পাবদা ও গুলশা মাছের চাষ পদ্ধতি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পাবদা ও গুলশা মাছের চাষ পদ্ধতি – যা কৃষিজ উৎপাদন: মাছ চাষ এর অন্তর্ভুক্ত।

পাবদা ও গুলশা মাছের চাষ পদ্ধতি

 

পাবদা ও গুলশা মাছের চাষ পদ্ধতি

 

পাবদা ও গুলশা মাছের পরিচিতি

নদী নালা খাল বিলে সমৃদ্ধ এদেশে ছোট মাছগুলোর মধ্যে পাবদা, গুলশাও অন্যতম। খেতে সুস্বাদু ও কাটা কম থাকায় সবার কাছে এ মাছগুলো খুব প্রিয়। তবে কালের বিবর্তনের সাথে অনেক মাছের মত হারিয়ে যাচ্ছে এসব প্রজাতির মাছ। পাবলা নাই ১৫-৩০ সে.মি. লম্বা হয়ে থাকে। এদের দেহ চেস্টা এবং সামনের চেয়ে পিছনের দিকে ক্রমশ সরু ।

মাছের মুখ বেশ বড় এবং বাকানো। মুখের সামনের দিকে ২ জোড়া লম্বা গোঁফ আছে। দেহের রং সাধারণত উপরিভাগে ধূসর রূপালি এবং পেটের দিকে সাদা। ধারের কাছে কানকোর পিছনে কালো ফোটা আছে। গুলশা মাছ দৈর্ঘ্য ১৫-২৩ সে.মি. মাছের দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা। পিছের অংশ বাকানো মুখ বেশ ছোট এবং মুখে ৪ জোড়া গোঁফ আছে। শরীরের রং জলপাই ধুষর এবং নিচের দিকে কিছুটা হালকা ।

পাবদা ও গুলশা মাছ চাষে সুবিধাসমূহ

১। গ্রামীন জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
২। এদের প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও মাইক্রোনিউট্রেন্ট বিদ্যমান থাকে ।
৩। ছোট বা বড় জলাশয়ে সহজ ব্যবস্থাপনায় চাষ করা যায়।
৪। কার্পজাতীয় মাছের সাথেও মিশ্র চাষ করা যায়।
৫। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতারা বড় অন্যান্য মাছের তুলনায় এই মাছ বেশি পছন্দ করে।
৬। বাজারে প্রচুর চাহিদা ও সরবরাহ কম থাকায় এদের মূল্য অন্যান্য মাছের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি।

 

পাবদা ও গুলশা মাছের চাষ পদ্ধতি

 

চাষ পদ্ধতি

পুকুর প্রস্তুতি

  • শুকনো মৌসুমে পুকুর থেকে জলজ আগাছা পরিষ্কার ও পাড় মেরামত করতে হবে ।
  • পুকুর থেকে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করার জন্য মিহি ফাঁসের জাল টেনে এদের সরাতে হবে।
  • রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করার পর শতাংশে ১ কেজি চুন, ৩-৪ দিনি পর ৬-৮ কেজি পঁচা গোবর, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম টিএসপি পানিতে গুলিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।

পোনা মজুদ

প্রতি শতাংশ ৫-৭ সে.মি. আকারের ২০০টি গুলশা, ১০০টি পাবদা এবং ১০-১২ সে.মি. আকারের ১২টি রুই ও ২টি প্রাস কার্প এর সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে। পুকুরে পোনা ছাড়ার আগে পরিমাণকৃত পোনা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও লবণ দিয়ে শোষণ করতে হবে।

খাদ্য ও সার প্রয়োগ

পোনা ছাড়ার পরের দিন থেকে চালের কুঁড়া ৪০%, গমের ভূষি ২৫%, সরিষার খৈল ২০% এবং ফিস মিল ১৫% হিসেবে মাছের দেহ ওজনের ৩৮% হারে দেয়া যেতে পারে।

ব্যবস্থাপনা

পুকুরের তলদেশে কাদা থাকলে ক্ষতিকর গ্যাস জমে থাকতে পারে। দড়ির সাথে লোহা বা মাটির কাঠি কিংবা ইউ বেঁধে হররা তৈরি করে পুকুরের তল ঘেঁষে আস্তে আস্তে টেনে তলার গ্যাস বের করে দিতে হবে। প্রতি মাসে একবার কিছু মাছ ধরে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। পুকুরের পানি কমে গেলে পানি সরবরাহ করতে হবে। পানি বেশি সবুজ হয়ে গেলে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে ।

আহরণ

আংশিক আহরণ

রুই জাতীয় মাছ ও পাবদা গুলশার মাছের বৃদ্ধির হার সমান নয়। বেশি লাভের জন্য বড় মাছ আহরণ করে ছোট মাছগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাই রুই জাতীয় যে মাছগুলো ৫০০-৭০০ গ্রামের উপরে হয়ে তা আহরণ করে সমসংখ্যার পোনা ছাড়তে হবে।

চূড়ান্ত আহরণ

বছর শেষে সব মাছ আহরণ করে ফেলতে হবে। বাজার দর এবং পরবর্তী ফসলের জন্য পোনা প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে চূড়ান্ত আহরণ কাল নির্ধারণ করতে হবে। পাবদা ও গুলশা মাছ ৮-৯ মাস চাষে যথাক্রমে ২৫-৩০ গ্রাম ও ৪৫-৫০ গ্রাম হয় এবং তা বিক্রয়ের জন্য উপযুক্ত হয় ।

 

সারাংশ

নদী নালা খাল বিল  সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ছোট মাছগুলোর মধ্যে পাবদা ও গুলশা অন্যতম। খেতে সুস্বাদু এবং কাটা কম হওয়ার মাছগুলোর চাহিদা খুব বেশি। পাবদা ও গুলশা মাছ চাষের অনেক সুবিধা রয়েছে। সঠিক চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে অধিক লাভবান ও হওয়া সম্ভব।

 

Leave a Comment