বারমুডা ঘাস (Cynodon dactylon)

বারমুডা ঘাস (Cynodon dactylon) একটি উষ্ণ মৌসুমি, বহুবর্ষজীবী, স্থলভাগে দ্রুত বিস্তারকারী ঘাস, যা লন, ক্রীড়াক্ষেত্র, গলফ কোর্স, পার্ক, রাস্তার ডিভাইডার, নদীর পাড় ইত্যাদি সবুজায়নে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ঘাসটি খরা সহ্যশীলতা, দ্রুত পুনরুদ্ধার ক্ষমতা এবং মাটিকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার ক্ষমতার জন্য পরিচিত।

Table of Contents

বারমুডা ঘাস (Cynodon dactylon)

বারমুডা ঘাসের বৈজ্ঞানিক তথ্য

বিষয়তথ্য
বাংলা নামবারমুডা ঘাস
ইংরেজি নামBermuda Grass, Couch Grass
বৈজ্ঞানিক নামCynodon dactylon
পরিবারPoaceae
উৎপত্তি অঞ্চলআফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ
প্রজাতির ধরনবহুবর্ষজীবী (Perennial)
বৃদ্ধির ধরণস্টোলন (Stolons) ও রাইজোম (Rhizomes) মাধ্যমে বিস্তার
শিকড়ের গভীরতাসর্বোচ্চ ২ মিটার পর্যন্ত
উচ্চতাসাধারণত ৫–১৫ সেমি (লনে), প্রাকৃতিকভাবে ৩০ সেমি পর্যন্ত
পাতার রঙউজ্জ্বল সবুজ, শীতে হালকা বাদামী

 

বারমুডা ঘাসের ইতিহাস বিস্তার

  • বারমুডা ঘাসের উৎপত্তি আফ্রিকা ভারতীয় উপমহাদেশে, কিন্তু বর্তমানে এটি বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে বিস্তৃত।
  • এর নাম “Bermuda Grass” এসেছে কারণ ১৭শ শতকে আফ্রিকা থেকে বারমুডা দ্বীপে এটি ছড়ায় এবং সেখান থেকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে যায়।
  • আন্তর্জাতিকভাবে এটি খেলাধুলার মাঠের স্ট্যান্ডার্ড গ্রাস হিসেবে স্বীকৃত।

 

বারমুডা ঘাসের বৃদ্ধি পরিবেশগত প্রয়োজন

বিষয়আদর্শ মান
আবহাওয়াউষ্ণ ও রৌদ্রোজ্জ্বল (Tropical & Subtropical)
তাপমাত্রা২৪°C – ৩৭°C (১৮°C এর নিচে বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়)
সূর্যালোকপূর্ণ সূর্য, প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা
মাটিবেলে দোআঁশ, দোআঁশ, বা হালকা কাঁদামাটি
pH মাত্রা৫.৮ – ৭.০
পানি প্রয়োজনমাঝারি (প্রথম মাসে বেশি, পরে খরা সহ্য করে)

 

বারমুডা ঘাসের প্রধান জাত বৈশিষ্ট্য

জাতের নামবৈশিষ্ট্যব্যবহার
Common Bermudaদ্রুত বৃদ্ধি, হালকা সবুজসাধারণ লন, রাস্তার পাশে
Hybrid Bermuda (Tifway, Tifgreen)ঘন ও মজবুত, গভীর সবুজগলফ কোর্স, ক্রিকেট মাঠ
Celebration Bermudaঠান্ডা সহ্যশীল, নরম পাতাল্যান্ডস্কেপিং, পার্ক
Princess 77সূক্ষ্ম পাতা, গাঢ় রঙবিলাসবহুল লন, হোটেল গার্ডেন

 

বারমুডা ঘাসের রোপণ পদ্ধতি

. বীজ থেকে
  • প্রতি ৩০–৪০ বর্গমিটারে কেজি বীজ প্রয়োজন।
  • মাটি সমান ও নরম করে বপন।
  • বপনের পর হালকা রোলিং ও পানি।
. সড/টার্ফ
  • প্রস্তুত টার্ফ কিনে বিছানো।
  • তাৎক্ষণিক সবুজায়ন সম্ভব।
. রানার/স্টোলন
  • দ্রুত বিস্তারের জন্য রানার লাগানো।
  • ১৫–২০ সেমি ব্যবধানে বসানো।

 

বারমুডা ঘাসের রক্ষণাবেক্ষণ সূচি

মাসকরণীয়
জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিঘাস কেটে শুকনো অংশ অপসারণ
মার্চ–এপ্রিলনাইট্রোজেন সার প্রয়োগ
মে–জুলাইসেচ ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ
আগস্ট–সেপ্টেম্বরপুনঃসার প্রয়োগ
অক্টোবর–ডিসেম্বরকাটা কমানো, শীতের প্রস্তুতি

 

রোগ পোকামাকড় প্রতিরোধ
  • Dollar Spot – ফাঙ্গাসনাশক প্রয়োগ।
  • Armyworms – কীটনাশক ব্যবহার।
  • Mole Crickets – মাটির নিচে কীট নিয়ন্ত্রণ।
  • Weed Control – ঘন লাগানো হলে আগাছা কম হয়।

