আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি উদ্ভিদের সাধারণ পরিচিতি ও তালিকা – যা শিল্পের কাঁচামাল: কৃষিজ দ্রব্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি উদ্ভিদের সাধারণ পরিচিতি ও তালিকা
ঔষধি বা ভেষজ বৃক্ষ হলো এক প্রকার উদ্ভিদ যার যে কোনো অংশ রোগ নিরাময়ে বা উপশমে সক্ষম। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র উন্নত থেকে উন্নততর হওয়ার পিছনে ঔষধি বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের গ্রামঞ্চলের অধিকাংশ লোকের নিকট ঔষধি বৃক্ষের মাধ্যমে রোগ নিরাময় অতি জনপ্রিয়। কারণ, ঔষধি উদ্ভিদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য, সস্তা ও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই । পৃথিবীর অনেক দেশে ঔষুধের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা বর্তমান বিশ্বের মারাত্মক ব্যাধি ক্যান্সার নিরাময়ের উপকরণ ঔষধি উদ্ভিদে রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি উদ্ভিদের তালিকা
ঔষধি উদ্ভিদ
গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি উদ্ভিদের সাধারন পরিচিতি
১. থানকুনি:
থানকুনি একটি ছোট লতানো বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এর প্রতি পর্ব থেকে নিচে মূল এবং উপরে শাখা ও পাতা গজায়। পাতা সরল বৃরের মতো, একান্তর। পাতা ক্ষুদ্র গোলাকৃতি। বসন্তকালে থানকুনির ফুল আসে ও গ্রীষ্মকালে ফল পাকে। থানকুনির সমস্ত উদ্ভিদটিই ব্যবহৃত হয়।
২. তুলসী:
তুলসী অতিপরিচিত বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণত ৩০ সে.মি. হতে ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। পাতা সরল, প্রতিমুখ, ডিম্বাকার, সুগন্ধযুক্ত। পাতা ২-৪ ইঞ্চি লম্বা। পাতা, ফুল ও ফলের একটি বাঁঝাল গন্ধ আছে । শীতকালে ফুল ও ফল হয়। এর ব্যবহৃত অংশ হচ্ছে পাতা।
৩. কালোমেঘ:
এটি একটি ছোট বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত ২০ সে.মি. থেকে ১ মিটার উঁচু হয়। পাতা সরল, প্রতিমুখ কিছুটা লম্বা ধরনের। পাতা তিতা। বর্ষার শেষ হতে শীতকাল পর্যন্ত ফুল ও ফল হয় । এর সমস্ত গাছটিই বিশেষ করে পাতা ব্যবহৃত হয় ।
৪. বাসক:
বাসক ১-২ মি. উঁচু জন্ম জাতীয় উদ্ভিদ। পাতা সরল প্রতিমুখ, লম্বাকৃতি, বল্লমাকার, বেশ বড়, ফুল ঘন, ছোট স্পাইকের উপরে ফুটে, ফল সাদা। এর ব্যবহৃত অংশ পাতা, শিকড়, ফুল, বাকল ।
৫. সপ্তগন্ধা:
সর্পগন্ধা ৩০-৭৫ সে.মি. উচ্চতাবিশিষ্ঠ একটি বহুবর্ষজীবী বিরুৎ। প্রতিপর্বে সাধারণত ৩টি পাতা থাকে । বর্ষায় ফুল ও ফল হয়। ফুল গুচ্ছাকারে ফুটতে দেখা যায়। ফল পাকলে কালো হয় । সর্পগন্ধার মূলের বা ফলের রস ব্যবহৃত হয়।
৬. অর্জুন:
অর্জুন মাঝারি থেকে বৃহদাকার বৃক্ষ। কান্ড সরল উন্নত, মসৃণ এবং আকর্ষনীয় হয়ে থাকে। গাছ থেকে সহজে ছাল উঠানো যায় । পাতা সরল, লম্বা, ডিম্বাকৃতির। ফুল হলুদ ক্ষুদ্রাকৃতির, উগ্র গন্ধবিশিষ্ট। এর ব্যবহৃত অংশ পাতা, বাকল, ফুল, ফল ও কাঠ।
৭. হরিতকি
হরিতকি মাঝারি থেকে বৃহদাকার পত্রকরা উদ্ভিদ ও প্রায় ১৫-২০ মি. উঁচু হয়। পাতা সরল একান্তর, উপবৃত্তাকার, সবৃন্তক ফুল উভলিঙ্গ, শ্বেতবর্ণ ও ছোট হয়। ফল ডুপ, কমবেশি ৫টি হালকা বাঁজ থাকে। পাকলে হলুদাভ সবুজ হয়। এর ব্যবহার্য অংশ ফল ও কাঠ।
৮. আমলকি মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ
পাতা হালকা সুবন্ধ, যৌগিক, উপপত্র বিপরীতভাবে বিন্যস্ত, ফুল ছোট সবুজ, গোলাকৃতি, মুখরোচক ও উপাদেয়। মার্চ থেকে মে মাসে ফুল আসে। ৪-৫ বছর বয়সে ফল দেয় এবং আগষ্ট নভেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
৯. বহেরা
