নাটোরে পদ্মার চরে বাহারী ফসলের মেলা

নাটোর, ৯ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): জেলার লালপুরে পদ্মার চরে ফসলের এক বাহারী মেলা শুরু হয়েছে। এখানকার কৃষকরা বেদনার বালুচরকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। পদ্মার চর এখন একটি রঙিন গ্যালারি, যেখানে নানা ধরনের শস্যের চাষ হচ্ছে। সবুজের মধ্যে শোভিত ধনিয়া, পেঁয়াজ, হলুদ সূর্যমুখী ও বেগুনী শিমের ফুল, আর মৌমাছির গুঞ্জন পরিবেশটিকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন—বিলমাড়িয়া, রসুলপুর, চরজাজিরা এবং আরাজীবাকনাইসহ ১৮টি চরজুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে। এখানে প্রায় তিন হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী শস্য চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ জমিতে আবাদ হচ্ছে আখ (১,৫৬৩ হেক্টর), গম (৮৪১ হেক্টর), মসুর (৪৮২ হেক্টর), চিনাবাদাম (৪৭৮ হেক্টর) এবং সবজি (১২১ হেক্টর)। এছাড়া, ফলবাগানও রয়েছে ১২২ হেক্টরে, যেখানে আম, কুল, পেয়ারা, মাল্টা এবং লেবু উৎপাদিত হচ্ছে। পদ্মার চরেই বর্তমানে চিয়া সীডের চাষ হচ্ছে, যা উচ্চ মূল্যের কারণে দ্রুতই এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রবি মৌসুমে চরের জমি সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়, তবে খরিপ মৌসুমে এই জমির পরিমাণ কমে যায়। খরিপ-১ মৌসুমে আবাদি জমি ছিল ২,৯৪৬ হেক্টর এবং খরিপ-২ মৌসুমে এক হাজার ৭১৫ হেক্টর।

কৃষক মুনতাজ আলী জানান, উর্বর পদ্মার চরে চাষ করা সহজ হলেও সেচ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। তিনি আশা করছেন, বিএডিসি এখানে সেচ স্ক্রীম চালু করলে তারা উপকৃত হবেন। আর কৃষক মুস্তাক আলী জানিয়েছেন, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন এবং আশাবাদী যে, আবহাওয়া ভালো থাকলে তার ফলন ভালো হবে।

তবে পেঁয়াজ চাষী রাউফ মালিথা বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় এবার লাভ কম হবে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সূর্যমুখী চাষ ব্যাপকভাবে হচ্ছে। বর্তমানে, পদ্মার চর বৈচিত্র্যময় শস্য উৎপাদনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। এসব ফসলের উদ্বৃত্ত রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।

বিএডিসি (সেচ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে প্রচলিত সেচ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে পানাসী-২ প্রকল্পের আওতায় সোলার সেচ প্রকল্প চালু হলে পদ্মার চরে তা কার্যকর হবে।