গবাদিপশুর খাদ্য

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় গবাদিপশুর খাদ্য – যা কৃষি উপকরণ : গৃহপালিত পশু-পাখির আবাসন ও খাদ্য এর অন্তর্ভুক্ত ।

গবাদিপশুর খাদ্য

 

গবাদিপশুর খাদ্য

 

গবাদি পশুর খাদ্য

আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি গবাদিপশুর বেঁচে থাকার জন্যও খাদ্যের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া গবাদিপশু থেকে অধিক মাংস ও দুধ উৎপাদন করতে হলে এদেরকে স্বাভাবিক খাবারের অতিরিক্ত হিসেবে সম্পূরক খাদ্য প্রদান করতে হয়।

খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা

শুধুমাত্র বেঁচে থাকা ছাড়াও নিম্নলিখিত কারণে গবাদিপশুর খাদ্যের প্রয়োজন। যথা:-

  • দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কোষকলার বিকাশ।
  • তাপ ও শক্তি উৎপাদন ।
  • দেহ সংরক্ষণ ও কোষকলার ক্ষয়পূরণ।
  • দুধ ও মাংস উৎপাদন।
  • প্রজনন ও বংশবৃদ্ধিতে সক্ষমতা অর্জন।
  • গর্ভস্থ বাচ্চার বিকাশ সাধন।

গবাদিপশুর সুষম খাদ্য

যেসব খাদ্য মিশ্রণে গবাদিপশুর দৈহিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য উপযুক্ত পরিমাণ ও অনুপাতে সব রকম পুষ্টি উপাদান থাকে সেগুলোকে সুষম খাদ্য বলে । প্রতিটি গাভীর জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। কারণ খাদ্যে বিভিন্ন উপাদানের সুষমতার অভাব হলে গাভী তার প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টি উপাদান পায় না। ফলে দেহগঠন ও উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। নিম্নলিখিত শর্তগুলো সুষম খাদ্য হওয়ার পূর্বশর্ত :-

  • এটি রুচিকর হবে।
  • পরিমাণ ও আকারে সঠিক হবে।
  • খেতে সুস্বাদু হবে।
  • দামে সস্তা হবে ।

পবাদিপশুর খাদ্যদ্রব্যের প্রকারভেদ

গবাদিপশু, বিশেষ করে গাভীর খাদ্যদ্রব্যগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:-

১. আঁশজাতীয় খাদ্য (Roughage)

২. দানাদার খাদ্য (Concentrates )

৩. ফিড অ্যাডিটিভস (Feed Additives)

আঁশজাতীয় খাদ্য

আঁশজাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ (Fiber) ও কম পরিমাণে শক্তি (Energy) থাকে। যেমন- বিভিন্ন ধরনের খড়, সবুজ ঘাস, শুকনো ঘাস বা হে, সাইলেজ ইত্যাদি। আঁশসমৃদ্ধ ঘাস গবাদিপশু চারণভূমি থেকে খেতে পারে অথবা খামারি/কৃষক মাঠ বা চাষকৃত জমি থেকে ঘাস কেটে গবাদিপশুকে সরবরাহ করতে পারে।

লিগিউম বা ডালজাতীয় উদ্ভিদের ঘাসে, যেমন:- কলাই, খেসারি, কাউপি, ইপিল-ইপিল, আলফা আলফা ইত্যাদি, সাধারণ ঘাসের তুলনায় অধিক পরিমাণে আমিষ (Protein), শক্তি, খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (Vitamin) ও খনিজপদার্থ (Minerals) থাকে। সাধারণ ঘাসের মধ্যে ভুট্টা, নেপিয়ার, জার্মান, প্যারা প্রভৃতি ঘাস উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য ঘাসের তুলানায় এসব ঘাসের ফলন প্রতি উৎপাদন অনেক বেশি।

 

গবাদিপশুর খাদ্য

 

