তুলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ১ ম পত্রের, ৭ নং ইউনিটের, ৭.৮ নম্বর পাঠ। বর্তমানে ৪টি অঞ্চলে তুলার চাষ হচ্ছে। এ অঞ্চলগুলো হলো-যশোর, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম। যশোর ও রংপুর অঞ্চলের অধীনস্থ যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর ও রাজশাহী এলাকায সবচেয়ে বেশি তুলাহয়।
Table of Contents
তুলা চাষ পদ্ধতি
তুলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঁশ জাতীয় ফসল, বাংলাদেশে তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বস্ত্রখাতে ব্যবহৃত আঁশের ৭০—৭৫% আসে তুলা থেকে। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে বর্তামানে ৫৪ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন যার মাত্র ৩% দেশে উৎপন্ন হয়। এ চাহিদা পুরণের জন্য বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করতে হয়। তাই বাংলাদেশে তুলা উপযোগী অঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতিতে তুলা চাষ করে তুলার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা প্রয়োজন।

মাটি ও জলবায়ু :
তুলা উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। চারাগাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ২৪—৩৩ সে. তাপমাত্রা উপযোগী তুলাগাছ অতিবৃষ্টি সহ্য করতে পারে না। বার্ষিক ১০০ সে.মি. বৃষ্টি তুলার জন্য উত্তম। সবধরনের মাটিতেই তুলাগাছ জন্মে। তবে বৃষ্টি পানি জমে থাকে না এমন উঁচু জমি ভাল, দেঁাআশ ও বেলে দেঁাআশ মাটি তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ (এম) ৬—৭.৫ হলে ভাল হয়।
তুলার জমি তৈরি :
তুলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে কারণ তুলা গাছের মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে। সেজন্য জমি
৬—৮টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হবে যেন কোথায় পানি জমতে না পারে। বীজ বপনের সময় রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই বীজ বপন করা যায়। রবি মৌসুম : মধ্য শ্রাবণ—ভাদ্র মাস, খরিফ মৌসুম : জৈষ্ঠ্য—আষাঢ় মাস।
তুলার বীজের হার :
শতকরা ৮০ ভাগ বা তার অধিক অংকুরোদগম ক্ষমতা সম্পন্ন ৮—১০ কেজি/হেক্টর বীজ প্রয়োজন, বীজবাহিত রোগ দমনের জন্য ভিটাডেক্স—২০০/পেনকোজে দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। [২—৩ গ্রাম/কেজি বীজ] বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ তুলাবীজ থেকে অতিরিক্ত তুলা (ফাজ) সরানোর কয়েকটি পদ্ধতি আছে।
১। ফাজ সরানোর শারীরিক পদ্ধতি :
শুকনো গোবর অথবা ছাই দিয়ে ঘষে বীজ থেকে আঁশগুলো সিয়ে ফেলা হয়।
২। ফাজ সরানোর যান্ত্রিক পদ্ধতি :
বিশেষ একধরণের যন্তের সাহায্যে তুলাবীজ থেকে আঁশ বিচ্ছিন্ন করা হয়—
৩। ফাজ সরানোর রাসায়নিক পদ্ধতি :
এই পদ্ধতিতে ঐঈষ, ঐ২ঝঙ৪ ব্যবহার করে তুলাবীজ আঁশ মুক্ত করা হয়। বীজ বপন পদ্ধতির তুলাবীজ সারিতে বপন করা হয়। সারি থেকে সারি দূরত্ব : ৯০—১০০ সে.মি. গাছ থেকে গাছ দূরত্ব : ৪৫—৫০ সে.মি. নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্তে ১—২ সে.মি. গভীর ৩—৪টি বীজ বপন করা হয়।
