আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-পুকুর প্রস্তুতি
Table of Contents
পুকুর প্রস্তুতি
যে পুকুরে রেনু পোনা ছেড়ে ধানি পোনা পর্যন্ত বড় করা হয় তাকে আঁতুড় পুকুর (Nursery pond) বলে। অন্য দিকে যে পুকুরে ধানি পোনা ছেড়ে চারা পোনা পর্যন্ত বড় করা হয় তাকে চারা পোনার পুকুর বলে।
পুকুর বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রস্তুত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে অনেক কাজ করতে হয়। নিচে পুকুর প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করা হলো।
পুকুর নির্বাচন : যেসব জলাশয়ে নির্দিষ্ট মাছের প্রজনন মৌসুমে বা সারা বছরেই পানি থাকে সেসব জলাশয়ে বা পুকুর আঁতুড় পুকুর হিসাবে ব্যবহার করা যায়। তবে আঁতুড় পুকুর আয়তনে ছোট হলে ভালো হয়। কারণ পুকুর ছোট হলে পুকুরের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যত্ন নেওয়ার কাজ সহজসাধ্য হয়। আঁতুড় পুকুরের বৈশিষ্ট্য হলো :
(ক) পুকুরটিকে অগভীর হতে হবে। গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে গেলে তেমন কোন অসুবিধা নেই তবে বর্ষাকালে পানির গভীরতা ১ মিটারের বেশি যেন না হয়, সেদিন লক্ষ্য রাখতে হবে।
খ) পুকুরের আয়তন ১০-১৫ শতাংশ হলে ভালো। সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশের বেশি আকারের পুকুর কোনমতেই নির্বাচন করা উচিত নয়।
(গ) পুকুরের মাটি দো-আঁশ হওয়া উচিত। তবে এঁটেল, বেলে দো-আঁশ মাটিও। নতুন কাটা এঁটেল মাটির কারণে পুকুরে সবসময় মোলাটে ভাব থাকে। ফলে পুকুরে জন্মানো নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে বাধা সৃষ্টি হয়। এতে পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন হয় না।
(ঘ) পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি উৎপাদনের জন্য এবং জাল টানার সুবিধার জন্য পুকুরের পাড় ঢালু হওয়া উচিত।
(ঙ) পুকুরের তলায় খুব বেশি কাদা মাটি থাকা ঠিক না। এতে পাচন ক্রিয়ায় পানিতে প্রচুর ভূষিত গ্যাস উৎপাদিত হয় এবং সেসব গাস পানিতে মিশে পোনা মাছের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
(ছ) পুকুরের পাড় উঁচু এবং বন্যামুক্ত হওয়া উচিত।
(জ) পুকুরে প্রয়োজনমত পানি সেচ দেওয়ার সুযোগ আছে এবং পোনা মাছ সহজেই। পরিবহন ও স্থানান্তর করা যায় এমন স্থানে পুকুর নির্বাচন করতে হবে।।
পানির গভীরতা ঃ
আঁতুর পুকুরে পানির গভীরতা ১-১.৫ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়। রেনু অবস্থার পোনা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় থাকে তখন অত্যধিক গভীরতার পানির চাপ সহ্য করতে পারে না গল্প গভীরতা পুকুরে জাল টানা, পানির বিষাক্ত গ্যাস দূরীকরণ এবং পোনা মাছের সম্পূরক খাদ্য গ্রহণে সুবিধা । আগাছা ও শেওলা নমন পানিতে স্বাভাবিক নিয়মে আগাছা ও শেওলা অন্যায়। পুকুর প্রস্তুত করার সময় আগাছা ও শেওলা সমন একটি অত্যপড় প্রয়োজনীয় কাজ। কারণ এসব আবার-
- পুকুরে সূর্যালোক ঠিকভাবে পৌঁছাতে বাধা দেয়া।
- পুকুরে বিভিন্ন রোগ, জীবানু ছড়ায়।
- পোনার চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
- রাতেও মেঘলা দিনে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের অভাব ঘটায় ।
- পুকুরের পানিতে দ্রবীভূত পুষ্টির অভাব ঘটায়।
রাক্ষুসে মাছ অপসারণ
পোনা মাছের পুকুর থেকে রাহুলে প্রাণী বা অবাঞ্ছিত মাছ অপসারণ পুকুর প্রস্তুত করার একটি গুরত্বপূর্ণ ধাপ। পুকুর শুকিয়ে, জাল টেনে এবং বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে এদের সহজেই অপসারণ করা যায়। এসব মাছ পোনা মাছের পুকুরে থাকলে এরা মাছের পোনার খাবার মেয়ে ফেলে। আবার বাসে মাছ গোনাও খেয়ে ফেলে।
