ব্যবহারিকঃ পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয়

পুকুরে মাছ চাষের সফলতার জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ততা অপরিহার্য। মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে পানির ভেতরে থাকা ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ (ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন), ক্ষুদ্র প্রাণী (জুওপ্ল্যাঙ্কটন), তলদেশীয় প্রাণী (বেন্টিক অর্গানিজম) এবং জৈব পদার্থ (ডিট্রিটাস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের সম্মিলিত উপস্থিতিই মাছের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের মূল উৎস।

তাই, পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাপ্যতা নির্ধারণ করা মাছের বাসস্থান ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান ধাপ। এটি শুধু মাছের স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতাই বৃদ্ধি করে না, বরং পুকুরের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ব্যবহারিকঃ পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয়

 

পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয়
পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয়

 

প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয়:

প্রাসঙ্গিক তথ্য

পুকুরের নিজস্ব এবং সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফাইটো প্লাউটন উৎপাদনের জন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহের ফলে জলাশয়ে যে খাদ্য উৎপাদন হয় তাকে প্রাকৃতিক খাদ্য বলে। বিভিন্ন ধরনের প্রাণি ও উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন হলো মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য।
প্রয়োজনীয় উপকরণ

১। সেকিডিস্ক (২০ সে.মি. ব্যাস যুক্ত টিনের একটি সাদা কালো থালা)

৩। স্বচ্ছ কাচের গ্লাস।

৪। ব্যবহারিক খাতা, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি।

কার্য পদ্ধতি

পুকুরে পোনা মজুদের পূর্বেই সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এটি করা যায়। যেমন-

ক) সেকি ডিস্ক পরীক্ষা:

এ ক্ষেত্রে ২০ সে.মি. ব্যাসযুক্ত টিনের একটি কালো থালা (যাকে সেকিডিস্ক বলে) সূতা দ্বারা পানিতে ডুবানোর পর যদি ২৫-৩০ সে.মি. গভীরতায় থালা না দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য রয়েছে। যদি ৩০ সে.মি এর অধিক গভীরতায় সেকিডিস্ক দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার
অনেক কম।

খ) হাত পরীক্ষা:

পুকুরের পানিতে হাতের কনুই পর্যন্ত ডুবিয়ে যদি হাতের তালু দেখা না যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে পরিমান মতো প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে।

গ) গ্লাস পরীক্ষা:

একটি স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস দিয়ে পুকুরের পানি নিয়ে সূর্যের আলোর দিকে ধরলে যদি পানির রং সবুজ বা বাদামি সবুজ দেখা যায় এবং পানিতে অসংখ্য সূক্ষ্ম কণা ও ছোট পোকার মতো দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে পরিমান মতো প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে।

পরীক্ষা করার পরও যদি দেখা যায় প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়নি তবে আরো ২-৪ দিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন হবে। এর পরও যদি খাদ্য তৈরি না হয় তাহলে পুনরার পরিমান মত সার প্রয়োগ করতে হবে। এবার প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয়ের বিভিন্ন কার্যপদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন এবং প্রয়োজনীয় চিত্র অংকন করুন।

 

পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয় 2
পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয় 2

 

সতকর্তা

১। সেকিডিস্ক এবং সূতার যেন কোনো প্রকারের ক্ষতি না হয় লক্ষ রাখতে হবে।
২। গ্লাস পরীক্ষায় ব্যবহৃত গ্লাস যেন না ভাঙ্গে সে দিকে নজর রাখতে হবে।
৩। পরীক্ষাগুলোর তথ্য সঠিকভাবে লিপিবন্ধ করা হচ্ছে কি না তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। জালাল সাহেবের বাড়ির পাশে তিনটি পুকুর আছে। এগুলোর মধ্যে তিনি মাছ চাষ করবেন ঠিক করেছেন। এ ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে মৎস্য কর্মকর্তা ওনাকে মাছ চাষের জন্য একটি আদর্শ পুকুর কেমন হবে তার ধারণা প্রদান করেন। চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে কোন ধরনের পুকুরে লাগবে সে ধারনাও তিনি লাভ করেন।

ক) মাছ চাষ বলতে কি বোঝায়।

খ) মাছ চাষের জন্য একটি আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্য কিরূপ হওয়া উচিত?

গ) পুকুরের পানির রাসায়নিক গুণাগুণ কীভাবে মাছ চাষকে প্রভাবিত করে লিখুন?

ঘ) চাষকৃত মাছের আবাস ও বয়সের উপর ভিত্তি করে জালাল সাহেবকে কত ধরনের পুকুর তৈরি করতে হবে লিখুন ।

 

২। হারুন সাহেব তার পুকুরে দীর্ঘদিন মাছ চাষ করছেন। তিনি লক্ষ্য করলেন বিভিন্ন সময়ে পুকুরের পানির রং এ পরিবর্তন হয়। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারলেন পুকুরে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় এই রং পরিবর্তনের মূল কারণ।

ক) বাসস্থানের ভিত্তিতে পুকুরে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় কত ধরনের উদাহরণ দিন।

খ) পুকুরে বিদ্যমান প্লাঙ্কটনে উপস্থিতি পুকুরের পানির রংকে কীভাবে প্রভাবিত করে এবং কীভাবে এদের উৎপাদন বাড়ানো যায়?

গ) পুকুরে বিদ্যমান জলজ উদ্ভিদ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিন ।

ঘ) হারুন সাহেব কি ভাবে একটি আদর্শ পুকুর তৈরি করবেন- মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শের আলোকে বিশ্লেষন করুন ।

৩। বর্তমানে অনেকেই মৎস্য চাষ করে স্বনির্ভর হচ্ছে। বেকার যুবকেরা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারে । প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সরেজমিনে পরিদর্শন মৎস্য চাষের সফলতা নিশ্চিত করার জন্য সহায়ক।

ক) রাক্ষুসে মাছ কাকে বলে ?

খ) সফল ভাবে মৎস্য চাষের জন্য পুকুর খনন সম্পর্কে লিখুন।

গ) মৎস্য পুকুরে কীভাবে সার প্রয়োগ করা যায় ও প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা যায় লিখুন।

ঘ) মৎস্য চাষের জন্য প্রশিক্ষণ ও পরিদর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষন করুন ।

 

৪। আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মৎস্য চাহিদা বাড়ায় সরকার মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের উচিত সরকারের সর্বাত্মক সহযোগীতা করা।

ক) মাছের অভয়াশ্রম বলতে কী বুঝায়?

খ) বাংলাদেশে মৎস্য সম্পদের উৎস সম্পর্কে ধারণা দিন।

গ) বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা করুন।

ঘ) “মৎস্য সংরক্ষণ আইন মেনে চললে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে”-উক্তিটি বিশ্লেষণ করে মূল্যায়ন করুন।

পুকুরের বিভিন্ন স্তর ব্যবহারিকঃ পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয়

 

Leave a Comment