বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা

কৃষি উৎপাদনের মূল ভিত্তি হলো বীজ। একটি উন্নতমানের বীজ কৃষকের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বীজ প্রযুক্তি। এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ফসলের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নতি সম্ভব। বর্তমান পাঠে আমরা বীজ প্রযুক্তির সংজ্ঞা, ধাপ, উপকারিতা ও এর গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা

(ইউনিট-৩: বীজ ও বীজ প্রযুক্তি, পাঠ-৩.১)

🔍 বীজ প্রযুক্তি কী?

বীজ প্রযুক্তি বলতে বোঝায়—বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিপণনের পুরো প্রক্রিয়াজাত ধাপসমূহে অনুসরণযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত কলাকৌশলসমূহ। এটি একটি সমন্বিত ব্যবস্থা, যার লক্ষ্য হলো গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

 

⚙️ বীজ প্রযুক্তির ধাপসমূহ:

বীজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণের প্রতিটি পর্যায়ে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়, যেমন:

  1. উপযুক্ত জমি স্থান নির্বাচন
  2. উন্নত জাত নির্বাচন রোগমুক্ত বীজ সংগ্রহ
  3. পরিবেশ মাটির ধরন অনুযায়ী চাষাবাদ
  4. পর্যাপ্ত সার সেচের ব্যবহার
  5. আগাছা, রোগ পোকা দমন
  6. রোগিং (অবিশুদ্ধ গাছ সরানো) পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখা
  7. সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ প্রক্রিয়াজাতকরণ
  8. পরিশেষে বীজ সংরক্ষণ মান নিয়ন্ত্রণ

এ সকল ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে, বীজের বিশুদ্ধতা, অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা, স্বাস্থ্য জেনেটিক বিশুদ্ধতা বজায় থাকে।

 

🏭 বাংলাদেশের বীজ উৎপাদন কাঠামো

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর অধীনে ২৪টি বীজ বর্ধন খামারে ধান, গম এবং কিছু আলু জাতের ভিত্তি ও প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ উদ্ভাবিত এবং জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত জাতগুলো থেকে প্রজনন বীজ সংগ্রহ করে এ উৎপাদন শুরু হয়।

পরবর্তীতে এই বীজ চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে প্রত্যায়িত বীজ হিসেবে উৎপাদন করে কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

 

🚜 চাষিদের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব

বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। তারা নিজের উৎপাদিত ফসল থেকে বীজ আলাদা করে সংরক্ষণ করে থাকেন, যা সঠিক পদ্ধতিতে না হওয়ায় বীজের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ফসলের ফলন আশানুরূপ হয় না।

উন্নত দেশগুলোতে ধানের গড় ফলন যেখানে ৫–টন/হেক্টর, সেখানে বাংলাদেশে তা মাত্র টন/হেক্টর। অথচ সার, পানি ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এ ব্যবধান কমানো যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হলো—গুণগতমানসম্পন্ন বীজের অভাব।

 

🌾 হাইব্রিড বীজ: আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন

হাইব্রিড (সংকর) বীজ বীজ প্রযুক্তির একটি বড় অর্জন। এগুলো মুক্ত পরাগায়িত বীজের তুলনায় অনেক বেশি সমরূপ, অধিক ফলনশীল, কষ্ট সহিষ্ণু এবং রোগ প্রতিরোধক্ষম। যদিও হাইব্রিড বীজের দাম বেশি, তবে অধিক ফলন দেওয়ায় তা কৃষকের জন্য লাভজনক।

 

বীজ প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগই দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান পথ। ফসল উৎপাদনে স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষকদের আধুনিক বীজ ব্যবস্থাপনা এবং হাইব্রিড বীজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। তাই ক্রপিং ইনটেনসিটি’হেক্টর প্রতি উৎপাদন’ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বীজ প্রযুক্তির উন্নয়ন বিস্তার একান্ত প্রয়োজন।

Leave a Comment