 

বারমুডা ঘাসের সুবিধা – অসুবিধা

সুবিধা

✅ দ্রুত বিস্তার ও পুনরুদ্ধার ক্ষমতা
✅ খরা ও উচ্চ তাপমাত্রা সহ্যশীল
✅ মাটি ক্ষয় রোধ করে
✅ উচ্চ ট্রাফিক ও চাপ সহ্য করে
✅ কম সময়ে সবুজায়ন সম্ভব

অসুবিধা

❌ ছায়ায় ভালো হয় না
❌ শীতে বাদামী হয়ে যায়
❌ আক্রমণাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে (কন্ট্রোল দরকার)

 

বাংলাদেশে বারমুডা ঘাসের ব্যবহার সম্ভাবনা

  • শহুরে ল্যান্ডস্কেপিং – পার্ক, হোটেল, অফিস কমপ্লেক্স।
  • ক্রীড়াক্ষেত্র – ফুটবল, ক্রিকেট, গলফ।
  • মাটি ক্ষয় রোধ – নদীর পাড়, ঢালু জমি।
  • রাস্তার ডিভাইডার – কম রক্ষণাবেক্ষণে সবুজ রাখা।

 

বারমুডা ঘাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

  • টার্ফ উৎপাদন ব্যবসা – নার্সারি ও ল্যান্ডস্কেপিং কোম্পানির জন্য লাভজনক।
  • রপ্তানি সম্ভাবনা – হাইব্রিড সড বিদেশে রপ্তানি সম্ভব।
  • পশুখাদ্য – কিছু অঞ্চলে চারণভূমির ঘাস হিসেবে।

 

বারমুডা ঘাস
বারমুডা ঘাস

 

বাংলাদেশে বারমুডা ঘাসের বীজ সংগ্রহের উপায়

বাংলাদেশে বারমুডা ঘাসের বীজ সংগ্রহ তুলনামূলকভাবে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, কারণ এখানে এটি প্রধানত টার্ফ (Sod) বা রানার আকারে চাষ ও বাজারজাত করা হয়, বীজ আকারে খুব বেশি পাওয়া যায় না। তবে কিছু নির্ভরযোগ্য উৎস ও পদ্ধতি আছে—

. স্থানীয় নার্সারি টার্ফ সরবরাহকারী
  • ঢাকার সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনায় অনেক নার্সারি হাইব্রিড বারমুডা রানার সড বিক্রি করে।
  • কিছু উন্নত নার্সারি (যেমন কুড়িল, মিরপুর, টঙ্গী, সাভার অঞ্চলের) আগাম অর্ডারে বারমুডা বীজ সরবরাহ করতে পারে।
  • উদাহরণ: BRAC Nursery, Department of Agricultural Extension (DAE) nurseries
. কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
  • বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) মাঝে মাঝে বারমুডা ঘাসের গবেষণা করে এবং প্রজেক্ট পর্যায়ে বীজ সরবরাহ করে।
  • এদের মাধ্যমে গবেষণা প্রকল্প বা কৃষি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে বীজ পাওয়া সম্ভব।
. অনলাইন এগ্রি স্টোর
  • কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন Daraz, Oikko.com.bd, Agrobd.com ইত্যাদিতে বিদেশি বারমুডা ঘাসের বীজ পাওয়া যায়।
  • বীজ কেনার সময় নিশ্চিত হতে হবে যে এটি কোটেড (Coated) বা আনকোটেড (Uncoated) এবং হাইব্রিড জাত উপযুক্ত কি না।
. আন্তর্জাতিক উৎস থেকে আমদানি
  • ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকে Princess 77, Tifway, Tifgreen জাতের বারমুডা ঘাসের বীজ আমদানি করা যায়।
  • বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করতে প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেটপরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন।
. নিজের মাঠ বা লন থেকে সংগ্রহ
  • যদি আগে থেকে বারমুডা ঘাস থাকে, তবে ফুল ও বীজ উৎপাদন মৌসুমে (গ্রীষ্মের শেষে) কিছু অংশ অযত্নে বেড়ে উঠতে দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যায়।
  • বীজ সংগ্রহের ধাপ:
    1. ঘাস ফুল ফোটানো পর্যন্ত কাটবেন না
    2. ফুল শুকিয়ে গেলে কেটে রোদে শুকাতে হবে
    3. শুকনো ফুল থেকে বীজ আলাদা করে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ
. সতর্কতা
  • বিদেশি বীজ কেনার সময় গ্রীষ্মকালীন জাত কিনতে হবে, শীতপ্রধান দেশের বারমুডা ঘাস বাংলাদেশে টিকবে না।
  • নকল বীজ এড়াতে শুধুমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিলারের কাছ থেকে কিনুন।
  • শতভাগ খাঁটি জাত কিনতে হলে প্যাকেটের Germination Rate (অঙ্কুরোদ্গম হার) ৮৫% বা তার বেশি হতে হবে।