরে বর্ণিত নির্দেশনার পরেও নিম্নলিখিত পদ েপগুলো নিতে হবে।

১। উৎপাদিত উপজাত ও বর্জ্য অন্য উৎপাদনে ব্যবহারের পরিকল্পনাকরণ।

২। বিভিন্ন পণ্য/দ্রব্য উৎপাদন পরিকল্পনা পরস্পরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে শ্রম ব্যবহার দ করণ ।

 

উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথ ও নির্দেশনা - একক পণ্যমুখী ও বহু পণ্যমুখী খামার

 

৩। বিভিন্ন পণ্য বিপণনের সময় ও স্থান নির্ধারণে পরিকল্পনা গ্রহণ ।

৪। উৎপাদিত বর্জ্য ব্যবহার না হলে তা যাতে খামার ও স্থানীয় পরিবেশ দূষণ বা তিগ্রস্ত না করে তার ব্যবস্থা গ্রহণ ।

Leave a Comment