খামার ব্যবস্থার অঙ্গসমূহ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় খামার ব্যবস্থার অঙ্গসমূহ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক

খামার ব্যবস্থার অঙ্গসমূহ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক

 

খামার ব্যবস্থার অঙ্গসমূহ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক

খামার ব্যবস্থার অঙ্গসমূহ (Components)

একটি খামার ব্যবস্থা ঐ খামারে সংঘটিত সকল পণ্যের প্রত্য কর্মকান্ড নিয়ে গঠিত। অনেকগুলো একই ধরনের পণ্যকে একত্রে অঙ্গ বলে। এই প্রত্য অঙ্গসমূহ প্ৰধানত পাঁচ প্রকার। যথা-

১। ফসল অঙ্গ (Crop Component )

২। পশুপাখি অঙ্গ (Livestock Component)

৩। মাৎস্য অঙ্গ (Fisheries Component)

৪। কৃষিবন অঙ্গ (Agroforestry Component)

৫। বসতবাড়ি অঙ্গ (Homestead Component)

অনেকে এই অঙ্গসমূহকে উপব্যবস্থা (Subsystem) বলে থাকেন। কেননা প্রতিটির অধীনে আবার অনেকগুলো পণ্য (Enterprise) থাকে যেগুলো একত্রে একটি উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এছাড়া আরও কতগুলি অঙ্গ পরো ভাবে উপরের অঙ্গসমূহকে উৎপাদনে সহায়তা করে।

যেমন- কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অঙ্গ (Agricultural mechanization component), কৃষি অর্থনীতি অঙ্গ (Agricultural mconomics component), অকৃষি অঙ্গ (Nonfarm component) ও খামার বহির্ভূত অঙ্গ (Off-farm component)।

অঙ্গসমূহের বিবরণ

ফসল অঙ্গ

খামারে বিভিন্ন প্রকার ও বিভিন্ন সময়ে উৎপাদিত সকল ফসলসমূহ একত্রে ফসল অঙ্গ গঠন করে। যেমন- একবর্ষী, দ্বিবর্ষী ও বহুবর্ষী ফসল। আবার দানা, আঁশ, সবজি, ফল, কন্দাল, তৈলবীজ, ডাল ফসল অথবা মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসল। এই সবকিছুই একত্রে ফসল অঙ্গ। ফসল অঙ্গের জন্য জমি বা েেতর প্রয়োজন হয় ।

পশুপাখি অঙ্গ

খামারে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে লালন-পালনকৃত সকল প্রকার ও সকল বয়সের পশু বা পাখিসমূহকে একত্রে পশুপাখি অঙ্গ বলে। যেমন- গরু, মহিষ, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া, শূকর, হাঁস, মুরগি, রাজহাঁস, কবুতর ইত্যাদি। এসবের জন্য চারণভূমি, আবাসস্থল ও পুকুর/ ডোবা প্রয়োজন ।

 

খামার ব্যবস্থার অঙ্গসমূহ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক

 

মাৎস্য অঙ্গ

খামারের চাষকৃত বা খামারের মানুষ কর্তৃক ধৃত সকল প্রকার মাছ, চিংড়ি, ঝিনুক, শামুক প্রভৃতিকে একত্রে মাৎস্য অঙ্গ বলে। মাছ, চিংড়ি, ঝিনুক প্রভৃতি চাষের জন্য পুকুর, ডোবা, তে, জলাভূমি প্রভৃতি প্রয়োজন। মাছ ধরার জন্য খামারের কাছাকাছি নদী, খাল, বিল, জলাশয়, জলমহাল, বাওড়, সমুদ্র থাকা দরকার।

কৃষিবন অঙ্গ

বসতবাড়ি, ফসলের েত, পতিত জমি, পুকুর পাড় প্রভৃতি খামারাধীন এলাকায় উৎপন্ন ফল, কাঠ, জ্বালানী ও ঔষধি গাছপালাকে একত্রে কৃষিবন অঙ্গ বলে। তবে বিশেষভাবে সৃষ্ট বন এই অঙ্গের আওতাধীন নয় ।

বসতবাড়ি অঙ্গ

খামারের ন্যূনতম অঙ্গ হচ্ছে বসতবাড়ি। অন্যান্য অঙ্গ না থাকলেও এ অঙ্গটি সকল খামার ব্যবস্থায় বিদ্যমান। এটি ছাড়া খামার ব্যবস্থা গড়ে উঠে না। আবাসিক ঘর, উঠান, জঙ্গল, পুকুর, পালান প্রভৃতি মিলে বসতবাড়ি অঙ্গ গড়ে উঠে।

অঙ্গসমূহের পারস্পারিক সম্পর্ক

কৃষক তার প্রয়োজন অনুসারে খামার পরিবেশ ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে খামার ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। এই খামার ব্যবস্থার বিভিন্ন অঙ্গসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক কৃষকের উদ্দেশ্যে, পরিবেশগত অবস্থা ও সিদ্ধান্ত দ্বারা নির্ধারিত ও পরিচালিত হয়। সং েপে সম্পর্কগুলি চার প্রকার। এখানে এগুলোর ব্যাখ্যা করা হলো ঃ

ব্যবস্থা ধর্ম (System properties ) :

প্রতিটি অঙ্গ এককভাবে ক্রিয়াশীল থাকে। যেমন- উপব্যবস্থা। আবার এগুলো একত্রে সংঘবদ্ধ আচরণ করে থাকে। সংঘবদ্ধ একক আচরণকেই ব্যবস্থা ধর্ম বলা হয়। ব্যবস্থা ধর্মের আবার চারটি গুণ আছে। সেগুলো হলো উৎপাদনশীলতা, স্থায়িত্ব, দীর্ঘ স্থায়িত্ব বা টেকসই এবং সাম্যতা।

খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ (Food and Nutrition) :

সকল অঙ্গই মূল উদ্দেশ্য খাদ্য যোগায়। এ েত্রে একটি অপরটির পরিপূরক (Complementary)।

ঝুঁকি নিবারণ (Risk management) :

প্রতিকূল প্রাকৃতিক ও সামাজিক অবস্থায় অঙ্গসমূহ খাদ্য বা অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কেননা এমন অবস্থায় সব অঙ্গ একত্রে তিগ্রস্ত হয় না।

আন্তঃসম্পর্ক (Interaction) :

 

খামারের সার্বিক উৎপাদনে বা আয় সৃষ্টি কর্মে অঙ্গসমূহ পরস্পরের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করে। সঠিক সিদ্ধান্ত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হলে এ আন্তঃসম্পর্ক খামারের জন্য তিকর হতে পারে। তবে অধিকাংশ । ত্রেই এগুলো খামার উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উপরে আলোচিত খামার ব্যবস্থার বিভিন্ন অঙ্গের পারস্পরিক সম্পর্ক ৩ নং চিত্রে দেখানো হলো।

Leave a Comment