আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বৃক্ষ কর্তন ও কাঠ সংগ্রহ, কাঠের পরিমাণ – যা বনায়ন এর অন্তর্ভুক্ত। বৃক্ষ কর্তন ও কাঠ সংগ্রহ বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। কাঠবহুল উদ্ভিদ যার মাটি থেকে সুস্পষ্ট শীর্ষ প্রকটতা বিশিষ্ট একটি একক প্রধান কান্ড অথবা গুঁড়ি থেকে বহুবিভক্ত অপ্রধান শাখা বিকশিত হয় তাকে বৃক্ষ বলে । কিছু লেখকের মতে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায়বৃক্ষের ন্যূনতম উচ্চতা ৩ মিটার থেকে ৬ মিটার হওয়া উচিত।
আবার কিছু লেখক গাছের কান্ডের ন্যূনতম ব্যাস নির্ধারণ করেছেন ১০ সেমি। অন্যান্য কাষ্ঠবহুল বৃক্ষ, যারা এ শর্তগুলো পূরণ করতে পারে না, যেমন শাখান্বিত প্রধান কা অথবা ছোট আকৃতির গাছকে গুলু বলা হয়। অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায়বৃক্ষ দীর্ঘজীবী হ্যা, কোন কোন গাছ হাজার বছরও বেঁচে থাকে এবং ১১৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রয়োজনে যেমন বৃক্ষ রোপণ করতে হয় তেমনি একই কারণে বৃক্ষ কর্তন করতে হতে পারে। সাধারণত গাছের আবর্তনকাল শেষ হলে গাছ কর্তন করা হয়ে থাকে। গাছ কাটা ও তা থেকে কাঠ সংগ্রহ করার বিষয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিগত কৌশল জানা দরকার। এ পরিচ্ছেদে আপনি বৃক্ষ কর্তনের সময় ও নিয়মাবলি, তা পরিমাপ পদ্ধতি, বৃক্ষকর্তন ও কাঠ সংরক্ষণের উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা লাভ ও দক্ষতা অর্জন করবেন।
Table of Contents
বৃক্ষ কর্তন ও কাঠ সংগ্রহ, কাঠের পরিমাণ
বৃক্ষ কর্তন সময় বা আবর্তনকাল
পরিপক্ক হওয়ার আগেই বৃক্ষ কর্তন করলে ভালো মানের কাঠ পাওয়া যায় না। বৃক্ষের চারা রোপণ থেকে শুরুকরে যে সময়ে বৃক্ষের বৃদ্ধি সর্বাধিক হয় এবং গাছ পরিপক্কতা লাভ করে ব্যবহার উপযোগী হয়, সে সুনির্দিষ্ট সময়কালকে আবর্তনকাল বা কর্তন সময় বলে । বন ব্যবস্থাপনায় বৃক্ষের আবর্তনকালকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা-
১। দীর্ঘ আবর্তনকাল
জাতীয় কাঠ ও ধীর বর্ধনশীল প্রজাতিসমূহ শুধুমাত্র, কাঠ উৎপাদনের জন্য ৪০-৫০ বছর 3 আবর্তনকালে কাটা হয়। যেমন- মেহগনি, গর্জন, জারুল, শীলকড়ই, সেগুন, জাম, তেলসুর, চাপালিশ, কাঠাল, শাল, ইত্যাদি।
২। মাঝারি আবর্তনকাল
আংশিক কাঠ প্রদায়ি প্রজাতিসমূহ খুঁটি ও কাঠের উৎপাদনের জন্য ২০-৩০ বছর আবর্তনকালে কাটা হয় । যেমন- চন্দন, শিশু, রেন্ডি, খয়ের কড়ই, গামার, হরতকী, ছাতিয়ান ইত্যাদি।
৩। স্বল্প আবর্তন কাল
যে সব গাছের কাঠ নরম এবং দ্রুত বর্ধনশীল জ্বালানি কাঠ, পশু খাদ্য ও মন্ড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, সেসব উদ্ভিদের কর্তন সময় কম হয়। যেমন- বাবলা, কদম, কেওড়া, বাইন, শিমুল, আকাশমনি, তেলিকদম, ঝাউ ইত্যাদি ।
বৃক্ষ কর্তনের নিয়মাবলি
১। গাছ কাটার পূর্বে ডালপালা ছেটে নিয়ে গাছ নিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলতে সুবিধা হয়।
