আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ব্রয়লার জাতের পরিচিতি ও পালন ব্যবস্থাপনা। যে সমস্ত মুরগি ৬-৮ সপ্তাহ বয়সে কমপক্ষে ১ কেজি থেকে দেড় কেজি ওজন প্রাপ্ত হয় এবং শুধুমাত্র নরম মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয় তাদেরকে ইংরেজিতে ব্রয়লার (brailer) বলে। অধিক মাংস উৎপাদনশীল বিভিন্ন জাতের মোরগ-মুরগি সংমিশ্রণের মাধ্যমে এই বিশেষ ধরনের জাতের সৃষ্টি। নিম্নে বর্ণিত জাতগুলো ব্রয়লার জাত তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১. কর্নিশ
২. প্লাইমাউথ রক;
৩. রোড আইল্যান্ড রেড
৪. নিউ হ্যাম্পশায়ার
৫. সাসেক্স।
Table of Contents
ব্রয়লার জাতের পরিচিতি ও পালন ব্যবস্থাপনা
সাদা কার্নিশ মোরগের সংগে প্লাইমাউথ রক জাতের মুরগির মিলন ঘটিয়ে উন্নতমানের জনপ্রিয় ব্রয়লার জাত তৈরি করা হয়ে থাকে। অন্যান্য জাতের সংগে সংকরায়ন করেও ব্রয়লার তৈরি করা যায়। সংকর জাতের শারীরিক বৃদ্ধি খুবই দ্রুত।
ব্রয়লার পালন একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা ব্রয়লার যেহেতু ৬-৮ সপ্তাহের ফসল তাই অল্প দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকৃত মূলধন লাভসহ ফেরত আসে। অধিকন্তু এ ধরনের খামার করার জন্য প্রচুর মূলধনেরও প্রয়োজন হয় না। দেশে আত্মকর্মসংস্থান এবং মূল্যবান প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ ধরনের খামার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
কয়েকটি জনপ্রিয় বাণিজ্যিক ব্রয়লারের নাম নিম্নে দেওয়া হলোছ
১. আরবার একর
২. স্টোরব্রো
৩. লোহম্যানঃ
৪. আই,এস,এ, ভেডেট:
৫. হাইব্রো
৬. ইন্ডিয়ান রিভার:
ব্রয়লার পালন ব্যবস্থাপনা
ব্রয়লার পালন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো : স্থান নির্বাচন ব্রয়লার খামার স্থাপনের পূর্বে খামারের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। বাসস্থান থেকে একটু দূরে অপেক্ষাকৃত উঁচু পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা আছে এমন জায়গায় খামারের স্থান নির্বাচন করতে হবে খামার রাস্তাঘাট এবং বাজার থেকে একটু দূরে কিন্তু যাতায়াতের সংযোগ আছে এমন স্থানে স্থাপন করতে হবে।
জাত নির্বাচন :
ব্রয়লারের জাত সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। কেননা সব জাতের শারীরিক বৃদ্ধি সমান হয় না। খাদ্য গ্রহণ বা শারীরিক ওজন বৃদ্ধির উপর ব্রয়লার খামারের লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে। এজন্য বাণিজ্যিক ব্রয়লার নির্বাচন করতে হবে।
বাসস্থান:
ব্রয়লারের ঘর স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। ঘর শুষ্ক, পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত আলো- বাতাসপূর্ণ হতে হবে। ঘরের আয়তন ব্রয়লারের সংখ্যার অনুপাতে হবে। ঘরের মেঝেতে প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ১০০০ বর্গ সেন্টিমিটার জায়গা দিতে হবে। যে কোন নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে মোটামুটিভাবে মজবুত করে ঘর তৈরি করতে হবে। তবে ঘর অবশ্যই আরামদায়ক এবং আলো-বাতাসপূর্ণ হবে। ঘরের লিটার বা বিছানার সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে।
ঘরে তাপমাত্র ও আর্দ্রতা ব্রয়লারের ঘরে ২০-২১০ সে. তাপমাত্রা এবং ৬০-৭০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা রাখতে হবে। এডারের নিচে তাপমাত্রা সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে। খাদ্য ও পানি ব্রয়লারের খাদ্য সুষম পরিমিত এবং অধিক শক্তিদায়ক হতে হবে। খাদ্যে ২২-২৩ আমিষ হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা
১। সময়মত রোগ প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
২। বাচ্চার যত্ন ও পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে হবে।
৩। বাইরের লোকজনকে মুরগির ঘরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।
৪। রোগাক্রান্ত মুরগি তাৎক্ষণিকভাবে আলাদা করতে হবে।
৫। পরিচর্যাকারী মুরগির ঘরে ঢোকার আগে ও পরে জীবাণুনাশক ওষুধ দ্বারা হাত পা ধুয়ে নিবে। ঘরে ঢোকার সময় আলাদা পোশাক ব্যবহার করবে।
৬। মৃত মুরগিকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে।
৭। সঠিক সময়ে ব্রয়লার বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা নির্দিষ্ট সময়ের পরে খাদ্য ও ব্যবস্থাপনায় যে খরচ হবে তা লাভের অংশ কমিয়ে দিবে।
সারমর্ম
• ৬-৮ সপ্তাহে কমপক্ষে এক থেকে দেড় কেজি মাংস উৎপাদনশীল কচি মোরগ-মুরগিকে ইংরেজিতে ব্রয়লার বলে।
• ব্রয়লারের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান ও সুষম খাদ্য অপরিহার্য।
• ব্রয়লার খামার করতে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয় না।
• অল্পদিনেই ব্রয়লার খামারে বিনিয়োগকৃত মূলধন লাভসহ ফেরত আসে।
• সঠিক সময়ে ব্রয়লার বাজারজাত করতে হয়।