বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , পাঠ-১.৫

বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কষি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করা যায় তাদের কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে। কষি উন্নয়নে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।

বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান 

কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীবিভাগ :

ক. স্তরভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ |
তরভিত্তিক কৃষি শিক্ষায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৫টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা :

(১) মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(২) উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(৩) সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(৪) স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(৫) স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান 

খ. সনদ প্রদানভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ সনদ প্রদানের উপর ভিত্তি করে কৃষি প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।

(১) সার্টিফিকেট/ডিপ্লোমা সনদ প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(২) স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(৩) স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

নিচে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচিতি দেয়া হল:

১. মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষি শিক্ষা একটি বিষয় হিসাবে পাঠদান করা হয়। আমাদের দেশের সকল মাধ্যমিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কৃষি শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে কৃষি শিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে কৃষি বিষয়ে পৃথকভাবে সনদ দেয়া হয় না।

২. উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষি শিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠদান করা হয়। কৃষি শিক্ষা বিষয়টি সকল বিভাগের অর্থাৎ মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখার ছাত্র—ছাত্রীরা ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে পড়তে পারে। বাংলাদেশের সকল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কলেজসমূহ এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানেও কৃষি বিষয়ে আলাদাভাবে সনদ দেয়া হয় না।

৩. সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পাঠদান শেষে সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদান করে। এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একাডেমিক কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণাধীন বর্তমানে সরকারিভাগে ১৬টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ২টি ভেটেনারী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ২টি লাইভস্টক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিতে সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে। বর্তমানে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এ ৪ বছর মেয়াদী কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছে। বেসরকারী পর্যায়ে ১০০টির ও বেশী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু আছে।

৪. স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করে তাকে স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে। যেমন শেখ ফজিলাতুনন্নেছা ফিসারিজ কলেজ জামালপুর।

৫. স্নাতকোত্তর ও তদুর্ধ ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষিতে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ ডিগ্রি প্রদান করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বি.এস.সি, এম. এস. এবং পি. এইচ.ডি. ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। যেমন—বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাঃ

১. সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান
ক) কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সরকারি : ১৬ টি, যথা—

Capture 11 বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , পাঠ-১.৫Capture 12 বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , পাঠ-১.৫

খ. লাইভস্টোক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট : ২টি যথা— (১) লাইভস্টোক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, গাইবান্ধা, (২) লাইভস্টোক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সিলেট।

গ. ভেটেরিনারী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট : ২টি যথা—

(১) ভেটেরিনারী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ (২) ভেটেরিনারী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, আলমডাঙ্গা, কুষ্টিয়া।

২. স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (কলেজ)

(১) শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফিসারিজ কলেজ, জামালপুর।

 

কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট 1 বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , পাঠ-১.৫
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

 

৩. স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (বিশ্ববিদ্যালয়)
(১) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
(২) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর,
(৩) হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর
(৪) শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
(৫) পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী
(৬) চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী ও এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
(৭) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

উপরোল্লিখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোতে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদান পূর্বক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। নিচে এরকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হল— ১. বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
৩. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী
৪. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
৫. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা

Capture 13 বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , পাঠ-১.৫

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৩ সালের ১৮ আগস্ট জাতীয় শিক্ষা কমিশন, খাদ্য ও কৃষি কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ঘোষিত হয় “পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ”। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১৯৬১ শিক্ষা বর্ষে স্থাপিত হয় পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ বিশ্ববিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হয়। ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর
পশ্চিম তীরে এক মনোরম পরিবেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্যাবলী মূলদায়িত্ব
স্নাতক, মাস্টার্স ও পি.এইচ.ডি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষকদের মাঝে সু—সংযোগ স্থাপন করা।

অন্যান্য কাজ
কৃষি উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কৃষকদের কাছে পেঁৗছে দেয়া।

গবেষণা
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার গবেষণা, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান বাউরেস (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম) এর মাধ্যম পরিচালিত হয়। নিরলস গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গত ৪০ বছরে যেসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন
করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে।
১. উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত : বাউ ৬৩, বাউ ১৬;
২. সয়াবীনের জাত সোহাগ, জি—২;
৩. সরিষার জাত সম্পদ, সম্বল;
৪. জীবানু সার;
৫. কলা উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি
৬. সয়েল টেস্টিং কিট;
৭. ধান ক্ষেতে মাছ চাষ প্রযুক্তি;
৮. কৃত্রিম পশু প্রজনন প্রযুক্তি;
৯. সার ছিটানো যন্ত্র
১০. গরু মোটা তাজা করণ প্রযুক্তি
১১. ভাসমান খাচায় মাছ চাষ প্রযুক্তি
১২. কুলের জাত: বাউকুল—১; বাউকুল—২; বাউকুল—৩;

