কম্পোস্ট তৈরি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় কম্পোস্ট তৈরি

কম্পোস্ট তৈরি

 

কম্পোস্ট তৈরি

 

কম্পোস্ট তৈরি

কম্পোস্ট (Compost) শব্দটি ল্যাটিন ভাষার এবং এর অর্থ কিছু জিনিসের সংমিশ্রণ। জৈব উৎসের বিভিন্ন আবর্জনা ও পরিত্যক্ত বস্তুকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যেমে পচিয়ে প্রস্তুতকৃত সারকে কম্পোস্ট বা আবর্জনা পচা সার বলে।

উপকরণ

পরিত্যক্ত খড়কুটা, আখের পাতা, গাছের ঝরাপাতা, ফসলের এবং তরিতরকারির পরিত্যক্ত অংশ, গরুবাছুরের খাবারের উচ্ছিষ্ট, গোয়ালঘরের আবর্জনা, কাঁচা গোবর, কচুরিপানা, আগাছা ইত্যাদি কম্পোস্ট সার তৈরির উপকরণ। পানি থেকে সদ্য উঠানো কচুরিপানাকে ২/৩ দিন রোদে শুকিয়ে পানির পরিমাণ কিছু কমিয়ে নেয়া ভাল। অপর প েআখের শুকনো পাতা বা গমের শুকনো খড় কিছু ণ ভিজিয়ে নিলে পচন কাজ ত্বরান্বিত হয়।

নীতিমালা

কম্পোস্ট তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এদের মধ্যে এডকো, একটিভেটেড ও বাঙ্গালোর পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য। এসব পদ্ধতির প্রত্যেকটির মূলনীতি একই। তবে এদের মধ্যে গুণগত মান বৃদ্ধির প্রয়াস হিসেবে কিছুটা তারতম্য ল ণীয়। এডকো পদ্ধতিতে কম্পোস্ট প্রস্তুতকারী ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাক বর্ধক এডকো পাউডার প্রভাবক হিসেবে যোগ করা হয়।

অনুরূপভাবে একটিভেটেড পদ্ধতিতে শহরের নর্দমার পানি, কাদা এবং বাঙ্গালোর পদ্ধতিতে মানুষের মলমূত্র প্রভাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে অবশ্য কাঁচা গোবর ও মাটিকে প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কম্পোস্ট সার তৈরির েেত্র আর একটি পার্থক্য পরিলতি হয়।

কোন কোন এলাকায় কম্পোস্ট উপকরণকে মাটির ওপরে স্তুপ বা গাদা করে পচানো হয় আবার কোন কোন স্থানে মাটিতে গর্ত করে পচানো হয়। বাংলাদেশে শেষোক্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়।

স্থান নির্বাচন

খামারের উঁচু ও সমতল একটি স্থান বেছে নিন যেখানে বন্যার পানি উঠে না বা বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। স্থানটি গাছের ছায়ায় এবং পুকুর বা গোয়ালঘরের কাছে হলে ভাল হয়। তাতে কম্পোস্ট উপকরণ রোদে শুকিয়ে যাবে না এবং পুকুরের পানি অথবা গোয়াল ধোয়া পানি দিয়ে কম্পোস্ট গাদাকে ভিজিয়ে রাখা যাবে।

প্ৰস্তুত প্ৰণালী

কম্পোস্ট স্তুপ কত বড় হবে তা নির্ভর করে উপকরণের পরিমাণের উপর। উপকরণ বেশি হলে স্তুপের পাশ ঠিক রেখে দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দিন অথবা বেশিসংখ্যক ছোট ছোট স্তুপ তৈরি করুন। প্রমাণ সাইজের একটি স্তুপের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা হয় যথাক্রমে ৩ মিটার × ১.৫ মিটার × ১ মিটার।

 

কম্পোস্ট তৈরি

 

