ডাল চাষ (মসুর)

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ডাল চাষ (মসুর)

ডাল চাষ (মসুর)

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ভাল ফসল যেমন- খেসারি, মসুর, ছোলা, মাসকলাই, মুগ, মটর, অড়হর, সিম প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে। একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ২০০০ কিলোক্যালরী শক্তি প্রয়োজন। আর এই শক্তি আসে প্রাণিজ ও উদ্ভিদ খাবার থেকে বের মধ্যে ডাল অন্যতম।

শক্তির উৎস আমি প্রাণিজ ও উদ্ভিদ দুধরনেরই হয়ে থাকে। কিন্তু প্রাণিজ আমিষ যেমন- মাংস, মাছ, ডিম প্রভৃতি সাধারণ মানুষের ক্ষমতার বাইরে বলে তারা কিনতে পারে না। কিন্তু উদ্ভিজ আমিষ যেমন- সহজেই কিনতে পারে এবং ভাল তারা পেতেও ভালোবাসে।

এই ভাগে উদযোগা পরিমাণ আমিষ থাকে। ফলে সাধারণ মানুষ ডাল খেয়ে আমিনের ঘাটতি কিছুটা পূরণ করতে পারে বলে ডালকে গরিবের মাংস বলা হয়। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড নাইসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে কিন্তু সিস্টিন ও মেথিওনিন এর ঘাটতি থাকে।

 

ডাল চাষ (মসুর)

 

অপরদিকে চাউলে সিস্টিন ও মেথিওনিন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, কিন্তু লাইসিনের ঘাটতি থাকে। ফলে পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে ডাল বা ডাল টি খাদ্য হিসেবে উত্তম। ডাল ফসল কোন জমিতে চাষ করলে সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ জৈব সার ও নাইট্রোজেন যোগ হয়। এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ডাল ফসলের ভূষি গবাদি পশুর উত্তম খানা। এ পাঠে আমরা শুধু মসুর ডাে চাষাবাদ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

জমি নির্বাচন

পানি জমে থাকে না এমন ধরনের সু-নিষ্কাশিত বেলে দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি চাদের জন্য উত্তম।

জাত

বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন স্থানীয় জাত আছে। তবে অনুমোদিত হাউসলা (এল-৫)। এছাড়াও বাংলাদেশে আবাদকৃত উল্লেখযোগ্য জাত হচ্ছে- মুকদিয়া-১৫, জামালপুর-২ জামালপুর-৬ প্রভৃতি। এদের জীবন কাল ৯০-১০০ দিন এবং হেক্টর প্রতি 1000- ১০০০ কেজি।

বপন সময়

মসুর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত।

জমি তৈরি

মাটিনা জো অবস্থায় ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ফুরফুরে ও মিহি করে জমি তৈরি : করতে হবে। বর্ষার শেষে পানি চলে যাবার পর পলি মাটিতে বিনা চাদেও মসুরের বীজ ছিটানো যায়। জমি তৈরির সময় পানি নিকাশের জন্য অবশ্যই নালা তৈরি করতে হবে। কারণ মসুর গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

 

ডাল চাষ (মসুর)

 

সার প্রয়োগ

পূর্ববর্তী ফসল, মাটি, জাত প্রভৃতি বিবেচনা সাপেক্ষে সারের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। তবে সাধারণ একটি হিসেব নিচে উল্লেখ করা হলো

ইউরিয়া

৮০ কেজি / হেক্টর

টিএসপি ২৫০ কেজি / হেক্টর

এমপি ৬২ কেজি/হেক্টর

উপরোক্ত এসব সার শেষ চাষের সময় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। পার গোবর বা আবর্জনা পচা সার প্রয়োগ করলে ইউরিয়া সার ব্যবহার না করলেও চলে। এ ছাড়া জমিতে নাইট্রোজেন গুটি উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া কম থাকলে প্রতি কেজি মসুর বীজ ৭০ গ্রাম জীবাণু সার (ইনোকুলাম) দিয়ে শোধন করার পর বপন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

