পরিবেশ দূষণের ধারণা ও প্রকারভেদ

পরিবেশ দূষণের ধারণা ও প্রকারভেদ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশ” বিভাগের ২ নং ইউনিটের ২.২ নং পাঠ। সাধারণ কথায় বলতে গেলে প্রাকৃতিক পরিবেশে যে উপাদান বিদ্যমান নেই তার উপস্থিতি অথবা কোনো উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি যা মানুষ, উদ্ভিদ বা যে কোনো প্রাণীকূলের জন্য ক্ষতিকর তাকেই পরিবেশ দূষণ বলে। অন্য কথায় রাসায়নিক, ভৌতিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের যে কোনো পরিবর্তনের নামই হলো দুষণ। আরও সহজভাবে বলতে গেলে পরিবেশে মানুষ, উদ্ভিদ বা প্রাণীকূলের জীবন ধারণ বা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ক্ষতিকর যে কোনো বস্তুর আধিক্য বা অনুপ্রবেশকে পরিবেশ দুষণ বলে।

 

পরিবেশ দূষণের ধারণা ও প্রকারভেদ

পরিবেশ দূষণের ধারণা ও প্রকারভেদ

 

দূষণের সংজ্ঞা

উপাদান এবং প্রাচুর্য পরিবর্তন দ্বারা সংঘটিত “। (“Environmental pollution is the unfavorable alteration of our surroundings, wholly or largely as a by-product of man’s actions, through direct or indirect effects of changes of energy patterns, radiation levels, chemical and :ysical constitution and abundance of organisms.”)

পরিবেশ দূষণের ধারণা ও প্রকারভেদ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , ইউনিট ২ , পাঠ-২.১

 

বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ই.পি. ওডাম (১৯৭১) পরিবেশ দূষণের যে সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন তা এরূপ,

“দূষণ হচ্ছে আমাদের বায়ু, মাটি ও পানির ভৌত, রাসায়নিক বা জৈবিক বৈশিষ্ট্যের অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন যা মানব জীবন বা কাঙ্খিত প্রজাতি,

আমাদের শিল্পজাত, জীবন এবং সাংস্কৃতিক অবয়বের জন্য ক্ষতিকর অথবা যা আমাদের কাঁচা সম্পদকে অপচয় বা অবনয়ন করে”। (“Pollution is an undesirable change in the :ysical, chemical or biological characteristics of our air, land and water that may or will harmfully affect human life, or that of desirable species, our industrial process, living conditions and cultural aspects or that may or will waste or deteriorate our raw material resources”).

দূষণের শ্রেণিবিন্যাস বিভিন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী নানাভাবে দূষণের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। তবে বহুল ব্যবহৃত ও অনুসৃত পন্থাগুলো হচ্ছে —

 

১। পরিবেশগত শ্রেণিবিন্যাস :

যেমন: বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মৃত্তিকা দূষণ ইত্যাদি।

 

২। দূষণপদার্থভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস :

যেমন: দস্তা, পারদ, কার্বন—ডাই—অক্সাইড, কঠিন বর্জ্য ইত্যাদি দিয়ে সংঘটিত দূষণ সমূহ।

পরিবেশ দূষণের ধারণা ও প্রকারভেদ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , ইউনিট ২ , পাঠ-২.১

 

৩। তেজস্ক্রিয় দূষণ :

যেমন: পারমাণবিক কেন্দ্রের আবর্জনা ও বিস্ফোরণের ফলে উদ্ভুত তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ। এ সকল আইসোটপের মধ্যে— আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি উল্লেখযোগ্য। এসকল তেজস্ক্রিয় রশ্মি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহে তরল পদার্থের আয়নকরণ, জিন মিউটেশন এবং ক্রোমোজমের মিউটেশন ঘটায়। তাছাড়া পানিতে বসবাসকারী জীবদেহে সঞ্চিত হয়ে তাদের উপর নির্ভরশীল প্রাণীদের প্রভূত ক্ষতির কারণ ঘটায়।

 

৪। তাপীয় দূষণ :

যেমন: আণবিক চুল্লী শীতলকরণ কাজে ব্যবহৃত ভারি পানি, কল কারখানা থেকে নির্গত উত্তপ্ত পানি ইত্যাদি নদী বা জলাশয়ে মিশ্রিত হয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবকূল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

৫। শব্দ দূষণ :

যেমন: যন্ত্রযানের শব্দ, মোটর/রেলগাড়ির শব্দ, উড়োজাহাজের শব্দ, শিল্প কারখানার শব্দ, ইত্যাদি আরও বহুবিধ অবাঞ্চিত শব্দ মানুষের শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যের উপর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে শ্রবন—ইন্দ্রিয়ের কার্যক্ষমতা হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাধরা, হৃদরোগ স্নায়ুবিক দূর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

 

৬।জৈবিক দূষণ :

যেমন: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, ফুলের রেণু ইত্যাদি জৈবিক উৎস মানুষ ও প্রাণীদেহে নানাবিধ রোগ বিস্তারের জন্য দায়ী।

বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ই.পি. ওডাম (১৯৭১) ইকোসিস্টেমের দৃষ্টিকোণ থেকে দূষণের দু’টো বুনিয়াদী শ্রেণিবিন্যাসের কথা বলেছেন। তা নিম্নরূপ —

 

(ক) অনিধনযোগ্য দূষক  :

যেমন: অ্যালুমিনিয়াম পাত্র, পারদীয় লবণ, দীর্ঘ শিকলযুক্ত ফেনলিক দ্রব্য, ডি.ডি.টি. প্রভৃতি, যা সাধারণভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না বা ধীরগতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এসকল দ্রব্যাদি প্রকৃতিতে চক্রাকারে আবর্তনের মাধ্যমে পরিবেশ রীতিতে ফিরে আসে না। বরং ক্রমশ স্তুপীকৃত হয়ে জীব—ভূ—রাসায়নিক চক্রে বা খাদ্যশিকলে (ঋড়ড়ফ ঈযধরহ) প্রবেশ করে মারাÍক জৈবিক সমস্যা সৃষ্টি করে। অবশ্য অনেক সময় এসব উপাদান পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের সাথে মিশে অতিরিক্ত বিষক্রিয়াও তৈরি করে।

 

(খ) জৈব নিধনযোগ্য দূষক  :

যেমন: গৃহপালিত পশু বা সামাজিক প্রাণীর বর্জ্য যা প্রাকৃতিকভাবে বা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দ্রুত পচনশীল। এগুলো প্রকৃতিতে চক্রাকারে আবর্তনযোগ্য। ফলে পচনক্রিয়া শেষ হলে এদের বিষাক্তকরণ ক্ষমতা লোপ পায়। অবশ্য পরিবেশে দূষক পদার্থের মাত্রা অত্যধিক হলে অর্থাৎ জৈব নিধন ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেলে জৈব নিধনযোগ্য দূষণও সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

 

Leave a Comment