তুলার জাত :
তুলার বিভিন্ন জাত উদ্ভাবিত হয়ে যেমন :
- সিবি—১
- সিবি—২
- সিবি—৩
- সিবি—৫
- সিবি—৯
- সিবি—১০
- সিবি—১২
- সিবি—১৩
- সিবি—১৪
- শুভ্র
- হীরা হাইব্রিড
- রূপালী—১
- ডিএম—২, ৩
- পাহাড়ি তুলা—১
- পাহাড়ি তুলা—২
এই জাতগুলোর মধ্যে ৫টি জাতের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচের সারণীতে দেওয়া হল।
তুলা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি :
জমিতে শেষ চাষ দেয়ার পর এক—চতুর্থাংশ ইউরিয়া অর্ধেক এমপি সার এবং অন্যন্য সারসমূহ সম্পূর্ণ অংশই জমিতে প্রয়োগ করতে হবে; বাকী ইউরিয়া ও এমপি সার সমান তিনভাগে ভাগ করে তুলাগাছের বয়স ২০—২৫ দিন হলে প্রথম বার, ৪০—৫০ দিন হলে দ্বিতীয় বার এবং ৬০—৭০ দিন হলে তৃতীয় বার পাশ^র্ প্রয়োগ করতে হবে।
তুলা গাছের আন্তঃপরিচর্যা :
১। চারা পাতলাকরণ :
চারা গজানোর ২০ দিন পর একটি সুস্থ ও সবল চারা রেখে অবশিষ্ট চারাগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে।
২। আগাছা দমন :
প্রয়োজন অনুযায়ী ২—৩ বার আগাছা দমন করতে হবে। এসময় আগাছা দমনের সাথে সাথে গাছের গোড়া ও সারির মাঝের মাটির আলগা করে দিতে হবে।
৩। সেচ ও নিকাশ :
তুলা চাষের জন্য প্রায় ৭০—৯০ সেমি পানি প্রয়োজন। তাই মাটিতে রস না থাকলে সাথে সাথে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। পানি যেন না
জমতে পারে সেজন্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তুলার পোকামাকড় ও বালাই ব্যবস্থাপনা:
তুলা ফসলে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। নিচের তালিকায় কিছু অনিষ্টকারী পোকার নাম ও দমন ব্যবস্থা দেয়া হল।
তুলার রোগ :
প্রধান রোগ হলে অ্যানথ্রাকনোজ, ড্যাম্পিং অফ বা ঢলে পড়া রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমনের জন্য ভিটাভেক্স ২০০, কিউপ্রভিট/ ডাইমেন এম ৪৫, টিল্ট ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
তুলা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
তুলা সংগ্রহ:
অধিক ফলন ও ভালমানের আঁশ পেতে হলে তুলা সংগ্রহের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
তুলা সংগ্রহের সময় রৌদ্র উজ¦ল দিন তুলা সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত রবি মৌসুমে তুলা কাত্বির্ক—অগ্রাহায়ণ মাসে এবং খরিফ মৌসুমের তুলা ফাল্গুন—চৈত্র মাসে সংগ্রহ করা হয়।
১। শুধুমাত্র পরিপক্ক বল থেকে তুলা সংগ্রহ করতে হবে বল ফেটে তুলা বের হলেই বল পরিপক্ক হয়েছে বুঝতে হবে। বল ফেটে তুলা বের হলেই বল পরিপক্ক হয়েছে বুঝতে হবে।
২। সাধারণ বীজ বপনের ৫—৬ মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। ফুল ফোটার ৫০—১০০ দিনের মধ্যে বল পরিপক্ক হয়।
৩। বল পরিপক্ক হলে দেরি না করে সংগ্রহ করে ফেলতে হবে তা না হলে তুলায় ময়লা লেগে তুলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪। তিনবার তুলা সংগ্রহ করতে হয়। যখন ৩০—৪০% বল ফেটে যায় তখনই প্রথমবারের মত তুলা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ১৫—২০ দিন পর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তিতে বাকী সব তুলা সংগ্রহ করতে হবে।
