গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি বাংলাদেশের গবাদি পশুর শতকরা ৯৫ ভাগই দেশী অনুন্নত জাতের। এদের কর্মশক্তি এবং উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ফসল উৎপাদন এবং দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য গবাদি পশুর প্রয়োজনীয়তা বহুগুণ বেড়ে গেছে। তা ছাড়াও দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ তাদের কর্মসংস্থান ও আর্থিক আয়ের জন্য গবাদি পশুর উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দেশী গবাদি পশু উন্নয়নের মাধ্যমেই এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি

 

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি

 

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য :

১। দুধ উৎপাদন বাড়ানো

একটি দেশী গাভী থেকে যেখানে দৈনিক ১.৩ লিটার দুধ পাওয়া যায় সেখনে জাত উন্নয়ন করে একটি সংকর উন্নত জাতের গাভী হতে দৈনিক ১০-১৫ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া সম্ভব।

২। মাংস ও চামড়া উৎপাদন বাড়ানো

দেশী গরুর ওজন গড়ে ১৫০-২৫০ কেজি অথচ সংকর জাতের ৩০০-৪০০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। তাই জাত উন্নয়ন করে এদের থেকে অনেক বেশি মাংস পাওয়া যাবে। এদের চামড়াও আকারে বড় হবে এবং গুণগত মানও ভালো হবে।

৩। কাজের ক্ষমতা বাড়ানো

দেশের ৯৫% কৃষি জমি এখনও গবাদি পশুর দ্বারা চাষ করা হয়। দেশী এক জোড়া বদল দ্বারা বছরে ৩-৪ একর জমি চাষ করা সম্ভব। অপর পক্ষে এক জোড়া সংকর জাতের বলদ দ্বারা বছরে ৭-৮ একর জমি চাষ করা সম্ভব।

৪। অধিক কর্মসংস্থান এবং আয় বৃদ্ধি :

উন্নত সংকর জাতের গাভী পালন করে এবং গরু মোটা তাজা করে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। ফলে বেকারত্বের সংখ্যা কমবে। আয় বেড়ে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে।

৫। খামার স্থাপন :

বড় আকারের খামার স্থাপন করে অধিক পরিমাণে দুধ ও মাংস উৎপাদন করা যাবে। ফলে গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ হয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ দ্বারা প্রজননের মাধ্যমে গরুর জাতের উন্নয়ন ঘটানো যায়। দেশী বকনা ও গাভীকে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ দ্বারা প্রজনন করালে উন্নত সংকর জাতের গরু পাওয়া যায়। সাধারণত দুই পদ্ধতিতে বকনা বা গাভীকে প্রজনন করানো হয়। যেমন-

১। প্রাকৃতিক প্রজনন বা স্বাভাবিক  প্রজনন

কৃত্রিম প্রজনন ।

 

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি

 

প্রাকৃতিক প্রজনন :

ষাঁড় দ্বারা সরাসরি বকনা বা গাভীকে প্রজনন করানোকে প্রাকৃতিক প্রজনন বা স্বাভাবিক প্রজনন বলে। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত অনুন্নত জাতের ষাঁড় দিয়ে বকনা বা গাভীকে প্রজনন করানো হয়ে থাকে। তবে সরকারিভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু উন্নত জাতের ষাঁড় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ ষাঁড় দিয়ে প্রজনন করিয়ে উন্নত জাতের বাচ্চা পাওয়া কৃত্রিম প্রজনন কৃত্রিম উপায়ে দাঁড় থেকে বীজ করে গাভীকে প্রজনন করানোকে কৃত্রিম প্রজনন বলে।

কৃত্রিম উপায়ে ষাঁড় থেকে বীর্য বা সিমেন সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর নির্দিষ্ট সেই সমেন দিয়ে গরম হওয়া বা তাকে আসা বকনা বা গাভীকে প্রজনন করিয়ে করা হয়। এ পদ্ধতিতে বকনা বা গাভী হতে যে বাচ্চা পাওয়া যায় তার মধ্যে উন্নতজাতের প্রদানে প্রথম বংশের শতকরা ৫০ ভাগ থাকে।

পরবর্তী পর্যায়ে এ ৫০ ভাগ উন্নত জাতে সম্পন্ন বরুনাকে উন্নত জা দিয়ে পুনরায় কৃত্রিম প্রজনন করা পাওয়া যাবে তার মধ্যে শতকরা ৫ ভাগ উন্ন জাতের গুনাগুন পাওয়া যাবে। এভাবে বংশানুক্রমে প্রজনন করিয়ে দেশী জাতের গবাদি পতকে উন্নত জাতে রূপান্তর করা যায়।

