আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আমাদের দেশে গবাদি পশু অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সময়মত ব্যবস্থা না নিলে এসব রোগে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। গবাদি পশুর রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ- ব্যাধি যাতে না হয় সেদিকে যত্নবান হওয়া শ্রেয়। কেননা অনেক সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় না।
তাছাড়া চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। অনেক সময় রোগের বিস্তার এত দ্রুত এবং হঠাৎ হয় যে চিকিৎসার সময়ও পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সহজেই গবাদি পশুকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। গবাদি পশুর রোগ প্রতিরোধের জন্য নিম্নে বর্ণিত ৪টি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হয়।
Table of Contents
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
ক. গবাদি পশুর স্বাস্থ্যসম্মত পালন ব্যবস্থা
১। গবাদি পশুর ঘর স্বাস্থ্যসম্মত হতে হয়।
২। ঘর সব সময় শুকনা এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসযুক্ত হতে হয়।
৩। ঘর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়।
৪। গবাদি পশুকে নিয়মমত সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি দিতে হয়।
৫। বিভিন্ন বয়সের পশুকে আলাদা আলাদাভাবে খাদ্য ও পানি দিতে হয়।
৬। বাইরের লোককে খামারে প্রবেশ করতে না দেয়া।
৭। গবাদি পশুকে মশা-মাছির উপদ্রব হতে রক্ষা করতে হয়।
৮। বন্য প্রাণী যাতে খামারে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখা এবং জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে মেনে চলা।
৯। নতুন ক্রয় করা বা অন্য স্থান থেকে আনা গৰদি পশুকে কয়েকদিন আলাদা রেখে রোগমুক্ত কিনা নিশ্চিত হওয়ার পর খামারের পঙ্গুর সাথে মেশানো। ১০। খামারের কার্যক্রম নিয়মিত পরিদর্শন, অনুসরণ ও মূল্যায়ন করা।
(খ) রোগ দেখা দিলে করণীয়
১। অসুস্থ পশুকে সংগে সংগে আলাদা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া।
২। অসুস্থ গবাদি পশু একস্থান থেকে অন্যস্থানে না নেয়া এবং হাটে-বাজারে বিক্রয় করা।
৩। অসুস্থ পৰাদি পশু জবাই করে মাংস না খাওয়া।
৪। রোগাক্রান্ত গবাদি পশুর ব্যবহৃত খাদ্য, পানি অন্য পশুকে না দেয়া। খাদ্য, পানির পাত্র এবং সরঞ্জামাদি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেয়া।
৫। রোগাক্রান্ত পশুর মল-মূত্র, লালা ও পরিত্যক্ত খাদ্য মাটিতে পুঁতে ফেলা জীবাণু নাশক ওষুধ। যেমন- ডেটল, স্যাভলন, ফিনাইল, আইওসান ইত্যাদি দ্বারা ভালো করে বাসস্থান ও সরঞ্জামাদি পরিষ্কার করা।
৬। যথাশীঘ্রই সম্ভব পশু চিকিৎসক বা চিকিৎসা কর্মীর পরামর্শ নেয়া।
গ. রোগের প্রতিষেধক ব্যবস্থা
১। সুস্থ গাবদি পশুকে নিয়মিত সংক্রামক রোগের টাকা দেয়া।
২। নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়ানো।
৩। রোগ বিস্তার রোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
ঘ. মৃত গবাদিপশুর সৎকার
আমাদের দেশে সাধারণত মৃত গাবদি পশু যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। ফলে কাক, চিল, কুকুর, বনাপ্যাণী ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। কিছু কিছু সংক্রামক রোগ বাতাসের সাহায্যেও ছড়ায়। তাই মৃত পশু সংক্রামক রোগে মারা গেলে মাটির ০.৫ মিটার নিচে গ করে পুঁতে ফেলতে হবে। মাটিতে পুঁতে ফেলার পর এর উপরিভাগে চুন বা ডি.ডি.টি. ছিটিয়ে শোধন করতে হবে।
১। মৃত পশুকে মাটির নিচে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২। মৃত পশুর উচ্ছিষ্ট খাদ্য ও পানি পুঁতে ফেলতে হবে।
৩। মৃত পশুর ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি পুড়িয়ে বা পুঁতে ফেলতে হবে অথবা জীবাণু নাশক ওষুধ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সারমর্ম
গবাদি পশুর রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া শ্রেয়। রোগ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পালন ব্যবস্থা, রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থা, মৃত পশুর সৎকার ও রোগ দেখা দিলে করণীয় বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।