বীজের পরিমাণ

ছিটিয়ে ৩৬৪০ কেজি / হেক্টর

মারিতে ৩০-৩৫ কেজি / রেস্তর

ৰাপন পদ্ধতি

ছিটিয়ে বা সারিতে উভয় পদ্ধতিতেই বীজ বপন করা যায়। তবে ফলনের কোন পার্থক্য হয় না। এজন্য সাধারণত ছিটিয়েই মসুর বীজ বপন করা হয়। তবে সারিতে বুনতে চাইলে সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সে.মি. রাখা হয় ।

 

ডাল চাষ (মসুর)

 

পরিচর্যা

আগাছা দমন মসুর চারা বের হওয়ার ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। এসময় জমির কোথাও ঘন চারা থাকলে তা পাতলা করে নিতে হবে। সেচ ও নিকাশ : মসুর বদলে সাধারণত সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে মাটিতে রসের পরিমাণ কমে গেলে একবার সেচ দেয়া যেতে পারে। কোন কারণে পানি গেলে তা অবশ্যই নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

পোকা দমন : মসুর ফসলে অনেক পোকাই দেখা যায়। তবে জাব পোকা বেশি ক্ষতি করে। এরা পাতা, কুঁড়ি না থেকে বাস চুষে খেয়ে মারাত্মক ক্ষতি করে। এদের দমনের জন্য সুমিথিয়ন বা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি স্প্রে করতে হবে।

রোগ দমন : মসুর ফসলে মরিচা পড়া, নেতিয়ে পড়া, শিকড় পচা প্রভৃতি রোগ দেখা যায়। এগুলো দমনের জন্য বীজ বোনার আগে ভিটাভার ৪০০ ওষুধ দ্বারা শোধন করে নিতে হবে।

ফসল কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও সংরক্ষণ

বীজ বপন করার ৯০-১০০ দিনের মধ্যেই মসুর ডাল পেকে যায়। এছাড়া গাছের ৮০ ৮৫% শুঁটি বা ফল পেকে গেলেই ফসল কাটতে হয়। পরিষ্কার দিনে মসুর ফসল কেটে মাড়াই করার স্থানে আনতে হয়। এখানে রৌদ্রে শুকানোর পর গরু দ্বারা মাড়াই করা হয়।

এরপর কুলা ও চালুনি দ্বারা মসুর দানা পৃথক করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং ২-৩ দিন প্রখর রৌদ্রে ভালোভাবে শুকাতে হয়। এই শুকনো বীজ টিন, ড্রাম বা মাটির পাত্রে এমনভাবে রাখতে হয় যাতে বায়ু বা পোকামাকড় ঢুকতে না পারে।

মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পোকার আক্রমণ হয়েছে কিনা। এরূপ হলে মাঝে মাঝে রৌদ্রে শুকিয়ে পূর্বের ন্যায় আবার সংরক্ষণ করতে হবে। গুদামজাতকরণের জন্য বীজের আর্দ্রতা ১০-১২% এর মধ্যে হলে পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণের এবং অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বিনষ্টের ভয় কম।

ফলন

প্রতি হেক্টরে ১.৫-২.০ টন পর্যন্ত মসুর দানা পাওয়া যায়।

সারমর্ম: ডালকে গরিবের মাংস বলা হয়। ডাল ফসলের ভূষি গবাদিপশুর উত্তম খাবার। এ ফসলের শিকড়ে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া বায়ু থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে গুটি সৃষ্টি করে।

এজন্য ডাল ফসল চাষ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। মসুর ডাল বেলে দো- আঁশ বা এটেল দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। এ ডাল জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। উৎফলা মসুর ডালের একটি উফশী জাত। মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর মসুর বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বীজ বোনার আগে ভিটাভ্যাক্স দিয়ে শোধন করে নিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১.৫-২.০ টন মসুর দানা পাওয়া যায়।

Leave a Comment