৫। বল সংগ্রহের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ধূলাবালি, ময়লা বা শুকনা পাতা বলের সাথে লেগে না থাকে।
৬। রোগ বলা দ্বারা আক্রান্ত বল এবং ভাল তুলা আলাদা ভাবে উঠাতে হবে। তুলা ৩—৪ বার রোদে শুকিয়ে গুদাম জাত করতে হবে।
৭। খারাপ ও নষ্ট বীজতুলা আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
৮। তবে ফাটা বল প্রায় এক সপ্তাহ গাছে রেখে শুকাতে পারলে অঁশ এর গুণগতমান আরও উন্নত হয়।
তুলার জিনিং ও গাট বাধা :
তুলার বল থেকে যে তুলা পাওয়া যয় তাকে বীজতুলা বলে। এখানে বীজ ও তুলা একসাথে থাকে। জিনিং শব্দের অর্থ হলো বীজ তুলা থেকে বীজ আলাদা করা। জিনিং করার পর যে তুলা পাওয়া যায় (বাণিজ্যিক তুলা) তাকে লিন্ট (খরহঃ) বলে। সাধারণত মেশিনের মাধ্যমে জিনিং করা হয়।
মেশিনগুলো হল রোলার জিনিং করা হয়। মেশিনগুলো হল জিন এবং ‘স’ জিন। বীজতুলা থেকে আঁশ হাড়িয়ে নেয়ার পরও বীজের গায়ে যে ছোট ছোট আঁশ লেগে থাকে তাকে ফাজ বলা হয়। জিনিং এর পর যে বীজ পাওয়া যায় তাকে তুল বীজ বলে। শুষ্ক তুলার ৮% বা তার কম আর্দ্রতা থাকে। জিনিং করার পর প্রাপ্ত তুলাকে বেল প্রেসের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে বেল বা গাঠ বাঁধা হয়।
তুলাপ্রক্রিয়াজাতকরণে জিনিং আউট টার্ণ এবং কাউন্ট সংখ্যা জিনিং আউট টার্ণ :
জিনিং আউনট টার্ণ বলতে কোন তুলার জাতের বীজতুলার আঁশ ও বীজের অনুপাতকে বোঝায়, অন্যভাবে বলা যায়। বীজতুলায় শতকরা কতভাগ আঁশ বের করা যায় তাকেই জিনিং আউট টার্ণ বলে। বা জিওটি (এঙঞ)। একটি তুলারজাতের এঙঞ ৩৫% এর অর্থ হল ঐ জাতের ১০০০ কেজি বীজতুলা জিনিং করলে ৩৫ কেজি আঁশ বা লিণ্ট পাওয়া যায়।
তুলার কাউন্ট সংখ্যা :
১ পাউন্ড তুলার নমুনা থেকে তৈরি করা ৮৪০ গজ ( বা ৭৬৮ মিটার) দৈর্ঘে্যর সুতা দিয়ে যে কয়টি মোড়া তৈরি করা যায় তার সংখ্যাকে ঐ তুলার কাউন্ট সংখ্যা বলা হয়। বাজারে একে ৪০, ৬০, ৮০, ১০০ এবং ২০০ পর্যন্ত কাউন্টের সুতা হিসাবে অভিহীত করা হয়। তুলার কাউন্ট সংখ্যা যত বেশি হবে তার থেকে তৈরি কাপড় তত বেশি মসৃণ, সিল্কের মত ও দামী হবে। মসলিন কাপড়ের সুতা এত মসৃন ও সুষ্ট ছিল যে মাত্র ৫০০ গ্রাম তুলা থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ সুতা তৈরি করা যেত।
তুলা বীজ সংরক্ষণ : তুলা গাছের মাঝের ও নিচের দিকের পরিপক্ক বল থেকে যে তুলাবীজ সংগ্রহ করা হয় তার গুণগত মান সবচেয়ে ভাল, বীজ থেকে আঁশ হাড়িয়ে নেওয়ার পর ২—৩ দিন এই বীজ ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে যখন বীজের আর্দ্রতা ৭—৮% হবে তখন শুকানো বীজগুলোর ছায়ায় ঠান্ড করে বায়ুরোধক কোন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। তুলার ব্যবহার তুলা একটি অতি প্রয়োজনীয় আঁশ জাতীয় ফসল। নীচে এর কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হল।
১। তুলা সুতা ও বস্ত্র তৈরির ব্যবহৃত হয়
