আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় খামারের সংজ্ঞা ও প্রকার
Table of Contents
খামারের সংজ্ঞা ও প্রকার
খামারের সংজ্ঞা ও প্রকার
খামার কি ও কেন
নদীমাতৃক ও গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের মানুষের প্রধান জীবিকা হচ্ছে কৃষি। কৃষির নিয়ন্তা হচ্ছেন কৃষক। কৃষকের বসতবাড়ি ও তাঁর পরিবার, তাঁর তে, পুকুর বা ডোবা, গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া, হাঁস- মুরগি, কবুতর প্রভৃতি একত্রে হচ্ছে তাঁর একটি খামার। একজন কৃষক তাঁর খামারের প্রতিটি সম্পদ বা উপাদান একটি অভিন্ন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি বা সংগ্রহ করে থাকেন।
সেটি হলো কৃষক পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিা, চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং সামগ্রিক উন্নয়ন। কৃষকের এসব সম্পদ বা উপাদান সৃষ্টি বা সংগ্রহই কেবল উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারে না। একটু ভেবে দেখলেই আমরা বুঝতে পারবো যে, কৃষকের চাহিদা ও দ তার পাশাপাশি খামারের প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিবেশ এবং বিবিধ সুযোগ সুবিধা তাঁর উৎপাদন কর্মকে প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রণ করছে।
তাছাড়া প্রতিটি ভিন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়ার একটি অন্যটির ওপর নির্ভরশীল। যেমন-ফসল উৎপাদন কাজে গরু বা মহিষের দ্বারা জমি চাষ করা এবং উহাদের গোবর মাটিতে দেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে গরু মহিষের খাবার রূপে ফসলের খড়, ভূষি, কুঁড়া, খৈল প্রভৃতি প্রয়োজন। সহজে বলা যায় যে, একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে মিশ্র খামারে ফসল, ফল-মূল, পশুপাখি, মৎস্য ও বনজ সম্পদ উৎপাদন প্রক্রিয়া কতকগুলো আন্তঃসম্পর্কের দ্বারা সংশ্লিষ্ট বা সংঘবদ্ধ বা সংযোজিত।
কৃষি ও খামার
এবার দেখা যাক বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক কৃষি ও খামারের সংজ্ঞাগুলো কী কী। কৃষি হলো এমন কর্মকান্ড যা ফসল, পশুপাখি, মৎস্য প্রভৃতির অর্থনৈতিক উৎপাদনের নিমিত্তে ‘খানাসমূহ’ একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পন্ন করছে। এখানে নির্দিষ্ট এলাকা হচ্ছে কৃষকের বসতবাড়ি, তে, পুকুর-ডোবা ইত্যাদি। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
আর খানা হচ্ছে কৃষক পরিবার, যার সদস্যরা একত্রে বসবাস ও আহার করেন। এবং যা একটি সংগঠিত ব্যবস্থাপনা একক। এখানে সামাজিক পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা প্রভাব রাখছে। খামার হলো কৃষক পরিবারের একটি সুসংগঠিত উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও ভোগের একক যেখানে ফসল, পশুপাখি, মাৎস্য, ফল-মূল, গাছাপালা প্রভৃতি পণ্যের সমন্বিত অর্থনৈতিক উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে, যা প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
খামারের প্রকার
কৃষি পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা। তাই বিবর্তন প্রক্রিয়ায় যুগে যুগে বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় কৃষির সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে খামারও হয়েছে বিভিন্ন প্রকার। এখানে খুব সংপ্তিভাবে খামার-এর প্রকারভেদ আলোচনা করা হয়েছে।
স্থায়িত্বের ভিত্তিতে খামার তিন প্রকার । যেমন—
১। স্থায়ী খামার (Settled farming)
২। স্থানান্তরী খামার (Shifting farming)
৩। যাযাবর খামার (Pastoral nomadism)
পণ্যের সংখ্যার ভিত্তিতে খামার প্রধান দুই প্রকার। যথা-
১। একক পণ্য খামার (Mono farming)
২। মিশ্র খামার (Mixed farming)
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে খামার দুই প্রকার। যথা-
১। ভরণ পোষণ খামার বা আত্মপোষণ খামার (Subsistence farming)
২। বাণিজ্যিক খামার (Commercial farming)
এখন বিভিন্ন খামার সম্পর্কে সংপ্তি আলোচনা করা হচ্ছে।
স্থায়ী খামার:
নদী বিধৌত সমভূমি, মালভূমি ও অন্যান্য সমতল এলাকায় অনেক বৎসর ধরে গড়ে উঠা খামারকে স্থায়ী খামার বলে।
স্থানান্তরী খামার:
পাহাড়ের ঢালে অপোকৃত অনুর্বর স্থানে এক বা দুই বৎসর ফসল উৎপাদনের পর অন্য এলাকায় চাষবাস করাকে স্থানান্তরী খামার বলে।
যাযাবর খামার:
পাহাড়-পর্বত বা মালভূমির তৃণাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার পশুপালন খামার অনবরত স্থানান্তরিত হচ্ছে নতুন ঘাসের সন্ধানে, এগুলোকে যাযাবর খামার বলে।
একক পণ্য খামার:
একটি পণ্য সম্বলিত খামারকে একক পণ্য খামার বলে। ধানের খামার, চা বাগান, গাভীর খামার, হাঁসের খামার, মাছের খামার ইত্যাদি।
মিশ্র খামার:
দুই বা ততোধিক পণ্য সম্বলিত খামারকে মিশ্র খামারবলে। বাংলাদেশের গ্রামের প্রতিটি খামার এক একটি মিশ্র খামার। বিশেষভাবে পরিকল্পিত মিশ্র খামারকে সমন্বিত খামার (Integrated farming) বলা হয় ।
ভরণ-পোষণ বা আত্মপোষণ খামার:
যে খামারের উৎপাদন বা আয় পরিবারের শুধু মৌলিক চাহিদা বা ভরণ-পোষণ মেটায় তাকে ভরণ-পোষণ খামার বলে। বাংলাদেশের গ্রামের প্রায় সবই ভরণ-পোষণ খামার। যে সমড় খামারের উৎপাদন কৃষক পরিবারের ভরণ-পোষণ মেটাতে পারে না সে সমস্ত খামারও এই প্রকার খামারের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রকারের খামারে লাভ লোকসানের দিকে তেমন দৃষ্টি দেয়া হয় না।
বাণিজ্যিক খামার:
ব্যবসায়িক ভিত্তিতে লাভজনক উৎপাদনে নিয়োজিত খামারকে বাণিজ্যিক খামার বলে। যেমন- চা বাগান, রাবার বাগান, উপকূলীয় চিংড়ি চাষ, দুগ্ধ উৎপাদন খামার ইত্যাদি। আউশ, আমন এবং বোরো ধানের চাষ বহুগুণ ফসল চাষের উদাহরণ।