জৈব সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদসমূহ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় জৈব সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদসমূহ

জৈব সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদসমূহ

 

জৈব সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদসমূহ

 

জৈব সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদসমূহ

এমন অনেক উদ্ভিদ রয়েছে যারা জৈব সার উৎপাদনে প্রত্য বা পরো ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জৈব উৎসের দ্রব্যাদি থেকে সরাসরি প্রাপ্ত অথবা প্রস্তুতকৃত সারকে জৈব সার বলা হয়। আর যেসব উদ্ভিদ জৈব সার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে জৈব সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদ বলে। গরু বাছুরের গোবর একটি জৈব সার। গোবরে যে কত ধরনের জানা অজানা উদ্ভিদ বা আগাছা রয়েছে তা বলা কঠিন।

তেমনিভাবে কম্পোস্ট বা আবর্জনা পচা সার তৈরিতেও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও সবুজ সার উৎপাদনে যে সব উদ্ভিদকে কাজে লাগানো হচ্ছে এদের মধ্যে ধৈঞ্চা, আফ্রিকান ধৈঞ্চা, শনপাট, গোমটর বা বরবটি ইত্যাদি প্রধান। মাসকলাই ও খেসারীকলাইকেও মাঝে মধ্যে সবুজ সার উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এসব ছাড়াও বেশ কিছু নিম্নমানের উদ্ভিদ রয়েছে, যাদেরকে নি:সন্দেহে জৈব সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদ হিসেবে গণ্য করা গেলেও এদেরকে প্রাণিজ সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদ বলা হয়ে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে নীল সবুজ শেওলা, অ্যাযোলা ইত্যাদি। জীবাণু সার বা ইনোকুলাম বলে খ্যাত সার হলো মূলত পীট মাটিতে মিশ্রিত বিভিন্ন জাতের রাইজোবিয়াম ব্যাক্টেরিয়া।

ডাল জাতীয় ফসলের বীজ বপনের পূর্বে জীবাণু সারের সঙ্গে মিশ্রিত করে বপন করলে ফসলের ফলন ৩০-১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ফসলের গুণগত মানেরও উন্নতি হয়। নিচে জৈব সার উৎপাদনকারী প্রধান কয়েকটি উদ্ভিদের বিবরণ উপস্থাপন করা হলো। ধৈঞ্চা (Sesbania aculeata), শিম (Legume) জাতীয় গাঢ় সবুজ পত্রবহুল, দ্রুত বর্ধনশীল বর্ষজীবি উদ্ভিদ।

এদের কান্ড নরম এবং প্রচুর ডালপালাযুক্ত এবং ৩-৪ মিটার লম্বা হয়। এদের শিকড়ে নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী রাইজোবিয়াম ব্যাক্টেরিয়ার কলোনী বা গুটি থাকে যার মাধ্যমে এরা বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেন মাটিতে যোগ করে গাছের পুষ্টি যোগায় ও প্রচুর পরিমাণ জৈব পদার্থ সরবরাহ করে । এরা দ্রুত পচনশীল। ইদানীং আফ্রিকা মহাদেশ থেকে সংগৃহীত আফ্রিকান ধৈঞ্চা (Sesbania rostrata) নামক প্রজাতিটি উৎকৃষ্ট মানের সবুজ সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদ।

এদের উচ্চতা ৩-৫ মিটার, কান্ড অধিকতর নরম ও পত্রবহুল, কান্ডের ও পাতার রং গাঢ় সবুজ। এ গাছ অতি দ্রুত পচনশীল। শিকড়ের ন্যায় এদের সারা কান্ড জুড়ে ৫-৬ সারিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী গুটি উৎপন্ন হয় এবং এরা অধিক পরিমাণে জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেন মাটিতে সরবরাহ করতে সম। তাছাড়া আফ্রিকান ধৈঞ্চা বীজ এবং কান্ড উভয়ের দ্বারা বংশ বিস্তার করতে পারে। ভেজা মাটিতে বা পানিতে কান্ডের খন্ড (Cutting) দিয়ে এদেরকে জন্মানো খুব সহজ ।

প্রায় ৮ সপ্তাহ বয়সের দেশী ধৈঞ্চা এবং আফ্রিকান ধৈঞ্চা এক হেক্টর জমিতে যথাক্রমে ২০-২৫ ও ৩০-৩৫ টন জৈব পদার্থ এবং ১০০ ও ২৫০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে পারে।

 

জৈব সার উৎপাদনকারী উদ্ভিদসমূহ

 

শনপাট

এটিও একটি শিম জাতীয় বর্ষজীবি নরম কান্ডের পত্রবহুল উদ্ভিদ। এর উচ্চতা ২-৩ মিটার। কান্ডে ডালপালা তেমন থাকে না। অধিকতর উঁচু জায়গায় ভাল জন্মে এবং অতি অল্প পানিতে সহজে পচে । শনপাট ৭-৮ সপ্তাহ বয়সে হেক্টর প্রতি ১৫-১৬ টন জৈব পদার্থ এবং ৬০-৬৫ কেজি নাইট্রোজেন যোগ করতে পারে।

