মুরগির খামার স্থাপন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-মুরগির খামার স্থাপন

মুরগির খামার স্থাপন

বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে লাভজনক ভাবে যে হাঁস-মুরগি পালন করা হয় তাকে হাঁস-মুরগির খামার বলে। মুরগির খামার দু’ধরনের হতে পারে। যেমন: পারিবারিক মুরগি খামার ও বড় আকারের বাণিজ্যিক মুরগি খামার। পারিবারিক মুরগি খামার সাধারণত ছোট আকারের হয়ে থাকে।

এতে বাড়তি জনবল নিয়োগ করা হয় না। পরিবারের সদস্যগণই হাঁস-মুরগির দেখাশুনা করে। খুব অল্প সময়ে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে মুরগি পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় শিল্প। উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।

যথা: ডিম উৎপাদন খামার, মাংস উৎপাদন খামার, প্রজনন খামার বা ব্রিডার খামার, বাচ্চা উৎপাদন খামার ইত্যাদি। তবে যে ধরনের খামারই স্থাপন করা হোক না কেন লাভজনক করতে হলে তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সঠিক পরিচালনা এবং বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে।

মুরগির খামার স্থাপন

 

মুরগি খামার স্থাপনে বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো

১। স্থান নির্বাচন:

(ক) খামারের জন্য বন্যামুক্ত উঁচু স্থান নির্বাচন করতে হবে।

(খ) সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

(গ) বাণিজ্যিক খামার বাড়িঘর থেকে দূরে কোলাহল মুক্ত স্থানে নিতে হবে।

(গ) রাজপথ থেকে দূরে তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

(ঙ) পানি, বিদ্যুতের সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হে

(চ) বাজারজাতকরণের সুবিধা থাকতে হবে।

২। মুরগির বাসস্থান

নিরাপদ এবং আরামপ্রদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে মুরগির মাথাপিছু জায়গা প্রয়োজন মতো হতে হবে। বিভিন্ন বয়সের মুরগি এবং নামার স্থাপনের প্রকার বা উদ্দেশ্যের উপর এ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। ঘর পাকা, আধা পাকা বা কাঁচা, একচালা বা দোচালা হতে পারে।

 

মুরগির খামার স্থাপন

 

৩। বাসস্থানের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও সাজসর

(ক) ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ডিমপাড়া মুরগির জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কৃত্রিম আলোসহ ১৬ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা করতে হয়।

(খ) মেঝেতে মুরগি রাখলে কাঠের গুঁড়া তুম ইত্যাদি লিটার বা বিছানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাঁচাতে মুরগি পালন করলে লিটারের প্রনে

(গ) খাবার পাত্র, পানির পাত্র ও ডিম পাড়ার বাক্স মুরগির বয়স ও সংখ্যানুপাতে দিতে হবে। খাবার পাত্র টিনের, কাঠের, এলুমিনিয়ামের বা প্লাস্টিকের তৈরি হতে পারে। পানির পাত্র মাটির বা প্লাস্টিকের তৈরি হয়ে থাকে।

(ঘ) খামারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী উপযুক্ত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে হবে। মুরগির ঠোঁট কিছুটা কেটে দিয়ে ঠোকরা-টুকরি বন্ধ করা যায়। মেশিনের সাহায্যে ঠোঁট কাটা যা

(ঙ) মুরগিকে প্রয়োজন মতো সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। বয়স এবং জাতভেদে এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে হয়। মুরগির খাদ্যে সকল উপাদান যেমন- আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং প্রয়োজনীয় ক্যালরি অবশ্যই থাকতে হবে।

(চ) খাদ্য অপচয় যাতে না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা মুরগির আমাকে খাদ্যের বারের উপর পাভলোকসান বহুলাংশে নির্ভর করে।

(ছ) খাদ্য এবং পানির পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মুরগিকে প্রয়োজন মতো পরিষ্কার পানি নিতে হবে। পানির পরিমাণ ব্যয়স, জাত ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। ছোট বাচ্চার ব্রডিং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।

(জ) স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিয়মিত মুরগিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। অসুস্থ মুরগিকে দেখার সংগে সংগে আলাদা করে ফেলতে হবে। মৃত মুরগি মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। সুস্থ মুরগিকে নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা প্রদান করতে হবে। কোন দর্শককে খামারে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।

(ঝ) অকেজো এবং অনুৎপাদনশীল মুরগি বাছাই করে বাতিল করতে হবে। খামারের জমি, ঘর-বাড়ি, সাজ-সরঞ্জাম, মুরগি, খাবার ইত্যাদির সকল রেকর্ড রেজিস্টারে সংরক্ষণ করতে হবে।