স্তুপের জন্য নির্দিষ্ট স্থানটির চার কোণায় ১ মিটারের কিছু বেশি লম্বা ৪টি বাঁশের খুঁটি পুতে খুঁটিগুলোর মাথায় দড়ি দিয়ে বেঁধে দিন; এর ফলে এটিকে একটি আয়তাকার বাক্সের মত দেখাবে। এবার খড়কুটা ইত্যাদি উপকরণ আয়তাকার ত্রের মেঝেতে সমভাবে ছড়িয়ে হালকা চাপ প্রয়োগ করে প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার উঁচু একটি স্তর তৈরি করুন।

উপকরণগুলো বেশি শুকনো হলে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন। উক্ত স্তরের ওপর পানি মিশ্রিত নরম কাঁচা গোবরের ২-৩ সেন্টিমিটার পুরু একটি প্রলেপ দিয়ে তার ওপর অল্প কিছু গুঁড়া মাটি হালকাভাবে ছিটিয়ে দিন। কম্পোস্টের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য এখানে কিছু হাড়ের গুঁড়া (১০০ গ্রাম / বর্গমিটার) প্রয়োগ করতে পারেন। (অন্যান্য পদ্ধতির বেলায় গোবর ও মাটির পরিবর্তে এখানে এডকো পাউডার, নর্দমার ময়লা বা মানুষের মলমূত্র ব্যবহৃত হয়)।

অনুরূপভাবে একটির উপর একটি করে সর্বমোট ৪টি স্তর তৈরি করুন। স্তরগুলোর সামগ্রিক উচ্চতা হবে ১ মিটার। প্রত্যেক বার ২৫ সেন্টিমিটার পুরু আবর্জনার স্তুপের ওপর ২-৩ সেন্টিমিটার পুরু করে গোবর ও মাটি দিলেও এর ভারে আবর্জনার স্তরের উচ্চতা কিছুটা কমে গিয়ে ৪টি স্তরের মোট উচ্চতা ১ মিটারের বেশি হবে না । শেষ স্তরের ওপরের তল দুদিকে একটু ঢালু রাখুন যেন বৃষ্টির পানি ভেতরে না ঢুকে পাশ দিয়ে বাইরের দিকে গড়িয়ে পড়ে।

এভাবে স্তুপটিকে রেখে দিন। স্তুপটি যেন শুকিয়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে কিছুদিন পর পর স্তুপের ওপরের দিকে কয়েকটি ছিদ্র করে অল্প পানি ঢুকিয়ে দিন; এতে পচন ত্বরান্বিত হয়। কম্পোস্ট স্তুপের পচন সম্পন্ন হতে ৭০-১২০ দিনের মত সময় লাগে। উপকরণ রসালো এবং তাপমাত্রা বেশি হলে কম সময়ে পচে, শীতের দিনে শুকনো উপকরণ পচনে সময় বেশি লাগে।

সাধরণত দেখা যায় নিচের স্তরের আবর্জনা ওপরের স্তরের আবর্জনার চেয়ে আগে পচে। তাই সমভাবে পচনের জন্য ৪৫-৬০ দিন পর কম্পোস্ট স্তুপটিকে ভেঙ্গে ওলটপালট করে দিন। ওলটপালটের সময় পুরাতন স্তুপটির কাছে অনুরূপ একটি জায়গায় নতুন একটি স্তুপ তৈরি করুন যার নিচের স্তর হবে পুরাতন স্তুপের ওপরের স্তরটি এবং একইভাবে পুরাতন স্তুপের সর্বনিম্ন স্তরটি হবে নতুন স্তুপের সবার ওপরের স্তর।

এভাবে কিছুদিন থাকলে ওপরের এবং নিচের স্তর একইসঙ্গে এবং সমভাবে পচবে। পচনকাজ সম্পন্ন হলে কম্পোস্টের রং হবে হালকা খয়েরী বা ধূসর। তখন অল্প পরিমাণ কম্পোস্ট হাতে নিয়ে চাপ দিলে সহজেই ভেঙ্গে গুঁড়া হয়ে যাবে।

 

তবে আবর্জনাগুলো দেখতে মনে হবে যেন আগের মতই আস্ত রয়ে গেছে। কেবল রংটাই পাল্টিয়েছে। এমন অবস্থায় কম্পোস্ট জমিতে প্রয়োগ করার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়।

Leave a Comment