আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-গাভীর দুধ দোহন ও দুধ সংরক্ষণ
Table of Contents
গাভীর দুধ দোহন ও দুধ সংরক্ষণ
গাভীর দুধ দোহন
সঠিকভাবে দুধ দোহন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি বিষয়। দুধ দোহন পদ্ধতি জানা না থাকলে গাভীর ওলানে দুধ থাকা সত্ত্বেও পূর্ণ দুধ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। দুধ দোহনের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থা অবলম্বন না করলে দুধে রোগ জীবাণু সংক্রামিত হতে পারে। এতে দুধ নষ্ট হয়ে গাভীর ওলনে প্রদাহ রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
দুধ দোহন পদ্ধতি :
সাধারণত দুই পদ্ধতিতে দুধ দোহন করা হয়।
১। সনাতন পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে গাভীর ওলান থেকে হাত দিয়ে টেনে দুধ সংগ্রহ করা হয়।
২। আধুনিক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে ওলান থেকে দুধ বের করে আনা হয়। অধিক উৎপাদনশীল গরুর দুধ হাত দিয়ে দোহন করা কষ্টকর। অথচ মেশিনের সাহায্যে খুব অল্প সময়ে অনেকগুলো গাভীর দুধ দোহন করা যায়।
গাভীর দুধ দোহনের প্রস্তুতি পর্ব নিয়ে দেওয়া হলো
১। দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর শরীরের পশ্চাৎভাগ, ওলান, বাঁট, লেজ ভালো করে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২। দুধ দোহনকারীর হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৩। হাতের নখ এবং আঙুল পরিষ্কার হতে হবে।
৪। দুধ দোহনের পাত্র বালতি গরম পানি দ্বারা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে। দুধ দোহনের জন্য স্টেইনলেস স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র ব্যবহার করলে ভালো হा।
৫। দোহনের স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৬। দুধ দোহনের পূর্বে গাভীকে কিছু দানাদার খাদা দেওয়া যেতে পারে। গাভীকে সঠিকভাবে রাতে হবে।
দুধ দোহনের সময় করণীয় বিষয়
১। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে জায়গায় পাশে, নির্দিষ্ট লোক দিয়ে দুধ দোহাতে হবে। কেননা সময় স্থান, কাল, দোহানকারী ভেসে দুধের উৎপাদন কম-বেশি হতে পারে।
২। বাছুরকে গাভীর কাছে ছেড়ে দিতে হবে। যাতে বাছুর গাভীর দুধের বাঁট থেকে দুধ চুষতে থাকে। এতে ওলানে দুধ নামবে।
৩। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বাহুর সরিয়ে নিয়ে গাভীর মাথার কাছে বাঁধতে হবে।
৪। দুধ দোহনের পূর্বে ওলানের সামনে পিছনে একটু ঘষা দিলে গাভী দুধ দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়।
৫। গাভীর দুধের বাঁট বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী দিয়ে চাপ দিয়ে টেনে দুধ নামাতে হয়। প্রতিটি বাট থেকে দুধ দোহাতে হবে। দুধ আসা কমে না যাওয়া পর্যন্ত দুধ দোহাতে হবে। দোহন শেষে বাছুরকে বাঁট চুষতে দিতে হবে। যাতে সব মুখ বেরিয়ে আসে।।
৬। বাট টানার সুবিধার্থে হাতে সামান্য ভোজ্য তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭. সুখ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দোহন শেষ করতে হবে।
৮। দুধ দোহনের সময় কুকুর বা অন্য কেউ গাভীকে যেন বিরক্ত বা উত্তেজিত না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
দুধ সংরক্ষণ
দুধ একটি অতি সংবেদনশীল দাদা। সাধারণত দোহনের অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবহার বা প্রজিনাজাত না করলে দুধ নষ্ট হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত দুধকে পচনমুক্ত রেখে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার উপযোগী রাখার প্রক্রিয়াকে দুধ সংরক্ষণ বলা হয়।
দুখের রাসায়নিক গঠনের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে দুধ সংরক্ষণ ব্যবস্থা খুব সহজ নয়। যেমন, ডিপফ্রিজে দুখ জামালে জীবাণুর বংশ বৃদ্ধি না হলেও দুধের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। ফলে দুধের মান কিছুটা কমে যায়। আবার মুখ ৪ ঘণ্টা পর পর ২০ মিনিট করে ফুটালে জীবাণুমুক্ত থাকে।
কিন্তু এতে পুষ্টিমান কিছুটা কমে যায়। উচ্চতাপ প্রক্রিয়ায় কিছু পরিমাণ ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। বড় বড় খামারে বা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় পাণ্ডুরিকরণের মাধ্যমে জীবাণু বিনষ্ট করে দুধ সংরক্ষণ করা হয়। কাঁচা দুধ অপেক্ষা পাস্তুরিকৃত দুধ বেশি সময় সংরক্ষণ করা যায়। হিম শীতল ট্যাংকে বেশ কয়েক ঘন্টা মুখ সংরক্ষণ করা যায়।
গুঁড়া দুধ তৈরি করে দুধ অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। বর্তমানে টেট্রা প্যাক পদ্ধতিতে প্রায় এক মাস দুধ সংরক্ষণ করা যায়। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাদ্য তৈরি করেও সংরক্ষণ কাল বাড়ানো যায়। দুধে ০.৫% হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশিয়ে দুধ সংরক্ষণের মেয়াদ বাড়ানো যায়। দুধ ভালো করে ফুটালে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নষ্ট হয়ে যায়। দুধ ফুটিয়ে ৭-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো রাখা যায়।। অতি সম্প্রতি ল্যাকটো পাবক্সিজেজ নামক এক প্রকার রাসায়নিক প্রব্যের সাহায্যে সংরক্ষণ পদ্ধতি চালু হয়েছে।
সারমর্ম
গাভীর দুধ দোহন একটি অত্যন্ত ফত্বপূর্ণ কারিগরি বিষয়। এ সঠিক পদ্ধতিতে দুধ দোহন করা না হলে দুধের পরিমাণ ও গুণগত মান কমে যায়। এ পূর্ণভাবে দোহন না করলে গাভীর ওলান প্রদাহ রোগ হতে পারে। দুধ সাধারণত হাতে বা মেশিনের সাহায্যে দোহানো হয়। দুধ সংরক্ষণ সাধারণত ফুটিয়ে এবং পাণ্ডুরাইজেশন পদ্ধতিতে করা হয়। টেট্রাপক পাউডার করেও মুখ করা যায়। ০.৫০% হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মিশিয়ে দুধের সংরক্ষণ সময় বাড়ানো যায়।