জৈব সার উৎপাদনকারী অন্যান্য ফসলের মধ্যে গোমটর বা বরবটি, খেসারী এবং মাসকলাই আমাদের দেশে অতি পরিচিত। এসব গাছ শিম জাতীয় বলে এদের শিকড়ে প্রচুর পরিমাণে গুটি থাকে ও জমিতে নাইট্রোজেন যোগ করতে পারে। এসব গাছ লতা জাতীয় এবং গাছের উচ্চতা তেমন হয় না বলে জমিতে জৈব পদার্থ কম যোগ হয়।

মাটিতে অল্প পানি থাকলেও এসব গাছ সহজে পচে যায়। এরা প্রতি হেক্টর জমিতে ৩-৮ টন জৈব পদার্থ এবং ১২-২৫ কেজি নাইট্রোজেন যোগ করতে পারে।

অ্যাফোলা (Azolla )

অ্যাযোলা এক প্রকার জলজ ফার্ণ (ঢেঁকিশাক) জাতীয় ভাসমান উদ্ভিদ। বিভিন্ন অঞ্চলে অ্যাযোলা দে পানা, কুটিপানা, তেতুলিয়া পানা, সুতিপানা ইত্যাদি নামে পরিচিত। অ্যাযোলা গুচ্ছাকারে জন্মায়। ত্রিকোণাকার প্রতিটি গুচ্ছ দৈর্ঘ্যে ১০-১৫ মিমি. এবং প্রস্থে ১০-১২ মিমি. হয়ে থাকে। অ্যাযোলা যৌন (Sexual) ও অঙ্গজ (Vegetative) উপায়ে স্বল্প পানিতেই (৫-১০ সেমি) বংশ বিস্তার করে।

কাদা মাটিতেও অ্যাযোলা বাঁচতে পারে। সাধারণত ২৫-৩০° সে: তাপমাত্রায় দ্রুত অঙ্গজ বংশবৃদ্ধি করে। হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি টিএসপি প্রয়োগ করলে বংশবৃদ্ধি অতি দ্রুত হয়। প্রতিকূল আবহাওয়ায় পাতার নিম্নাংশে স্পোর (Spore) তৈরি করে এবং উপযুক্ত পরিবেশে যৌন প্রক্রিয়ায় বংশ বিস্তার করে।

প্রাথমিকভাবে প্রতি বর্গমিটারে ১০০-২০০ গ্রাম ঘাস (অ্যাফোলা) বীজ হিসেবে অল্প পানিযুক্ত জমিতে ছড়িয়ে দিলে ১০-১২ দিনে জমির ওপরে একটি স্তরের সৃষ্টি করবে। জমি থেকে পানি সরিয়ে নিয়ে স্তরটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। এভাবে একটি ধান ফসলে ২/৩ বার অ্যাযোলা প্রয়োগ করতে হয়। এক স্তর অ্যাযোলা হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন সবুজ সার উৎপাদন করতে পারে।

অ্যাযোলা যে জমিতে জন্মানো হয় সে জমিতেই অথবা অন্য জমিতেও মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া যায়। ধান তে ২-৩ সে.মি. জমা পানি থাকলে ধান বপন বা রোপণের পর সেখানে সরাসরি অ্যাফোলা জন্মানো যায় । অ্যাযোলা হেক্টর প্রতি ৩০-৪০ কেজি নাইট্রোজেন যোগ করতে পারে।

নীল সবুজ শেওলা (Blue Green Algae)

এ শেওলা চুলের মত সরু, লম্বা ও পিচ্ছিল, দেখতে নীলাভ সবুজ বর্ণের হয়। এ শেওলা বদ্ধ পানিতে, নালা, ডোবা বা ধান বা পাট েতে জন্মাতে দেখা যায়। ইটের পুরানো দেয়ালে বা স্যাঁৎসেঁতে মেঝেতেও এ শেওলা জন্মে থাকে।শেওলা উৎপাদনের জন্য ১ × ২ ×০.২ ঘনমিটার আকারে লোহার পাতের একটি পাত্রে ১০ কেজি মাটি ভর্তি করে ১০ সে.মি. উচ্চতায় পানি দিতে হবে।

এতে ৭০ গ্রাম টিএসপি মিশিয়ে প্রায় ২০০ গ্রাম শুকনো শেওলা ছিটিয়ে দিলে এক সপ্তাহ পর একটি পুরু স্তরের সৃষ্টি হবে। পাত্রের পানি শুকিয়ে শুকনো শেওলা সার হিসেবে ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে হবে।

 

ধান রোপণের ৭ দিন পর জমিতে ৫-১০ সে.মি. উচ্চতার পানিতে হেক্টর প্রতি ১৫ কেজি শেওলা ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। এতে প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ কেজি নাইট্রোজেন যোগ হয় ।

 

Leave a Comment