(ট) প্রতিদিনের উৎপাদন আয় এবং বায়ের রেকর্ড সঠিকভাবে রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে।

(ঠ) খামারে জৈব নিরাপত্তা বিষয়টি অতীব গুরত্বপূর্ণ। খামারকে রোগমুক্ত রাখার জন্য এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

(ড) খামারের দৈনন্দিন কাজগুলো যথা সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

 

মুরগির খামার স্থাপন

 

লেয়ার খামার প্রকপ

৫০টি ডিমপাড়া (লেয়ার) উন্নত জাতের মুরগি দিয়ো নামার স্থাপনের একটি নমুনা প্রকল্প নিয়ে দেওয়া হলো। ৫০টি উন্নত জাতের মুরগির পারিবারিক খামার স্থাপন প্রকল্প প্রকল্প ব্যয়া মুরগির খামারের ব্যয়কে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:-

১। স্থায়ী ব্যয় টাকার পরিমাণ

(ক) জায়গা বা স্থান নির্বাচন বসত বাড়ির সাথে নিজস্ব খালি জায়গা

(খ) মুরগির ঘর ৫০টি মুরগির জন্য ০.২৭.০০ ৫০ = ১৩.৫০ বর্গ মি. প্রতি বর্গমিটার ২৫০.০০ টাকা হিসাবে ১৩. ২.০ ৩৫.০০ টাকা

(গ) খাদ্য, পানির পাত্র, ডিম পাড়ার বাক্স, ডিমের ঝুড়ি বা ট্রে ইত্যাদি = ৬০০০০ টাকা মোট ব্যয় = ৩,৯৭৫.০০ টাকা

২। আবর্তক ব্যয় টাকার পরিমাণ

ক) ৫০টি পুলেট মুরগি = ১২৫.০০*৫০= ৫,২৫০.০০ টাকা

খ) মুরগির খানা গড়ে ৫০টি মুরগির জন্য প্রতিটি মুরগির বছরে ৪০ কেজি খাদ্য হিসাবে ৫০০০- ৪০ = ২০০০ কেজি। প্রতি কেজি খাদ্যের মূল্য ১০,০০ টাকা হিসাবে ২০০০০ ১০.০০= ২০,০০০.০০ টাকা আনুষঙ্গিক বা প্রষুধ লিটার ইত্যাদি = ৮০০.০০ টাকা

মোট ব্যয় ২৭,০৫0.00 টাকা

সর্বমোট ব্যয় (১+২) = ৩১,০২৫.০০ টাকা।

আর টাকার পরিমাণ

(ক) ডিম উৎপাদন: মুরগি প্রতি ২৫০টি হিসাবে ২৫০.৫০ = ১২৫০০টি। প্রতিটি ডিমের মূলা ৩.০০ টাকা হিসাবে

(খ) বছর শেষে ৫০ টি বয়স্ক মুরগি বিনা বাব আয় মুরগি প্রতি ৮০.০০ টাকা হিসাবে ৫০০ ৮০০০ 8,000.00 টাকা (গ) বছর শেষে একটন লিটার বা বিষ্ঠার মূল্য ৫০০.০০ টাকা মোট আয় = ৩১,০২৫.০০ টাকা প্রথম বছরে সর্বমোট ব্যয় ৩১,০২৫.০০ টাকা

প্রকৃত আয় = ৪২,০০০,০০ ৩১.02.00 = 100.00 টাকা মুরগির জন্য ঘরটি ছোট ছোট খাট মেরামতের মাধ্যমে ৩-৪ বছর ব্যবহার করা যাবে। তাই পরবর্তী বছর গুলোতে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। এই প্রকল্পটি যেহেতু পারিবারিক খামারের তাই কোন বাড়তি জনবলের সংস্থান এখানে দেখানো হয়নি।

সারমর্ম

পারিবারিক হাঁস-মুরগির খামার ছোট আকারের বিধায় পরিবারের লোকেরাই দেখাশুনা করতে পারে। বাণিজ্যিক খামার বা বড় খামার পুঁজি বিনিয়োগ করে স্থাপন করা হয়। যে কোন খামার স্থাপনে স্থান নির্বাচন, মুরগির বাসস্থান ও ইহার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সম্পৰ্কীয় বিষয়সমূহ বিবেচনা করতে হবে। মুরগি খামারের প্রকল্প প্রস্তুতের সময় স্থায়ী ও আবর্তক খরচসমূহ হিসাব করে প্রকৃত লাভ বের করতে হয়।

Leave a Comment