২। যতটা সম্ভব গাছ মাটির কাছাকাছি কাটতে হবে। কারণ গাছের গোড়ার অংশটা বেশি মোটা হয়। এ অংশে কাঠের মানও ভালো থাকে।
৩। গাছ সব সময় করাত দিয়ে কাটতে হবে। এতে কাঠের অপচয় পুরাপুরি রোধ করা সম্ভব। প্রথমে যে দিকে গাছকে ফেরতে হবে সেদিকে করাত দিয়ে কাটতে হবে।
৪। কাটা অংশে খিল বা কাঠের টুকরা ঢুকিয়ে দিয়ে পরবর্তীতে আগের মতোই বিপরীত দিকে করাত দিয়ে কাটতে হবে । এতে গাছ কাঙ্খিত দিকে পড়বে। কাটা গাছ মাটিতে পড়ার পর মণ্ডিত করতে হবে। তবে কী কাজে কাঠ ব্যবহার করা হবে তার ভিত্তিতে পরিমাপ নির্ধারিত করতে হবে।
পণ্ডিত গোল অংশকে বলা হয় লগ। এ নগরে করাত কলে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার উপযোগী চিরাই কাঠে পরিণত করা হয়। চেরাই কাঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্ব থাকে। চেরাই কাঠের প্রস্থ ১৫ সে.মি. এর বেশি হলে এবং পুরুত্ব ৪ সে. মি. হলে তাকে বলা হয় তক্তা।
৫. গাছ কাটার সময় যে দিকে গাছ পড়বে প্রথমে কুড়াল দিয়ে মাটির ১০ সে.মি. উপরে সেই দিকে দুই-তৃতীয়াংশ কাটতে হবে। পরবর্তীতে কাটা হবে ঠিক এ কাটার বিপরীত দিকে ১০ সে.মি. উপরে । এভাবে গাছ কাটলে গাছকে সুনির্দিষ্ট দিকে ফেলা সম্ভব হয়। এতে পার্শ্ববর্তী গাছের ক্ষতি কম হয় । কুড়াল /করাত উভয় ব্যবহার করে গাছ কাটা বেশ সুবিধা জনক ।
গোল কাঠ ও চিরাই কাঠের পরিমাণ পদ্ধতি
গাছ কাটার পর যদি সে গাছকে খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করা না হয় তবে তা চিরাই করতে হবে এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাপের কাঠ বের করতে হবে। গোলকাঠের বা লগের সঠিক আয়তন বা ভলিউম নিউটনের সূত্রের সাহায্য বের করতে হয়।
সূত্রটি এরূপ :
ভলিউম = ০.০৮x (বেড ১)^২+৪×(বেড ২)^২ +(বেড ৩)^২
এখানে, বেড় ১ = চিকন প্রান্তের বেড়
বেড় ২ = লগের মাঝখানের বেড়
বেড় ৩ = মোটা প্রান্তের বেড়
উদাহরণ: একটি শালগাছের লগ ৬ মিটার দীর্ঘ। এটির চিকন মাথার বেড় ১.৫০ মিটার, মাঝখানের বেড় ২.০ মিটার এবং মোটা মাথার বেড় ২.৫ মিটার। লগটির সঠিক আয়তন বা ভলিউম কত?
সমাধান : ভলিউম ০.০৮ x (বেড ১) ^২+8x (বেড 2)^২+(বেড-৩)^২
০.০৮ x (১.৫+৪x২)+২.৫ -X৬ ঘনমিটার
০.০৮ x ১২/৬ মিটার
(ভলিউম = ০.৯৬ ঘনমিটার
ভক্তা বা চেরাই কাঠের ভলিউম মাপা সহজ। চেরাই কাঠ/তক্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং পুরুর জানা থাকলে অতি সহজেই এর ভলিউম বের করা যায় । একটি পরিমাফ ফিতার সাহায্যে অতি সহজেই এর নঙ চেরাই কাঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্ব মাপা যায়। তারপর নিম্নের সূত্রের সাহায্যে ভলিউম নির্ণয় করা যাবে।
সারসংক্ষেপ
সঠিক উপায়ে ও উপযুক্ত সময়ে বৃক্ষ কর্তনের ফলে উন্নত মানের কাঠ পাওয়া সম্ভব। বৃক্ষ কর্তনের সময় ও নিয়মাবলি, কাঠ রক্ষণ পদ্ধতি, কাঠ পরিমাপ পদ্ধতি ও কাঠ সংরক্ষণের বিভিন্ন কৌশল আমাদের বাস্তবিক জীবনে অতীব প্রয়োজনীয়। গাছের গোড়ার অংশের কাঠ অপেক্ষাকৃত ভাল মানের হয়ে থাকে।