এটি একটি বৃহদাকার, পত্রঝরা শাখা প্রশাখাযুক্ত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। পাতা একক, বোটা লম্বা ডালের শীর্ষে জড়োভাবে থাকে । ফুল সবুজ ও সাদা ডিম্বাকৃতির। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে বহেরা গাছে ফুল আসতে দেখা যায় । ফল ড্রপ গোলাকৃতির বা ঈষৎ লম্বাটে। ফল পাকলে হালকা বাদামি হয়। একটি ফলে একটি বীজ থাকে। এর ব্যবহৃত অংশ ফল ও বীজ
১০. ঘৃত কুমারী:
ঘৃত কুমারী বীরুৎ জাতীয় গাছ। দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। পাতা পুরু লম্বা কিনাৱা করাতের মত খাজ কাটা, রসাল। ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শা থাকে। এর ব্যবহার্য অংশ পাতা থেকে নির্গত ঘন পিচ্ছিল রস ।
১১. তেলাকুচা
তেলাকুচা গাঢ় সুবজ রঙের নরম পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী বিরুৎ বনেবাদাড়ে আপনা আপনি এ গাছ জন্মাতে দেখা যায়। পাতা পঞ্চভুজ আকৃতির সব মৌসুমেই তেলাকুচার ফুল ও ফল হয়ে থাকে। এর ব্যবহার্য অংশ কান্ড ও পাতা ।
১২. নিম:
নিম মাঝারি থেকে বড় আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ এবং প্রায় ২০ মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। অল্প সময়ের জন্য পত্রঝরা থাকে, মার্চ- এপ্রিল মাসে নতুন পাতা গজায়। বাকল খয়েরি বা কালো ও অমসৃণ। পত্র যৌগিক পক্ষল, লম্বাটে, তির্যক ও বর্গাকৃতির হয় । ফুল যৌগিক, সাদা সুগন্ধিযুক্ত। ফল স্তূপ, ডিম্বাকৃতির এককোষী এবং একটি বা কখনও কখনও দুটি বীজ থাকে। ফল পাকলে সুবজ ও হলুদ হয়। এর ব্যবহার্য অংশ পাতা, মূল কান্ড, বাকল, ফুল, ফল ও কাঠ।
১৩. বেল:
বেল লেবু পরিবারের সদস্য। বেল মাঝারি আকারের বৃক্ষ। গাছের উচ্চতা ২০-২৫ ফুট। গাছের বাকল পুরু নরম ধূসর বর্ণের, পাতা যৌগিক ও তিনটি করে থাকে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাতা ঝরে যায় ও বৈশাখে নতুন পাতা ও ফুল আসে। ফুল লালচে ও মিষ্টি গন্ধযুক্ত। ফল বড়, গোলাকার, ত্বক খুব শক্ত । কাচা ফলের রং সবুজ, পাকলে হলদে হয়ে যায়। এর ব্যবহার্য অংশ পাতা ও ফল ।
১৪. উলটকম্বল:
এশিয়ার প্রধান অঞ্চল এর আদি নিবাস। ২-৩ মি. উচ্চতা বিশিষ্ট গুল্মজাতীয় চিরহরিৎ গাছ। গাছের শাখার গোড়ার পাতা হৃদপিন্ডের মত, তবে পাতার সামনের দিকটা সরু উজ্জ্বল সবুজ রঙের, গাছের বাকল আশযুক্ত। ফুল খয়েরি রঙের, ৫টি পাপড়ি, গ্রীষ্ম থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুল পঞ্চকোনাকৃতি, প্রথমে সবুজ, পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। ফল পাঁচটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। ভিতরে কালিজিরার মত ছোট ছোট বীজ থাকে। এর ব্যবহৃত অংশ পাতা, ডাল, মূল, বাকল ।
১৫. মেহেদি
মেহেদি এক ধরনের গ্রীষ্মমন্ডলীয় গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর লতাঙ্কুর বা পাতা থেকে তৈরি লালচে রং ব্যবহৃত হয়। গাছ উচ্চতায় ৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। বাকল লালচে বাদামি। ফুল গোলাপী, লাল ও সাদা রঙের হতে পারে । এর ব্যবহৃত অংশ পাতা, বাকল, ফুল ও বীজ ।
সারসংক্ষেপ
রোগ নিরাময়ে সক্ষম এমন কিছু উদ্ভিদ মানুষ সদূর অতীত কাল থেকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছে। এ সমস্ত উদ্ভিদকে ভেষজ উদ্ভিদ বলে। রোগ নিরাময়ে এসব উদ্ভিদের উপকারিতা অনস্বীকার্য। তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদসমূহের বিলুপ্তির প্রধান কারণ সমূহের অন্যতম কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা। ভেষজ উদ্ভিদ বর্তমানে | বিলুপ্তপ্রায়। সুতরাং আমদের এসব ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে জানা, চেনা এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত ।