আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পালং ও পুঁইশাক চাষ – যা কৃষিজ উৎপাদন: সবজি, ফুল, ফল চাষ এর অন্তর্ভুক্ত ।
Table of Contents
পালং ও পুঁইশাক চাষ
পালং শাক
পালংশাক অত্যন্ত পুষ্টিকর, ভিটামিন সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু পাতা জাতীয় শীতকালীন সবজি। শীতকালে বাজারে প্রচুর পালংশাক পাওয়া যায়। এটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পাতা সবজি ।
জলবায়ু ও মাটি
এটি বাংলদেশে শীতকালে চাষাবাদ করা হয়। উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটিতে চাষাবাদ করা যায়।
জাত
সবুজ বাংলা, টক পালং, গ্রিন, কপি পালং, পুষা জয়ন্তী। এছাড়া আছে নবেল জায়েন্ট, ব্যানার্জি জায়েন্ট, পুষ্প জ্যোতি।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
জমির আগাছা তুলে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে ও পরে মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ।
সারের পরিমাণ
সারের নাম শতক প্রতি
গোবর ৫০ কেজি
ইউরিয়া ১ কেজি
টিএসপি ৫০০ গ্রাম
এম ও পি ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া বাদে সব সার জমি তৈরি সময় দিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া সার চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর থেকে এক বা একাধিকবার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজের হার ও বপন
ভালোজাতের বীজের ক্ষেত্রে শতক প্রতি ২৫০-৩০০ গ্রাম লাগে। পালংশাক সারিতে ও ছিটিয়ে বপন করা যায়। বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ বপনের পর অঙ্কুরোদগমে প্রায় ৭-৮ দিন সময় লাগে।
পরিচর্যা
জমির আগাছা তুলে ফেলতে হবে। পালংশাক রসালো প্রকৃতির বলে প্রচুর পানির প্রয়োজন তাই পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে মাটি আলগা করে দিতে হবে। বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর অতিরিক্ত চারা উঠিয়ে ফাঁকা জায়গা লাগিয়ে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
পালংশাকে পাতা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এছাড়াও উড়চুঙ্গা, উইপোকা ও পিঁপড়ার আক্রমণ হতে পারে । পোকার আক্রমণ বেশি হলে স্থানীয় অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পালংশাকের গোড়া পঁচা রোগ, পাতা ধ্বসা রোগ ডাউন মিলভিউ ও পাতায় দাগ রোগ হতে পারে। রোগ দমনে জন্য নিয়মানুযায়ী ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
সংগ্ৰহ
ফুল না আসা পর্যন্ত পালংশাক সংগ্রহ করা যায়। ফলন প্রতি শতকে ২৫-৪০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পুঁইশাক
পুঁইশাকের ইংরেজি নাম হল Indian Spinach । পুঁইশাক গ্রীষ্মকালীন পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে অন্যতম। পুঁইশাক যদিও গ্রীষ্মকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে জন্মে তবে সারা বছর ধরেই পাওয়া যায়। এর স্বাদ উৎকৃষ্ট ও এর পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও লৌহ থাকে।
জলমায়ু ও মাটি
পুঁইশাক উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মে। এটি যে কোন জায়গায় জন্মাতে পারে। বন্যামুক্ত অর্থাৎ পানি জন্মে না এরকম জমিতেও পুঁইশাকের চাষ করা যেতে পারে।
জাত
স্থানীয় সবুজ ও লাল সাধারণত দুটি জাত দেখা যায়। লাল জাতের তুলনায় সবুজ জাত দ্রুত বাড়ে এবং ফলন বেশি। তবে
লাল জাতের স্বাদ ও পুষ্টিমান বেশি ।
বংশ বিস্তার
বীজ বা কান্ডের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার জন্য বীজের মাধ্যমে চাষাবাদ করে থাকে।
বীজের পরিমাণ
সারিতে বীজ বপনের জন্য প্রতি হেক্টরে ১.৫-৩ কেজি বীজ প্রয়োজন। তবে ছিটিয়ে বপনের জন্য বেশি বীজের প্রয়োজন।
বীজ লাগানোর সময়
পুঁইশাক সাধারণত এপ্রিল মে পর্যন্ত চাষাবাদ করা হয়। সেচের ব্যবস্থা করা গেলে রবি মৌসুমেও করা যায় ।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
বীজ বা চারা রোপনের পূর্বে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। চাষের সময় গোবর সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। মাঝারি উর্বর জমির জন্য শতক প্রতি গোবর সার ৫০ কেজি, টিএসপি ও এমওপি ৫০০ গ্রাম করে শেষ চাষের সময় মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার ১ কেজি চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ২-৩ কিস্তিতে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
বীজ ও চারা রোপন
পুঁইশাক দু’ভাবে চাষ করা যায়। প্রতি বেড়ে ৭৫ সে.মি. দূরে দূরে ২টি সারিতে ৪৫ সে.মি. পরপর ২-৩ সে.মি. গভীরে ২- ৩টি বীজ বা ১ টি চারা রোপন করতে হবে। বর্ষার সময় পুঁইশাকের লতা কিছু অংশ কেটেও রোপন করে চাষ করা যায়।
পরিচর্যা
প্রয়োজনে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। আগাছা দমন, সারের উপরি প্রয়োগ এবং গাছের গোড়ায় মাটি দেয়ার কাজ একই সময়ে করা যেতে পারে। বেড ও নালা পদ্ধতিতে চাষ করলে জমিতে সমভাবে সেচ দেয়া যায়। পুঁইশাকে তেমন মারাত্মক কোন রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা যায় না। তবে বিছা পোকা পাতা ও কাণ্ড খেয়ে ক্ষতি করে। পাতা পঁচা রোগ হলে ছত্রাক নাশক স্প্রে করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
পুঁইশাকের ডগা ২৫-৩০ সে.মি. লম্বা হলেই ডগা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে ডগা কাটলে নতুন নতুন ভগা গজাবে। এভাবে কয়েকবার ডগা কাটা যায়। প্রতি হেক্টরে ৬০-৭৫ টন ফলন পাওয়া যায় ।
সারসংক্ষেপ
পালং ও পুঁইশাক অত্যন্ত পুষ্টিকর পাতাজাতীয় সবজি। পালং শাক সাধারণত: শীতকালে চাষ করা হয়। পুইশাক গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়। পুঁইশাকের লাল ও সবুজ দুই ধরণের জাত রয়েছে।