পাড় ও তলদেশ ঠিক করা আঁতুড় পুকুর পাড়ে কোন প্রকার বড় গাছ না থাকাই ভালো। কারণ এতে পুকুরে সূর্যালোক পড়তে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে মাছের প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাছাড়া গাছের পাতা পানিতে পড়ে পড়ে পানির গুনাগুন নষ্ট হ
পুকুরে চুন প্রয়োগ :
আতুড় পুকুনা প্রস্তুত করার সময় চুন প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সাধারণত প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা হয়। যদি পুকুর শুকনো হয় তবে পুকুরের তলায় চুন ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। যদি পুকুরে পানি থাকে তবে হুম গুলে নিয়ে ঠাণ্ডা করে সমস্ত পুকুরের পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ :
আঁতুড় পুকুরে পোনার প্রকৃতিক খাবার তৈরির জন্য সার প্রয়োগ করতে হয়। চুন দেওয়ার ৫-৭ দিন পর গোবর সার প্রতি শতাংশ ২০-২৫ কেজি হারে ব্যবহার করতে হয়। আর প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০০ গ্রাম টি.এসদেওয়ার পর পুকুরের পানির রং যদি সবুজ বা বাদামী হয় তবে বুঝতে হবে পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাবার জন্মেছে।
ক্ষতিকর পোকা দমন ও আঁতুড় পুকুরে সার দেয়ার পরপরই সাধারণত হাঁসপোকাসহ বড় ধরনের কিছু কীট-প্রতঙ্গ জন্যে। এসব কাঁট রেণু পোনাকে খেয়ে ফেলে এবং খাদ্যের জন্য পোনার সাথে প্রতিযোগিতা করে। তাই রেনু মজুদের পূর্বে এদেরকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। সরু মশারির জাল টেনে সম্পূর্ণভাবে এদেরকে দূর করা যায় না। তাই বিভিন্ন কীটনাশক । নিচের দ্রব্যগুলো প্রয়োগ করে ক্ষতিকর কীট দমন করা যায়।
ক. ডিপটারেক্স/ সুমিথি ব্যবহার যাত্রা (প্রতি শতাংশ পানির ৩০ সে.মি. গভীরতার জন্য )
১. ডিপটারেক্স ১২ ম
২. সুমিথিয়ন ৩ গ্রাম
ক. ব্যবহার পদ্ধতি
ডিপটারেক্স রেণু ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা পূর্বে একটা পাত্রের মধ্যে পানিতে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে নিতে হবে। সুমিথিয়ন ডিপটারেক্স দেওয়ার ১২ ঘণ্টা পর একটি পাত্রে সুমিথিয়ন পানির সাথে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
খ. কেরোসিন/ডিজেল
তেল কেরোসিন বা ডিজেল নিয়ে পুকুরের হাঁসপোকা মারা যায়। ব্যবহার পদ্ধতি শতাংশ প্রতি ১২৫ মিলি কেরোসিন বা ডিজেল ঢেউহীন পানিতে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে ঘন ফাঁসের জাল টেনে পানির মধ্যে তেল ছড়িয়ে দিতে হবে।
কেরোসিন বা ডিজেল প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টা পরে পোনা ছাড়া যায়। যখন বাতাস থাকে না তখনই কেরোসিন বা ডিজেল ব্যবহারের উৎকৃষ্ট সময়। কারণ এগুলো ছড়িয়ে দেয়ার পর পানির উপরিভাগে স্তর পড়ে। ফলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে পানির উপরিভাগের কাঁট মারা যায়।
এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে রেনুর বাবার ছোট প্রাণিকণা বেঁচে থাকবে কিন্তু বড় এবং ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মারা যাবে। হররা টানাপোনা মাছের জন্য পুকুর প্রস্তুত করার সময় পুকুরের তলদেশের বিষাক্ত গ্যাস অপসারণ করার জন্য কয়েকবার হররা টানা উচিত।
সারমর্ম
- মাছের পোনা চাষের পুকুর আয়তনে ছোট হওয়া উচিত।
- পুকুরের বাসে মাছ অপসারণ করে পরিমাণমত চুন ও সার প্রয়োগ করতে হয়।
- আগাছা ও শেওলা পুকুরে সূর্যের আলো পৌছাতে দেয় না।
- হররা টানলে পুকুরের তলার ক্ষতিকর গ্যাস অপসারিত হয়ে যায়।.পি দিতে হয়। যার