দুগ্ধবতী গাভীর পরিচর্যা

দুগ্ধবতী গাভীর পরিচর্যা ও খাদ্য – এই পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৪ , পাঠ – ১৪.৩। দুগ্ধবতী গাভীর পরিচর্যা গাভী পরিচর্যার লক্ষ্য হলো গাভী যাতে সার্বক্ষনিক স্বাস্থ্যবর্তী ও কর্মক্ষম থাকে সে ব্যবস্থা করা। গাভী পরিচর্যার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে। যথা— স্বাস্থ্য ও হাববাবগত পরিচর্যা, সাধারণ বদঅভ্যাস বা দোষত্রুটি নিরাময়গত পরিচর্যা, প্রজনন ও প্রসবগত পরিচর্যা এবং দোহনকালের পরিচর্যা ইত্যাদি।

দুগ্ধবতী গাভীর পরিচর্যা

 

দুগ্ধবতী গাভীর পরিচর্যা

 

১। স্বাস্থ্য ও হাবভাবগত পরিচর্যা:

স্বাস্থ্য ও হাবভাবগত পরিচর্যা বলতে সাধারণ স্বাস্থো্যর উপর শুভ প্রতিক্রিয়া করে এমন ধরনের কর্মকান্ড সম্পাদনকে বুঝায়। যেমন— গাভীর শরীর আচড়ানো  ব্যায়াম, খুর কাটা, শিং সাজানো ও শিংছেদন  ইত্যাদি। এসব পরিচর্যায় গাভীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং উৎপাদনে শুভ প্রভাব পড়ে।

দুগ্ধবতী গাভীর পরিচর্যা ও খাদ্য , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৪ , পাঠ – ১৪.৩

 

২। সাধারণ বদঅভ্যাস বা দোষত্রুটি নিরাময়:

কোনো গাভীর মধ্যে দুধ দোহনের সময় দোহনকারিকে লাথি মারা, নিজের বাট চোষা বা ঘরের বেড়া ভাঙ্গা প্রভৃতি বদঅভ্যাস দেখা যায়। একবার এসব বদঅভ্যাস কোনো গাভীকে পেয়ে বসলে তা ঠিক করা বেশ কঠিন। তবে উপযযক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে কিছু দোষত্রুটি নিরাময় করা সম্ভব। যেমন— দুধ দোহনের সময় লাথি মারা সাধারণত প্রথামবার বাচ্চা দেয়া বা নবীন গাভীর বেলায় দেখা যায়। এক্ষেত্রে গাভীর লাথি মারার প্রকৃত কারণ জেনে সে অনুযায়ী তা প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ না জেনে আন্দাজের ওপর প্রতিকারের ব্যাবস্থা নিলে গাভীর মধ্যে এটি সব সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে।

তখন সে গাভীর দুধ দোহনের জন্য শিকল বা রশি দিয়ে তা দুপা বাধা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। এ রকম আরও যে সব বদঅভ্যাসের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো নিরাময়ের কিছু পস্থা উদ্ভাবন করা যেতে পারে। যেমন— বাট চোষনের বেলায় শিকল বা ষাঁড়ের নাকে পরানোর আংটি গাভীর নাকে পরিয়ে দেয়া যায় অথবা কাঁটাযুক্ত ঠোনা বা ঠুলি চাপিয়ে দিলে গাভী বাট চুষতে পারে না। বেড়া ভাঙ্গার অভ্যাস নিরাময় কঠিন, তবে আক্রমণাত্মক দোষযুক্ত হলে গাভীর নাকে শক্ত হাতে ঘুষি মারা যেতে পারে।

 

৩। প্রজনন ও প্রসবগত পরিচর্যা:

গাভীর প্রজনন ও প্রবসগত পরিচর্যা করতে হলে এদের শারীরতন্ত্রের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। গাভীর গর্ভধারণকাল ও ঋতুচক্রের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ২৮১৫ ও ২১৩ দিন। বাচ্চা প্রসবের ৭৫—১১০ দিনের মধ্যে গাভীকে পাল দেয়ানো উচিত। প্রসব ও পরবর্তী গর্ভধারণের মধ্যে ৬০ দিনের বেশি ছাড় দেয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা এ সময়ের মধ্যে জরায়ু স্বাভাবিক হয়ে থায়। এসব বিষয় বিবেচনা করে গাভীর পরিচর্যা করতে হবে। এতে গাভীর দুধ উৎপাদন সঠিক হবে। কোনো গাভীকে এববার করে গর্ভধারণ করাতে যে সংখ্যক পাল দিতে হয় সে সংখ্যা দিয়ে তার প্রজনন দক্ষতা যাচাই করা হয়।

দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা 3 দুগ্ধবতী গাভীর পরিচর্যা

গর্ভধারন ও প্রসবকালে গাভীকে সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচযার্ করতে হয়। এ সময় অবহেলা ও অবজ্ঞা করলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া গাভীর প্রজনন ও গর্ভধারণ ক্ষমতা ও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রসবকাল যতই অগ্রসর হয় ততই গাভীর বহিঃযৌনাঙ্গের চামড়া মসৃণ হয়ে ওঠে। লেজের দুপাশের লিগামেন্ট অবসন্ন হয়ে পড়ে ও ওলান ফুলে ওঠে।

গাভীর মধ্যে অস্থির ভাব দেখা যায়। এ সময় গাভীকে নিকটস্থ পশু হাসপাতালে নিয়ে ভেটেরিনারি সার্জনের সাহায্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয। গাভীকে রেচক খাবার যেমন— ভুষি, ও খৈল খেতে দিতে হবে। প্রসবের প্রথম লক্ষণ দেখা দিলেই গাভীকে শান্ত রেখে পর্যবেক্ষণ করা উচিত যাতে প্রাকৃতিকভাবে এবস কাজটি নির্বিঘ্নে হতে পারে।

যদি ২/৩ ঘন্টা পর প্রসব প্রক্রিয়া আর অগ্রসর না হয় তাহলে নিকটস্থ ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। এ সসময জরায়ুতে বাছুরের অবস্থান নিরীক্ষণ করা দরকার। যদি সামনের পা দুটো ও মাথার অবস্থান সামনের দিকে না হয় তাহলে ভেটেরিনারি সার্জনের সহায়তা নেয়া অপরিহার্য। বাছুর ভূমিষ্ট হলে ২/৩ দিন গাভীর সাথে ছেড়ে দেয়াই উত্তম।

প্রতিটি পর্যায়ে লক্ষ্যে রাখতে হবে যাতে বাছুর ও গাভী কোনো দুর্বিপাকে না পড়ে। বাছুর প্রসবের পর গাভীকে খাবার ও ঈষদুষ্ণ পরিস্কার পানি পরিবেশন করতে হবে। এরপর ২/৩ দিন রেচক খাবার পরিবেশন বাঞ্জনীয়। গাভীর গর্ভফুল না পড়া পর্যন্ত সযত্ন দৃষ্টি রাখতে হবে। বাছুরের নাভী নির্জীবাণু পন্থায় কাটা প্রয়োজন। বাচ্চা প্রসরের পর গাভীর ওজন কমে যায়। বেশি খাবার পরিবেশন করে ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তা পুষিয়ে দিতে হবে।

 

 

৪। দুগ্ধ দোহনকালের পরিচর্যা:

দুগ্ধ দোহন নিজেই একটি অতিসংবেদনশীল প্রক্রিয়া। দোহনের মূল লক্ষ্য হলো এমনভাবে দোহন করতে হবে যাতে ওলান থেকে সম্পূর্ণ দুধ পটনে বের করে আনা যায়। ওলান থেকে দুধ ছেড়ে দেয়া (ষবঃ ফড়হি) একটি প্রতিবর্ত ক্রিয়া যা সম্পূর্ণ দোহনে অত্যাবশ্যক। সুতরাং সকল প্রকার ভিতিপ্রদ ও নিযার্তনমূলক পদক্ষেপ থেকে গাভীকে মুক্ত রাখতে হবে। দুধ দোহনের সময় দুটো অত্যাবশ্যক কাজ সম্পদান করতে হবে, যথা— ১. অযথা গাভীকে উত্তেজিত করা থেকে বিরত থাকা এবং ২. দ্রুততার সাথে দোহনকাজ শেষ করা। দুধ দোহনকালে গাভীকে সম্পূর্ণ শান্ত ও সুস্থির রাখতে হবে।

এ সময় মশামাছি উৎপাত করলে গাভীর দোহন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। গাভী পরিচর্যার আর একটি লক্ষন হচ্ছে গাভীকে পোকামাকড় ও মশামাছি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা। তাছাড়া গাভীর পেটে যাতে কৃমির ডিম প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য খাদ্য পরিবেশনে সদাসতর্ক থাকতে হবে।

দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্যের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী। আমাদের এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল থাকায় এখানে আর উল্লেখ করা হয়নি, এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুন গাভীর খাদ্য তৈরি ও ব্যবস্থাপনা

 

Leave a Comment