২। তুলা বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়।
৩। তুলা বীজের তল লুব্রিকেন্ট, সাবানও পেইন্ট শিল্পে ব্যবহাত হয়।
৪। তুলা বীজের তেল ভোজ্য তেল হিসাবেও ব্যহৃত হয়।
৫। বীজ থেকে তেল বের করার পর যে খৈল পাওয়া যায় তা পশুখাদ্য ও জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
৬। শুকনা গাছ জ¦ালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়
৭। তুলা দিয়ে লেপ, বালিশ, তোষক তৈরি করা হয়।
তুলার ক্ষতিকর পোকা ও তার দমন ব্যবস্থাপনা:
১। তুলার জ্যাসিড পোকা :
ক্ষতির লক্ষণ : চারা গজানোর ২—৩ সপ্তাহ পর থেকেই এদের আক্রমণ শুরু হয়। নিম্ফ ও পূর্ণবয়ষ্ক উভয় পোকাই পাতার রস শোষণ করে যায় এবং ফলে পাতা হলদে এবং পরে লালচে হয়ে যায়।
তুলার জ্যাসিড পোকার প্রতিকার :
সাকসেস ১.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে।
২। তুলার জাব পোকা:
ক্ষতির লক্ষণ : নিম্ফ ও পূর্ণবয়ষ্ক উভয় পোকাই গাছের কান্ড ও পাতা থেকে রস চুষে খায়। ফলে পাতা কঁুকড়ে যায় এবং ডগায় আক্রমণ করলে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
তুলার জাব পোকা দমন ব্যবস্থা:
ক) বীজ বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজ ২ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
খ) জমিতে পানি যেন না জমে সেজন্য জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
গ) আক্রান্ত জমিতে কুপ্রাভিট, ডায়থেন এম ৪৫ ইত্যাদি ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ক) পোকা প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে।
খ) ভোর বেলা জমিতে ছাই ছিটিয়ে পোকা দমন করা যায়।
৩। তুলার বোল ওয়ার্ম:
লক্ষণ : ৫—৬ সপ্তাহ বয়সী তুলাগাছের এই পোকার লার্ভা গাছের ডগা, কুড়ি, ফুল বা বোলছিদ্র করে দেয়। এতে গাছের ডগা ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়। ফুল, কুড়ি বা কচি বোল মাটিতে ঝরে পড়ে ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
বেল ওয়ার্ম দমন ব্যবস্থা:
ক) জমি গভীর চাষ দিয়ে রোদে শুকাতে হবে। এতে পোকা, লার্ভা বা শুককীট মরে যায় ও পাখিতে খেয়ে ফেলে
খ) জমির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে
গ) ঝরে পড়া কুড়ি, ফুল ও বোল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ঘ) আলোর ফাঁদ দিয়ে বোল ওয়ার্ম পোকার মথ ধরতে হবে।
৪। তুলার সাদা মাছি
ক্ষতির ধরণ : সাদা মাছি পাতার রস শোষণ করে, এরা পাতার উপর এক ধরনর মধুকণা নি:সরণ করে, ফলে সেখানে সুটি মোল্ড ছত্রাক জন্মায়। এর আঠালো পদার্থ তুলার লিন্টের সাথে লেগে লিন্টের গুণগত মান নষ্ট হয়।
তুলার সাদা মাছির প্রতিকার :
ক্লোরোপাইরিফস ২০ তরল ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৫। তুলার চারা গাছের রোগ রোগের লক্ষণ :
ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়। গজানোর পূর্বেই বীজ পঁচে যায়। অংকুরিত চারার ভূমি সংলগ্ন স্থানে পচে যায় গাছের শিকড় পচে যায় এবং অবশেষে চারার গাছ মারা যায়।
তুলার চারা গাছের রোগ দমন ব্যবস্থা:
ক) ডিমের গাদা ও লার্ভা/ক্রীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে
খ) পাখি যেন পোকা খেতে পারে তাই জমির পাশে ডাল পঁুতে দিতে হবে।
গ) কার্বোসালফান ২০ তরল ২ মি.লি. ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৬। তুলার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ:
লক্ষণ : ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। চারাগাছের বীজপত্র ও পাতায় ছোট ছোট লালচে দাগ পড়ে। বয়ষ্ক গাছের কান্ডে লম্বা বাদামি দাগ পড়ে ও বাকল ফেটে যায়। কচি বোলের উপর পানি ভেজা লালচে কিনারাযুক্ত বসে যাওয়া দাগ দেখা যায়।
তুলার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমন ব্যবস্থা:
ক) আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
খ) ভিটাভেক্স দিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
গ) বোল গঠনের পর ১% বোর্দোমিক্সার ১—২ বার প্রয়োগ করতে হবে।
৭। তুলার ফিউজেরিয়াম উইল্ট বা ঢলে পড়া রোগ:
লক্ষণ : চারাগাছের পাতা প্রথমে হলুদ ও পরে বাদামি হয়ে যায় এবং চারা গাছ দ্রুত ঢলে পড়ে ও মারা যায়। আক্রান্ত অংশ কাটলে ভিতরে কালো রিং দেখতে পাওয়া যায়।
তুলার ফিউজেরিয়াম উইল্ট বা ঢলে পড়া রোগ দমণ ব্যবস্থা:
ক) বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হয়ে
খ) কু প্রাভিট—৫০, ডাইমন এম ৪৫, কপার অক্সিক্লোরাইড প্রয়োগ করতে হবে।
৮। তুলার পাতায় দাগ পড়া রোগ:
লক্ষণ ছত্রাকের দ্বারা এ রোগ হয়। পাতায় গোলাকার দাগ দেখা যা এবং আক্রান্ত স্থান খসে পড়ে।
তুলার পাতায় দাগ পড়া রোগ দমন ব্যবস্থা :
ক) আক্রান্ত পাতা ছিেঁ ড় পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খ) রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে অথবা বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
৯। তুলার ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট :
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়।
লক্ষণ :
প্রথম লক্ষণ দেখা যায় চারা গাছের বীজপত্রে। বীজপতের্র নিজের দিকে গোল গোল পানি ভেজা দাগ যায় এবং বীজপত্র ঝরে পড়ে। বয়স্ক গাছের পাতায়ও পানিভেজা দাগ দেখা যায়। বোল আক্রান্ত হলে তাতেও কালো বা বাদামী পানি ভেজা দাগ সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত বোল ঝরে পড়ে।
তুলার ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট দমন ব্যবস্থা :
ক) ফসল কাটার পর বাকী অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খ) সালফিউরিক এসিড দিয়ে বীজ ডিলিলেড করতে হবে।
১০। বোল পঁচা রোগ :
লক্ষণ :
বিভিন্ন ছত্রাক এ পোকার জন্য দায়ী এ রোগ তুলার রোল আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত বোল পুড়িয়ে কালো হয়ে যায় এবং রোল ফাটতে পারে না। কোন কোন ক্ষেত্রে বোল ফাটলেও তুলা কালো হয়ে যায়।
বোল পঁচা রোগ প্রতিকার :
ক) বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
খ) আক্রান্ত জমিতে ২.৫ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
সূত্র:
- তুলা চাষ পদ্ধতি , পাঠ- ৭.৮ , ইউনিট – ৭