বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করবো আজ। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র এর ৮ নং ইউনিটের ৮.২ নম্বর পাঠ। এখানে আলোচনা করা হয়েছে ডিম থেকে সন্তোষজনক হারে স্বাস্থ্যবান ও উৎপাদনশীল বাচ্চা পাওয়ার জন্য কিভাবে সঠিকভাবে ডিম নির্বাচন করতে হবে।

 

Table of Contents

বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

ডিম ফোটানো 1 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

বাচ্চা ফোটানোর জন্য সুস্থ ডিম নির্বাচন:

নিচের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ডিম নির্বাচন করলে সর্বাধিক বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে।

 

ডিম Egg 11 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

১. নিষিক্ত ডিম:

ফোটানোর জন্য ব্যবহৃত ডিম নিষিক্ত হতে হবে। আর এজন্য মুরগিকে মোরগের সংস্পর্শে থাকতে হবে ও প্রজনননে অংশ নিতে হবে।

 

২. ডিমের আকার:

ফোটানোর জন্য ডিমের আকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিমের আকার স্বাভাবিক হতে হবে। প্রজাতিভেদে ডিমের আদর্শ ওজন কেমন হয় তার ধারণা থাকতে হবে। সাধারণত মাঝারি আকারের ডিম ফোটানোর জন্য ভালো। মুরগি, হাঁস ও জাপানি কোয়েলের ডিমের আদর্শ ওজন যথাক্রমে ৫০—৫৮ গ্রাম, ৬০—৭০ গ্রাম ও ৮—১০ গ্রাম হওয়া বাঞ্ছনীয়। আদর্শ মানের চেয়ে অতিরিক্ত বড় বা ছোট ডিম ব্যবহার করলে ফোটার হার কম হবে। আবার বেশি লম্বা ও বড় আকারের ডিমে ২টি কুসুম থাকতে পারে বলে এসব ডিম থেকে কখনই বাচ্চা ফুটবে না।

ডিম Egg 14 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

৩. ডিমের আকৃতি:

মুরগির ডিম ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। অস্বাভাবিক বা বিকৃত, যেমন— লম্বাটে, গোলাকার, আঁকাবাকা ডিম ফোটানোর জন্য নিবার্চন যোগ্য নয়।

 

৪. ডিমের খোসার পরিচ্ছন্নতা:

অবশ্যই পরিষ্কার ডিম নির্বাচন করতে হবে। অপরিষ্কার ডিম জীবাণুর উৎস। অপরিষ্কার ডিম থেকে একদিকে যেমন ডিম ফোটানোর সময় অন্য ডিমে জীবাণু ছড়ায় তেমনি যন্ত্রপাতিও নোংরা হয়। এতে ডিম ফোটার হারও কমে যায়। তবে অল্প ময়লা লেগে থাকলে তা পরিষ্কার ও শুষ্ক কাপড় বা শিরিষ কাগজ দিয়ে মুছে ফোটানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ফোটানো ডিম কখনও পানি দিয়ে ধোয়া যাবেনা।

 

৫. ডিমের খোসার রং ও গুরুত্ব:

ডিমের খোসার রং পোল্টি্রর প্রজাতি ও জাতভেদে ভিন্ন হতে পারে। যে প্রজাতি বা জাতের ডিম যে রঙের সে রঙের ডিমই ব্যবহার করতে হবে। খোসা পাতলা ও অসমৃণ হলে ডিম ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। মুরগির ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের খোসার আদর্শ পুরত্ব ০.৩৩ মি.মি. হলে ভালো হয়।

 

৬. ফাটা বা ভাঙ্গা ডিম:

ফাটা বা ভাঙ্গা ডিম নির্বাচন করা যাবে না। আগেই বলা হয়েছে ডিমে অসংখ্য সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে যা বাইরে থেকে এমনিতে বোঝা যায় না। এক্ষেত্রে একটি ডিমকে অন্য আরেকটি ডিম দিয়ে আলতোভাবে আঘাত করলে সৃষ্ট শব্দ যদি নিস্তেজ হয় তাহলে বুঝতে হবে ডিম ফাটা।

 

ডিম Egg 22 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

৭. ডিমের বয়স:

ডিমের বয়স বলতে সাধারণভাবে ডিম পাড়ার দিন থেকে ফোটানোর জন্য বসানোর সময় পর্যন্ত সময়টাকেই বুঝায়। বাচ্চা ফোটানোর ডিমের জন্য বয়স গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিমের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চা ফোটার হারও কমতে থাকে। শীতকালে সবোর্চ্চ ৭—১০ দিন এবং গরমকালে ৩—৪ দিনের বেশি বয়সের ডিম ফোটানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না।