দানাদার খাদ্য

দানাদার বা দানাজাতীয় খাদ্যে কম পরিমাণে আঁশ ও প্রচুর পরিমাণে শক্তি থাকে। মাংস ও দুধ উৎপাদনকারী গবাদিপশুর ক্ষেত্রে শুধু আশজাতীয় খাদ্য, অর্থাৎ ঘাস বা খড় সরবরাহ করে কখনোই কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে আঁশজাতীয় খাদ্যের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। উৎস অনুযায়ী দানাদার খাদ্যদ্রবগুলোকে
দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:-

ক) প্রাণিজ উৎস: ব্লাডমিল, ফিসমিল, ফিনার মিল ইত্যাদি ।

খ) উদ্ভিজ্জ উৎস: গম, ভুট্টা, সরগাম, বার্লি, খুদ, খৈল, ভুশি, কুঁড়া ইত্যাদি ।

ফিড অ্যাডিটিভস

ফিড অ্যাডিটিভসগুলো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজপদার্থের উৎস। শামুক, ঝিনুকচূর্ণ, চুনাপাথর, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স ফিড অ্যাডিটিভ হিসেবে দানাদার খাদ্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়।

গাভীকে খাদ্য প্রদানের স্বাদ নিয়ম

আঁশজাতীয় দানাদার ও ফিড অ্যাডিটিভস প্রয়োজনমতো সংগ্রহ করে গাভীকে পরিবেশন করতে হবে। গাবাদিপশু বা গাভীকে যে পরিমাণ খাদ্য পরিবেশন করতে হয় তা এক ধরনের খাদ নিয়ম (Thumb Rule) নিয়মে নিরূপণ করা যেতে পারে । যেমন:-

  • প্রতিদিন একটি গাভী যে পরিমাণ মোটা আঁশযুক্ত খাদ্য খেতে পারে তা তাকে খেতে দেয়া।
  • প্রতি ১.৫ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীকে খড় ও কাঁচা ঘাসের সঙ্গে প্রতিদিন ০.৫ কেজি দানাদার খাদ্য সরাবরাহ করা।
  • শুধু খড় খেলে প্রতি ১.২৫ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীকে প্রতিদিন ০.৫ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য প্রদান করা।

পশু পুষ্টি বিজ্ঞানে প্রতি ৪৫.৫ কেজি দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে রসদ সরবরাহের নিয়মও চালু আছে। প্রতি ৪৫.৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৯ কেজি আঁশযুক্ত খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ২.৪ কেজির জন্য ২.৪ কেজি ও পরবর্তী প্রতি ০.৯ কেজি উৎপাদনের জন্য ০.২৩ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

গাভীর রসদ

অন্যান্য পশু-পাখির মতো গাভীর জন্যও উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের রসদ তৈরি করা হয়। সারণি ১২-এ প্রায় ১০০ কেজি ওজনের একটি গাভীর জন্য সুষম রসদ তৈরির একটি নমুনা দেখানো হয়েছে। এছাড়াও সারণি ১৩ ও ১৪-এ যথাক্রমে ১০০-১৫০ কেজি ও ২০০-২৫০ কেজি ওজনের গাভীর জন্য সুষম রসদ তৈরির দু’টি নমুনা দেখানো হয়েছে। সারণি ১২: ১০০ কেজি ওজনের গাভীর জন্য সুষম রসদ।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: দানাদার খাদ্য উপকরণগুলোর সঙ্গে লবণ ও ইউরিয়া ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। খড় ও সবুজ ঘাস ছোট ছোট করে এর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

সারাংশ

আমাদের যেমন খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি গবাদিপশুর বেঁচে থাকার জন্যও খাদ্যের প্রয়োজন। এছাড়াও অধিক মাংস ও | দুধ উৎপাদনের জন্য স্বাভাবিক খাবারের অতিরিক্ত হিসেবে সম্পূরক খাদ্য প্রদান করতে হয়। গবাদিপশু, বিশেষ করে গাভীর খাদ্যদ্রব্যগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন:- আঁশজাতীয় খাদ্য, দানাদার খাদ্য ও ফিড অ্যাডিটিভস। এই তিন ধরনের খাদ্য প্রয়োজনমতো সংগ্রহ করে গবাদিপশু বা গাভীকে সময়মতো পরিবেশন করতে হবে।

Leave a Comment