ঔষধি উদ্ভিদের ব্যবহার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ঔষধি উদ্ভিদের ব্যবহার – যা শিল্পের কাঁচামাল: কৃষিজ দ্রব্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।

ঔষধি উদ্ভিদের ব্যবহার

 

ঔষধি উদ্ভিদের ব্যবহার

 

থানকুনির ব্যবহার: ছেলেমেয়েদের পেটের অসুখ, বিশেষ করে বদহজম ও আমাশয় রোগ নিরাময়ে থানকু খুব বেশি ব্যবহৃত হয় । মুখে ঘা, ক্ষত, সর্দির জন্য উপকারি, হজম শক্তি বাড়ায় ও লিভারের সমস্যা দূর করে। এছাড়া থানকুনি আয়ুবর্ধক, স্মৃতিবর্ধক, আমরক্ত নাশক ও চর্মরোগনাশক

১. তুলসির ব্যবহার:

সাধারণ সর্দি কাশিতে তুলসি পাতার রস বেশ উপকারি, তুলসী পাতার রসের সাথে আদার রস ও মধু মিশিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের খাওয়ানো হয়। এছাড়াও গাছের রস কৃমি ও বায়ুনাশক।

২. কালোমেঘের ব্যবহার:

ছোট ছেলে মেয়েদের জ্বর, অজীর্ণ ও লিভার দোষে এর রস একটি অত্যন্ত ভালো ঔষধ ।

৩. বাসকের ব্যবহার:

কাশি নিরাময়ে অধিক ব্যবহৃত হয়। সমপরিমান আদার রস ও মধুসহ বাসক পাতার রস খেলে কার্যকরী হয়। বাসক জ্বর, দাদ, চুলকানি, জন্ডিস ও পাইরিয়া রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়।

৪. সর্পগন্ধার ব্যবহার:

সর্পগন্ধার মূলের বা ফলের রস উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহৃত হয়। জ্বর, হাপানি, গ্যাস্টিকে উপকারি। পাগলের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সর্পগন্ধার অন্যতম একটি ব্যবহার এটি বাড়িতে থাকলে সাপ আসে

৫. অর্জুনের ব্যবহার:

কাঁচা পাতার বল আমাশয় রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। অর্জুনের ছাল ভালোভাবে বেটে তার রস চিনি ও দুধের সাথে প্রত্যহ সকালে সেবনে যাবতীয় হৃদরোগ আরোগ্য হয়। ছালের রস সেবনে উদারময় ও অর্থ রোগের উপশম হয়। রক্ত আমাশনে অর্জুনের ছালের চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে নিরাময় হয়। অর্জুনের ছালের মিহি গুড়া মধুর সাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে মেচতার দাগ মিলিয়ে যায়।

৬. হরিতকির ব্যবহার:

আয়ুর্বেদিক ঔষধ ত্রিফলার অন্যতম ফল হরিতকি। হরিতকি ফল চূর্ণ করে একটু লবণ মিশিয়ে সেবন করলে অর্শ্বরোগ নিরাময় হয়। হরিতকি চূর্ণ পাইপে ভরে ধূমপান করলে হাঁপানি উপশম হয়। রক্ত দূষিত বা পিত্তরোগজনিত চর্মরোগে নিসিন্দা পাতার রসের সঙ্গে হরিতকি চূর্ণ করে খেলে উপকার হয়। চিনি ও পানির সাথে হরিতকি চূর্ণ করে ব্যবহার করলে চোখ উঠা ভালো হয়। হরিতকি বলকারক, জীবনীশক্তি বৃদ্ধিকারক ও বার্ধক্য নিবারক ।

ফল থেকে ট্যানিন, লেখার কালি ও রঙ পাওয়া যায়। কাটা ফল আমাশয় এবং পাকা ফল রক্তশূণ্যতা, পিত্তরোগ, হৃদরোগ, গেটেবাত ও গলা ক্ষতে ব্যবহার্য । ফলপূর্ণ জ্বালানি, আসবাবপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা না ।

 

৭. আমলকির ব্যাবহার:

আমলকির ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং ত্রিফলার একটি ফল। আমলকির ফল ও পাতার রস আমাশয় প্রতিষেধক একটি টনিক। ফলের রস যকৃত, পেটের পীড়া, অজীর্ণতা, হজমী ও কাশিতে বিশেষ উপকারি, আমলকির ফল ত্রিফলার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে রক্তহীনতা, জন্ডিস, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, গানোরিয়া, চুল উঠা, জ্বর, হিঙ্গা প্রভৃতি রোগেরও উপশম করে।

ফল থেকে লেখার কালি, শ্যাম্পু ও চুলের কলপ তৈরি হয়। ফুল, শিকড় ও বাকল থেকেও ঔষধ তৈরি করা যায়। পাতা থেকে প্রাপ্ত ও সিল্কের শাড়ি রাঙ্গানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। চল্লিশদিন ভক্ষণ করলে পূর্ণ যৌবন প্রাপ্তি হয় বলে কথিত আছে। ভেষজ ব্যবহার ছাড়াও আমলকির কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৮. বহেরার ব্যবহার:

ত্রিফলার অন্যতম বহেরা। বীজের শাঁস দুই একটি করে দুঘন্টা অন্তর এবং দিনে দুইটি করে চিবিয়ে খেলে হাঁপানি রোগ আরোগ্য হয়। বহেরা চূর্ণ সকাল বিকাল পানিসহ খেলে উপকার হয়। ফল পেটের পীড়া, অর্থ, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ও জ্বরে ব্যবহার্য। ফল হৃদপিন্ড, ফুসফুস, নাসিকা, গলার রোগ ও অজীর্ণতার ভালো ঔষধ। বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল মাথা ঠাণ্ডা রাখে এবং চুল পড়া বন্ধ করে। চোখ উঠলে বহেরা চূর্ণ ঘষে লাগালে উপকার হয় ।

৯. ঘৃতকুমারীর ব্যবহার:

পাতা থেকে নির্গত ঘন পিচ্ছিল রস কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের ফলপ্রসূ ঔষধ। এটি ক্ষুধামন্দা, জন্ডিস, লিউকোমিয়া, অর্শ্বরোগ, কাটা, পোড়া ও ক্ষতের চিকিৎসায় ফলপ্রসূ অবদান রাখে। ঘৃতকুমারীর রস শরীরে শক্তি যোগায়। প্রসাধন দ্রব্যে এর মিশ্রণে প্রসাধনের মান উন্নত হয় ।

১০. তেলাকুচার ব্যবহার

এ উদ্ভিদের কান্ড ও পাতার নির্যাস কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস, হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। এর নির্যাস সর্দি, জ্বর, হাঁপানি ও মূর্ছারোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। চর্মরোগে এর পাতা বাটার প্রলেপ বেশ উপকারি।

১১. নিমের ব্যবহার:

কচি পাতার সাথে গোলমরিচের পাতা মিশিয়ে অস্ত্রের কৃমির নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। পাতা পিষে মলম তৈরি করে বসন্তের সৃষ্ট ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহার করা যায়। নিমপাতার রস ম্যালেরিয়াসহ সকল প্রকার জ্বরের প্রতিষেধক হিসাবে একজিমা, দাঁতে রক্ত ও পুঁজ পড়া, জন্ডিস রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।

১২. বেলের ব্যবহার:

বেল কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় উপশমে ব্যবহৃত হয়। বেলের শরবত হজম শক্তি বাড়ায় ও বলবর্ধক। বেল পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে চোখের ছানি ও জ্বালা উপশম হয়। বেলে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। এই ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বেল নিয়মিত খেলে কোলন ক্যান্সারের আশংকা কমে। শিশুর স্মরণশক্তি বাড়াতে বেল উপকারি।

১৩. উলটকম্বলের ব্যবহার:

গাছের বাকল ও ডাঁটা পানিতে ভিজালে আঠালো পদার্থ বের হয় যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাতার ডাঁটা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া উপশম, আমাশয় রোগের জন্য উপকারি । পাতা ও কান্ডের রস গনোরিয়া, ফোড়া ও স্ত্রীরোগে উপকারি ।

১৪. মেহেদির ব্যবহার:

মেহেদি এন্টিফাঙ্গাল, এন্টি ইনফ্লেমেটরী, কুলিং, হিলিং ও সিডেটিভ গুণাগুণ সমৃদ্ধ। স্কেবিস, চর্মের চুলকানি, নৰ ফাটার চিকিৎসায় পাতার পেস্ট ব্যবহৃত হয়। ঘুশকি দূর করতে মেহেদি কার্যকরী। মাথার টাকের চিকিৎসায় সহায়ক। লিভারের জটিলতা ও জন্ডিসের চিকিৎসায় মেহেদির বাকল ব্যবহৃত হয়। মেহেদির বীজের রস আমাশয় দূর করে।

 

ঔষধি উদ্ভিদের ব্যবহার

 

সারসংক্ষেপ

অতি প্রাচীনকাল থেকে ঔষধি গুনসম্পন্ন বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ রোগ নিরাময়ে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে আসছে। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের ব্যাপক উন্নতিতে ঔষধি উদ্ভিদ অনবদ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উৎকর্ষ চরমে পৌঁছালেও মানুষ আবার সেই প্রাচীন ঔষধি গুণসম্পূর্ণ উদ্ভিদের ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজনীতা উপলব্ধি করছে।

পৃথিবীর বহুদেশ ভেষজ ঔষধের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে। বাংলাদেশে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যাপক চাষাবাদ ও যত্নের মাধ্যমে ঔষধশিল্পের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।

 

Leave a Comment