 

৮. ডিমের ভিতরের বৈশিষ্ট্য:

বাইরে থেকে স্বাভাবিকভাবে ডিমের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায় না। আলোতে পরীক্ষা করলে তা বুঝা যায়।

 

ডিম Egg 21 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

৯. ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমের পরিমাণ:

ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমের পরিমাণের অনুপাত হবে ২ঃ১। ডিমের মধ্যে কোনো রক্তের ছিটা, ঘোলাটে বায়ু ইত্যাদি থাকলে তা বাদ দিতে হবে।

 

১০. ভাসমান বায়ু থলি:

ফোটানোর ডিম সঠিকভাবে হ্যান্ডলিং করতে হবে। ফোটানোর ডিম ঝাঁকানো যাবে না। অতিরিক্ত ঝাঁকালে ভাসমান বায়ু থলি তৈরি হয় যা ডিম ফোটানোর উপযোগী নয়।

 

ডিম Egg 20 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

১১. সাধারণ তাপমাত্রায় এনে ব্যবহার:

দূরবর্তী জায়গা থেকে ডিম সংগ্রহ কর ল তা কিছু সময় ছায়ায় রেখে পরে ফোটানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে।

 

পোল্টি্র খামার 3 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

 

ডিম ফোটানোর পদ্ধতি:

ডিম থেকে বাচ্চা ফোটনোর জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণত ডিম ফোটানোর পদ্ধতি দুই ভাগে বিভক্ত। যেমন— ১. প্রাকৃতিক পদ্ধতি ২. কৃত্রিম পদ্ধতি। কৃত্রিম পদ্ধতিকে পুনরায় ভাগ করা যায়। যেমন – ক) তুষ পদ্ধতি, খ) ইনকিউবেটর পদ্ধতি। ইনকিউবেটর পদ্ধতি আবার দু’ধরনের। যেমন— ১. কোরোসিন ইনকিউবেটর পদ্ধতি, ২. বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর পদ্ধত। আসুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।

Capture 160 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি
চিত্র ৮.২.১ : বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর

 

১) প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো:

প্রাকৃতিক পদ্ধতি হচ্ছে সবার্ধিক প্রচলিত প্রাচীন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির সঙ্গে কম—বেশি সবাই পরিচিত। গ্রামাঞ্চলে অল্প পরিসরে যারা হাঁস—মুরগি পালন করেন তারা এই পদ্ধতিতে ডিম ফুটিয়ে থাকেন। দেশি মুরগি ১০—১২টি ডিম দেওয়ার পর উমে বা তায়ে বসার প্রবণতা দেখা যায়। এই অবস্থায় মুরগিকে কুঁচে মুরগি বলে। তখন মুরগিকে একটি নীরব স্থানে বাক্সে অথবা ঝুড়িতে কিছু বিছানাপত্র, যেমন— খড়, শুকনো পাতা বা তুষ রেখে তার উপর ১০—১২টি ডিম দিয়ে বসানো হয়। এ সময় মুরগির কাছাকাছি পাত্রে খাবার ও পানি রাখতে হয় যাতে চাইলেই মুরগি খেতে পারে।

ডিমে বাতাস চলাচল ও মুরগির স্বাস্থ্যের জন্য দিনে একবার ডিম থেকে উঠিয়ে দিতে হয়। এই সময় মুরগি খাবার ও পানি গ্রহণ করবে। খেয়াল রাখতে হবে মুরগি যাতে আধা ঘন্টার বেশি বাইরে না থাকে। এতে ডিমের সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকবে না। মুরগি তার নিজের ঠোঁট দিয়ে ডিমগুলো ঘুরিয়ে দেয়। এতে ডিমের সবদিকে তাপমাত্রা ঠিক থাকে। মুরগির বসার জায়গায় কোন প্যারাসাইট অথার্ৎ উকুন বা অন্য কোন রক্তচোষক আছে কি—না সেদিকে নজর রাখতে হবে। ডিম বসানোর পর কোন ডিম যদি ভেঙ্গে যায়, তাহলে সেটি দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে যাতে অন্য ডিম নোংরা না হয়।

ডিমে তা দেওয়ার সময় মুরগিকে কোনোভাবেই বিরক্ত করা যাবে না। মুরগির ঘরে যথেষ্ঠ আলো—বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বৃষ্টির দিনে যাতে পানি না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে মুরগির ডিম থেকে ২১ দিন পর এবং হাঁসের ডিম থেকে ২৮ দিন পর বাচ্চা পাওয়া যাবে। ডিম বসানোর উপযুক্ত সময় হলো রাত। রাতে ডিম বসালে ২১ দিন পর রাতে সকল বাচ্চা ফুটবে এবং বাচ্চারা সারা রাত বিশ্রাম পাবে। পরদিন সকালে বাচ্চা বাইরে বেরুরে শক্তি পাবে।

