আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি-১
বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি-১
সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগির ডিম হতে বাচ্চা ফোটানো হয়ে থাকে। যা:-
১। প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও
২। কৃত্রিম পদ্ধতি।
এ পাঠে বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি বলতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফোটানো বোঝানো হয়েছে।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগির ডিম হতে বাচ্চা ফোটানো সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো:
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো একটি অতি প্রাচীন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দেশী কুঁচে মুরগির সাহায্যে ডিম হতে বাচ্চা ফোটানো হয়ে থাকে। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে বা অল্প সংখ্যক হাঁস-মুরগি পালনকারী এ পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে। অধিক সংখ্যক ডিম এই পদ্ধতিতে ফোটানো সম্ভ।
ডিম পাড়া শেষ হওয়ার পরে যেসব মুরগির মধ্যে ডিমে তা দেওয়ার বা কুঁচে হওয়ার লক্ষন দেখা যায় সেসব মুরগি বাচ্চা ফোটানোর জন্য বাছাই করতে হয়। অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগি সাধারণত কুঁচে হয় না। আমাদের দেশী মুরগি যেগুলো খুব কম ডিম দেয়, সেগুলোই সাধারণত কুঁচে হয়।
এ রকম একটি মুরগিকে রাতের বেলায় প্রথমে ২-৩ টি ডিম দিয়ে তা দেয় কিনা দেখতে হবে। মুরগিটি যদি ২৪ ঘণ্টা এডি নিয়ে বসে থাকে তা হলে বাকি ডিম মুরগির নিচে রাতের বেলায় দিয়ে দিতে হবে। ঘরের এক কোনে নিরিবিলি জায়গায় একটি আরামপ্রদ যাতে বসতে পারে সে জন্য ছাই শুকনো খড় ইত্যাদি দিয়ে বাসা তৈরী করা যেতে পারে।
তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জায়গাটি নিরাপন হয় এবং এতে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। বাচ্চা ফোটানোর জন্য কুঁচে মুরগি ভালো পালকযুক্ত এবং স্বাস্থ্যবান হতে হবে। একটি কুঁচে মুরগির দিয়ে কতগুলো ফোটানো যাবে তা নির্ভর করে মুরগি ও ডিমের আকারের ওপর।
মুরগি যাতে ডিম বুকের নিচে ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে বসতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ডিমের সংখ্যা নির্ণয় করতে সাধারণত উন্নত জাতের মুরগির ৮-১০ টি এবং দেশী মুরগির ১০-১২ টি ডিম একটি কুঁচে মুরগির নিচে বসিয়ে দিলে গড়ে ৭৫-৮০% হারে বাচ্চা পাওয়া যায়। ডিমের সংখ্য বেশি হলে মুরগি ডিম ডাকতে পারে না। অধিকন্তু ডিমে সমানভাবে তাপ লাগানোর জন্য মুরগির পক্ষে নিয়মিত ডিমগুলো ঠোঁট এবং পা দিয়ে নাড়াচাড়া করা কষ্টকর হয়। ফলে বাচ্চা উৎপাদনের হার কমে যায়।
কুঁচে মুরগিকে ডিমে বসানোর পূর্বে সুষম দানাদার খাবার ও পানি খাওয়াতে হবে। ২১ দিনে মুরগির ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে। কুঁচে মুরগি দিয়ে একইভাবে হাঁসের ডিমও ফোটানো যায়। তবে হাঁসের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ২৮ দিন সময় লাগে। তা দেওয়া মুরগি অবশ্যই স্বাস্থ্যবান এবং রোগমুক্ত হতে হবে। প্রায়ই দেখা যায় কুঁচে মুরগি উকুন দ্বারা আক্রান্ত হয়।
মুরগির গায়ে উকুন থাকলে তা বাচ্চার গায়ে চলে যেতে পারে। তাই মুরগির বাসারা ও মুরগির গায়ে উকুননাশক ওষুধ যেমন- গেমটিকস, বলফো ইত্যাদি দিতে হয়। সুষম খাবার ও পরিষ্কার পানি সবসময় ডিমে তা দেওয়া মুরগির কাছাকাছি রাখতে হয়।
আমাদের দেশে কুঁচে মুরগি নিয়ে বাচ্চা ফোটানোর উত্তম সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে মার্চ (আশ্বিন থেকে ফাল্গুন) মাস পর্যন্ত। কেননা এ সময় আবহাওয়া বেশ অনুকূল থাকে এবং বৃষ্টিপাত কম হয়। সাধারণত ২ মাস পর্যন্ত বাচ্চার দেখাশোনা মুরগি নিজেই করে থাকে। তারপর বাচ্চাগুলো স্বাধীনভাবে চলাফেরা শুরু করে।
প্রাকৃতিক উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর সুবিধাসমূহ:-
১। এ পদ্ধতিতে কৃত্রিম তাপের প্রয়োজন হয় না। তাই গ্রামাঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই। সেখানে এ পদ্ধতিতে বাচ্চা ফোটানো যায়।
২। এ পদ্ধতিতে খরচ কম এবং বাচ্চা ফোটার হার খুবই ভালো।
৩। এ পদ্ধতিতে ফোটানো বাচ্চার যত্ন মুরগি নিজেই নিয়ে থাকে। মানুষের তেমন যত্ন নিতে হয় না এবং এর জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় না।
৪। অল্প সংখ্যক মুরগি পালনকারীদের জন্য এ পদ্ধতি খুবই উপযোগী।
সাবধানতা
১। ভালো কুঁড়ে অভাব ও স্বাস্থ্যবান মুরগি প্রয়োজন ।।
২। রাতে মুরগিকে ডিম দিয়ে বসাতে হবে। এতে ২১ দিন পরে রাতেই বাচ্চা ফুটবে।
৩। ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৪। এক বছরের কম বয়সের মুরগিকে তারে বসানো যাবে না কেননা এ ধরনের মুরগি অনেক সময় ১০-১৫ দিন পর ডিম ছেড়ে চলে আসে। ফলে সমস্ত ডিমই নষ্ট হয়ে যায়।
৫। পালন বদলানো অবস্থায় কোন মুরগিকে ডিমে বসানো যাবে না।
৬। কটিনাশক ওষুধ যেমন, গেমটিকল, বলফো ইত্যাদি দিয়ে মুরগি এবং মুরগির বাসার উকুন ইত্যাদি পোকা ধ্বংস করতে হবে।
৭। মুরগিকে অহেতুক বিরক্ত করা যাবে না।
৮। খাবার মুরগির নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।
সারমর্ম
• প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কুঁচে মুরগির সাহায্যে ডিম ফোটানো হয়।
• একটি কুঁচে মুরগির নিচে উন্নত জাতের মুরগির ৮-১০ টি এবং দেশী জাতের মুরগির ১০-১২টি ডিম ফোটানো যায়।
• মুরগির ডিম থেকে ২১ দিনে এবং হাঁসের ডিম থেকে ২৮ দিনে বাচ্চা ফুটে বের হয়।