বকনা বা গাভী ডাকে আসা না গরম হওয়ার সময়কে ঋতুকাল বলে। কনা বা কাল ১৬৩০ ঘণ্টা (গড়ে ২৪ ঘন্টা) হয়ে থাকে। কতুকালের ১২-১৮ ঘণ্টার মধ্যে বকনা বা গাভীকে প্রজনন করানোর উৎকৃষ্ট সময়। গাভীর গরম হওয়া বা ঋতুকালে সময়মত বা সঠিকভাবে প্রজনন না কর না বা গাতী গর্ভবতী হয় না। তাই পাতার গরম হওয়া না কানের লক্ষণগুলো জানা প্রয়োজন।

গাভীর ঋতুকালের লক্ষণগুলো হলো:

শরীর বাড়বে, ঘন ঘন ডাকবে। ঘন ঘন প্রস্রাব করাবে, দুধ কমে যাবে। গাভীর যোনীমুখ ফুলে যায় এবং লাল দেখায়। যোনীমুখ থেকে পরিষ্কার স্বা শ্রেষা বের হয় এবং লেজের গোড়ায় ও পেছনে তা লেগে থাকে। এ পর অন্য পশুর উপর উঠতে চাষ এবং অন্য পতকে নিজের উপর উঠতে দেনা।

একটি দেশী বকনা দুই থেকে আড়াই বছর বয়সে প্রথম প্রজননের উপযুক্ত হয়। সংকর জাতের বকনা দেড় থেকে দুই বৎস বাসে প্রজননের জন্য প্রথম উপযুক্ত হয়। প্রজননের ২৮০ দিন (কম বেশি ১০ দিন পর গাভী বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চা নেওয়ার ৬০ দিন পর পুনরায় ডাকলে গাভীকে প্রজনন করতে হয়। তবে ৯০ দিন পার হওয়ার পরও गाত না ডাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে

কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির সুবিধা

(১) এ পদ্ধতিতে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ দিয়ো অতি অল্প সময়ে দেশী  গরুর জাত উন্নয়ন

(২) একটি ষাঁড় দ্বারা একটি বকনা বা গাভীকে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে একবার প্রজনন করানো যায়। কিন্তু একটি ষাঁড়ের এক সংগৃহীত ২ গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করানো য

(৩) কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে ঘাড় হতে বকনা বা গাভীতে রোগ ছড়ানোর আশক্ষা অত্যন্ত কম থাকে।

(৪) সকলের পক্ষে ভালো রাখা সম্ভব হয় না। উন্নত জাতের ষাঁড় পালন বায়বহুল এবং শ্রমসাধ্য। তাই কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির জন্য মরে ঘরে ধানের

 

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি

 

কৃত্রিম প্রজনন সফল না হওয়ার কারণ-

কৃত্রিম প্রজনন অনেক সময় সফল হয় না। এর প্রধান কারণগুলো হলো

(১) ঋতুকালের নির্দিষ্ট সময়ে গাভীকে প্রজনন না করানো।

(২) ঠিকমত প্রজনন না করালে অর্থাৎ প্রজনন কাজে ত্রুটি থাকলে।

(৩) প্রজননের জন্য ব্যবহৃত বীজ বা শুক্রাণু মৃত হলে।

(৪) অনিয়মিত গরম হওয়া বকনা বা গাভীকে প্রজনন করালে।

(৫) নোংরা পরিবেশ, অপরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি জীবাণু মুক্ত না করে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃত্রিম প্রজনন করালে।

(৬) যে কোন প্রকারের যৌন রোগাক্রান্ত বকনা বা গাভীকে প্রজনন করালে।

(৭) পরিশ্রান্ত বকনা বা গাভীকে কাজ করানোর পরপরই বা অনেক দূর হতে হাটিয়ে কৃত্রিম প্রজনের জন্য আনা হয় এবং পশুকে বিশ্রাম না দিয়ে সাথে সাথে কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। তারপর আবার বিশ্রাম না দিয়ে কাজে লাগানো হয় বা হাঁটিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এতে গাভী গর্ভবর্তী নাও হতে পারে।

সারমর্ম

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য হলো দুধ ও মাংস উৎপাদন এবং পশুর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা। দেশী বকনা বা গাভীকে উন্নত জাতের ষাঁড় দ্বারা প্রজনন করালে উন্নত সংকর জাতের গরু পাওয়া যায়। ষাঁড় দ্বারা সরাসরি প্রজননকে স্বাভাবিক প্রজনন বলে।

উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে কৃত্রিম উপায়ে গাভী বা বকনাকে প্রজনন করানোকে কৃত্রিম প্রজনন বলে। বকনা বা গাভী ডাকার ১২-১৮ ঘণ্টার মধ্যে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হয়। প্রজনন করানোর ২৮০ দিন (১০ দিন আগে বা পরে) পর গাভী বাচ্চা প্রসব করবে। বাচ্চা প্রসবের ৬০ দিন পর পুনরায় গরম হলে গাভীকে পুনরায় প্রজনন করাতে হয়।

Leave a Comment