 

ডিম Egg 13 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

২) কৃত্রিম পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো:

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মুরগি যেভাবে ডিম ফোটায় সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে যা দিয়ে ডিম ফোটানো হয়, এটিকে কৃত্রিম পদ্ধতি বলে। পূর্বে বলা হয়েছে কৃত্রিম পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে— ১) তুষ পদ্ধতি ২) ইনকিউবেটর পদ্ধতি।

নিচের এগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনার করা হলো।

 

তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো:

গ্রামাঞ্চলে সাধারণত প্রাকৃতিক পদ্ধতি দেখা যায়। তবে আজকাল তুষ পদ্ধতি বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বাচ্চা ফোটানোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই অথচ অনেক ডিম ফোটানো দরকার সেসব অঞ্চলে তুষ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

এই পদ্ধতিতে হাঁস ও মুরগির ডিম ফোটানো হয়। তবে আজকাল তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম ফোটানো একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই পদ্ধতিতে দৈহিক পরিশ্রম হলেও খরচ খুব সামান্য। তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো— বাঁশের চাঁটাই দিয়ে তৈরি নলাকৃত ঝুড়ি, হারিকেন, কাপড়, বায়ুচলাচল শূন্য ও তাপ নিরোধক কক্ষ, বাচ্চা ফোটানোর বিছানা এবং থামোর্মিটার। ইনকিউবেটর পদ্ধতি: ডিম ফোটানোর আধুনিক পদ্ধতির নাম হচ্ছে ইনকিউবেটর পদ্ধতি। এটি প্রধানত দু’ধরনের যথা— ক) কেরোসিন ইনকিউবেটর— নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এই ইনকিউবেটরের মুল জ¦ালানি হচ্ছে কোরোসিন।

 

ডিম Egg 24 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানো:

বিদ্যুতের সাহায্যে এই ইনকিউবেটর চালিত হয় বলে এর নাম বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর।

 

কেরোসিন ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানো:

বিদ্যুতবিহীন এলাকাগুলোতে তুষ ইনকিউবেটরের পাশাপাশি কেরোসিন ইনকিউবেটর ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মূল জ¦ালিান যেহেতু কেরোসিন তুষ ইনকিউবেটরের তুলনায় কেরোসিন ইনকিউবেটরে খরচ একটু বেশি হয়। কেরোসিন ইনকিউবেটরে ৫০—৫০০টি ডিম ফোটানো যায়। তবে ডিম ফোটানোর সকল পদ্ধতির মূলনীতি একই। কেরোসিন ইনকিউবেটরের দাম বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরের তুলনায় কম। সাধারণত কেরোসিন ইনকিউবেটর ডিম ফোটানোর জন্য ৩৮.০—৩৯.৪ সে. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

 

ডিম Egg 25 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানোর পদ্ধতি:

ডিম ফোটানোর সর্বাধুনিক পদ্ধতি এটি। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একসাথে প্রায় এক লক্ষ ডিম ফোটানো যায়। তবে ধারণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ছোট, মাঝারি ও বড় আকৃতির ইনকিউবেটর পাওয়া যায় যা প্রস্তুতকারক কোম্পানির ওপর নির্ভর করে। বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর এমন জায়গায় বসাতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করে। ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর পূর্বে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে, সেই সাথে ইনকিউবেটর সঠিকভাবে কাজ করছে কি—না সেটাও পরীক্ষা করতে হবে।

বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরের প্রধান দুটি অংশ হচ্ছে সেটার ও হ্যাচার। সেটার হচ্ছে যেখানে ডিম বসানো হয়। এখানে নিয়মিত বিরতিতে ডিম ঘোরানো হয়। আর হ্যাচার হচ্ছে ডিম ফোটানোর শেষ তিন দিন যে ট্রেতে ডিম রাখা হয়। অনেক ইনকিউবিটরে সেটার ও হ্যাচার আলাদা নাও থাকতে পারে। সেটারে ডিম বসানোর জন্য খাঁজ/খোপ করা থাকে কিন্তু হ্যাচারে কোনো খোপ থাকে না। ডিম বসানোর সময় ডিমের মোটা অংশ যেন উপর দিকে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডিম ৪৫ কোন করে সেটিং ট্রেতে বসাতে হবে।

বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানো ব্যবস্থাপনা: সফলভাবে ডিম ফোটানোর জন্য নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ গুরুত্বসহকারে পালন করা প্রয়োজন।

 

১. তাপমাত্রা:

ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটরে ৯৯—১০০ ফারেনহাইট তাপমাত্রা রাখতে হবে। ডিম ফোটানোর জন্য সঠিক তাপমাত্রা ইনকিউবেটরের প্রস্তুতকারক কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অতিরিক্ত বা প্রয়োজনের কম তাপমাত্রা দুটোই ক্ষতিকারক। ডিমের চারিদিকে যেন সমভাবে তাপমাত্রা লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পূর্বের তিন দিন তাপমাত্রা ২—৩ ফারেনহাইট কম রাখতে হবে।

 

২. বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা:

ডিমের ভিতরে যেহেতু ভ্রƒণের জন্ম হয় ও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে, তাই সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন থাকা অপরিহার্য। ইনকিউবেটরের বায়ুতে স্বাভাবিক অক্সিজেনের পরিমাণ ২১% হওয়া বাঞ্ছণীয়। অন্যদিকে, কার্বন—ডাই—অক্সাইড (ঈঙ২)—এর মাত্রা ০.৫% বেশি হলে ডিম ফোটার হার কমে যায়। এজন্য সঠিক জায়গায় ইনকিউবেটর রাখতে হবে যাতে পযার্প্ত বাতাস চলাচল করে।

 

৩. আর্দ্রতা:

মুরগির ডিমের ক্ষেত্রে প্রথম ১৮ দিন আর্দ্রতা লাগে ৫৫—৬২% এবং শেষ তিন দিন অথার্ৎ ১৯—২১ দিন ৬৫—৭৫%। আদর্শ আপেক্ষিক আর্দ্রতার চেয়ে কম হলে ভ্রƒম্নণ ডিমের খোসার একপাশে লেগে থাকে ফলে ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে পারে না। অনেক সময় ভ্রƒণ শুকিয়ে যায়। এজন্য প্রস্তুতকারক কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

 

৪. ডিম পরীক্ষাকরণ:

সাধারণত ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর ৭—১০ দিনের মধ্যে প্রথম বার এবং ১৪—১৮ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করা হয়। এজন্য এক ধরনের যন্ত্র (ক্যান্ডেলার) ব্যবহার করা হয়। একটি অন্ধকার ঘরে ক্যান্ডেলার দ্বারা ডিম পরীক্ষা করা হয়। ডিম নিষিক্ত হলে তাতে রক্তজালিকার মতো দেখা যায়। যদি রক্তজালি ডিমের মোটা অংশের দিকে থাকে তাহলে ভ্রƒণটি পরবর্তীতে বড় হবে এবং সুস্থ বাচ্চার জন্ম হবে। যদি সরু অংশের দিকে অথবা ডিমের এক পা শ গায়ে থিতিয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে ভ্রƒণটি মারা গেছে এবং তার আর বৃদ্ধি হবে না।

এ ধরনের ডিম বাদ দিতে হবে। অনিষিক্ত ডিমে এ ধরনের কোন রক্তজালিকা থাকবে না। কাজেই সেটি বাদ দিতে হবে। ১৪—১৮ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার ক্যান্ডেলিং বা পরীক্ষা করলে জীবিত ভ্রম্নণসম্পন্ন ডিমটি সম্পূর্ণ কালো দেখাবে।

 

৫. ডিম নাড়াচাড়া করানো:

আধুনিক ডিম ফোটানোর যন্ত্র বা ইনকিউবেটরের সকল মূলনীতি তৈরি হয়েছে কঁুচে মুরগির ডিমে তা দেওয়া ও বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি থেকেই। মুরগি ঠোঁট দিয়ে ডিম উল্টে—পাল্টে দেয় যাতে ডিম সবদিকে সমান তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পায়। এই নীতি অনুসরণ করে আধুনিক ইনকিউবেটর যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে যা টারনার বা ডিম নাড়ানোর যন্ত্র নামে পরিচিত। মেশিনে সেট করা নির্দেশনা অনুযায়ী ৯০ কোনে ডিম ঘোরাতে পারে। দিন—রাত মিলে মোট ৬—৮ বার ডিম ঘোরালে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে ডিম ফোটানোর হারও বেড়ে যায়।

 

ডিম Egg 1 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

সূত্র : বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি | ইউনিট – ৮ , পাঠ – ৮.২ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

 

ডিম Egg 10 বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

 

 

Leave a Comment