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ব শে মু র কৃ বি)

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের আর্থ সামাজি উন্নয়ন মূলত কৃষি উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। কৃষিখাতে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জনের জন্য উচ্চতর কৃষিজ্ঞান ও সঠিক প্রযুক্তি দরকার। এই বাস্তবকে সামনে রেখে ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। গাজীপুর জেলার সালনা নামক স্থানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান।

Capture 14 বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , পাঠ-১.৫

অন্যান্য কাজের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তথ্য কৃষক ও ব্যবহারির কাছে হস্তান্তর করা।

গবেষণা
কৃষি শিক্ষাকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করে তুলতে গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। অব্যাহত গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে।

১. বারমাসী সাদা ও বারমাসী বেগুনি নামে শিমের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে, যা সারা বছর চাষ করা যায়।

২. মটরশুটির তিনটি অত্যাধুনিক জাত যা কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

৩. ইপসা নামে পেয়ারার একটি বারমাসী জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

৪. ঢেড়শের ভাইরাস প্রতিরোধী জাত, পেঁয়াজের দুটি উচ্চফলনশীল জাত, চীনা বাধাকপির জাত, বারমাসী টমেটোর জাত, স্বল্প মেয়াদী উচ্চ ফলনশীল মুগডালের জাত ইত্যাদি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

৫. পেঁপের পুরুষ ও স্ত্রী উভয় গাছেই ফুল ও ফল হয় এমন জাত (গাইনোডাইয়োসিয়াস জাত) মাটি ও গাছের অভ্যন্তর হতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ ও অণুজীব সার হিসেবে এর ব্যবহার বিষয়ক গবেষণা। কৃষি গবেষণা ও কৃষি তথ্য সেবায় বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অভিজ্ঞ কৃষিবিদ ও মানসম্পন্ন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

কৃষি গবেষণা কি?

গবেষণা হচ্ছে নতুন জ্ঞান উন্নয়নের চাবিকাঠি এবং গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের উন্মেষ ঘটানো। গবেষণা শব্দটির মুল ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে “জবংবধৎপয” সাধারণভাবে গবেষণা বলতে অজানা কোন কিছুকে অনুসন্ধান করে জানা বা স্পষ্ট ধারণা লাভ করাকে গবেষণা বলে। কৃষি গবেষণা বলতে বুঝায় কৃষি বিষয়ক কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়কে বৈজ্ঞানিক ও ক্রমানুযায়ী অনুসন্ধান করে তথ্য উদঘাটন করাকে কৃষি গবেষণা বলে। অর্থাৎ কৃষি সংক্রান্ত নানা বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা করাকে কৃষি গবেষণা বলে।

 

কৃষি গবেষনা বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , পাঠ-১.৫

কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষির সার্বিক উন্নয়নকে নিমিত্তে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য কৃষি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান
চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিগবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে।

১. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর

২. বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর

৩. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ঢাকা

৪. বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ

৫. বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী

৬. বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

৭. বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, সিলেট

৮. বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম

৯. বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার

১০. পশু চিকিৎসা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

১১. বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ

১২. বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী

১৩. মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৭৬ সালের ৪ঠা আগস্ট তারিখে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর প্রধান কার্যাবলী গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী ও উদ্দেশ্য নিচে দেওয়া হল :

১. ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন এবং উদ্ভাবিত জাতসমূহ চাষাবাদের জন্য অনুমোদনের ব্যবস্থা করা।

২. ফসল উৎপাদনের জন্য আধুনিক কলাকৌশল উদ্ভাবন করা।

৩. চাহিদা অনুযায়ী দেশে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

৪. কৃষি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন করা।

৫. উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শনের জন্য মাঠ দিবসের আয়োজন করা।

৬. বিভিন্ন ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

৭. ফসলের উপর বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্বন্ধে পুস্তিকা, পোস্টার লিফলেট তৈরি করা এবং প্রচার করা।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিউট ১৯৭০ সালের ১লা অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী নিচে দেওয়া হল:

১. ধানের নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা।

২. বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে ধান ফসলকে রক্ষার কৌশল সহনশীল জাত উদ্ভাবন করা।

৩. বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের হাত থেকে ধান ফসলকে রক্ষা করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

৪. আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা এবং জাত ও কলাকৌশলের তথ্য বিনিময় করা।

৫. ধান চাষের সঙ্গে সম্পর্কিত পুস্তিকা, বই প্রকাশ, পোষ্টার লিফলেট তৈরি করা ও কৃষকের মাঝে বিতরণ করা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল :

১৯৭৩ সালের ৫ই এপ্রিল ঢাকার ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় কৃষি গবেষণাকে জোরদার করা এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কর্মসূচী প্রণয়ন ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করে থাকে। নিচে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী দেওয়া হল :
১. কৃষিক্ষেত্রে বিদেশী সহায়তার ব্যবহার সম্পর্কে ও গবেষণা পরিচালনার জন্য সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা।
২. নতুন গবেষণা ইনস্টিটিউট, গবেষণা কেন্দ্র, তথ্য কেন্দ্র, জার্ম প্লাজম সেন্টার, যাদুঘর, হারবেরিয়াম, গ্রন্থাগার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা।
৩. এনএ আর এস ভুক্ত ইনস্টিটিউটসমূহের গৃহীত ও সম্পাদিত কার্যক্রম একট বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা মূল্যায়ন করা।
৪. কৃষি বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন সেমিনার সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট :

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং স্বায়ত্বশাসিত। নিচে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী দেওয়া হল:

১. পরমাণু শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উন্নতমানের অধিক ফলনশীল ধান, পাট, ডাল, তেলবীজ, সবজি জাতীয় শস্যের জাত উদ্ভাবন করা।

২. উদ্ভাবিত জাতসমূহের কৃষি তাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো।

৩. বিভিন্ন ফসলের জন্য সার সুপারিশমালা প্রণয়ন, বোরাগ ও পোকামাকড় দমনের পদ্ধতি সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করা।

৪. মাটির ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যাবলী নিরূপণ, আর্থ—সামাজিক গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি কৃষকের নিকট হস্তান্তর করা।

৫. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা ও একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করা।

কৃষি গবেষণার গুরুত্ব প্রকৃতিকে গভীরভাবে বুঝবার ও এর রহস্যকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টাকেও সহজ ভাষায় বিজ্ঞান বলা যেতে পারে। এ প্রচেষ্টাকে ব্যাপক ও সুষ্ঠভাবে রূপ দিতে গিয়েই গবেষণার প্রচলন হয়েছে। গবেষণার ব্যাপকতা বর্তমান পৃথিবীর একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য।

গবেষণার পরিধি শুধু বস্তু জগতেই সীমাবদ্ধ নেই, জীবজগত, ভাবজগত এবং সামাজিক জীবনও এর উর্বর ক্ষেত্র হয়ে পড়েছে। মূলত: এসব গবেষণালব্ধ ব্যপ্তি ও সমষ্টি জীবনে রূপায়িত করেই বিভিন্ন দেশ উন্নতি করে চলছে। তাই যে দেশ গবেষণায় যত বেশি অগ্রসর সে দেশ ততই উন্নত। অপরদিকে অনুন্নত দেশের একটাই লক্ষণ হল গবেণার প্রতি অবহেলা। উদারহরণস্বরূপ জাপান স্বাধীনতা লাভের পর সে দেশটিতে তখন দারুন খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল।

সে দেশের মানুষ তখন গাছের লতা পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করেছিল। পরবর্তীতে তারা গবেষণা শুরু করল কিভাবে গাছের লতাপাতা ও ক্ষুদ্র অনুজীবকে কাজে লাগিয়ে মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানো যায়। তারা কৃষি গবেষণার মাধ্যমে আজ বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

আমাদের দেশে ক্রমেই জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। কিন্তু আবাদী জমির পরিমাণ দারুণভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অধিকন্তু রাসায়নিক পদার্থ ও ভূ—গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে ইতোমধ্যে মৃত্তিকা সম্পদ ও পরিবেশে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতিকর প্রভাব বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত ফসলহানির ঝঁুকির। তদুপরি এই ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে আমাদের ফসলের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে হবে।

তাই উন্নত দেশগুলোর সাথে যেতে হলে আমাদের কৃষি গবেষণার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

সারাংশ :
কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটগুলো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক কৃষি বিজ্ঞানী তৈরি করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নকে তরান্বিত করছে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment